সেপ্টেম্বর ২০২৩ এর একটি জরিপে দেখা যায় বিশ্বব্যাপী ২৮ কোটি ৪৬ লাখ ২৭ হাজার ৪৪১ জন ব্যক্তি পবজি খেলায় অভ্যস্ত। এই সংখ্যাটি বিপুল ও শংকাজনক। আরো শংকার কথা হল এদের মধ্যে বিশাল একটি অংশ মুসলিম। তারা জানেন না পাবজি খেলা হারাম কি না। জানতেও চান না এই বিষয়টি। তবে আমি কিছু মানুষ পেয়েছি যারা জানতে চান এই প্রশ্নের উত্তরটি।
পাবজি খেলা কি?
PUBG বা “প্লেয়ার আননোন’স ব্যাটলগ্রাউন্ড” একটি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ব্যাটল রয়্যাল গেম। “ব্যাটল রয়্যাল” অর্থ যুদ্ধক্ষেত্র। সেখানে খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সামরিক অস্ত্রের মাধ্যমে লড়াই করেন। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার ভিডিও গেম কোম্পানি ব্লুহোল-এর সহায়ক প্রতিষ্ঠান পাবজি কর্পোরেশন কর্তৃক তৈরি করে। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর এই খেলাটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজে মুক্তি পায়। পরে অ্যান্ড্রয়েড ভার্সনও প্রকাশিত হয়।
পাবজি খেলা কি হারাম?
হ্যাঁ, পাবজি খেলা হারাম। কেননা এই গেমটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আসক্তি তৈরি করে। তাদের বুদ্ধি ও সময় নষ্ট করে। তাই সর্বম্মতভাবে এই খেলাটি হারাম।
বিশ্বের অনেক ইসলামি স্কলার পাবজি খেলার বিভিন্ন নেতিবাচক দিক এবং ক্ষতির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। নানান কারণে তারা এই গেমকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই খেলাটি হারাম হওয়ার ভিত্তি কেবল চিন্তাকেন্দ্রিক নয়। কুরআন-হাদিসে স্পষ্ট দলিলের ভিত্তিতে এটি হারাম।
পাবজি খেলায় কি ইসলাম অবমাননা করা হয়?
হ্যা, পাবজি খেলায় ইসলাম অবমাননা করা হয়। পাবজি খেলায় ঢোকার পর আপনি একটি মূর্তি দেখতে পাবেন। সেখানে পবিত্র কাবা শরীফকে উল্টো করে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি কোনো সাধারণ চিত্র নয়, বরং এর মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফের অবমাননা করা হয়েছে। আবার খেলোয়াড় ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাকে মূর্তির সামনে মাথা নত করতে হয়। এটি শিরক হিসাবে বিবেচিত।
পাবজি খেলা হারাম কেন?
এই গেমকে হারাম বলা হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ হলো –
১. আসক্তি
পাবজি খেলাটি খেলোয়াড়দের মধ্যে আসক্তি সৃষ্টি করে। এই আসক্তি খেলায় লেভেল বাড়ার সাথেসাথে আরও প্রবল হতে থাকে। এই মানসিক আসক্তি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
২. সময়ের অপচয়
আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত সময়ের অপচয় করা হয় এই খেলায় মত্ত হয়ে। আল্লাহ সময় দিয়েছেন আমাদের কাছে আমানত। তাই তার সঠিক পথে ব্যবহার করা একজন সচেতন মুসলিমের উপর আবশ্যক। পাবজি খেলায় সময়ের ব্যাপক অপচয় হয়। আশা করি এটি কেই অস্বীকার করবেন না।
৩. স্বাস্থ্যহানি
রাতে জেগে পাবজি খেলায় দেহ দুর্বল হয়ে যায়। ক্রমান্নয়ে এটা স্বাস্থ্যহানীর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪. মানসিক বিকৃতি
এই গেমটির একটি প্রধান ক্ষতিকর দিক হলো এটি মানুষের মস্তিষ্ককে বিকৃত করে। যুদ্ধের অনুভূতি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং সমাজবিচ্ছিন্ন জীবনধারায় অভ্যস্ত করে তোলে।
৫. নামাজে অবহেলা
পাবজি খেলার কারণে অনেকেই নামাজে অবহেলা করেন। তাদের অনেকে মনে করে, গেম শেষ করে নামাজ পড়বে। কিন্তু তখন নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।
৬. পিতা-মাতার অবাধ্যতা
পাবজি খেলার কারণে ছেলেমেয়েরা পিতা-মাতার ডাক উপেক্ষা করে। এটি ইসলামে কবিরা গুনাহ বলে বিবেচিত।
আরো পড়ুন:
পাবজি হারামের পক্ষে কুরআন ও হাদিস থেকে রেফারেন্স
এখানে কুরআন ও হাদিসের আলোকে পাবজি খেলা হারাম হওয়ার কিছু কারণ তুলে ধরা হলো।
১. সময়ের অপচয় এবং অপব্যবহার:
কুরআনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সময়ের সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সময়ের অপচয়কে ধ্বংসের কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন:
“সময়ের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে, সৎকর্ম করেছে এবং একে অপরকে সত্য ও ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে।” (সূরা আসর: ১-৩)
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, সময়ের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাবজি অনেক সময়ের অপচয় করে, যা দীনী কাজ, ইবাদত, এমনকি দৈনন্দিন দায়িত্ব পালন থেকে মানুষকে বিমুখ করে রাখে।
২. আসক্তি ও নেশা:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“প্রত্যেক নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম।” (সহিহ মুসলিম)
যে কোনো আসক্তিমূলক কার্যকলাপ যেমন গেম খেলা, যা একজন ব্যক্তির মানসিক এবং দৈহিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে, তা ইসলামি শিক্ষায় হারাম। পাবজি গেমের ক্ষেত্রে অনেক খেলোয়াড় তাদের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক দায়িত্ব ভুলে গিয়ে গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে।
৩. শিরক এবং মূর্তিপূজা
পাবজি গেমে এমন কিছু দৃশ্য ও স্থাপনা রয়েছে, যা শিরক বা মূর্তিপূজার সাথে সম্পর্কিত। আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ শিরক ক্ষমা করবেন না, তবে এটি ছাড়া ইচ্ছা তাকে ক্ষমা করবেন।” (সূরা নিসা: ৪৮)
৪. ইসলামি মূল্যবোধের অবমাননা।
পাবজি গেমে ইসলামি স্থাপনাকে অবমাননা করা হয়েছে। কাবা শরিফের আদলে তৈরি মূর্তির অপব্যবহার। ইসলামি স্থাপনাগুলোর অপমানের বিষয়টি ইসলামি শিক্ষা ও আদর্শের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর যারা আল্লাহর মসজিদগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি রয়েছে।” (সূরা আল-বাকারা: ১১৪)
পাবজি খেলার আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার উপায়
অনেকে শখের বশে পাবজি খেলা শুরু করেন, কিন্তু পরবর্তীতে এটি ছাড়তে পারেন না। তাদের জন্য কিছু পরামর্শ হলো:
- আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করে বেশি বেশি দোয়া করা।
- কুরআন তিলাওয়াত করা এবং হাদিস অধ্যয়ন করা।
- সবসময় কাজে ব্যস্ত থাকা।
- পাবজি খেলার আসক্ত বন্ধুদের সঙ্গ এড়িয়ে চলা।
প্রশ্নোত্তর
পাবজি কি শিরক?
হ্যাঁ, পাবজি শিরক। এই গেমে বিভিন্ন মূর্তির সামনে মাথা নত করতে হয়। এটি স্পষ্ট শিরক।
পাবজি খেলার কোন কোন দিক হারাম হতে পারে?
পাবজি খেলায় সহিংসতা, সময়ের অপচয় এবং নামাজের প্রতি অবহেলা সহ নানা কারণ হারাম হিসেবে বিবেচিত।
রমাদানে পাবজি খেলা কি ঠিক?
রমাদান মাসে গেম খেলা মানে রামাদানের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়া। এ সময় ইবাদত ও তফাক্কুরে মনোযোগ দেয়া উচিত।
পাবজির বিকল্প কি হতে পারে?
ইসলামের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এমন কাজ, যেমন – খেলা-ধুলা, পড়াশোনা, বা সমাজসেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ পাবজির উত্তম বিকল্প।
পোস্টের সারসংক্ষেপ
পাবজি খেলা ইসলামে হারাম। সকল ইসলামী স্কলারদের মতে, এই গেমটি শিরক ও নানান গুনাহের উৎস। সুতরাং এটি পরিত্যাগ করা আবশ্যক।
আরো পড়ুন: