ইঞ্জিল কিতাব কোন ধর্মের? বিস্তারিত বিশ্লেষণ

শেয়ার করুন

ইঞ্জিল বা ইনজিল (الإنجيل) হলো একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ যা ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, এবং কিছু ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত কিতাবগুলোর মধ্যে একটি, যা হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। অন্যদিকে, খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে ইঞ্জিল হলো বাইবেলের একটি অংশ, যেখানে যিশু খ্রিস্টের জীবনী এবং তাঁর শিক্ষা বর্ণিত হয়েছে। এই ব্লগপোস্টে আমরা ইঞ্জিল কিতাব কোন ধর্মের? এই কিতাবের উৎস, এর ধর্মীয় প্রভাব, এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়ে আলোচনা করব।

ইঞ্জিলের পরিচিতি

ইঞ্জিল শব্দটি আরবি ভাষার শব্দ “ইনজিল” থেকে এসেছে, যার অর্থ সুসংবাদ। খ্রিস্টধর্মে ইঞ্জিল হলো যিশু খ্রিস্টের শিক্ষা ও তাঁর জীবনের ঘটনাবলির উপর ভিত্তি করে রচিত ধর্মগ্রন্থ। এটি খ্রিস্টানদের জন্য অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা তাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্মীয় নির্দেশনা প্রদান করে।

ইঞ্জিল কিতাবের ধর্মীয় ভিত্তি

ইসলামে ইঞ্জিলকে আল্লাহর প্রেরিত চারটি প্রধান ধর্মগ্রন্থের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, যা হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। ইঞ্জিলকে মুসলিমরা সম্মান করে, তবে তারা বিশ্বাস করে যে এই কিতাবের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে। খ্রিস্টধর্মে ইঞ্জিল হলো বাইবেলের একটি অংশ, যেখানে যিশু খ্রিস্টের জীবনী এবং তাঁর শিক্ষা সংরক্ষিত রয়েছে।

ইঞ্জিলের উৎস

ইসলামী দৃষ্টিকোণে ইঞ্জিল আল্লাহ তাআলা কর্তৃক অবতীর্ণ চারটি কিতাবের একটি, যা হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। খ্রিস্টধর্মে ইঞ্জিলের উৎস হলো যিশু খ্রিস্টের শিষ্যদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ, যা পরে একত্রিত করে “নতুন নিয়ম” বা “New Testament” হিসেবে সংকলিত হয়েছে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস, এই ইঞ্জিল যিশু খ্রিস্টের শিক্ষাকে ধারণ করে।

আরো পড়ুন:

ইঞ্জিল কিতাব কোন ধর্মের বিস্তারিত জানতে ভিডিওটি দেখুন।

ইসলামে ইঞ্জিলের অবস্থান

ইসলামে ইঞ্জিলকে সম্মান করা হয়, কারণ এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত কিতাব। তবে ইঞ্জিলের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে এবং আসল ইঞ্জিলের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে বা পরিবর্তিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন,

“وَقَفَّيْنَا عَلَىٰٓ ءَاثَـٰرِهِمۡ بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ مُصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيۡهِ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِۖ وَءَاتَيۡنَـٰهُ ٱلۡإِنجِيلَ فِيهِ هُدٗى وَنُورٞ”

“এবং তাদের পেছনে আমি মাতা মরিয়মের পুত্র ঈসাকে প্রেরণ করেছিলাম, যার সাথে ছিল তওরাতের সত্যের সাক্ষ্য এবং আমি তাকে ইঞ্জিল দান করেছিলাম, যাতে ছিল হিদায়াত এবং আলোর শিক্ষা।”
(সুরা মায়েদা: ৪৬)

খ্রিস্টধর্মে ইঞ্জিলের ভূমিকা

খ্রিস্টধর্মে ইঞ্জিলের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এটি যিশু খ্রিস্টের জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত এবং বিশদ বিবরণ প্রদান করে। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে, ইঞ্জিল আল্লাহর বাণী এবং যিশু খ্রিস্টের জীবনের নিদর্শন। তারা এই গ্রন্থের নির্দেশনা মেনে চলে এবং তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদন করে।

ইঞ্জিলের বিভাজন

খ্রিস্টধর্মে ইঞ্জিল চারটি প্রধান অংশে বিভক্ত:

  1. মথি (Matthew)
  2. মার্ক (Mark)
  3. লূক (Luke)
  4. যোহন (John)

এই চারটি ইঞ্জিলের মধ্যে যিশু খ্রিস্টের জন্ম, তাঁর শিক্ষা, অলৌকিক কাজ, এবং ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। প্রতিটি ইঞ্জিলের নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে এবং এটি খ্রিস্টানদের মধ্যে বিশেষভাবে সম্মানিত।

ইঞ্জিলের প্রভাব

ইঞ্জিল কিতাব শুধু ধর্মীয় গ্রন্থ নয়, এটি মানব সভ্যতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। খ্রিস্টান সমাজে ইঞ্জিলকে নৈতিকতা, ধর্মীয় শিক্ষা এবং আইন-কানুনের মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইঞ্জিলের শিক্ষা খ্রিস্টানদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাবিত করে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে ইঞ্জিলের বিকৃতি

মুসলিমরা বিশ্বাস করে, ইঞ্জিলের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে এবং আসল ইঞ্জিলের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে বা পরিবর্তিত হয়েছে। কুরআন এই ব্যাপারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে:

“فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ ٱلۡكِتَٰبَ بِأَيۡدِيهِمۡ ثُمَّ يَقُولُونَ هَٰذَا مِنۡ عِندِ ٱللَّهِ لِيَشۡتَرُواْ بِهِۦ ثَمَنٗا قَلِيلٗاۖ”

“তাদের জন্য ধ্বংস, যারা তাদের হাত দিয়ে কিতাব লেখে এবং পরে বলে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে, যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য মূল্য লাভ করতে পারে।” (সুরা বাকারা: ৭৯)

ইঞ্জিল এবং কুরআনের সম্পর্ক

ইসলামে ইঞ্জিলকে একটি সম্মানিত কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে কুরআন হলো আল্লাহর চূড়ান্ত বাণী, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত হিসেবে প্রেরিত হয়েছে। কুরআন ইঞ্জিলের সত্যতা নিশ্চিত করে, তবে একই সাথে এটি জানায় যে, কুরআনের আগমনের পর ইঞ্জিলের নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।

ইঞ্জিলের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে ইঞ্জিলকে খ্রিস্টান সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। খ্রিস্টানরা প্রতিদিনের প্রার্থনা, উপাসনা, এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ইঞ্জিলের শিক্ষার উপর নির্ভর করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণে ইঞ্জিলের আসল শিক্ষা এবং বর্তমান রূপের মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

কিছু প্রশ্ন উত্তর

ইঞ্জিল কোন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ?

ইঞ্জিল হলো খ্রিস্টধর্মের একটি পবিত্র গ্রন্থ, তবে ইসলামে এটি হযরত ঈসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ একটি কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইসলামে ইঞ্জিলের ভূমিকা কী?

ইসলামে ইঞ্জিলকে আল্লাহর প্রেরিত চারটি প্রধান কিতাবের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে এর বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে।

ইঞ্জিলের মূল উৎস কী?

ইঞ্জিলের মূল উৎস হলো যিশু খ্রিস্টের জীবন ও শিক্ষা, যা তাঁর শিষ্যরা লিখেছেন।

কতটি প্রধান ইঞ্জিল আছে?

খ্রিস্টধর্মে চারটি প্রধান ইঞ্জিল আছে: মথি, মার্ক, লূক, এবং যোহন।

ইসলাম ইঞ্জিলের বিকৃতি সম্পর্কে কী বলে?

ইসলাম বিশ্বাস করে যে ইঞ্জিলের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে এবং আসল ইঞ্জিলের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে বা পরিবর্তিত হয়েছে।


শেয়ার করুন

Leave a Comment