দোয়া হচ্ছে আল্লাহ তালার কাছ থেকে সাহায্য লাভে অন্যতম উপায়। আমরা আমাদের যে কোনো অসুবিধায়, যে কোনো সংকট বা দুঃখে কষ্টে, রোগে বা আর্থিক অনটনে আল্লাহ তালার কাছে দোয়া করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়াগুলো শুনেন ও সাড়া দেন। ফলে আমরা সংটক কেটে ওঠে নতুনভাবে জীবনযাপন করি। ঠিক একইভাবে চুল পড়া আমাদের অনেকের জন্য একটি বিশেষ অসুবিধা। অনেক উপায় ও উপকরণ ব্যবহার করে চুল পড়া বন্ধ করতে আমার অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হই। তবে আজ এখানে আমরা একটি অব্যর্থ উপায় নিয়ে আলোচনা করব। সেটি হল – চুল পড়া বন্ধ করার দোয়া। যদি এই দোয়াটি কবুল হয়ে হয়ে যায়, তাহলে আর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। এই দোয়াটি আমরা কখন করব, কিভাবে করব? এ বিষয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
চুল পড়া বন্ধ করার নির্দিষ্ট কোনো দোয়া রয়েছে কি?
না, চুল পড়া বন্ধ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন দোয়া কুরআন বা হাদিসে নেই। এমনকি সালাফে সালিহিনের কেউই চুল পড়া বন্ধ করার দোয়া হিসাবে কোনো দোয়াকে চিহ্নিত করেননি। তবে পৃথিবীতে যত রোগ বা অসুবিধা রয়েছে সবকিছুর প্রতিকার আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে আল্লাহতালা বলেছেন,
(وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ)
অনুবাদ : আর আমি কুরআনে যা নাযিল করি, তাতে রয়েছে মুমিনদের জন্য শিফা (আরোগ্য) এবং রহমত। ( সুরা বনি ইসলাইল আয়াত : ৮২ )
কাজেই আমরা নিরাশ হবো না, আমাদের চুল পড়া বন্ধের রুকইয়াহ ও দোয়া আমরা কুরআন থেকে পেয়ে যাব। তবে যেহেতু সালাফে সালেহীনের কেউই কোনো দোয়াকে চুল পড়া বন্ধের জন্য নির্দিষ্ট করেননি তাই আমরা এটা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারব না।
কোন দোয়াটি চুল পড়া বন্ধের জন্য করা যাবে?
দোয়া চুল পড়া বন্ধের জন্য আপনি নিম্নের দোয়াটি করতে পারেন। আইয়ুব আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম যখন একটি মহা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার সমস্ত শরীরকে সে রোগটি আক্রান্ত করেছিল। তখন তিনি এই দোয়াটি করেছিলেন। আপনিও এই দোয়াটি করলে আশা করা যায় আপনার চুল পড়া বন্ধ হবে।
আরবি:
رَبِّ إِنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ
উচ্চারণ: “রব্বি ইন্নি মাসসানিয়াধ দুরু ওয়া আন্তা আরহামুর রাহিমীন।”
অর্থ: “হে আমার প্রভু, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর তুমি সবচেয়ে দয়ালু।”
চুল পড়া বন্ধ করার রুকাইয়া
চুল পড়া বন্ধুর জন্য বিভিন্ন রাকি তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে বিভিন্নভাবে রুকইয়াহ করে থাকেন। আপনি আপনার নিকটস্থ কোনো রুকইয়াহ সেন্টার থেকে বা অনলাইনে আপনার বিশ্বস্ত কোন রাকির সাথে কথা বলে রুকইয়াহ গ্রহণ করতে পারেন।
আপনি যদি নিজে রুকইয়াহ করতে চান তাহলে আপনার জন্য আমরা নিয়ে কিছু আয়াত দিচ্ছি সেগুলো আপনি পাঠ করতে পারেন। অথবা কারো অডিও রেকর্ড শুনতে পারেন।
১. সুরা ফাতেহা।
২. আয়াতুল কুরসি।
৩.. সুরা আল-বাকারা, আয়াত ২৬১
مَثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَٰلَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِى كُلِّ سُنبُلَةٍۢ مِّا۟ئَةُ حَبَّةٍۢ ۗ
অনুবাদ: “যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ হলো একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয়, আর প্রতিটি শীষে থাকে একশত দানা।”
৪. সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৩৭
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا
অনুবাদ: “অতঃপর তার প্রতিপালক তাকে সানন্দে গ্রহণ করলেন এবং উত্তমভাবে লালনপালন করলেন। আর তার দায়িত্ব দিলেন যাকারিয়া -কে।”
৫. সুরা হিজর, আয়াত ১৯
وَٱلْأَرْضَ مَدَدْنَـٰهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَٰسِىَ وَأَنۢبَتْنَا فِيهَا مِن كُلِّ شَىْءٍۢ مَّوْزُونٍ
অনুবাদ: “আমি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছি এবং এতে স্থাপন করেছি দৃঢ় পর্বতমালা। আর তাতে সকল বস্তু উদগত করেছি যথাযথ পরিমাণে।”
৬. সুরা হাজ্জ, আয়াত ৫
وَتَرَى ٱلْأَرْضَ هَامِدَةًۭ فَإِذَآ أَنزَلْنَا عَلَيْهَا ٱلْمَآءَ ٱهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنۢبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍۢ بَهِيجٍ
অনুবাদ: “আর তুমি শুষ্ক জমিকে দেখবে, অতঃপর যখন আমি তার উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সজীব ও উদ্ভাসিত হয়। আর প্রত্যেক প্রকারের সুন্দর উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।”
৭. সুরা মুমিনুন, আয়াত ২০
وَشَجَرَةًۭ تَخْرُجُ مِن طُورِ سَيْنَآءَ تَنبُتُ بِٱلدُّهْنِ وَصِبْغٍۢ لِّلْءَاكِلِينَ
অনুবাদ: “আর এমন এক বৃক্ষ, যা সিনাই পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়। যা আহারকারীর জন্য তেল এবং খাদ্য উৎপন্ন করে।”
রুকাইয়া ও দোয়া
৮. দোয়া
الحمد لله وكفى، حمدا يوافي نعمائه، وأحمده سبحانه وأشكره، اللهم يا حي يا قيوم برحمتك نستغيث, يا منبت الأشجار يا فالق الحب والنوى اللهم أنبت شعرى يا أكرم الأكرمين
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহি ওয়া কাফা, হামদান ইউয়াফি নিয়ামাহু, ওয়া আহমাদুহু সুবহানাহু ওয়া আশকুরুহু। আল্লাহুম্মা ইয়্যা হাইয়্যু, ইয়্যা ক্বাইয়্যুমু বিরাহমাতিকা নাসতাগিসু, ইয়্যা মুনবিতাল আশজার, ইয়্যা ফালিক্বাল হাব্বি ওয়ান নাওয়া, আল্লাহুম্মা আম্বিত শাআরাহা ইয়্যা আকরামাল আকরামিন।
অনুবাদ: “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি যথেষ্ট, যিনি তার অগণিত নেয়ামত দিয়ে আমাদের ভরিয়ে রেখেছেন। আমি তাকে প্রশংসা করছি, মহিমান্বিত আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। হে আল্লাহ, হে চিরঞ্জীব, হে চিরন্তন, তোমার রহমতের দ্বারা তোমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি। হে বৃক্ষের উৎপাদক, হে শস্য ও বীজের ফাটনকারী, হে সৃষ্টিকর্তা, আমার চুল বৃদ্ধি করো, হে পরম দাতা, দানশীলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
কীভাবে চুল পড়ার দোয়া ও রুকইয়াহ করবেন?
আমরা উপরে যে আয়াত ও দোয়া দিয়েছি আপনি এগুলো পাঠ করবেন। পাঠ করার পর যাইতুন তেল ও বিশুদ্ধ পানিতে তিনবার ফু দিয়ে, তেল মাথায় ব্যবহার করবেন আর পানি পান করবেন। আর যদি আপনি আয়াতগুলো তেলাওয়াত করতে না পারেন, তাহলে এগুলোর অডিও রেকর্ড আপনি শুনে নেবেন।
চুল পড়া বন্ধের দোয়া করার সাথেসাথে চিকিৎসা আবশ্যক
প্রথম প্রথা হচ্ছে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আপনাকে জাগতিক যেসব উপকরণ রয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে পরামর্শগুলো রয়েছে সেগুলো আপনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালন করতে হবে।
কেননা চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষের জন্য তাদের অসুবিধাগুলো দূর করার ন্যাচারাল প্রক্রিয়া। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপায় ও উপকরণও প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর দান ও দয়া। কাজেই চিকিৎসা ও রুকইয়ার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা বা আলাদা ভাবে দেখার হলো অবকাশ নেই। যেখানে জাগতিক উপকরণ ব্যবহার প্রয়োজন সেখানে চিকিৎসা করা অপরিহার্য।
আর বিশেষ করে যে সকল বিষয় সুপার ন্যাচারাল বা যা কিছু চিকিৎসা বিজ্ঞানের নাগালের বাহিরে থাকে, সেই বিষয়গুলো রুকিইয়াহ করা আবশ্যক। যেমন জিন বা জাদু সংক্রান্ত বিষয়। চুল পড়া বন্ধের দোয়া ও রুকিইয়াহ শুরুর আগে কি কি করতে হবে তা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন।