ভালোবাসার মানুষকে পাগল করার দোয়া – এই বাক্যটি দ্বারা প্রকৃতপক্ষে আপনি দুটি পাপ করেছেন। প্রথম পাপ হচ্ছে ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্ক। এটি ইসলামের একটি বড় পাপ হিসেবে গণ্য। ইসলাম বিবাহ বহির্ভূত সব রকম সম্পর্ককে হারাম হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কাজেই এই ভালোবাসা হারাম।
আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে পাগল করা। কাউকে পাগল করা এটি দ্বিতীয় আরেকটি পাপ। কেননা মানুষকে পাগল করে তার স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থেকে বিঘ্ন ঘটানো এটি কারো জন্যই উচিত নয়। এটি কেবল ইসলাম নয় বরং পৃথিবীর সকল ধর্ম ও মতবাদ অনুযায়ী একটি অন্যায় কাজ।
তাছাড়া তৃতীয় যে ভুলটি আপনি করছেন সেটি হচ্ছে আপনার দুটি পাপের জন্য দোয়া করছেন বা দোয়া অনুসন্ধান করছেন। আপনাকে বুঝতে হবে দোয়া হয় কেবল ভালো কাজের জন্য। কোন খারাপ কাজ বা পাপের কাজের জন্য দোয়া করা যায় না। যদি কোনো ব্যক্তি জেনে-বুঝে কোন পাপ কাজের জন্য দোয়া করেন, তাহলে তার ঈমান নিয়ে প্রশ্ন এসে যাবে।
কাজেই আপনাকে এ ধরনের দোয়া সন্ধান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে আপনি যদি সত্যিই কাউকে পছন্দ করেন আর তাকে বিয়ে করতে চান তাহলে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার কাছে সেই মানুষকে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য দোয়া করতে পারেন। এর জন্য কী দোয়া করবেন বা কখন করবেন তা নিয়ে আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করছি।
ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করার জন্য ৫টি দোয়া
নেক ও বরকতময় বিয়ের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে পাঁচটি দোয়া দিচ্ছি আপনি নিয়মিত এগুলো করতে পারেন:
১. নেক জীবনসঙ্গীর জন্য দোয়া
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: Rabbana hablana min azwajina wa dhurriyyatina qurrata a’yunin wajʿalna lil-muttaqina imama.
বাংলা অর্থ: “হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আমাদের চোখের শীতলতার কারণ বানাও এবং আমাদের মুত্তাকীদের নেতা বানাও।” (সূরা আল-ফুরকান: ৭৪)
২. বিয়ে, বাসস্থান ও কর্মের জন্য দোয়া
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ: Rabbi inni lima anzalta ilayya min khairin faqeer.
বাংলা অর্থ: “হে আমার প্রভু! তুমি আমাকে যে কল্যাণ নাজিল করেছ, আমি তার প্রতি মুখাপেক্ষী।” (সূরা আল-কাসাস: ২৪)
৩. উত্তম জীবনসঙ্গী কামনার দোয়া
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ زَوْجَةً صَالِحَةً تُعِينُنِي عَلَى أَمْرِ دِينِي وَدُنْيَايَ
উচ্চারণ: Allahumma inni as’aluka zawjatan salihatan tu’inuni ‘ala amri deeni wa dunyaya.
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে নেককার জীবনসঙ্গী প্রার্থনা করি, যে আমার দীন ও দুনিয়ার কাজে আমাকে সাহায্য করবে।”
৪. বিয়ে এবং জীবনের বরকতের জন্য দোয়া
اللَّهُمَّ بَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ
উচ্চারণ: Allahumma barik li fima a’tayta wa qini sharri ma qadayta.
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন এবং যা নির্ধারণ করেছেন তার অমঙ্গল থেকে আমাকে রক্ষা করুন।”
৫. বিয়ের মাধ্যমে পাপ থেকে রক্ষার দোয়া
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: Allahumma akfini bihalalika ‘an haramika wa aghnini bifadlika ‘amman siwaka.
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হালাল দিয়ে হারাম থেকে বাঁচান এবং আপনার অনুগ্রহে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্তি দিন।”
কীভাবে ভালোবাসার মানুষকে পাগল করার দোয়া করবেন?
প্রথমে আমরা বলেছি যে ভালোবাসার মানুষকে পাগল করার আসলে কোন দোয়া নেই বরং এরকম কোন দোয়া সন্ধান করা একটি পাপ। তবে আমরা উপরে যেটা বলেছি আপনি ভালোবাসার মানুষকে পাগল করার পরিবর্তে যাকে আপনি পছন্দ করে তাকে বিয়ের জন্য দোয়া করতে পারেন।
এখানে আপনি দোয়ার সময় তার নাম উল্লেখ করে দোয়া করতে পারেন। প্রথমত কুরআনের যে দোয়াগুলো আমরা দিয়েছি সেগুলো আপনি করবেন। অতঃপর বাংলায় আপনি দোয়ার সাথে সংযুক্ত করতে পারবেন। আপনার মন থেকে যা ইচ্ছে সেটা আপনি বলবেন, সেখানে আপনি যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন তার নাম সংযুক্ত করে দিবেন।
তবে দোয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে আপনি যাকে পছন্দ করছেন তার নাম উল্লেখ না করে বরং আপনি আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে এভাবে দোয়া করবেন যে, আপনার জন্য যে ব্যক্তি উত্তম তাকে তিনি আপনার জন্য জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্বাচন করে দেওয়ার জন্য।
এটার উপকার হলো যে, আমি যাকে চাইব সে আমার জন্য কল্যাণকর হবে কিনা সেটা আমি জানি না। কেননা আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জ্ঞান রাখি না। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তায়ালা জানেন যে, কোন ব্যক্তি আমার জন্য দুনিয়া এবং আখেরাতে কল্যাণকর হবে। তাই যখন আল্লাহ আমার জন্য কোন ব্যক্তিকে নির্বাচন করে দিবেন সেটা আমার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে।
ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করার জন্য কোন সময় দোয়া করব?
দোয়া আপনি দিনের যেকোনো সময় যে কোন ভাবে করতে পারেন। এমনকি দোয়া করার জন্য ওযু অবস্থায় থাকারও কারো প্রয়োজন নেই। অজু না থাকলেও আপনি দোয়া করতে পারবেন।
তবে বিশেষ কিছু অবস্থা এবং বিশেষ কিছু সময় রয়েছে সেখানে আপনি দোয়া করলে সেটা কবুল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে।
যেমন,
- ফরজ নামাজের পরবর্তী সময় দোয়া করা
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করা
- বৃষ্টির সময় দোয়া করা
- শুক্রবারে ইমাম সাহেব যখন মেম্বারে দাঁড়িয়ে খুৎবার দিচ্ছেন তখন
- শুক্রবারে আসরের পরে
- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে
- জমজমের পানি পান করার সময় ইত্যাদি
এই সময়গুলোতে দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে।
দোয়া করার ভুল নিয়ম পরিহার করুন
আমাদের দেশে একটি প্রচলিত নিয়ম রয়েছে যে, মানুষ টাকা পয়সা দিয়ে হুজুরদেরকে এনে দোয়া করায়। আপনি কখনোই এরকম কিছু করতে যাবেন না। টাকা দিয়ে অন্য কারো কাছ থেকে দোয়া করতে যাবেন না। দোয়া হচ্ছে আপনার মনের বিষয়। আপনি মন থেকে যা চান সেটা আল্লাহর কাছে বলবেন। আপনার মনের যে চাহিদা, যে আবেগ ও অনুভূতি সেটা অন্য ব্যক্তি বুঝবে না এবং প্রকাশও করতে পারবে না।
এভাবে কিছু মানুষ মাজারে গিয়ে মাজারের বাবার দরবারে টাকা-পয়সা দিয়ে আসে, যাতে তার মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। এটা হচ্ছে সম্পূর্ণ রকম একটি শিরকি আকীদা বা বিশ্বাস। যারা এরকম করেন তারা অবশ্যই এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন। কেননা যারা মাজারে রয়েছেন, তারা আমাদের কোন ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করা ন্যূনতম শক্তি রাখেন না।
আমাদের সকল ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার একমাত্র শক্তি রাখেন আল্লাহতালা। তিনি ব্যতীত পৃথিবীর সকল কিছুই হচ্ছে আল্লাহ সৃষ্টি। তাদের হাতে কোনই ক্ষমতা নেই। কাজেই যখন আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখেন বিশ্বাস করবেন, তাদের কাছে সাহায্য চাইবেন, তখন এটা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরিক করছেন হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে আপনার ঈমান নষ্ট হবে।