ইস্তেগফার দরুদ শরীফ । ফজিলত । অর্থ ও বাংলা উচ্চারণ

পোস্টটি শেয়ার করুন

মানুষ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ আমরা হয়তো জানত বা অজান্তে পাপ করে ফেলি। আল্লাহর নিকট এই পাপের ক্ষমা প্রার্থনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় হলো ইস্তেগফার—অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা করা। অন্যদিকে, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি দুরুদ পাঠ করা একটি মহা পূণ্যময় আমল, যা শুধু আমাদের গুনাহ মোচনের কারণ নয়, বরং জান্নাতের উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার মাধ্যমও। ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফ—দুটি আমলই মুমিনের জীবনে অপরিহার্য। ইস্তেগফার আমাদের অন্তরকে গুনাহের বোঝা থেকে মুক্ত করে, আর দরুদ শরীফ আমাদের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষণের অন্যতম মাধ্যম। এই দুটি আমল কেবল দুনিয়াতেই কল্যাণ বয়ে আনে না, বরং আখিরাতেও অফুরন্ত সওয়াবের কারণ হয়।

এই ব্লগপোস্টে আমরা ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফের গুরুত্ব, ফজিলত এবং পবিত্র কুরআন ও হাদিস থেকে এর প্রমাণসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করবো, যাতে আমাদের আমলের প্রতি আগ্রহ ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফ

ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া)

সায়্যিদুল ইস্তেগফার (সর্বোত্তম ইস্তেগফার)

اَللّٰهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ

🔹 উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী, লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত, খালাকতানী ওয়া আনা আবদুক, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতাতু, আ’উযু বিকা মিন শাররি মা সানাতু, আবু’উ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবু’উ বিযাম্বি, ফাগফিরলী, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয জুনূবা ইল্লা আন্ত।

🔹 অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনিই আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার দাস। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে করা অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনার দেওয়া নিয়ামতের কথা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, কেননা আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।” (বুখারি: ৬৩০৬)

সংক্ষেপিত ইস্তেগফার

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

🔹 উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।

🔹 অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করি।” (মুসলিম: ২৭০২)

দরুদ শরীফ (রাসূল ﷺ-এর প্রতি শান্তি কামনা)

সর্বোত্তম দরুদ (দরুদে ইবরাহিম)

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

🔹 উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মজীদ।
আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মজীদ।

🔹 অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর শান্তি বর্ষণ করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর শান্তি বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দান করুন, যেভাবে আপনি ইবরাহীম ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসার যোগ্য ও মহিমান্বিত।” (বুখারি: ৬৩৭)

সংক্ষেপিত দরুদ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَسَلِّمْ

🔹 উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া সাল্লিম।

🔹 অর্থ: “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।”

ইস্তেগফার দরুদ শরীফ ও তার গুরুত্ব

ইস্তেগফারের অর্থ ও সংজ্ঞা

ইস্তেগফার শব্দটি আরবি ‘গাফারা’ ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘ঢেকে দেওয়া, ক্ষমা করা’। অর্থাৎ, ইস্তেগফার হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই এবং তাঁর রহমত ও করুণা প্রার্থনা করি।

ইস্তেগফারের কুরআনি প্রমাণ

কুরআনে ইস্তেগফারের বিষয়ে বহুবার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করো।” (সুরা হুদ: ৩)

অন্যত্র তিনি বলেন:

“আর যারা অন্যায় করার পর নিজেদের গুনাহের কথা স্মরণ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়—এমন কে আছে যে গুনাহ ক্ষমা করবে আল্লাহ ব্যতীত?” (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫)

ইস্তেগফারের হাদিসের প্রমাণ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তাকে প্রতিটি সংকট থেকে মুক্তি দেবেন, প্রতিটি দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দেবেন এবং তিনি তার জন্য অকল্পনীয় রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” (আবু দাউদ: ১৫১৮)

ইস্তেগফারের ফজিলত

১. গুনাহ মোচন হয়।
২. অন্তরের প্রশান্তি আসে।
৩. বিপদ-আপদ দূর হয়।
৪. রিজিক বৃদ্ধি পায়।
৫. জান্নাতের পথে চলা সহজ হয়।

দরুদ শরীফ ও তার গুরুত্ব

দরুদ শরীফের সংজ্ঞা

সংজ্ঞা: দরুদ শরীফ হলো রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ওপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি কামনা করা। দরুদ পাঠ করা আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি নির্দেশিত একটি আমল।

দরুদ পাঠের কুরআনি প্রমাণ

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠান। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করো।” (সুরা আহযাব: ৫৬)

দরুদ পাঠের হাদিসের প্রমাণ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাআলা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করেন এবং তার মর্যাদা দশগুণ বৃদ্ধি করেন।” (মুসলিম: ৪০৮)

দরুদ পাঠের ফজিলত

  • আল্লাহর রহমত লাভ হয়।
  • গুনাহ মাফ হয়।
  • নবী ﷺ-এর শাফায়াত লাভের মাধ্যম হয়।
  • দুনিয়াতে বরকত ও কল্যাণ আসে।
  • মৃত্যু সহজ হয় ও জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ হয়।

উপসংহার

ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফ—এই দুটি আমল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইস্তেগফার আমাদের গুনাহ থেকে মুক্তি দেয়, আর দরুদ আমাদের রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উম্মত হিসেবে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করে। তাই আমাদের উচিত, প্রতিদিন ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফের আমল করা, যাতে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা যায় এবং আমাদের জীবন ও আখিরাত সুন্দর হয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইস্তেগফার ও দরুদ শরীফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x