ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন যা একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে স্থাপিত হয়। বিয়ের মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন নারী একে অপরের সঙ্গী লাভ করেন এবং একটি সুন্দর ও সুখী পরিবার গড়ে তুলতে পারেন। অনেক মেয়েই তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চান এবং তাদের জন্য আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া করা ও কিছু আমল করা বৈধ ও مستحب।
মেয়েদের বিয়ের দোয়া গুরুত্ব
আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সকলের দোয়া ও আমল গ্রহণ করেন এবং আমাদের জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি বর্ধন করেন। তাই মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া করা ও কিছু আমল করা উচিত।
কুরআন ও হাদিস থেকে রেফারেন্স
কুরআন
- সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২২১: “আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। আল-বায়ান।” ( হাদিসবিডি)
- সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩: “আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা যুলম করবে না। আল-বায়ান।” ( হাদিসবিডি)
হাদিস
- সহীহ মুসলিম: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে এবং যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ’সওম’ পালন করে। কেননা, সওম যৌন ক্ষমতাকে দমন করে। [১৯০৫; মুসলিম ১৬/১)
মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল
তাহাজ্জুদের নামাজ
তাহাজ্জুদের নামাজ রাতের বিশেষ একটি ইবাদত, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। এই নামাজ আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
“রাতের একাংশে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়, এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে উন্নীত করবেন।”
(সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭৯)
তাহাজ্জুদের সময় আল্লাহর কাছে সাধ্যমতো দোয়া করা উচিত যেন তিনি তাড়াতাড়ি একটি সঠিক জীবনসঙ্গী প্রদান করেন।
আল্লাহর উপর ভরসা করা
আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করা এবং তার প্রতি বিশ্বাস রাখা আমাদের সকল কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বিয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য এবং দিকনির্দেশনা প্রার্থনা করা উচিত।
وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট।”
(সুরা আত-তালাক, আয়াত: ৩)
আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রার্থনা করা এবং ধৈর্য ধারণ করা আমাদের জন্য বেহতরীন পথ।
পরিবারের সহযোগিতা নেওয়া
মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা অপরিহার্য। পরিবার একটি শক্তিশালী ভিত্তি এবং তাদের সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা মেয়েদের জন্য বেহতরীন উপায়।
পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিয়ের প্রক্রিয়াটি সহজ এবং কার্যকর করতে পারে। তাদের সাথে আলোচনা এবং মতামত গ্রহণ করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
লোভ ও অতি স্বপ্ন ত্যাগ করা
বিয়ের ক্ষেত্রে লোভ ও অতি স্বপ্ন ত্যাগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনর্থক চাহিদা এবং উচ্চাশা ত্যাগ করে বাস্তবতা মেনে নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا
“নিশ্চয়ই সফল হয়েছে সে ব্যক্তি, যে তার নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে।”
(সুরা আশ-শামস, আয়াত: ৯)
অতি স্বপ্ন এবং লোভ ত্যাগ করে সাধ্যের মধ্যে বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।
কাউকে ভালোলাগলে প্রস্তাব দেওয়া
ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য প্রস্তাব দেওয়া সম্পূর্ণ হালাল এবং গ্রহণযোগ্য। কেউ যদি কাউকে পছন্দ করে, তাহলে তার প্রতি প্রস্তাব দেওয়া এবং পরিবারের মাধ্যমে এই প্রস্তাব পৌঁছানো উচিত।
হাদিসে এসেছে:
قالت خديجة: يا محمد، إني قد رغبت فيك لقرابتي منك وشرفك وأمانتك وحسن خلقك وصدق حديثك
“খাদিজা (রা.) বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি তোমাকে পছন্দ করি তোমার আত্মীয়তার জন্য, তোমার সম্মানের জন্য, তোমার বিশ্বস্ততার জন্য, তোমার সুন্দর চরিত্রের জন্য এবং তোমার সত্য কথা বলার জন্য।”
(ইবনে হিশাম)
এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মেয়ে পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সম্পূর্ণ বৈধ ও মুস্তাহাব এবং এই প্রস্তাবের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব।
মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার দোয়া
১. দোয়া:
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
বাংলা উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা আনযালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফকির।
অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।”
রেফারেন্স: এই দোয়াটি কুরআনের সুরা আল-কাসাস (২৮:২৪) এ উল্লেখিত।
উপকার
এই দোয়াটি করেছিরেন মুসা (আ.)। যখন একদম নিরুপায় ছিলেন। এই একটি দোয়ার দ্বারা তিনি বিয়ে, বাসস্থান, কর্মসংস্থান লাভ করেছিলেন। এটি একজন মানুষের আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা এবং তার সাহায্যের আশ্রয় নেওয়ার প্রতীক। তাই মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া হিসাবেিএটি আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণ এবং সঠিক জীবনসঙ্গীর প্রাপ্তির জন্য খুবই কার্যকর হতে পারে।
২. দোয়া
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
বাংলা উচ্চারণ: রাব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউনিন ওয়াজআলনা লিলমুত্তাকিনা ইমামা।
অর্থ:“হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের সঙ্গী (স্বামী বা স্ত্রী ) ও সন্তানেরা যেন আমাদের চোখের স্নিগ্ধতা হয় এবং আমাদের মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন।”
রেফারেন্স: এই দোয়াটি কুরআনের সুরা আল-ফুরকান (২৫:৭৪) এ উল্লেখিত।
উপকার
এই দোয়াটি মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার জন্য করা যেতে পারে। এটি পরিবারে সুখ-শান্তি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য প্রার্থনা করা হয়। এটি সঙ্গী ও সন্তানদের কল্যাণ কামনা এবং সঠিক মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য খুবই কার্যকর একটি দোয়া।
৩. দোয়া:
رَبِّ هَبْ لِيَ زَوْجًا صَالِحًا
বাংলা উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি যাওজান সালিহান।
অর্থ:
“হে আমার প্রভু! আমাকে একটি সৎ জীবনসঙ্গী প্রদান করুন।”
রেফারেন্স: এই দোয়াটি সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট কুরআন বা হাদিস থেকে নয়, তবে এই দোয়াটি বিভিন্ন ইসলামিক উৎসে প্রাপ্ত এবং প্রচলিত।
উপকার
এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে সৎ এবং নেক জীবনসঙ্গী প্রার্থনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি সৎ জীবনসঙ্গী জীবনে সুখ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।