অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া | বাংলা । আরবি । হাদিস ও আমল

পোস্টটি শেয়ার করুন

মানুষের জীবনে অসুস্থতা একটি সাধারণ ঘটনা। কখনো এটি শারীরিক কষ্ট দেয়, আবার কখনো মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। অসুস্থতার সময়ে দোয়া করা শুধু শারীরিক আরোগ্যই আনে না, বরং আধ্যাত্মিক প্রশান্তিও প্রদান করে। তাই অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতময় একটি আমল।

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া

আরবি:

اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ يَنْكُأْ لَكَ عَدُوًّا، أَوْ يَمْشِيَ لَكَ إِلَى صَلَاةٍ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাশফি ‘আবদাকা ইয়ানকুঅ লাকা ‘আদুয়্যান, আও ইয়ামশিয়া লাকা ইলা সালাহ।

অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি তোমার বান্দাকে সুস্থ করে দাও। যাতে সে তোমার শত্রুকে ক্ষতি করতে পারে অথবা তোমার দিকে (মসজিদে) নামাজ পড়তে যেতে পারে।

মূল হাদিস

عَنِ ابْنِ عَمْرٍو، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا جَاءَ الرَّجُلُ يَعُودُ مَرِيضًا، فَلْيَقُلْ: اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا، أَوْ يَمْشِي لَكَ إِلَى جَنَازَةٍ “، قَالَ أَبُو دَاوُدَ: وَقَالَ ابْنُ السَّرْحِ: إِلَى صَلَاةٍ

অনুবাদ: আব্দুল্লাহ ইবনু ’আমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ কোনো রোগীকে দেখতে গেলে সে যেন বলে, ’’হে আল্লাহ, আপনার বান্দাকে আরোগ্য দিন যাতে সে আপনার উদ্দেশ্যে শত্রুকে আঘাত করতে পারে এবং আপনার জন্য জানাযায় বা সালাতে শরীক হতে পারে।

হাদিস নাম্বার:

  • সুনান আবু দাউদ: (সংখ্যা: ১৫০৪)
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আরবি ও বাংলা
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া আরবি ও বাংলা

কেন দোয়া গুরুত্বপূর্ণ?

ইসলামে দোয়া হলো ইবাদতের মূল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“দোয়াই ইবাদত।” (তিরমিজি: ৩৩৭২)

অসুস্থতার সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ঈমানদারের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, একজন মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করলে ফেরেশতারা তার জন্যও একই দোয়া করেন।

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেখানো দোয়া

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসুস্থ ব্যক্তির জন্য বিশেষ কিছু দোয়া শিখিয়েছেন, যা আমরা অনুসরণ করতে পারি:

১. সাতবার এই দোয়া পড়া

عَافَاكَ اللَّهُ، أَذْهِبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ: “আফাকা-ল্লাহু, আজহিবিল বা’সা রব্বান নাসি, ইশফি আন্তাশ শাফি, লা শিফা-আ ইল্লা শিফাউকা, শিফাউল্লা-ইউগাদিরু সাকামা।”
অর্থ: “হে মানুষের পালনকর্তা! রোগ দূর করে দিন। আপনি আরোগ্যদানকারী; আপনার ছাড়া আর কেউ আরোগ্য দিতে পারে না। এমন আরোগ্য দান করুন, যাতে কোনো ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে।”
(বুখারি: ৫৬৭৫)

২. তিনবার এই দোয়া পড়া

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম।”
অর্থ: “আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।”
(তিরমিজি: ৩৩৮৮)

৩. নিজের উপর হাত রেখে পড়া

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসুস্থতায় নিজের শরীরে হাত রেখে এই দোয়া পড়তেন:

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبِ الْبَأْسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা রব্বান নাস, আজহিবিল বা’সা, ইশফি আন্তাশ শাফি, লা শিফা-আ ইল্লা শিফাউকা, শিফাউল্লা-ইউগাদিরু সাকামা।”
অর্থ: “হে মানুষের পালনকর্তা! রোগ দূর করে দিন। আপনি আরোগ্যদানকারী; আপনার ছাড়া আর কেউ আরোগ্য দিতে পারে না। এমন আরোগ্য দান করুন, যাতে কোনো ব্যাধি অবশিষ্ট না থাকে।”
(মুসলিম: ২১৯১)

অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার সুন্নত

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসুস্থকে দেখতে যাওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি অসুস্থকে দেখতে যায়, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।” (মুসলিম: ২৫৬৮)

করণীয়:

  • অসুস্থ ব্যক্তির পাশে বসে তাকে সান্ত্বনা দেওয়া।
  • তার সুস্থতার জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করা।
  • সুস্থতার আশা জাগানো এবং ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেওয়া।

কিছু প্রশ্ন উত্তর

১. অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কোন দোয়াগুলি সবচেয়ে বেশি কার্যকর?

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিখিয়েছেন এমন দোয়াগুলি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। যেমন, “আফাকা-ল্লাহু, আজহিবিল বা’সা” এবং “বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু” ইত্যাদি।

২. অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করার সময় কোন দিকে মুখ করে বসা উচিত?

দোয়া করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিক নেই। তবে, কিবলামুখী হয়ে বসা সুন্নত।

৩. নিজে অসুস্থ হলে নিজের জন্য দোয়া করা যাবে কি?

হ্যাঁ, নিজের জন্য দোয়া করা সুন্নত এবং এটি রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও করতেন।

৪. অসুস্থ ব্যক্তিকে কোন সময়ে দোয়া করা উত্তম?

কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই, তবে তাহাজ্জুদের সময় দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত বলে উল্লেখ রয়েছে।

৫. শুধুমাত্র আরবি না জানলে কি বাংলায় দোয়া করা যাবে?

হ্যাঁ, আল্লাহ সব ভাষা বোঝেন। আরবি জানলে উত্তম, তবে বাংলায় বা যে কোনো ভাষায় দোয়া করা যায়।

উপসংহার

অসুস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া করা আমাদের ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শুধুমাত্র শারীরিক আরোগ্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের যে দোয়াগুলি শিখিয়েছেন, সেগুলি নিয়মিত আমল করলে ইনশাআল্লাহ শেফা লাভ সম্ভব।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রোগমুক্ত জীবন দান করুন এবং বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x