ইন্নাল্লাহা মা আস সাবেরিন । Innallaha ma sabireen bangla । বিস্তারিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

ধৈর্য ও বিশ্বাস ইসলামের মূল ভিত্তি। কুরআন ও হাদিসে ধৈর্যের উপর যে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, তার একটি উদাহরণ হলো – ইন্নাল্লাহা মা আস সাবেরিন (اِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ)। innallaha ma sabireen bangla। অর্থ, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে।” এই আয়াতটি আমাদেরকে ধৈর্যের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও এর জন্য প্রতিদান সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

ভূমিকা

ধৈর্য (সবর) হলো মানব জীবনের একটি অত্যাবশ্যকীয় গুণ। এটি শুধু কষ্ট সহ্য করা নয়, বরং প্রত্যেক পরিস্থিতিতে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং তাঁর নির্দেশ পালন করা। কুরআনের বহু স্থানে ধৈর্যের প্রসঙ্গ এসেছে এবং ধৈর্যশীলদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ ভালোবাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। “ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরীন” এমনই একটি আয়াত, যা মুমিনদের ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ দেখায়।

ইন্নাল্লাহা মা আস সাবেরিন । innallaha ma sabireen bangla । অর্থ ও প্রাসঙ্গিকতা

কুরআনে “ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু” (يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا) অর্থাৎ “হে মুমিনগণ” বাক্যাংশটি ৮৯ বার ব্যবহৃত হয়েছে। এই বাক্যাংশটির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেছেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদের এমন নির্দেশ দেন, যা আমাদের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

উদাহরণস্বরূপ, “ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু” ব্যবহৃত একটি আয়াত হলো:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِيْنُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য এবং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫৩)

এই আয়াতটি আমাদের ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার পথ দেখায়।

আরো জানুন:

কুরআনে ধৈর্যের গুরুত্ব ও প্রসঙ্গ

“ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরীন” আয়াতটি কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এসেছে এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে ধৈর্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

১. বিপদে ধৈর্য ধারণ

ধৈর্যের একটি প্রধান দিক হলো বিপদে আল্লাহর উপর ভরসা রাখা। আল্লাহ বলেন:

وَلَنَبْلُونَّكُمْ بِشَيْءْ مِّنَ الْخَوْفِ وَالجُوْعِ وَنَقْصِ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالأَنْفُسِ وَالْثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

“আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফলের ক্ষতির মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সূরা আল-বাকারা: ১৫৫)

২. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে ধৈর্য

ধৈর্যের মাধ্যমে মুমিনরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

وَمَنْ يَتَقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيْعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ

“আর যে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ ভালো কাজকারীদের প্রতিদান নষ্ট করেন না।” (সূরা ইউসুফ: ৯০)

৩. যুদ্ধ ও সংগ্রামে ধৈর্য

ইসলামে যুদ্ধ ও সংগ্রামে ধৈর্যকে অপরিহার্য বলা হয়েছে। মুমিনদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اُصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যশীল হও, প্রতিপক্ষের সঙ্গে ধৈর্যের প্রতিযোগিতা কর, সংযমী হও এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।” (সূরা আলে ইমরান: ২০০)

কুরআনে ধৈর্যের উল্লেখের সংখ্যা

কুরআনে “সবর” শব্দটি ১০৩ বার ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন রূপে। এর মধ্যে “ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরীন” বাক্যাংশটি সরাসরি একাধিকবার উল্লেখিত। এটি প্রমাণ করে যে, ধৈর্য ইসলামে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুণ।

ধৈর্যের প্রসঙ্গ:

১. ব্যক্তিগত জীবনের সংকট মোকাবেলা।
২. ধর্মীয় আদেশ পালন।
৩. দুঃখ-কষ্টের সময় আল্লাহর উপর নির্ভরতা।

ইন্নাল্লাহা মা আস সাবেরিন

১. আল্লাহর নৈকট্য: যারা ধৈর্য ধারণ করে, তারা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করে।
২. মুমিনদের আদর্শ গুণ: ধৈর্যশীলতা একটি মুমিনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৩. জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকতা: ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক এবং জাতীয় পর্যায়েও ধৈর্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: “ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরীন” কোন সূরাতে উল্লেখ রয়েছে?

উত্তর: “ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরীন” বাক্যাংশটি সূরা আল-বাকারা (১৫৩ আয়াত) এবং অন্যান্য স্থানে উল্লেখ রয়েছে।

প্রশ্ন ২: ধৈর্যের অর্থ কী?

উত্তর: ধৈর্য মানে হলো কষ্ট বা বিপদের সময় সহ্য করা, আল্লাহর উপর ভরসা রাখা এবং সঠিক পথে অবিচল থাকা।

প্রশ্ন ৩: কুরআনে ধৈর্য সম্পর্কে কতবার উল্লেখ আছে?

উত্তর: ধৈর্য বা “সবর” শব্দটি কুরআনে ১০৩ বার উল্লেখিত হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: ধৈর্যশীলদের জন্য কী প্রতিদান রয়েছে?

উত্তর: আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন এবং তাদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন।

উপসংহার

“ইন্নাল্লাহা মা’আস সাবিরীন” আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, ধৈর্য একটি শক্তি, যা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। প্রতিটি পরিস্থিতিতে ধৈর্যশীল থাকা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা একজন মুমিনের জন্য অপরিহার্য।

কুরআনের প্রতিটি নির্দেশনা এবং হাদিসের উপদেশে এই গুণটির গুরুত্ব বারবার তুলে ধরা হয়েছে। আসুন আমরা আমাদের জীবনে ধৈর্যকে স্থান দেই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।


পোস্টটি শেয়ার করুন