৪১ দরুদ শরীফের আমল ও ফযিলত । উপকারীতা ও ১০ টি কল্যাণ

পোস্টটি শেয়ার করুন

এই ব্লগপোস্টে আমরা ৪১ দরুদ শরীফের আমল, ফযিলত ও এর উপকারিতা এবং হাদিসের আলোকে এর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করব। আসুন, দরুদ শরীফের বরকতময় এই আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানি এবং তা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করার নিয়ত করি।

দরুদ শরীফ হলো নবিজি ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি এমন এক দোয়া, যা আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের অগণিত কল্যাণ বয়ে আনে। রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা শুধু একটি ইবাদতই নয়, বরং এটি আমাদের গুনাহ মোচন, রহমত লাভ এবং দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়।

বিশেষ করে ৪১ বার দরুদ শরীফ পড়ার আমল অনেক ইসলামি স্কলার ও বুযুর্গ ব্যক্তিরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকেন। এটি পরীক্ষিত একটি আমল, যা বিভিন্ন প্রয়োজন ও সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য করা হয়ে থাকে। অনেক উলামায়ে কেরাম বলেন, যে কোনো বৈধ উদ্দেশ্যে ৪১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান করে দেন।

৪১ দরুদ শরীফের আমল ও ফযিলত

🔹 দরুদ শরীফ পাঠের গুরুত্ব

দরুদ শরীফ পাঠ করা একটি বিশেষ নেক আমল, যা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআনে আমাদের তাঁর প্রিয় নবী ﷺ-এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন—

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করো।” 📖 (সূরা আহযাব: ৫৬)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, দরুদ পাঠ করা শুধুমাত্র একটি ইবাদতই নয়, বরং এটি মহান আল্লাহর বিশেষ হুকুম।

🔹 ৪১ দরুদ শরীফের আমল

৪১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করার বিশেষ আমল বহু ইসলামি স্কলার ও বুযুর্গ ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন। এটি দোয়া কবুলের অন্যতম কার্যকর আমল হিসেবে পরিচিত। এই আমলটি সাধারণত নির্দিষ্ট প্রয়োজনে বা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য করা হয়।

👉 ৪১ দরুদ শরীফের আমল করার পদ্ধতি

  • প্রথমে পাক-পবিত্র হয়ে নিয়ত করুন।
  • দরুদ শরীফ পাঠের পূর্বে ও পরে ৩ বার করে সূরা ফাতিহা ও সূরা ইখলাস পড়ুন।
  • ৪১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করুন।
  • আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন ও দোয়া পেশ করুন।

এটি দৈনিক পাঠ করতে পারেন অথবা নির্দিষ্ট কোনো প্রয়োজনে একটানা ৪০ দিন চালিয়ে যেতে পারেন।

🔹 ৪১ দরুদ শরীফ পাঠের ফজিলত

১. নবিজি ﷺ-এর সুপারিশ লাভ করা যাবে

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন— “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করবেন এবং তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে।” 📖 (মুসলিম: ৪০৮, তিরমিজি: ৪৮৪)

২. দোয়া কবুল হয়

হাদিসে এসেছে— “যে ব্যক্তি দোয়ার শুরুতে ও শেষে দরুদ পাঠ করে, তার দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয়।” 📖 (তিরমিজি: ৪৮৬)

৩. দুঃশ্চিন্তা ও বিপদ দূর হয়

এক সাহাবি বলেন— “আমি নবিজি ﷺ-এর কাছে আমার দুঃখ-দুর্দশার কথা বললাম। তিনি বললেন: তুমি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, তাহলে তোমার চিন্তা দূর হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।”
📖 (আল-মুজাম আল-কবীর: ৭২৩৭)

৪. রোগমুক্তি ও মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়

দরুদ শরীফের বরকতে আল্লাহ তাআলা অনেক রোগ-বালাই ও মানসিক অশান্তি দূর করে দেন।

৫. জীবিকার বরকত বৃদ্ধি পায়

দরুদ শরীফ বেশি বেশি পড়লে রিজিকে বরকত হয় এবং আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়।

৬. কবরের আজাব থেকে মুক্তি

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন— “যে ব্যক্তি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন।” 📖 (দারাকুতনি: ৪৪৭)

🔹 কিছু গুরুত্বপূর্ণ দরুদ শরীফ

১. দরুদে ইব্রাহিমি

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ।

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপর দয়া করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিম (আ.) এবং তাঁর পরিবারবর্গের ওপর দয়া করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।”

📖 (বুখারি: ৩৩৭০, মুসলিম: ৪০৫)

২. দরুদে তাঞ্জিনা

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةً تُنَجِّنَا بِهَا مِنْ جَمِيعِ الْأَهْوَالِ وَالْآفَاتِ، وَتَقْضِي لَنَا بِهَا جَمِيعَ الْحَاجَاتِ، وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيعِ السَّيِّئَاتِ، وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ أَعْلَى الدَّرَجَاتِ، وَتُبَلِّغُنَا بِهَا أَقْصَى الْغَايَاتِ مِنْ جَمِيعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاةِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ۔

📖 (দারুল কুতনি: ৪৪৮)

৩. ছোট্ট দরুদ

صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

📖 (সহিহ মুসলিম: ৪০৬)

বাংলা অর্থ: “আল্লাহর রহমত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর ওপর।”

উপসংহার

৪১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করা একটি বিশেষ আমল, যা আমাদের জীবনে অনেক কল্যাণ বয়ে আনে। দোয়া কবুল, বিপদ থেকে মুক্তি, রিজিকের বরকত, কবরের আজাব থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের অন্যতম উপায় হলো বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। আসুন, আমরা নিয়মিত দরুদ পাঠ করি এবং আমাদের জীবনকে বরকতময় করি।

৪১ দরুদ শরীফের আমল ও ফযিলত সম্পর্কিত ৫টি প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন: ৪১ বার দরুদ শরীফ পড়ার বিশেষ আমল কেন করা হয়?

উত্তর: ৪১ বার দরুদ শরীফ পড়া একটি পরীক্ষিত আমল, যা বিভিন্ন প্রয়োজনে, দোয়া কবুলের জন্য এবং বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়। অনেক বুযুর্গ ব্যক্তিরা এই আমল করার উপদেশ দিয়েছেন, কারণ এটি দোয়ার কবুলিয়াতের জন্য অনেক কার্যকর।

প্রশ্ন: দরুদ শরীফ পাঠ করলে কী কী ফজিলত পাওয়া যায়?

উত্তর: দরুদ শরীফ পাঠ করলে নবিজি ﷺ-এর সুপারিশ লাভ করা যায়, দোয়া কবুল হয়, গুনাহ মাফ হয়, মানসিক প্রশান্তি আসে, রিজিকের বরকত বৃদ্ধি পায় এবং কবরের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: দরুদ শরীফ কতবার পড়া উত্তম?

উত্তর: দরুদ শরীফ যত বেশি পড়া যায়, তত ভালো। তবে ৪১ বার পড়ার বিশেষ আমল রয়েছে, এছাড়া ১০০ বার, ৩০০ বার কিংবা ১০০০ বার পড়াও ফজিলতপূর্ণ।

প্রশ্ন: দরুদ শরীফ কি নির্দিষ্ট কোনো সময় পাঠ করতে হয়?

উত্তর: দরুদ শরীফ দিনের যেকোনো সময় পড়া যায়। তবে ফজরের পর, মাগরিবের পর এবং জুমার দিন বেশি বেশি পড়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দোয়ার কবুলিয়াতের জন্য দোয়ার আগে ও পরে দরুদ পড়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: দরুদ শরীফ বেশি পড়লে দুনিয়াবি কোনো উপকার পাওয়া যায় কি?

উত্তর: হ্যাঁ, দরুদ শরীফ বেশি পড়লে দুনিয়াবি উপকারও পাওয়া যায়। যেমন—দুঃশ্চিন্তা দূর হয়, বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, জীবনের বরকত বৃদ্ধি পায়, আর্থিক সমস্যার সমাধান হয় এবং রিজিক বৃদ্ধি পায়। এটি মানসিক শান্তি ও আত্মার প্রশান্তির জন্যও অত্যন্ত কার্যকর।


পোস্টটি শেয়ার করুন