ওজুর ফরজ বা মৌলিক রুকন হলো এমন কিছু কাজ – যা ওজুর অস্তিত্ব নির্ধারণ করে। কোনো একটি ফরজ অনুপস্থিত থাকলে অজু শুদ্ধ হবে না। সেই অজু দ্বারা নামাজ বা ওজুর উপর নির্ভরশীল অন্য ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না। আমরা এখানে ওযুর ফরজ কয়টি? কী কী? তার সাথে প্রাসঙ্গিক মাসআলা ও দলিল বিস্তারিত আলোচনা করছি।
ওযুর ফরজ কয়টি?
ওজুর ফরজ ৪ টি। কোনো মুকাল্লাফ (শরীয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি) এই চারটি কাজ সম্পন্ন করলে তিনি ওযু সম্পন্নকারী গণ্য হয়ে যাবেন। এর মাধ্যমে তার নামাজ এবং ওজুর উপর নির্ভরশীল অন্যান্য ইবাদত, যেমন কুরআন স্পর্শ করা বৈধ হয়ে যাবে। তবে ফরজের সাথেসাথে ওজুর সুন্নতগুলো আদায় করে ওযু করা গুরুত্বপূর্ণ। ওযুর ফরজগুলো নিম্নরূপ:
- সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধৌত করা।
- কনুইসহ হাত ধৌত করা।
- মাথা মাসাহ করা।
- টাখনুসহ পা ধৌত করা।

রেফারেন্স
ওজু করার সময় উপরের চারটি কাজ করার নির্দেশ দিয়ে কুরআনুল মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاةِ فاغْسِلُواْ وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُواْ بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَينِ
অনুবাদ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দাঁড়াবে, তখন তোমরা ধৌত কর তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত আর মাথা মাসাহ করো এবং টাখনুসহ পা ধৌত কর। (সুরা মায়িদা – ৬)
عَنْ عَمْرِو بْنِ يَحْيَى المَازِنِيِّ ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَجُلًا ، قَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ ، وَهُوَ جَدُّ عَمْرِو بْنِ يَحْيَى أَتَسْتَطِيعُ أَنْ تُرِيَنِي، كَيْفَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَوَضَّأُ ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ : نَعَمْ ، فَدَعَا بِمَاءٍ ، فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ فَغَسَلَ مَرَّتَيْنِ، ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ يَدَيْهِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ إِلَى المِرْفَقَيْنِ، ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ، فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ، بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ، ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى المَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ ، ثُمَّ غَسَلَ رِجْلَيْهِ
অনুবাদ: আমর ইবনে ইয়াহইয়া মাজিনির পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে জায়দ (আমর ইবনে ইয়াহইয়ার দাদার) কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কি আমাকে দেখাতে পারবেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কীভাবে ওজু করতেন?” আব্দুল্লাহ ইবনে জায়দ বললেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই।” এরপর তিনি পানির ব্যবস্থা করলেন। তিনি হাত ধোয়ার জন্য পানি ঢাললেন এবং হাত দুটি দুইবার ধুলেন। তারপর তিনবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেললেন। এরপর তিনবার মুখ ধুলেন। তারপর দুই হাত কনুই পর্যন্ত দুইবার করে ধুলেন। এরপর তিনি দুই হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করলেন। তিনি প্রথমে মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে দুই হাত পিছনের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে গেলেন, যতক্ষণ না তা ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত পৌঁছাল। তারপর আবার মাথার সামনের দিকে ফিরিয়ে আনলেন। এরপর তিনি পা দুটো ধুলেন। (সহিহ বুখারি : ১৮২ )
১ম ফরজ । সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধোয়া
ওযুর প্রথম ফরজ হলো – সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল ধোয়া। মুখমণ্ডল বলতে বোঝানো হয় – চেহারার যে অংশটি সামনাসামনি থাকে। তার সীমানা হলো:
- দৈর্ঘ্যে: মাথার চুল গজানোর স্বাভাবিক স্থান থেকে চিবুকের নিচ পর্যন্ত।
- প্রস্থে: এক কান থেকে আরেক কানের গোড়া পর্যন্ত।

মুখমণ্ডল ধোয়ার সাথে প্রাসঙ্গিক মাসআলা
চুল গজানোর স্থান
স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজানোর স্থান হলো কপালের উপর অংশ, সেখান থেকে মুখ ধোয়া শুরু করতে হবে। স্বাভাবিকের ব্যতীক্রম হলে – তার দু’রকম অবস্থা হতে পারে:
- টাক (অসলা): যাদের কপাল থেকে মাথার সামনের অংশের সব চুল উঠে গেছে। এমন ব্যক্তির জন্য পুরো টাক অংশ ধোয়া বাধ্যতামূলক নয়। তাকে শুধু সেই অংশ ধুতে হবে যেখান থেকে সাধারণত মানুষের মাথার চুল গজায়, অর্থাৎ কপালের সামান্য উপরের অংশ।
- লম্বা চুল (আফরা): যাদের মাথার চুল লম্বা হয়ে কপাল পর্যন্ত নেমে এসেছে বা কখনো কখনো ভ্রুর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। অর্থাৎ তাকে কপালের উপরের স্বাভাবিক স্থান পর্যন্ত ধুতে হবে।
মুখমণ্ডলের দাড়ি গোঁফ ইত্যাদি ধোয়ার বিধান
দাড়ি: মুখমণ্ডলে দাড়ির যে অংশ ত্বকের ওপর থাকে, তা ধোয়া ফরজ। দাড়ি লম্বা হলে শুধু ত্বক ও চিবুকের উপর থাকা দাড়ি ধোয়া ফরজ। দাড়ির অতিরিক্ত লম্বা অংশ ধোয়া ফরজ নয়। যদি দাড়ি পাতলা হয় এবং ত্বকের মধ্যে পানি প্রবেশ করা সম্ভব হয়, তবে ত্বক পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরজ। আর যদি দাড়ি এত ঘন হয় যে, এর নিচের ত্বক পর্যন্ত পানি পৌঁছানো সম্ভব হয় না, তবে কেবল দাড়ির উপরের অংশ ধুলে ওজু শুদ্ধ হয়ে যাবে।
গোঁফ: গোঁফ পাতলা হলে ত্বক পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরজ। আর গোঁফ ঘন হলে ত্বক পর্যন্ত পানি পৌঁছানোর দরকার নেই। গোঁফ লম্বা রাখতে শরীয়তে নিষেধ করা হয়েছে, কারণ এতে খাদ্যের ময়লা ইত্যাদি জমে থাকার সম্ভাবনা বেশি। তাই গোসলের ক্ষেত্রে গোঁফের ত্বক পর্যন্ত পানি পৌঁছানো ফরজ।
ভ্রু: যদি ভ্রুর চুল পাতলা হয় এবং পানি ত্বকে পৌঁছানো সম্ভব হয়, তবে পানি পৌঁছানো ফরজ। যদি ভ্রুর চুল ঘন হয়, তবে এর নিচে পানি পৌঁছানো আবশ্যক নয়।
২য় ফরজ । উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা
অজুর দ্বিতীয় ফরজ হল উভয় হাত কনুইসহ ধোয়া। কনুই হলো হাতের শেষাংশে উঁচু হওয়া একটি জয়েন্টের হাড়।

হাত ধোয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু আলোচনা
কারও অতিরিক্ত আঙুল থাকলে সেটি ধোয়া ফরজ। আর অতিরিক্ত একটি হাত থাকলে সেটি যদি মূল হাতের সমান্তরালে থাকে তাহলে তা ধোয়া ফরজ। আর মূল হাতের চেয়ে দীর্ঘ হলে, সমান্তরাল অংশ ধোয়া ফরজ এবং অতিরিক্ত অংশ ধোয়া সুন্নত।
হাতের নখ লম্বা হলে কারণীয়
কারও হাতে বা নখের গোড়ায় কাদা বা ময়দা লেগে থাকলে তা সরিয়ে নখের গোড়ায় পানি পৌঁছানো ফরজ। অন্যথায় অজু হবে না। নখের গোড়া বলতে সেই অংশকে বোঝানো হয় যা আঙুলের মাংসের সঙ্গে লেগে থাকে।
নখ লম্বা হয়ে আঙুলের মাথা ছাড়িয়ে গেলে সেটি ধোয়া ফরজ। অন্যথায় অজু বাতিল হয়ে যাবে। তবে নখের নিচে ময়লা জমে থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।
তবে কিছু হানাফি গবেষক মনে করেন যে নখের ভেতরের অংশে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করা জরুরি। তবে বিশেষ পেশাজীবীদের (যেমন: রুটি বানানোর কারিগর) নখ বড় হওয়ার কারণে ময়দা বা আটা লেগে থাকা স্বাভাবিক। তাদের ক্ষেত্রে এটি মাফ।
মেহেদির রং বা রঙের চিহ্ন কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে মেহেদির দানা বা জমাট অংশ হাতের ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকলে তা সমস্যা সৃষ্টি করবে, কারণ এটি ত্বকে পানি পৌঁছাতে বাধা দেয়।
কারও হাতের কোনো অংশ কেটে গেলে অবশিষ্ট অংশ ধোয়া ফরজ। আর যদি সেই অংশ পুরোপুরি কেটে যায়, তবে ধোয়া ফরজ থাকছে না।
৩য় ফরজ । মাথা মাসাহ করা

অজুর তিন নাম্বার ফরজ হলো মাথার চতুর্থাংশ মাসাহ করা। মাথার চতুর্থাংশের পরিমাণ একটি হাতের তালুর সমান ধরা হয়। তাই, মাথার উপর একটি হাতের তালুর সম পরিমাণ জায়গায় মুছে দেওয়া ফরজ। যদি তার হাতের তালুতে পানি লাগে এবং সে সেটি মাথার যেকোনো অংশে — পেছন, সামনে বা অন্য যেকোনো দিকে — মুছে দেয়, তবে তাই যথেষ্ট হবে। আর মাসাহ হাতের তালু দিয়েই করতে হবে, এমন শর্ত নেই। যে কোনো কোনো উপায়ে মাথার চতুর্থাংশে পানি পৌঁছে গেলেই যথেষ্ট।
মাথা মাসাহ করার বিধিবিধান
মাথায় মাসাহ করার জন্য কমপক্ষে তিনটি আঙুল ব্যবহার করা শর্ত, যাতে মাথার চতুর্থাংশ মুছে দেওয়ার আগেই পানি শুকিয়ে না যায়। কারণ, যদি কেউ মাত্র দুটি আঙুল দিয়ে মুছেন, তবে পানি শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং প্রয়োজনীয় অংশে মুছা সম্পূর্ণ হবে না। যদি আঙুলের ডগা দিয়ে মুছে পানি গড়িয়ে পড়ে এবং প্রয়োজনীয় অংশে পৌঁছে যায়, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে যদি তা না হয়, তবে মুছা গ্রহণযোগ্য হবে না।
মাথায় মুছার জন্য নতুন পানি ব্যবহার করতে হবে, এমন শর্ত নেই। যদি হাত ভেজা থাকে, তবে তা দিয়ে মুছা যাবে। তবে যদি অঙ্গের কোনো অংশ থেকে ভেজাভাব নিয়ে মাথা মুছা হয়, যেমন শুকনো হাত দিয়ে হাতের অন্য অংশের ভেজাভাব নিয়ে মাথায় মুছা হয়, তবে তা যথেষ্ট হবে না।
যদি কারও মাথার চুল লম্বা হয় এবং তা কপাল বা ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসে এবং সে সেই চুলে মুছা দেয়, তবে তা যথেষ্ট হবে না। কারণ, উদ্দেশ্য হলো মাথার আসল চতুর্থাংশ মুছে দেওয়া। যদি মাথা কামানো থাকে, তবে মুছার বিষয়টি স্পষ্ট। যদি মাথায় চুল থাকে, তবে চুলে মুছতে হবে এবং সেই চুল অবশ্যই মাথার চামড়ায় গজানো হতে হবে। যদি মাথার কোনো অংশ কামানো থাকে এবং অন্য অংশে চুল থাকে, তবে যেকোনো চতুর্থাংশ মুছা যথেষ্ট।
যদি কেউ মুছার পরে চুল কামায়, তবে তার অজু বাতিল হবে না। যদি কেউ বরফের টুকরো নিয়ে মাথায় মুছা দেয়, তবে তা যথেষ্ট। যদি মাথা ধুয়ে ফেলা হয়, তবে তা মুছার বিকল্প হিসেবে গ্রহণযোগ্য, তবে এটি অপছন্দনীয়।
পাগড়ির উপর মাসাহ
পাগড়ি বা এর মতো কিছুতে মুছা করার অনুমতি নেই, যদি না কোনো বিশেষ কারণ থাকে। তেমনি নারীরা মাথার ওড়না, রুমাল বা এ জাতীয় যেকোনো ঢেকে রাখা জিনিসে মুছতে পারবে না, যদি না তা হালকা হয় এবং পানি চুলে পৌঁছাতে পারে। যদি মাথায় মেহেদি বা রঙের প্রলেপ থাকে এবং তাতে মুছা দেওয়া হয়, তবে যদি পানির রঙ বদলে যায় এবং তা আর মূল পানির বৈশিষ্ট্য না ধরে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অন্যথায় এটি বৈধ।
৪ র্থ ফরজ । টাখনুসহ পা ধৌত করা
অজুর চার নাম্বার ফরজ হল- টাখনুসহ পা ধৌত করা। টাখনু হলো পায়ের নিচের অংশের দুই পাশে বেরিয়ে থাকা হাড়। তাকে অবশ্যই পানির মাধ্যমে ধৌত করতে হবে। পায়ের তালুর মধ্যে থাকা ফাটলগুলো ধৌত করার ব্যাপারেও যত্নবান হতে হবে। যদি কারো পা পুরোপুরি বা আংশিক কাটা যায়, তবে তার বিধান আগেই উল্লেখিত হাত কাটার বিধানের মতোই।

যদি কেউ তার পা বা হাতে তেলে মাখে এবং পরে অজু করে, কিন্তু তেলের কারণে পানি শরীরে প্রবেশ না করে, তহলে এটি ক্ষতিকর নয়। যদি পায়ে ফাটল থাকে এবং তাতে মলম বা অনুরূপ কিছু লাগানো হয়, ফলে সেখানে পৌঁছানো ক্ষতিকর হলে এটি ধৌত করা আবশ্যক নয়। তবে যদি ক্ষতি না হয়, তবে মলম সরিয়ে এবং নিচের অংশ ধৌত করা আবশ্যক।
যদি পায়ে এমন ফাটল, শুষ্কতা বা অন্য কোনো সমস্যা থাকে, যা ধৌত করলে বা পানিতে ডুবালে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তবে ধৌত করার বাধ্যবাধকতা থাকবে না। এক্ষেত্রে পানির মাধ্যমে শুধু মাসাহ করে নেওয়া আবশ্যক। যদি মুছতেও অক্ষম হয়, তবে মুছাও বাধ্যতামূলক নয়। তখন যা ধৌত করতে অসুবিধা নেই, শুধু সেই অংশই ধৌত করতে হবে।
অন্য মাযহাবে ওজুর আরো কিছু ফরজ
নিয়ত করা ওজুর ফরজ
অজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ হলো নিয়ত। অধিকাংশ ফকিহদের মতে—যেমন মালিক, শাফেয়ি, আহমদ, ইসহাক, এবং লেইস — অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিয়ত অপরিহার্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী, তিনি বলেন:
“সমস্ত কাজ নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিমে উল্লেখিত, এবং এটি একটি মুতাওয়াতির হাদিস।)
“إِنَّمَا” শব্দের গুরুত্ব: এই হাদিসে ব্যবহৃত “إِنَّمَا” শব্দটি একচেটিয়া অর্থ বহন করে। এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে: “কোনো কাজই শুদ্ধ হয় না, যদি তা নিয়তের সঙ্গে না হয়।”
কান মাসাহ করা (مسح الأذنين)
অজুর সময় কান মাসাহ করা ফরজ, কারণ কানকে মাথার অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“কান মাথার অংশ।” (এই হাদিসটি মারফু হিসেবে দুর্বল হলেও এটি সাহাবি ইবনে উমর (রা.)-এর মতো অনেক সালাফের থেকে সাব্যস্ত।)
রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর আমল: যেসব হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর অজুর বর্ণনা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ রয়েছে যে তিনি মাথার সঙ্গে কানও মাসাহ করতেন।
অজুর অঙ্গগুলোর ক্রমানুসারে ধৌত করা (ترتيب)
অজুর সময় অঙ্গগুলোকে নির্ধারিত ক্রমে ধৌত করা ফরজ। এই ক্রমটি আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন:
{فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُؤُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ}
এই নির্দেশ অনুযায়ী, অজুর ক্রম হলো:
- প্রথমে মুখমণ্ডল ধৌত করা।
- তারপর হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
- এরপর মাথায় মাসাহ করা।
- সবশেষে পা গোঁড়ালি পর্যন্ত ধৌত করা।
ক্রমানুসারে ধৌত করার বিধান
- অধিকাংশ আলেমের মতে, এই ক্রমানুসার শর্ত এবং এটি পালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
- এটি শাফেয়ি, হাম্বলি, আবু সাওর, আবু উবাইদ এবং জাহিরি মাযহাবের মত।
মুওয়ালাত (ক্রমাগত ধৌত করা)
এটি হল অজুর প্রত্যেক অঙ্গ একে অপরের পরপর ধৌত করা, যেন এক অঙ্গ ধৌত করার পর অন্য অঙ্গ ধৌত করার আগে ধৌতকৃত অঙ্গগুলো শুকিয়ে না যায়।
শাফেয়ি মাজহাবের পুরাতন মত অনুযায়ী এবং আহমদ ইবনে হাম্বলের প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী মুওয়ালাত ফরজ। মালিক (রহ.)-ও এটিকে ফরজ বলেছেন, তবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিরতি দেওয়া এবং অসাবধানতাবশত বিরতি দেওয়ার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এই মতটিই শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াও পছন্দ করেছেন।
মুখে পানি নেওয়া (মাযমাযা) এবং নাকে পানি নেওয়া (ইস্তিনশাক) ওয়াজিব
মাযমাযা: কুলি করা – মুখের ভেতরে পানি নিয়ে নাড়চাড়া করা।
ইস্তিনশাক: নাকের ভেতরে পানি প্রবেশ করানো এবং শ্বাসের সাহায্যে নাকের গভীর পর্যন্ত তা পৌঁছানো।
ইস্তিনসার: ইস্তিনশাকের পর নাক থেকে পানি বের করে ফেলা।