জুলকারনাইন কে ছিলেন? পরিচয় ও বিস্তারিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন কে ছিলেন ? তিনি কোন সময়ে পৃথিবীতে শাসন করেছিলেন? জুলকারনাইন কি নবী ছিলেন? বিস্তারিত আলোচনা

জুলকারনাইন কে ছিলেন?

জুলকারনাইন কে ছিলেন বা তাঁর পরিচয় সম্পর্কে কোরআনে তেমন কিছু বর্ণনা করা হয়নি। বিশুদ্ধ কোনো হাসিদে তাঁর পরিচয় বা শাসনকালের বর্ণনা নেই। কাফেরদের প্রশ্নের উত্তরে পবিত্র কোরআনে সংক্ষেপে তাঁর কিছু কর্মবৃত্তান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই একজন মুসলিমের জন্য উচিত হলো সে বিষয়ে সময় ব্যয় না করা – যার ব্যাপারে কোরআন হাদিস বিস্তারিত বলেনি। যদি তা জানার মধ্যে আমাদের উপকার থাকতো তাহালে অবশ্যই কোরআন বা হাদিসে সে সম্পর্কে বর্ণনা করা হতো।

তদুপরি মুফাস্সিরিনে কেরাম কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনাকে সামনে রেখে জুলকারনাইনের একটা পরিচয় পেশ করেছেন। নিম্নে সংক্ষেপে তা আলোচনা করছি। তবে গুরুত্বেরে সাথে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, যেহেতু যুজুলকারনাইনের পরিচয় সম্পর্কে কোরআন হাদিসে বর্ণনা নেই, তাই তার সম্পর্কে যে যা কিছুই বলবেন সবকিছু হবে অনুমান নির্ভর। আর অনুমান নির্ভর কথা কখনই নিশ্চয়তার ফায়দা দেয় না।

ইবনে কাসির রাহিমাহুল্লাহ জুলকারনাইন সর্ম্পকৃত আয়াতগুলো উল্লেখ করার পর বলেন,

”ذكر الله تعالى ذا القرنين هذا وأثنى عليه بالعدل، وأنه بلغ المشارق والمغارب، وملك الاقاليم وقهر أهلها، وسار فيهم بالمعدلة التامة والسلطان المؤيد المظفر المنصور القاهر المقسط. والصحيح : أنه كان ملكا من الملوك العادلين وقيل كان نبيا. وقيل رسولا. وأغرب من قال ملكا من الملائكة“

‘আল্লাহ তায়ালা এখানে জুলকারনাইনের কথা উল্লেখ করেছেন। আর তার ন্যায়পরায়ণতার প্রসংশা করেছেন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে পৌঁছেছিলেন এবং বিভিন্ন দেশ মহাদেশ জয় করেছিলেন। তাদের মধ্যে তিনি বিচরণ করেছিলেন পূর্ণাঙ্গ ন্যায়ের সাথে। তিনি ছিলেন একজন শক্তিমান ন্যায়বান সাহায্যপ্রাপ্ত সুলতান। কেউ কেউ বলেছেন তিনি নবি ছিলেন। আর কেউ কেউ বলেছেন তিনি ছিলেন রাসুল। আর সবচেয়ে বিস্ময়কর কথা হলো কেউ কেউ বলেছেন তিনি ফেরেস্তা ছিলেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো তিনি ছিলেন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক।’

জুলকারনাইন নামের অর্থ কি? কেন এই নাম করণ?

তার নামের সাথে জুলকারনাইন বা দুই শিং ওয়ালা উপাধি যোগ করার কারণ নিয়েও মতবেধ রয়েছে। ইবনে কাসির রাহিমাহুল্লাহ বলেন,

”واختلفوا في السبب الذي سمي به ذا القرنين فقيل: لانه كان له في رأسه شبه القرنين. قال وهب بن منبه : كان له قرنان من نحاس في رأسه وهذا ضعيف وقال بعض أهل الكتاب لانه ملك فارس والروم. وقيل لانه بلغ قرني الشمس غربا وشرقا “

‘যুল কারনাইন নাম হওয়ার কারণ নিয়ে (আহলে ইলিম) মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন তার মাথায় শিংয়ের মতো কিছু ছিলো। আর ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ বলেছেন, তার মাথায় তামা জাতিয় পদার্থ দ্বারা নির্মিত তার দু’টি শিং ছিলো। তবে একথা দূর্বল। কিছু কিছু আহলে কিতাব বলেছেন, তিনি রোম ও ফারিস বিজয় করার কারণে এই উপাধি পেয়েছেন। আর কেউ কেউ বলেছেন তিনি সূর্যের দুই শিং অর্থাৎ পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তে পোঁছার কারণে এই উপাধি পেয়েছেন।’

জুলকারনাইন
জুলকারনাইন

জুলকারনাইন কি আলেকজান্ডার?

কেউ বলেছেন তাঁর নাম আলেকজান্ডার। আবার কারো মতে জুলকারনাইনের মূল নাম হল খুরস বা খসরু বা সাইরাস। মুফাস্সিরিন ও ইসালামি ঐতিহাসিকগণ সাধারণত জুলকারনাইন দ্বারা আলেকজান্ডারকে বুঝিয়ে থাকেন। তবে ইতিহাসে দু’জন আলেকজান্ডারের সন্ধান পাওয়া যায়। একজন ছিলেন ঈসা আলাইহি ওয়াস সালাম আগমনের তিনশত বছর পূর্বে। যার শিক্ষক ছিলেন দার্শনিক এরিস্টটল।

আরেকজন আলেকজান্ডার ছিলেন ইবরাহিম আলাইহি ওয়াস সালাম এর সময়কালে। তিনি ইবরাহিম আলাইহি ওয়াস সালাম এর হাতে ঈমান এনেছিলেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছিলেন বলে ঐতিহাসিক বর্ণনা পাওয়া যায়। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন এরিস্টটলের ছাত্র আলেকজান্ডার হলেন কোরআনে বর্ণিত যুলকারনাইন। কেননা ইতিহাসে পাওয়া যায় এই আলেকজান্ডার পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অভিযান চালিয়ে বিজয় লাভ করেন এবং খুবই প্রতাপের সাথে বিশ্ব শাসন করেন।

কিন্তু মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম তাদের এমন ধারণাকে একদম সারশূন্য ও বিরাট ভুল একটি অভিমত হিসাবে অবহিত করেছেন। কেননা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত যুল কারনাইন হলেন আল্লাহ ভীরু একজন মুসলিম বান্দা। অথচ এরিস্টটলের ছাত্র আলেকজান্ডার ছিলেন একজন মুশরিক। তাছাড়া যেহেতু জুলকারনাইনের বিষয়টি তাওরাতে বর্ণিত ছিলো তাই স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে এটা ছিলো মুসা আলাইহি ওয়াস সালাম এর আগের ঘটনা। আর মুসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালামÑপৃথিবীতে আগমনের মধ্যে ন্যূনতম পনেরো শত বছরের ব্যবধান ধরা আবশ্যক। অথচ এই আলেকজান্ডারের সময়কাল ছিলো ঈসা আলাইহি ওয়াস সালাম আগমনের মাত্র তিনশত বছর আগে। তাই তিনি কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন হতে পারেন না।

বাদশা জুলকারনাইনের ঘটনা

ইবনে কাসির রাহিমাহুল্লাহ এই দু’জনের পরিচয় পেশ করার পর বলেন,

”وإنما نبهنا عليه لان كثيرا من الناس يعتقد أنهما واحد، وأن المذكور في القرآن هو الذي كان أرطا طاليس وزيره فيقع بسبب ذلك خطأ كبير وفساد عريض طويل كثير، فإن الاول كان عبدا مؤمنا صالح وملكا عادلا وكان وزيره الخضر، وأما الثاني فكان مشركا وكان وزيره فيلسوفا وقد كان بين زمانيهما أزيد من ألفي سنة. فأين هذا من هذا لا يستويان ولا يشتبهان إلا على غبي لا يعرف حقائق الامور“

‘আমরা এই বিষয়ে এ জন্য সতর্ক করে দিলাম যে, অনেক মানুষ মনে করে তারা উভয়জন একই ব্যক্তি। আর কোরআনে বর্ণিত (যুল কারনাইন) হলেন সেই ব্যক্তি যার মন্ত্রী ছিলেন এরিস্টটল। যার ফলে অনেক বড় ভুল ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কেননা প্রথমজন ছিলেন মুমিন নেককার বান্দা ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। তাঁর মন্ত্রী ছিলেন খিযর। আর দ্বিতীয়জন ছিলেন মুশরিক। তার মন্ত্রী ছিলেন ফালসফি। আর তাদের উভয় জনের মধ্যে দুই হাজার বছর থেকেও বেশি সময়ের ব্যবধান ছিলো। তাদের একজন ও অপরজনের অবস্থান কোথায়! কেবল নির্বোধ ও বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া কারো কাছেই তারা দু’জন সমানও নয় সাদৃশ্যপূর্ণও নয়।’

হাফিয ইবনে হাজর বলেন,

”الإسكندر كان قريبا من زمن عيسى عليه السلام وبين زمن إبراهيم وعيسى أكثر من ألفي سنة والذي يظهر أن الإسكندر المتأخر لقب بذي القرنين تشبيها بالمتقدم لسعة ملكه وغلبته على البلاد الكثيرة أو لأنه لما غلب على الفرس وقتل ملكهم انتظم له ملك المملكتين الواسعتين الروم والفرس فلقب ذا القرنين لذلك والحق أن الذي قص الله نبأه في القرآن هو المتقدم“

‘ইস্কন্দর ছিলেন ঈসা Ñআলাইহিস সালামÑ এর নিকটবর্তী সময়ে। আর ঈসা ও ইবরাহিম আলাইহিমাস সালাম এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান হলো দুই হাজার বছর থেকেও বেশি। তাই এটা মনে হয় যে, পরবর্তী ইস্কন্দরকে জুলকারনাইন উপাধি দেওয়া হয়েছে পূর্ববর্তী জনের সাথে বিস্তৃত রাজ্য ও দেশ দেশান্তর বিজয় করার দিক থেকে সাদৃশ্য রাখার কারণে। অথবা হতে পারে ফারিস বিজয় করে রাজাদের হত্যা করে দু’টি বিস্তৃত রাজ্য – রোম ও ফারিস, নিজের শাসনে নিয়ে আসার ফলে জুলকারনাইন উপাধি প্রাপ্ত হয়েছিলো। আর সত্য হলো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে যার কথা বলেছেন তিনি হলেন প্রথমজন। তাদের দুজনের মধ্যে নানান দিক থেকে ফারাক রয়েছে।’

ইস্কন্দর কি জুলকারনাইন ছিলেন?

যদিও মুহাক্কিক মুতায়াখ্খিরিন উলামায়ে কেরাম পূর্ববর্তী ইস্কন্দরকে যুল কারনাইন হওয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়ে আসছেন কিন্তু তিনি পৃথিবীময় শাসন ও পশ্চিম থেকে পূর্ব দিগন্তে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন বলে ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায় না। তাছাড়া ইবরাহিম আলাইহি ওয়াস সালাম এর যুগে নমরুদ ছিলো প্রতাপশালী শাসক। সে সময় ইস্কন্দর যদি পুরো দুনিয়ার শাসক ছিলেন, তাহলে প্রশ্ন হবে নমরুদের রাজ্য কোথায় ছিলো ? যার বর্ণনা কোরআনে এসেছে ? যদি বলা হয় নমরুদ মারা যাওয়ার পর ইস্কন্দর শাসক হয়েছিলেন, তাহলে এ কথাটির পক্ষে ঐতিহাসিক দলিল প্রমাণের প্রয়োজন হয়। অথচ কেবল অনুমান ছাড়া তার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। তাই পূর্ববর্তী ইস্কন্দরও যুল কারনাইন হওয়ার অভিমতটিও প্রশ্নবৃদ্ধ হয়ে পড়ে।

মাওলানা মওদুদি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘প্রাচীন যুগের মুফাসসিরগণ সাধারণত জুলকারনাইন বলতে আলেকজান্ডারকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু কোরআনে তাঁর যে গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে আলেকজান্ডারের সাথে তার মিল খবই কম। আধুনিক যুগে ঐতিহাসিক তথ্যাবলীর ভিত্তিতে মুফাসসিরগণের অধিকাংশ এমত পোষণ করেন যে, তিনি ছিলেন ইরানের শাসনকর্তা খুরস তথা খসরু বা সাইরাস। এ মত তুলনামূলকভাবে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। তবুও এখন পর্যন্ত সঠিক ও নিশ্চিতভাবে কোনো ব্যক্তিকে যুল কারনাইন হিসাবে চিহ্ণিত করা যেতে পারেনি।’

অতপর মাওলানা মওদুদি রাহিমাহুল্লাহ খুরসের সাথে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যের মিল দেখিয়ে লম্বা আলেচনা করেন। খুরসের সময়কাল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘খৃস্টপূর্ব ৫৪৯ অব্দের কাছাকাছি যুগ থেকে তাঁর উত্থান শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি মিডিয়া (আল জিবাল) এবং লিডিয়া (এশিয়া মাইনর) রাজ্য জয় করার পর ৫৩৯ খৃস্টপূর্বাব্দে বেবিলন জয় করেন।’

মাওলানা মওদুদি রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক বর্ণিত বিশ্লেষণটি তাত্তিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার অধিক উপযুক্ত ছিলো। কিন্তু তিনি খুরসের যে শাসনকাল উল্লেখ করেছেন তার উপর প্রশ্ন উত্থাপন করার অবকাশ থেকে যায়। কারণ কোরআন নাযিলের আগ থেকে যুল কারনাইন সম্পর্কে আরবের ইয়াহুদিরা অবগত ছিলো। তারাই মক্কার মুশরিকদের শিখিয়ে দিয়েছিলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জুলকারনাইনের বিষয়ে প্রশ্ন করতে। যেমনটা আয়াতের বাচনভঙ্গি থেকে বুঝা যাচ্ছে।

জুলকারনাইন এর মৃত্যু

আলুসি বলেন, ‘প্রশ্নকারীদের সম্পর্কে প্রসিদ্ধি রয়েছে তারা হলো মক্কার কাফির গুষ্ঠি। তারা ইয়াহুদিদের দিকনির্দেশনায় প্রশ্ন করেছিলো।’

এ থেক বুঝা যায়, যুল কারনাইনের বিষয়টি তাওরাতে বর্ণিত ছিলো। আর তাওরাত যেহেতু মুসা আলাইহিস সালাম এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিলো, তাই ধরতে হবে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইনের শাসনকাল ছিলো মুসা আলাহিস সালাম পৃথিবীতে আগমনের পূর্বে। অন্যদিকে মুসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালাম এর মধ্যে পনেরো শতো থেকে দুই হাজার বা তারও বেশি বছর সময়ের ব্যবধান ছিলো।

যেমন আবু জাফর তাবারি রাহিমাহুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেন,

”قال كان بين موسى بن عمران وعيسى بن مريم ألف سنة وتسعمائة سنة ولم يكن بينهما فترة وإنه أرسل بينهما ألف نبي من بني إسرائيل سوى من أرسل من غيرهم“

‘ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন মুসা ইবনে ইমরান আর ঈসা ইবনে মারইয়ামের মধ্যে এক হাজার সাতশত বছরের ব্যবধান ছিলো। আর তারা দু’জনের মাঝখানে (নবি আগমনে) বিরতি ছিলো না। তাদের দু’জনের মধ্যবর্তী সময়ে অন্যান্য জাতি ব্যতীত কেবল বনি ইসরাইল থেকে এক হাজার নবি প্রেরিত হয়েছিলেন।’ অন্যান্য বর্ণনায় একটু কমবেশ রয়েছে। কিন্তু সর্বনিম্ন হিসাবে ব্যবধান ধরতে গেলে পনেরো শতো বছরের কম ধরা যাবে না। কেননা মুসা আলাহিস সালাম পৃথিবী থেকে বিদায়ের পর ঈসা আলাহিস সালাম আগমনের আগ পর্যন্ত বনি ইসরাইল থেকে আরো অসংখ্য নবি পৃথিবীতে এসেছিলেন।

যেমনটা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর রেওয়ায়াত থেকে স্পষ্ট। যাদের মধ্যে হিযকিল, আল-য়াসা, শামুয়েল, দাউদ, সুলায়মান, দানিয়াল, উযায়র, যাকারিয়া ও ইয়াহয়িয়া প্রমুখ আলাইহিমুস সালাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের প্রত্যেকের দাওয়াতের কাল যদি পঞ্চাশ থেকে একশত বছর পর্যন্ত গণ্য কারা হয় তাহলে অবশ্যই বলতে হবে মুসা ও ঈসা আলাইহিমাস সালাম এর মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১৫০০ বছর থেকে আরো অনেক বেশি ছিলো। আবার মুসা আলাইহিস সালাম এর সময়েও জুলকারনাইন ছিলেন বলা যাবে না।

কেননা মুসা আলাইহিস সালাম যখন পৃথিবীতে দাওয়াতের কাজ করেন তখন ছিলো ফিরাউনদের শাসনকাল। মুসা আলাইহিস সালাম এর হাতে শেষ ফিরাউন ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক শতাব্দিকাল থেকে ফিরাউনরা প্রতাপের সাথে মিসর শাসন করে আসছিলো। সুতরাং ফিরাউনদের সময়ও যুল কারনাইন থাকা সম্ভব নয়।

জুলকারনাইনরে শাসনকাল

তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন দেখা দেয়, পবিত্র কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইনের সময়কাল খৃস্টপূর্ব ৫৩৯ সালে হওয়া কীভাবে সম্ভব হলো? তিনি তো নিম্নে খৃস্টপূর্ব ১৫০০ বছর বা তারও বহু আগের কেউ হওয়া চাই। মাওলানা মওদুদি রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক পেশকৃত তাফসিরটির উপর উল্লেখিত প্রশ্নটি উত্থাপন হলেও তাঁর তাফসিরটির শক্তিমত্তা দূর্বল হবে না। কেননা ইয়াহুদিরা মুসা আলাইহিস সালাম এর উপর অবতীর্ণ তাওরাত থেকে জুলকারনাইন সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যিক নয়।

মুসা আলাইহিস সালাম এর পর যদিও তাঁর শরিয়ত বাকি ছিলো। কিন্তু বনি ইসরাইলের অন্যান্য নবিদের প্রতি আসমানি সংবাদ আসতো। তাদের কাউকে কিতাব কাউকে সহিফ দেওয়া হয়েছিলো, যেমন দাউদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

وَآَتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا

‘আর আমি দাউদকে দিয়েছি যাবুর।’

হতে পারে ইয়াহুদিরা মুসা আলাইহিস সালাম এর পর অন্য কোনো নবির কাছ থেকে যুল কারনাইন সম্পর্কে অবগত হয়েছিলো। তাই খুরস জুলকারনাইন হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় একটু বেশি। যেহেতু কোরআনে বর্ণিত গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যগুলো তাঁর মধ্যে অধিকভাবে মিলে যায় এবং বাইবেলও তাকে সমর্থন করে। কিন্তু শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না তিনিই যুল কারনাইন। এভাবে প্রথম ইস্কন্দর যাকে যুল কারনাইন হওয়ার ব্যাপারে মুতায়াখ্খিরিন মত দিয়েছেন তাও স্বার্ভিকভাবে প্রত্যাখান করা যাবে না। হতে পারে তাঁর শাসন ও বিজয়ের ইতিহাস সংরক্ষণে নেই। যেভাবে সুলাইমান আলাইহিস সালাম এর বিশাল রাজ্যের কথা কোরআনে আছে কিন্তু দুনিয়ার ইতিহাসে তার নাম পাওয়া যায় না।

জুলকারনাইন কি নবী ছিলেন?

জুলকারনাইন নবী ছিলেন এই সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা তিনি নবি ছিলেন এই কথা প্রত্যাখান করা যাবে না। যেহেতু কোরআন তাঁর নবি হওয়াকে অস্বীকার করেনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তা প্রত্যাখান করেননি। যেমন আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

”ما أدري أتبع كان لعينا أم لا و ما أدري أذو القرنين كان نبيا أم لا و ما أدري الحدود كفارة لأهلها أم لا“

‘আমি জানি না তুবা সম্প্রদায় অভিসপ্ত কি না। এভাবে যুল কারনাইন নবি কি না ও সাজা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য কাফ্ফারা কি না তাও আমি জানি না।’

সুতরাং শেষ কথা হলো যুল কারনাইন কে ছিলেন। কোন সময়ে তিনি শাসন করেছেন তা নিশ্চিতভাবে বলার মতো দলিল আমাদের হাতে নেই। কেবল খুরসের ব্যাপারে সম্ভাবনাটা একটু বেশি বলা যায়।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment