ইসলামে ওযুর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি কেবল শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার একটি মাধ্যম নয়। বরং আত্মিক পবিত্রতার ও অনেক ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার প্রধান শর্ত। ওযু করার পর তা ধরে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কারণে ওযু ভেঙে যায়। সেই ওযু ভঙের কারণগুলোর মধ্যে “উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে?” এটি রয়েছে কি না তা জানতে অনেক মানুষ প্রশ্ন করেন।
উলংগ হলে কি ওযু ভাঙ্গে? সংক্ষিপ্ত উত্তর
না, উলংগ হলে ওযু ভাঙ্গে না। ওযু ভঙ্গের কারণ গুলোর মধ্যে থেকে কিছু কারণ এমন রয়েছে যেগুলো ব্যাপারে সকল ইমাম ঐক্যময় পোষণ করেছেন যে এগুলো ওযু ভঙ্গ করে। আবার কিছু কারণে মধ্যে তারা দ্বিমত পোষণ করেছেন। কারো মতে অজু ভঙ্গ হয়, কারো মতে ওযু পঙ্গু হয় না। কিন্তু উলঙ্গ হওয়ার বিষয়টি কোনো ইমামই ওযু ভাঙার কারণ হিসাবে মত দেননি। তাই সর্বসম্মতিক্রমে উলঙ্গ হলে ওযু ভঙ্গ হয় না।
অঙ্গ ঢেকে রাখা ওযুর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বরং এটি নামাজের শর্তগুলোর একটি। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে উলঙ্গ অবস্থায় নামাজ পড়ে, তবে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে সর্বসম্মতিক্রমে। তবে তার ওযু বাতিল হবে না। কারণ, নামাজ যেসব কারণে বাতিল হয়, সেসব কারণে সবসময় ওযু বাতিল হয় না। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ বেশি কথা বলার কারণে, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের রুকন বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে বা কিবলামুখী হওয়ার পরিবর্তে অন্যদিকে ফিরে নামাজ পড়ার কারণে বাতিল হয়। কিন্তু এসব কারণে ওযুর ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। ইসলাম ওয়ব ডট নেট।
ওযু ভঙ্গের সাধারণ কারণসমূহ
কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে যা ওযু ভঙ্গ করে। সেগুলো হলো:
- পায়খানা বা প্রস্রাব করা
- গ্যাস বা বাতাস নির্গমন
- গভীর ঘুম
- মদী বা মণি বের হওয়া
- জ্ঞান হারানো বা অজ্ঞান হওয়া
এগুলোর মধ্যে “উলঙ্গ হওয়া” ওযু ভাঙার কারণ হিসাবে কোনো হাদিস বা ফিকহি কিতাবগুলোতে উল্লেখ নেই।
আরো পড়ুন:
উলঙ্গ হওয়া ও ওযুর সম্পর্ক
উলঙ্গ হওয়ার সঙ্গে ওযুর সম্পর্ক নির্ধারণে ইসলামের মূলনীতি ও ফিকহি কিতাবসমূহে দুটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে:
ওযু একটি শারীরিক পবিত্রতা: ওযুর জন্য শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গ ধোয়া বাধ্যতামূলক। এটি একটি বাহ্যিক পবিত্রতা, যা উলঙ্গ হওয়ার মতো কোনো বাহ্যিক অবস্থার কারণে বাতিল হয় না।
উলঙ্গ হওয়া একটি আলাদা বিষয়: ইসলামিক শরীয়ত উলঙ্গ হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে এটি ওযুকে প্রভাবিত করে না।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ
কুরআন
“হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য উঠো, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল এবং কনুইসহ হাতগুলো ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করো এবং গোড়ালি পর্যন্ত পা ধুয়ে নাও।” — (সূরা মায়িদা: ৬)
এই আয়াতে ওযুর জন্য নির্ধারিত অঙ্গগুলোর কথা বলা হয়েছে। এখানে উলঙ্গ হওয়ার বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।
হাদিস
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “নামাজ গ্রহণ হয় না, যদি কারো ওযু না থাকে।” — (মুসলিম: ২২৪)
এখানে ওযু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তবে ওযুর ভঙ্গের বিষয়টি নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে উলঙ্গ হওয়ার কোনো প্রভাব নেই।
উলঙ্গ হওয়ার ও ইসলামিক নির্দেশনা
যদিও উলঙ্গ হওয়া ওযুকে ভঙ্গ করে না, তবে এটি আদব ও শালীনতার পরিপন্থী। হাদিসে এসেছে:
“আল্লাহ্ পরম লজ্জাশীল এবং লজ্জাকে ভালোবাসেন। তাই যখন তোমরা স্নান কর, তখনও পর্দা রাখো।” — (আবু দাউদ: ৪০১৭)
এটি প্রমাণ করে যে, উলঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকা একজন মুমিনের আদর্শ হওয়া উচিত।
প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১: উলঙ্গ হয়ে ঘুমালে কি ওযু ভেঙে যায়?
উত্তর: না, ঘুমানো ওযু ভঙ্গের কারণ যদি তা গভীর হয়। কেননা তখন পায়ুপথ শিথিল হয়। তবে উলঙ্গ হওয়ার সঙ্গে ওযু ভঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রশ্ন ২: যদি কেউ অজান্তে উলঙ্গ হয়, তবে কি তার ওযু বাতিল হবে?
উত্তর: না, অজান্তে উলঙ্গ হওয়ার কারণে ওযু বাতিল হয় না। ওযু ভঙ্গের নির্ধারিত কারণের মধ্যে এটি পড়ে না।
প্রশ্ন ৩: উলঙ্গ অবস্থায় ওযু করা যাবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, উলঙ্গ অবস্থায় ওযু করা বৈধ, তবে এটি আদব পরিপন্থী। ওযুর সময় শরীর ঢেকে রাখা উত্তম।
প্রশ্ন ৪: নামাজের সময় যদি কারো কাপড় খুলে যায়, তবে কি ওযু পুনরায় করতে হবে?
উত্তর: না, ওযু পুনরায় করতে হবে না। তবে কাপড় খুলা অবস্থায় যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অতিবাহিত হয় তাহলে নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। কারণ নামাজের জন্য ستر (পর্দা) একটি শর্ত।
উপসংহার
উলঙ্গ হওয়া ওযুকে ভঙ্গ করে না — এটি ইসলামিক ফিকহের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত। তবে মুসলমানদের জন্য এটি আদব পরিপন্থী। তাই সবসময় শালীনতা বজায় রাখা উচিত। বিষয়টি বোঝার জন্য শরীয়তের মূলনীতি ও ফিকহি কিতাবের নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বোঝাপড়া দান করুন। আমিন।