মেসওয়াকের অনেক ফজিলত হাদীস ও ইসলামী বইগুলোতে উল্লেখ আছে। যদিও “৭০টি ফজিলত” বলে একটি বিশেষ নির্দিষ্ট সহীহ তালিকা নেই, তবে বিভিন্ন কিতাবে একত্রিত ফজিলতগুলো থেকে বিশদভাবে ৭০টি গুণ বা উপকারিতা সংকলন করা সম্ভব। এখানে আমরা মেসওয়াকের ৭০ টি ফজিলত সাজিয়ে দিচ্ছি:
মেসওয়াকের ৭০ টি ফজিলত
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়
- রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাহ পালন হয়
- ফেরেশতাগণ খুশি হন
- মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়
- দাঁত পরিষ্কার থাকে
- দাঁত মজবুত হয়
- মাড়ি শক্ত হয়
- মাড়ির রোগ দূর হয়
- মুখের রঙ উজ্জ্বল হয়
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায়
- জ্ঞান বৃদ্ধি পায়
- বুদ্ধি প্রখর হয়
- স্মরণশক্তি উন্নত হয়
- রিযিক বৃদ্ধি হয়
- স্বাস্থ্য ভালো থাকে
- পাকস্থলী সুস্থ থাকে
- হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়
- মাথা ঠান্ডা হয়
- ক্ষুধা বৃদ্ধি হয়
- নাকের রোগ থেকে বাঁচায়
- গলার রোগ থেকে রক্ষা করে
- মুখে প্রশান্তি আসে
- কথাবার্তায় মাধুর্য আসে
- মৃত্যুর সময় কালিমা সহজ হয়
- কবরের আজাব কমে
- সিজদার সময় মাথা নরম হয়
- নামাজে একাগ্রতা বাড়ে
- ওজু পূর্ণ হয়
- নামাজের সওয়াব বহুগুণ বেড়ে যায়
- কোরআন তিলাওয়াতের সময় জিহ্বা পরিচ্ছন্ন থাকে
- হাদীস পড়ার সময় বরকত আসে
- দোয়া কবুলের সহজ উপায় হয়
- নেক আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়ে
- গুনাহ মাফের সুযোগ সৃষ্টি হয়
- আত্মার উজ্জ্বলতা বাড়ে
- ইবাদতে মিষ্টতা আসে
- অন্তরের প্রশান্তি আসে
- অহংকার কমে
- দম্ভ দূর হয়
- মানুষ দ্বারা সম্মানিত হওয়া যায়
- কথা বলার সময় মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে
- মিথ্যা কথা বলার প্রবণতা কমে
- গীবত ও মন্দ বাক্য থেকে বাঁচায়
- নাকের ভিতরের পরিষ্কার হয়
- দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবার অপসারণ হয়
- ঠোঁটের সৌন্দর্য বাড়ে
- জীবাণু ধ্বংস হয়
- মুখের ক্ষত শুকায়
- দাঁতের ব্যথা কমে
- দাঁতের শিরীষা (প্লাক) দূর হয়
- মুখের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বৃদ্ধি পায়
- মুখের তাজা ঘ্রাণ আসে
- শয়তানের প্রভাব কমে
- মনোযোগ বৃদ্ধি পায়
- লজ্জাশীলতা বৃদ্ধি পায়
- মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় (আধুনিক গবেষণায় ইঙ্গিত আছে)
- জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে
- দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন কমে
- জীবনের স্বাস্থ্যকরতা বজায় থাকে
- হৃদয়ের দয়া বৃদ্ধি পায়
- রাসূল ﷺ-এর অনুরাগ লাভ হয়
- মুমিনের পরিচয় প্রকাশ পায়
- শরীরের অলসতা দূর হয়
- আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত অবতীর্ণ হয়
- সুগন্ধ আসে
- গলার স্বর সুন্দর হয়
- হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
- দাঁতের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়
- কিয়ামতের দিন নূর বৃদ্ধি হবে
- জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ হবে ইনশাআল্লাহ
একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট
🔹 “মেসওয়াক করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন ও শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।” — (নাসাঈ, হাদীস ৫):
🔹 “নামাজের আগে মেসওয়াক করা নামাজের সওয়াব সত্তর গুণ বৃদ্ধি করে।” — (মুসনাদে আহমদ: হাদীস ২৬৩৭১)
📜 ১. মেসওয়াকের প্রতি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর উৎসাহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ وُضُوءٍ»
“আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর না হলে, আমি প্রত্যেক ওজুর সময় তাদের মেসওয়াকের আদেশ করতাম।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৫২)
📜 ২. মেসওয়াক নামাজের গুণ বাড়ায়
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«فَإِنَّ فِي السِّوَاكِ مَطْهَرَةً لِلْفَمِ، مَرْضَاةً لِلرَّبِّ»
“নিশ্চয়ই মেসওয়াক মুখের পরিচ্ছন্নতা এবং রবের সন্তুষ্টির মাধ্যম।” (সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৪৭, সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৫৩)
📜 ৩. মেসওয়াক মৃত্যুকালেও গুরুত্ব পেয়েছে
হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন:
“রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জীবনের শেষ সময়ে আমি তাঁকে মেসওয়াক দিয়েছিলাম।” (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৮৮৯)
📜 ৪. ওজুর সময় মেসওয়াক করা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
«السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ وَمَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ»
“মেসওয়াক মুখের পবিত্রতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম।” (মুসনাদে আহমদ: ২৬৩৭১, নাসাঈ: ৫)
📜 ৫. মেসওয়াকের প্রতি বারংবার উৎসাহ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমরা মেসওয়াক করো। কেননা এতে মুখ পরিষ্কার হয় এবং দাত ও মাড়ি মজবুত হয়।” (মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীস: ২৬১৩)
🧡 সংক্ষেপে উপকারিতা:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ
- মুখ ও দাঁত পরিষ্কার থাকে
- নামাজে অধিক খুশু আসে
- মৃত্যুকালে কলিমা সহজ হয়
- নেক আমলের সওয়াব বৃদ্ধি পায়
🧪 মেসওয়াকের আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
বর্তমানে বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, মেসওয়াক শুধু একটি ধর্মীয় সুন্নত নয়, বরং এটি এক অসাধারণ প্রাকৃতিক দাঁত ও মুখের যত্নের মাধ্যম।
নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. দাঁতের ক্যাভিটি ও ক্ষয় প্রতিরোধ করে
- মেসওয়াকে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতে প্লাক জমতে বাধা দেয়।
- এতে দাঁতের ক্ষয় ও গর্ত (Cavity) হওয়ার আশঙ্কা কমে।
২. মাড়ির রোগ ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করে
- মেসওয়াক নিয়মিত ব্যবহারে Gingivitis (মাড়ির প্রদাহ) ও Periodontitis (মাড়ির গভীর সংক্রমণ) প্রতিরোধ হয়।
- এটি মাড়িকে মজবুত করে ও রক্তপাত কমায়।
৩. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে
- মেসওয়াকের প্রাকৃতিক গন্ধ মুখের দুর্গন্ধ (Bad Breath বা Halitosis) দূর করে।
- এটি মুখকে সতেজ ও পরিষ্কার রাখে দীর্ঘ সময়।
৪. দাঁত প্রাকৃতিকভাবে সাদা করে
- মেসওয়াক দাঁতের উপর জমে থাকা দাগ ও কালচে আবরণ সরাতে সহায়তা করে।
- নিয়মিত ব্যবহারে দাঁত উজ্জ্বল ও চকচকে হয়।
৫. মুখের পিএইচ (pH) ব্যালান্স ঠিক রাখে
- মেসওয়াক মুখের লালাস্বরে (Saliva) স্বাভাবিক অম্ল-ক্ষার মাত্রা (pH balance) বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- ফলে মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়।
৬. প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য
- মেসওয়াকে থাকা উপাদান যেমন সালভাডোরিন (Salvadorine), ট্যানিন (Tannin), ফ্লোরাইড ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।
৭. প্লাক ও টার্টার কমায়
- টুথব্রাশের থেকেও মেসওয়াক বেশি কার্যকরভাবে প্লাক এবং টার্টার জমা রোধ করতে পারে (গবেষণায় প্রমাণিত)।
৮. দাঁতের প্রাকৃতিক এনামেল রক্ষা করে
- মেসওয়াকের মৃদু রগড়ের কারণে দাঁতের প্রাকৃতিক এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বরং দীর্ঘস্থায়ী হয়।
📚 বৈজ্ঞানিক গবেষণার কিছু রেফারেন্স
- “Miswak: A periodontist’s perspective” — Journal of the International Academy of Periodontology, ২০০৩
- “The antibacterial activity of Miswak chewing stick” — Saudi Dental Journal
- WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) মেসওয়াকের ব্যবহারে মুখের স্বাস্থ্য রক্ষার পক্ষে মত দিয়েছে।