শিক্ষনীয় গল্প : গাধা ও হীরার টুকরো । বাস্তব জীবনের অনুপ্রেরণা

পোস্টটি শেয়ার করুন

গল্প হচ্ছে সাহিত্যের একটি অনিন্দ্য পাঠ। গল্প আমাদেরকে শিক্ষা দেয়। গল্প আমাদেরকে হাসায়, কাঁদায়, ভাবতে শেখায়। জীবনে পরিবর্তন আনতে বিরাট সাহায্য করে। তাই যুগে যুগে শিক্ষনীয় গল্প হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনে পট পরিবর্তন ও মনন গঠনের অবিচ্ছেদ অংশ।

আমরা আমাদের পাঠকদের জন্য এই পোস্টটিতে কয়েকটি গল্প শেয়ার করব। যে গল্পগুলো আপনাকে আপনার জীবনে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। আপনাকে ভাবতে শিখাবে। জীবনের পথ পরিক্রমায় আপনাকে অবিচল থাকতে অনুপ্রেরণা দেবে।

শিক্ষনীয় গল্প ১ : শিক্ষক-ছাত্র ও একটি গাধার গল্প

একবার একজন শিক্ষক তার এক ছাত্রকে একটি উপদেশ দিলেন। সেই শিক্ষক চাচ্ছিলেন তার ছাত্রটি যেন জীবনভর এই উপদেশটি মনে রাখে। তাই তিনি একটি বাস্তবিক কর্মের মাধ্যমে তার উপদেশটি ছাত্রের মনে গেঁথে দিতে চাইলেন।

তিনি তার ছাত্রকে নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বের হলেন। তাদের সাথে একটি গাধাও নিলেন। তিনি ছাত্রকে বললেন, তুমি গাধার পিঠে চরে বসো। এভাবে ছাত্রটি গাধার পিঠে আরোহন করে যাচ্ছিল আর শিক্ষক যাচ্ছিলেন পায়ে হেঁটে। পথের মধ্যখানে একদল লোকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। সেই লোকগুলো তাদেরকে দেখে বলল দেখো কত বেয়াদব একটি ছাত্র। তার শিক্ষক যাচ্ছেন কষ্ট করে পায়ে হেঁটে। আর সে ছাত্র হলে যাচ্ছে গাধার পিঠে চড়ে।

এই মন্তব্যটি শোনার পর এবার শিক্ষক গাধার পিঠে আরোহণ করলেন, আর তার ছাত্রটি যাচ্ছিলো পায়ে হেঁটে। কিছুদূর যাওয়ার পর অন্য আরেক দল লোকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। সেই লোকেরা তাদেরকে দেখে বলল, দেখো কত কত নির্মম একজন শিক্ষক। তিনি যাচ্ছেন গাধায় চড়ে আর তার ছাত্র যাচ্ছে পায়ে হেঁটে। ছোট এই ছাত্রটিকে তিনি তো চাইলে গাধা পিঠে ছড়িয়ে নিতে পারতেন।

এই মন্তব্যটি শোনার পর এবার শিক্ষক নেমে তারা উভয়ই – ছাত্র শিক্ষক পায়ে হেঁটে যেতে লাগলেন। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর আরেক দল লোকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। সেই লোকগুলো তাদেরকে দেখে বলল, দেখো এরা কত নির্বোধ। একটি গাধা খালি পিঠে যাচ্ছে। আর তারা দুজন কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন। বুদ্ধি থাকলে তো তারা গাধার পিঠে চড়ে যেতে পারতেন।

এই মন্তব্যটি শোনার পর তারা উভয় গাধার পিঠে চড়ে বসলেন। এভাবে তারা যাচ্ছিলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর আরেকদল লোকের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। এই লোকগুলো তাদেরকে দেখে বলল, দেখো এরা কত নিষ্ঠুর মানুষ দুজন। মানুষ ছোট্ট একটি গাধার পিঠে দুজ মানুষ চড়ে যাচ্ছেন। গাধাটি তাদেরকে নিয়ে কতই না কষ্ট করছে। এই মন্তব্যটি শোনার পর শিক্ষক তার ছাত্রকে নিয়ে একটি নদীর পারে গেলেন।

সেখানে গিয়ে তার ছাত্রকে নদীর প্রবাহিত জলশ্রুত দেখিয়ে বললেন, বাবা তুমি চাইলে এই নদীর স্রোত বন্ধ করে দিতে পারবে। যদি নদীর মধ্যখানে শক্তিশালী একটি বাঁধ নির্মাণ করে ফেলো, তাহলে এই স্রোত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তুমি কখনোই মানুষের মুখ থেকে আসা মন্তব্যের স্রোত বন্ধ করতে পারবে না।

তুমি যেই কাজই করো না কেন, সেই কাজটি নিয়ে একদল মানুষ একটি নেগেটিভ মন্তব্য করবেই। কাজেই যখন তুমি কোনো কাজের উদ্যোগ নেবে তখন তুমি কেবল একটি বিষয় মাথায় রাখবে যে, তোমার কাজটি সঠিক কিনা। অতপর তুমি তোমার নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে থাকবে। যদি তুমি মানুষের মন্তব্য গা ভাসিয়ে দাও তাহলে কখনোই তুমি সফলকাম হতে পারবে না।

শিক্ষনীয় গল্প : এ গল্পটি আমাদেরকে শেখায় যে, আমরা আমাদের চারপাশে নেগেটিভ মন্তব্যের মানুষ অহরহ পাবো। কিন্তু তাদের মন্তব্যগুলো আমরা আমলে নেওয়া উচিত হবে না। কেননা মানুষের মন্তব্য আমাদেরকে কেবল পশ্চাৎকামী করবে। সামনে অগ্রসর হতে দিবে না। যদি এই শিক্ষক আর ছাত্র মানুষের মন্তব্য শোনার পর সামনে অগ্রসর না হতেন, তাহলে তারা যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন সেখানেই থেকে যাতেন, তারা সামনে যেতে পারতেন না।

গল্প ২ : এক টুকরো হীরার গল্প

একবার একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে একটি হীরার টুকরো দিয়ে বললেন এটি তুমি একজন নাপিতের কাছে বিক্রি করে আসো। ছাত্রটি নাপিতের কাছে গেলে নাপিত এই হীরার টুকরোর বিনিময়ে তাকে কোন টাকা দিতে সম্মত হলো না। সে বলল এটা অযথা একটি জিনিস। এই কথা শুনে ছাত্রটি নিরাশ হয়ে তার শিক্ষকের কাছে চলে আসলো।

এবার শিক্ষক কললেন তুমি এই হীরার টুকরোটি নিয়ে একজন মুচির কাছে গিয়ে দেখো সে তোমাকে এর বিনিময়ে কত টাকা দিতে সম্মত হয়। ছাত্রটি মুচির দোকানে গিয়ে বলল, এটি যদি আমি বিক্রি করি তাহলে তুমি কত টাকা আমাকে দিবে?

মুচি বলল এর বিনিময়ে আমি তোমাকে এক টাকাও দিতে পারব না। এটি অহেতুক একটি জিনিস। এবার শিক্ষক ছাত্রটিকে বললেন এই হীরার টুকরোটা নিয়ে তুমি একজন মুদির দোকানদারের কাছে গিয়ে দেখো বিক্রি করতে চাইলে সে কত টাকা দিতে সম্মত হয়।

শিক্ষকের কথা অনুযায়ী ছাত্রটি একজন মুদির দোকানদারের কাছে গিয়ে বলল, আমি এটা বিক্রি করলে আপনি আমাকে কত টাকা দিবেন এর বিনিময়ে? মুদির দোকানদার বলল এটির বিনিময়ে তোমাকে আমি একশত টাকা দেবো। কেননা জিনিসটা দেখতে একটু সুন্দর লাগছে, এটি আমার টেবিলের উপর রাখবো।ছাত্রটি একথা শুনে শিক্ষকের কাছে চলে আসলো।

এবার শিক্ষক ছাত্রকে বললেন তুমি আমার সাথে চলো, আমি তোমাকে এটির আসল মূল্য দেখাযব। এ কথা বলে শিক্ষক তার ছাত্রকে নিয়ে একজন হীরার দোকানদারের কাছে গেলেন। গিয়ে বললেন এটি যদি বিক্রি করি তাহলে এর মূল্য কত হতে পারে? হীরার দোকানি তাকে বলল এটি বিক্রি করলে আপনাকে আমি দশ লক্ষ টাকা দিতে পারব। শিক্ষক আর একটু চাপাচাপি করলে বলল ঠিক আছে আমি আপনাকে ১২ লক্ষ টাকা দিতে পারব।

এবার শিক্ষক তার ছাত্রকে বললেন দেখো, যারা এই জিনিসটির মূল্য জানে তারাই কেবল মূল্য দিতে পারে কিন্তু যারা মূল্য জানে না তারা এটির মূল্য দিতে পারে না। কাজেই তোমার জীবনে অনেক মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হতে পারে যারা তোমাকে চিনবে না, তোমার মূল্য তাদের কাছে জানা নেই, তাই তারা তোমাকে অবহেলা করবে। কিন্তু তুমি যদি ভালোভাবে লেখাপড়া করে একজন ভালো মানুষ হও তাহলে যারা তোমাকে প্রকৃতপক্ষে চিনবে তারা তোমাকে অবশ্যই মূল্য দেবে। কেউ তোমাকে অবহেলা করে তাহলে তুমি নিরাশ হইও না। ভেঙে পড়ো না।

শিক্ষনীয় গল্প : এখান থেকে আমরা শিখলাম আমাদের জীবনে অনেকের সাথে সাক্ষাত হবে, পরিচয় হবে, কিন্তু তারা আপনাকে অবহেলা করে চলে যাবে। আপনাকে আপনার প্রাপ্য মূল্য দিবে না কিন্তু এটা দেখার পর আপনি কখনোই আপনাকে অবমূল্যায়ন করবেন না। কেননা আপনাকে যে চিনবে আপনার ভেতরকার সৌন্দর্য ও সৃজনশীলতা সম্পর্কে যে জানবে আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা সে কখনোই অবলম্বন করবে না। তার কাছে আপনি অবশ্যই মূল্য পাবেন।

আর যারা আপনাকে চিনে না, সে আপনার সাথে যেভাবে হীরার টুকরো নিয়ে যাওয়ার পর ছাত্রটি মুচি, নাপিত, মুদির দোকানির কাছে অবমলিত হয়েছিল সেভাবে আপনি মানুষের কাছে অবমূল্যায়ীত হবেন কিন্তু এটা কোন ব্যাপার না। আপনি এগিয়ে যেতে থাকবেন।

আরো পড়ুন:


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x