ইজহার কাকে বলে? ইজহারের হরফ কয়টি? উদাহরণসহ আলোচনা

শেয়ার করুন

তাজবিদের জগতে, ইজহার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা কুরআন শিখছেন, তাদের জন্য ইজহার, ইজহারের হরফ কয়টি এবং এর প্রয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ইজহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব, ইজহারের হরফের সংখ্যা এবং তাদের প্রয়োগ সম্পর্কে জানব, এবং সাথে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিব।

ইজহার কাকে বলে?

ইজহার (إظهار) শব্দটি আরবি ভাষার একটি পরিভাষা, যার অর্থ হলো “স্পষ্ট করা” বা “প্রকাশ করা”। তাজবিদের ক্ষেত্রে, ইজহার বলতে হরফের উচ্চারণকে স্পষ্টভাবে করা বোঝায়, যাতে কোন ধরনের নাকের শব্দ বা গুন্নাহ না হয়। অর্থাৎ, ইজহারের মাধ্যমে হরফের স্বাভাবিক উচ্চারণকে বজায় রাখা হয়।

ইজহারের প্রয়োজনীয়তা কেন?

ইজহারের প্রয়োজনীয়তা তখন দেখা দেয় যখন তাজবিদের নির্দিষ্ট হরফগুলির সাথে নির্দিষ্টভাবে উচ্চারণ করতে হয়। কুরআন পাঠের সময় ইজহারের নিয়মগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে তেলাওয়াত আরও শুদ্ধ এবং সঠিক হয়।

ইজহারের হরফ কয়টি?

ইজহার হলো তাজবিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, যা কুরআন তেলাওয়াতের সময় সঠিক উচ্চারণ নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়। ইজহারের হরফ সংখ্যা ছয়টি, এবং এই হরফগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  1. হামযা (ء)
  2. হা (ه)
  3. আ’ইন (ع)
  4. হা (ح)
  5. গ়া (غ)
  6. খা (خ)

আরো পড়ুন:

ইজহারের হরফগুলো কিভাবে উচ্চারণ করা হয়?

ইজহারের হরফগুলো উচ্চারণ করার সময় একটি বিশেষ নিয়ম মেনে চলা হয়। এই হরফগুলো উচ্চারণ করার সময় নাকের মধ্যে কোনো ধরনের শব্দ যোগ হয় না। প্রতিটি হরফকে আলাদাভাবে এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে হয়। এর ফলে, তেলাওয়াতের সময় শব্দগুলি পরিষ্কার ও স্পষ্টভাবে শোনা যায়, যা শ্রোতার জন্য তেলাওয়াতকে আরও মর্মস্পর্শী করে তোলে।

উদাহরণ:

  • হামযা (ء): “أَشْهَدُ” এই শব্দে হামযা হরফটি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
  • হা (ه): “فِيْهِ” এই শব্দে ‘হা’ হরফটির উচ্চারণ স্পষ্ট হতে হবে।

ইজহার এবং ইদগাম এর মধ্যে পার্থক্য

ইজহার এবং ইদগাম উভয়ই তাজবিদের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে:

ইজহার:

ইজহারে, হরফগুলোকে আলাদাভাবে এবং স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা হয়। কোন ধরনের গুন্নাহ (নাকের শব্দ) যোগ করা হয় না। যেমন:

  • উদাহরণ: “مَنْ آمَنَ” এই আয়াতে ‘مَنْ’ এর পর ‘آ’ হরফ এসেছে, যা ইজহারের ক্ষেত্রে পড়া হবে। ‘ن’ হরফটি স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা হবে।

ইদগাম:

ইদগাম হলো এমন একটি নিয়ম যেখানে দুটি হরফকে একসঙ্গে মিলিয়ে উচ্চারণ করা হয়। ইদগামের সময় হরফগুলোকে মিলিয়ে একটি হরফের মতো পড়া হয়। ইদগাম দুই প্রকার:

  • ইদগাম বিলা গুন্নাহ (গুন্নাহ ছাড়া): যেখানে নাকের শব্দ যুক্ত হয় না, উদাহরণস্বরূপ “فَمَنْ يَعْمَلْ” এখানে ‘ن’ এর পরে ‘ي’ হরফ আসার ফলে ‘ن’ এর উচ্চারণ মিলিয়ে দেওয়া হয়।
  • ইদগাম মাআ গুন্নাহ (গুন্নাহ সহ): এখানে নাকের শব্দ যোগ হয়, উদাহরণস্বরূপ “مِنْ نَعْمَةٍ” এখানে ‘ن’ এর পরে ‘ن’ হরফ আসার ফলে নাকের শব্দ যোগ করা হয়।

ইজহারের উদাহরণসমূহ:

  1. আলিফ-মিম-নুন (أ م ن): “أَمَنَ” – এখানে ‘م’ এবং ‘ن’ এর উচ্চারণ আলাদা এবং স্পষ্টভাবে হবে।
  2. আলিফ-মিম-হা (أ م ه): “مِنْهُم” – এখানে ‘مِنْ’ এবং ‘هُم’ এর উচ্চারণ স্পষ্ট এবং আলাদা হবে।

ইজহারের প্রয়োজনীয়তা:

ইজহার কুরআন তেলাওয়াতের সময় শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শব্দসমূহের শুদ্ধ উচ্চারণ নিশ্চিত করে এবং তেলাওয়াতকে আরও অর্থবহ করে তোলে।

ইজহারের প্রয়োগ কোথায় হয়?

ইজহারের প্রয়োগ সাধারণত নূন সাকিন বা তানউইনের পরে ইজহারের হরফগুলির মধ্যে কোন একটি হরফ আসে। এটি সাধারণত কুরআন তেলাওয়াতের সময় ঘটে এবং এর সঠিক প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইজহারের একটি উদাহরণ

কুরআনে ইজহারের অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন: سورة البقرة এর ২:৬ নম্বর আয়াতের ‘مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ’ অংশে ইজহার ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ‘ل’ (লাম) এর উচ্চারণ স্পষ্টভাবে করা হয়েছে।

ইজহার শিখতে কীভাবে শুরু করবেন?

ইজহার শিখতে কুরআন তেলাওয়াতের সময় হরফগুলির সঠিক উচ্চারণের উপর জোর দিতে হবে। একজন তাজবিদ শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে শুদ্ধভাবে ইজহার শিখা যেতে পারে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

প্রশ্ন ১: ইজহার কি শুধুমাত্র কুরআন তেলাওয়াতের সময় প্রয়োজন?

উত্তর: হ্যাঁ, ইজহার কুরআন তেলাওয়াতের সময় হরফগুলির সঠিক উচ্চারণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন।

প্রশ্ন ২: ইজহারের হরফের সংখ্যা কত?

উত্তর: ইজহারের হরফের সংখ্যা ৬টি।

প্রশ্ন ৩: ইজহার শিখতে কত সময় লাগে?

উত্তর: এটি শিক্ষার্থীর দক্ষতার উপর নির্ভর করে, তবে নিয়মিত অনুশীলন করলে কিছু মাসের মধ্যে শিখা সম্ভব।

প্রশ্ন ৪: ইজহার ভুল করলে কী হবে?

উত্তর: ইজহার ভুল করলে তেলাওয়াতের অর্থ বা মর্ম ভুল হতে পারে, তাই সঠিক উচ্চারণের জন্য ইজহার শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন ৫: ইজহার কি নবীজির (সা.) শিক্ষার অংশ?

উত্তর: হ্যাঁ, নবীজি (সা.) তাজবিদ ও শুদ্ধ উচ্চারণের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন, যা ইজহারের অংশ।


শেয়ার করুন

Leave a Comment