তায়াম্মুমের শর্ত কী কী? তায়াম্মুম কখন জায়েজ?

পোস্টটি শেয়ার করুন

ইসলামে তায়াম্মুম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা বিশেষ অবস্থায় অজুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এতে মাটি বা মাটি-জাতীয় উপকরণের সাহায্যে পবিত্রতা অর্জন করা হয়। এই প্রবন্ধে আমরা তায়াম্মুমের শর্ত কী কী এবং তায়াম্মুম কখন জায়েজ, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

তায়াম্মুমের শর্ত কয়টি ও কী কী?

তায়াম্মুম সহীহ হওয়ার জন্য আটটি শর্ত রয়েছে:

প্রথম শর্ত । নিয়ত

১. নিয়তের প্রকৃতি: নিয়ত হলো কোনো কাজ করার জন্য অন্তরে দৃঢ় সংকল্প করা।
২. নিয়তের সময়: তায়াম্মুমের উপকরণে হাত দ্বারা চাপ দেওয়ার সময় নিয়মত করতে হবে।
৩. নিয়ত সহীহ হওয়ার শর্ত তিনটি:

  • ইসলাম বা মুসলিম হওয়া।
  • বুঝ বা বুদ্ধি থাকা।
  • যে উদ্দেশ্যে নিয়ত করা হচ্ছে, তা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা।

৪. তায়াম্মুমের নিয়ত সহীহ হওয়ার জন্য তিনটি বিষয়ের যে কোনো একটি থাকা আবশ্যক:

  • পবিত্রতার নিয়ত।
  • নামাজের বৈধতার জন্য নিয়ত।
  • এমন কোনো ইবাদতের নিয়ত, যা পবিত্রতা ছাড়া সহীহ হয় না।

যদি কেউ শুধুমাত্র তায়াম্মুমের নিয়ত করে বা কুরআন পাঠের জন্য তায়াম্মুম করে (যদি সে অপবিত্র – হাদাস আকবর না থাকে), তবে সেই তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়া জায়েয হবে না।

দ্বিতীয় শর্ত

তায়াম্মুম বৈধকরাী ওজর বা অপারগতা বিদ্যমান থাকা। যেমন,

১. পানি থেকে এক মাইল বা তার অধিক দূরে থাকা, সেটা তা শহরে হলেও।
২. অসুস্থতা।
৩. এমন ঠাণ্ডা, যা থেকে মৃত্যু বা অসুস্থতার আশঙ্কা থাকে।
৪. শত্রুর ভয়।
৫. তৃষ্ণা।
৬. অল্প পানি রয়েছে সেটা দ্বারা রুটি বানানো আবশ্যক। সেটা সুপ তৈরির জন্য নয়।
৭. পানি আনার সরঞ্জামের অভাব থাকলে বা জানাজার নামাজ বা ঈদের নামাজের সময় চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে।

তৃতীয় শর্ত

তায়াম্মুমের বস্তু এমন হতে হবে, যা মাটি জাতীয় এবং পবিত্র, যেমন: মাটি, পাথর বা বালু। কাঠ, রূপা বা সোনা দ্বারা তায়াম্মুম সহীহ নয়।

চতুর্থ শর্ত

তায়াম্মুমে হাত দ্বারা পুরো নির্ধারিত জায়গা মাসাহ করতে হবে।

পঞ্চম শর্ত

হাতের পুরো অংশ বা বেশিরভাগ অংশ দিয়ে মাসাহ করতে হবে। যদি কেবল দুই আঙুল দিয়ে মাসাহ করা হয়, তবে তা সহীহ হবে না। এমনকি যদি বারবার মাসাহ করে পুরো জায়গা মাসাহপূর্ণ করে ফেলে। তবে মাথার মাসাহ ভিন্ন।

ষষ্ঠ শর্ত

দুইবার হাত দ্বারা মাটিতে চাপ মারা। হাতের তালু দিয়ে মাটির উপর দুইবার আঘাত করতে হবে। একই স্থানে দুইবার চাপ মারলেও সমস্যা নেই।

  • তায়াম্মুমের নিয়তে দেহে মাটির সংস্পর্শ আসলে তা দুই আঘাতের স্থলাভিষিক্ত হবে।

সপ্তম শর্ত

হায়েজ, নিফাস বা অন্য কোনো অপবিত্রতার অবসান।

অষ্টম শর্ত

মসাহকে বাধা সৃষ্টি করে এমন বস্তু যেমন মোম বা চর্বি দূর করা।

তায়াম্মুম কখন জায়েজ?

১. পানি না পাওয়া: যদি আশপাশে পানির ব্যবস্থা না থাকে এবং তা আনার জন্য যথেষ্ট সময় বা সামর্থ্য না থাকে।

২. অসুস্থতা: যদি পানি ব্যবহারে রোগ বাড়ার আশঙ্কা থাকে বা চিকিৎসকের পরামর্শে পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়।

৩. প্রচণ্ড ঠান্ডা: যদি ঠান্ডা এত বেশি হয় যে, পানি ব্যবহারে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা থাকে এবং গরম করার কোনো ব্যবস্থা না থাকে।

৪. তৃষ্ণার জন্য পানি সংরক্ষণ: যদি পানি শুধু পান করার জন্য প্রয়োজন হয় এবং তা দিয়ে অজু করলে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য পানি না থাকে।

৫. শত্রুর ভয়: যদি পানি আনতে গেলে শত্রুর আক্রমণের আশঙ্কা থাকে।

উপসংহার

তায়াম্মুম একটি সহজ ও সহনশীল বিধান, যা আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমোদন করেছেন। এটি অজুর বিকল্প হলেও এর শর্তাবলী ও পদ্ধতি যথাযথভাবে মানা আবশ্যক। তাই তায়াম্মুম করার আগে এর বিধান ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে তাঁর বিধান মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।


পোস্টটি শেয়ার করুন