মহিলাদের নামাজে পা রাখার নিয়ম, কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে ভিন্ন। আবার কিছু ক্ষেত্রে পুরুষদের মতই। কিয়াম, ( দাঁড়ানো ) রুকু, সিজদা, বৈঠক ইত্যাদি অংশ নিয়ে নামাজ পরিপূর্ণ হয়। এ সব অবস্থাভেদে মহিলাদের পা রাখার নিয়ম নিয়ে আমরা এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
কিয়াম অবস্থায় মহিলাদের পা রাখার নিয়ম
কিয়ামের সময় মহিলারা কিবলার দিকে পা প্রসস্ত করে দাঁড়াবেন। দুই পা এক সাথে না মিলানো যাবে না। উভয় পায়ের মধ্যবর্তী কিছুটা দূরত্ব রাখতে হবে। তবে নামাজে দাঁড়ানোর সময় দুই পায়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই। এক্ষেত্রে কিছু আহলে ইলমের পরামর্শ হল, উভয় পায়ের মধ্যবর্তী চার আগুন সমপরিমার দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। মূল কথা নামাজের সময় মুসল্লি যেন ভারসাম্য বজায় রেখে দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়ান এবং দুই পা মেলানো থেকে বিরত থাকেন। প্রয়োজন অনুযায়ী পায়ের অবস্থান পরিবর্তন করতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাঁর নামাজের বর্ণনা সংক্রান্ত হাদিসগুলো থেকে কোনো হাদিস পাইনি, যেখানে স্পষ্টভাবে তাঁর পবিত্র পাদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কিছু আলেম পরামর্শ দিয়েছেন যে, নামাজে দাঁড়ানোর সময় দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়ানো এবং শরীরকে সোজা রাখা উত্তম। তারা এক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ানো বা দুই পা সম্পূর্ণ মিলিয়ে নেওয়াটা অপছন্দনীয় হিসাবে মতামত দিয়েছেন।
ইবনু মাইয়াবি আশ-শানকিতি তার বই “ফাতহুল মুনইম”-এ উল্লেখ করেছেন যে, নামাজে এক পা তুলে রাখা, এক পায়ের উপর অন্য পা রাখা, অথবা দুই পা একসঙ্গে মিলিয়ে দাঁড়ানো অপছন্দনীয়। এটি নামাজের সৌন্দর্য ও খুশু খুযু পরিপন্থী।
নাসায়ি শরিফে বর্ণিত আছে যে, ইবনু মাসউদ (রা.) এক ব্যক্তিকে উভয় পা মিলিয়ে নামাজে দাঁড়াতে দেখলেন। তিনি বলেন, “এটি সুন্নাহর পরিপন্থী।”
এসব রেফারেন্স প্রমাণ করে নামাজে দুই পা একসঙ্গে রাখা সুন্নাহবিরোধী। ( ইসলাম ওয়েব ডট নেট )
সিজদা অবস্থায় মহিলাদের পা রাখার নিয়ম
দুই সিজদার মাঝখানে ও তাশাহুদের সময় মহিলারা বসার ও পা রাখার নিয়ম পুরুষদের মতোই। নামাজে মহিলারা পুরুষদের থেকে কেবল পোশাক এবং আওয়াজের ক্ষেত্রে ভিন্ন।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেছেন, নামাজে মহিলারা তাদের কাছে সবচেয়ে সহজ এবং আরামদায়ক পদ্ধতিতে বসবেন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে তারা বাম পায়ের উপর বসবেন এবং ডান পা খাড়া করে তার আঙুলগুলো কেবলার দিকে মুখ করে রাখবেন। এটি সর্বোত্তম পদ্ধতি। তবে যদি এটি সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে সহজ হয়, সেভাবে বসবেন। ( ইসলাম ওয়েব ডট নেট )
তবে কিছু আলেম উল্লেখ করেছেন যে, মহিলারা পুরুষদের থেকে এই বিষয়ে ভিন্ন যে, পুরুষদের জন্য সিজদায় উরুর মধ্যে ফাঁক রাখা এবং হাঁটু থেকে হাত দূরে রাখা উত্তম। পক্ষান্তরে, মহিলারা এর উল্টো করবেন। অর্থাৎ মহিলারা সিজদায় উরু, হাঁটু ও হাত মিলিয়ে রাখবেন। সেই সাথে নিজের শরীরকে যতটা সম্ভব ঢেকে রাখবেন। এটি তাদের পর্দার নির্দেশনা পালনের ক্ষেত্রে অধিক উপযোগী।
জামাতে নামাজ আদায় অবস্থায় মহিলাদের পা রাখার উপায়
নারীদের ক্ষেত্রে (জামাতে ) কাতারে দাঁড়ানোর সময় পা দুইটি প্রসস্থ করে রাখার চেয়ে ছোট পরিসরে ( চার আগুন বা একটু কম বেশি ) ফাঁকা করে রাখা এবং শরীরের অঙ্গগুলো মিলিয়ে রাখাই উত্তম। এটি তাদের পর্দা ও শালীনতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
নারীদেরও পুরুষদের মতোই নামাজের কাতার সোজা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা কর, কারণ কাতার সোজা করা নামাজ প্রতিষ্ঠার অংশ।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
তবে কাতার সোজা করার জন্য পা একসঙ্গে লাগানো বা দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি আবশ্যক নয়। কাতার সোজা ও খালিস্থান পূরণ নিশ্চিত করতে কাঁধের পাশাপাশি কাঁধ রাখলেই হয়ে যায়। যখন কাতারের লোকদের কাঁধগুলো একে পাশাপাশি যুক্ত থাকে, তখন তাদের পাগুলোর দূরত্ব অনায়াসে কমে আসে।
তবে নারীদের জন্য নামাজে কিছু বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে, যা তাদের অতিরিক্ত পর্দা ও শালীনতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। ইমাম নববি (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “আল-মাজমু”-তে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) বলেছেন: “নারী ও পুরুষের নামাজের কর্মপদ্ধতিতে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। তবে নারীদের জন্য পরামর্শ রয়েছে যে, তারা নিজেদের অঙ্গগুলো মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদার সময় পেট উরুর সাথে লাগিয়ে রাখবে। এটি তাদের জন্য সর্বোচ্চ পর্দার আহ্ববান পূরণ করে। এটি নামাজের সব অবস্থাতেই পালন করা উত্তম।” ( ইসলাম ওয়েব ডট নেট )