গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম । ১০ টি পশিজন ও ‍বিধান

পোস্টটি শেয়ার করুন

গর্ভধারণ থেকে একটি শিশু পৃথিবীতে আসার মুহূর্তটি দম্পতিদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের হয়ে থাকে। এই সময়ে তারা অন্য সময়ের থেকে বেশি কেয়াফুল থাকেন। নিয়ম নীতি মনে চলাকে প্রাধান্য দেন। যাতে তাদের অনাগত শিশুটি নিরাপদে পৃথিবীতে আগমন করে। তাই অনেকে একটি প্রশ্ন করেন যে, গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম বা সঠিক উপায় কী?

দুটি কারণে তারা এই প্রশ্নটি করেন একটি হচ্ছে এই সময়ে সহবাস করা হারাম হবে কি না। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এই সময়ে সহবাস করার জন্য ইসলাম কোনো নিয়ম মানতে বাধ্য করেছে কি না। যদি করে থাকে তাহলে সেটা আসলে কী?

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক বিধান

গর্ভাবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করা ইসলামে সম্পূর্ণরূপে হালাল রয়েছে। কাজেই কোনরূপ সংশয় বা মনের মধ্যে প্রশ্ন অবকাশ রাখা উচিত নয় যে গর্ভাবস্থায় যখন আমি সহবাস করছি এটা হালাল হচ্ছে কিনা। এটি সর্বসম্মতিক্রমে হালাল রয়েছে।

ইসলাম কেবল স্ত্রীর সাথে সহবাসের ক্ষেত্রে একটি সময়ে সহবাসকে হারাম করেছে। সেটি হচ্ছে স্ত্রী সন্তান প্রসবের পর থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত। এই সময়ের ভেতরে স্ত্রীর সাথে সহবাস করা হারাম। আর একটি স্থান দিয়ে সহবাস করা হারাম করেচে। সেটি হচ্ছে পায়ুপথে। কেননা সেই জায়গাটি যোনির মত এতটা পিচ্ছিল নয় এবং সেটা কেবল যৌন আনন্দ দেয় বিকৃতভাবে। তাই সেখানে সহবাস করা হারাম।

তাছাড়া মুসলিম যৌন জীবনের মৌলিক একটি দিক হলো বাচ্চা জন্মদান, সংসার ও পরিবার গঠন। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি এ্যানাল সেক্স করে তখন এই মৌলিক উদ্দেশ্যটি সাধিত হয় না। কাজেই এ জিনিসটা ইসলাম হারাম করেছে। এ ছাড়া সকল উপায় ও উপকরণ ব্যবহার করে সহবাস করা জায়েজ রয়েছে।

যেহেতু একটি লম্বা সময় স্ত্রী সন্তান গর্ভে ধারণ করে থাকেন – প্রায় ৯ থেকে ১০ মাস পর্যন্ত। এ সময়টি যদি স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করা থেকে বিরত থাকে তাহলে এটি বিরাট কষ্টকর একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তখন স্বামী অন্য কোনো মহিলার সাথে যেনায় লিপ্ত হয়ে যাওয়া প্রবল সম্ভাবনা থাকে। আর ইসলামে সকল মুসলিমকে তাদের চরিত্রকে হেফাজত করার জন্য বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। কাজেই এই সময়ে সহবাস করা থেকে আপনি কিছুতেই বিরত থাকা উচিত নয়। তখন আপনার স্ত্রীর সাথে থাকে তাকে বেশি সময় দেওয়া উত্তম।

গর্ভাবস্থায় সহবাস করার ইসলামিক নিয়ম

গর্ভাবস্থায় সহবাস করা ইসলামিক নিয়ম বলতে আসলে তেমন কিছু নেই। যেটি সেই সময়ের জন্য স্বামী এবং স্ত্রীর কাছে সুইটেবল মনে হয় সেটি তারা গ্রহণ করবে। সেই নিয়ম অনুযায়ী তারা সহবাস করবে।

ইসলামে বিশেষ কোনো আসন সহবাসের ক্ষেত্রে হালাল বা আর বিশেষ কোনো আসন হারাম করা হয়নি। স্বামী এবং স্ত্রীর জন্য এক্ষেত্রে সর্বদিক থেকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। তারা তাদের জন্য যে আসনটি আনন্দদায়ক ও উপযোগী মনে করবে সে আসন গ্রহণ করে সহবাস করতে পারে।

কেবল এনাল সেক্স থেকে বিরত থাকতে হবে। এটাই হারাম। তাছাড়া প্রত্যেক দম্পতি তাদের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী আসল গ্রহণ করে মিলন করতে পারেন। কেননা প্রত্যেক মানুষের চাহিদা ও রুচির ভিন্নতা রয়েছে।

এভাবে গর্ভাবস্থায় সহবাসের জন্য ইসলাম কোনো সময় নির্দিষ্ট করা হয়নি। যে কোনো সয়ম সহবাস করা হালাল। সেটা সকাল হোক বা বিকাল, রাত হোক বা দিন। তবে সেই সময়ে কিছু আরাম দায়ক আসন আমরা বলতে পারি।

১০টি আরামদায়ক ও নিরাপদ পজিশন

১. সাইড বাই সাইড (Side by Side): স্বামী ও স্ত্রী এক পাশে শুয়ে সহবাস করতে পারেন। এটি নিরাপদ এবং পেটের উপর চাপ পড়ে না।

২. মিশনারি পজিশনের পরিবর্তন: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে স্বাভাবিক মিশনারি পজিশন সম্ভব, তবে পরে পেটের উপর চাপ কমানোর জন্য কুশি ব্যবহার করতে পারেন।

৩. ওম্যান অন টপ (Woman on Top): স্ত্রী উপরে থেকে স্বামীর সঙ্গে সহবাস করলে স্ত্রী নিজেকে আরামদায়কভাবে সামঞ্জস্য করতে পারেন।

৪. রিভার্স কাউগার্ল (Reverse Cowgirl): এই পজিশনে স্ত্রী উপরে থাকে কিন্তু পেছনের দিকে মুখ করে। এটি পেটের উপর চাপ পড়া থেকে রক্ষা করে।

৫. স্পুনিং পজিশন (Spooning Position): স্বামী পেছন থেকে স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে সহবাস করতে পারেন। এটি বেশ আরামদায়ক।

৬. এজ অফ দ্য বেড (Edge of the Bed): স্ত্রী বিছানার কিনারে শুয়ে থাকবেন, আর স্বামী দাঁড়িয়ে বা হাঁটু গেড়ে সমর্থন দেবেন।

৭. সিটিং পজিশন (Sitting Position): স্বামী কোনো চেয়ারে বসে থাকবেন এবং স্ত্রী তার কোলে বসবেন। এটি আরামদায়ক এবং চাপমুক্ত।

৮. ডগি স্টাইল (Modified Doggy Style): স্ত্রী হাঁটু ও হাতের উপর ভর দিয়ে থাকবে। তবে এটি আরামদায়ক না হলে পরিহার করা উচিত।

৯. স্ট্যান্ডিং পজিশন (Standing Position): যদি মায়ের জন্য আরামদায়ক হয়, তবে এটি পেটের উপর কোনো চাপ সৃষ্টি করে না।

১০. কুশি সহ পজিশন (With Cushion Support): গর্ভাবস্থায় পেটের নিচে কুশি ব্যবহার করে সহবাস করলে আরামদায়ক হয়।

ইসলামের নির্দেশনা ও সতর্কতা

  • মায়ের ও সন্তানের সুরক্ষা: স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর আরাম এবং সন্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
  • বেশি শক্তি প্রয়োগ না করা: সহবাসের সময় হালকা হওয়া এবং স্ত্রীর প্রতি কোমল ব্যবহার করা জরুরি।
  • প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শ: যদি গর্ভাবস্থায় কোনো জটিলতা থাকে, তবে সহবাসের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
  • আল্লাহর কাছে দোয়া করা: দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু ও শেষের আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করা সুন্নাহ।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment