যিনা বিষয়টি আলোচনা করলে মানুষের দেহ ভয়ে কেঁপে ওঠে। চৌদ্দশো বছর আগে কুরআন এবং হাদিসে যিনা সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এই মহাপাপ আমাদের সমাজকে প্লাবনের মতো গ্রাস করেছে। ডান-বামে, সামনে-পেছনে, এমনকি আমাদের হাতের মোবাইল ফোনেও জিনার বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন প্রকারে আমাদের সমাজে যিনা চলমান। আমরা এই পোস্টে – যিনা কত প্রকার এটা নিয়ে আলোচনা করছি।
যিনা কত প্রকার?
যিনা একটি সামষ্টিক শব্দ, যা বিভিন্ন প্রকারের যিনাকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রতিটি প্রকারের যিনা স্পষ্টভাবে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামী পণ্ডিতগণ এই প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। শারীরিক মিলন হল যিনার চূড়ান্ত রূপ। এর নিচু স্তরগুলো হলো— চোখের যিনা, কানের যিনা, হাতের যিনা ইত্যাদি।
যিনা ৪ প্রকার
ইসলামে মূলত ৪ প্রকারের জিনা রয়েছে। নিচে এই ৪ প্রকারের জিনা নিয়ে আলোচনা করা হলো:
- শারীরিক সম্পর্ক: স্বামী বা স্ত্রীর বাইরে অন্য কারও সাথে শারীরিক মিলন করা।
- চোখের যিনা: মাহরামের বাইরে অন্য নারীর প্রতি কামনামিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকানো।
- মুখ বা জিহ্বার যিনা: অশ্লীল কথাবার্তা বলা বা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আলোচনা করা।
- হাতের যিনা: স্বামী বা স্ত্রীর বাইরে অন্য কারও শরীর স্পর্শ করা বা যৌন উত্তেজক স্পর্শ করা।
হাদিসে যিনার প্রকার
কুরআনের পর ইসলামের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হাদিস, যেখানে জিনাকে শারীরিক সম্পর্কের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। এবং এটি মূলত কয়েকটি প্রকারে বিভক্ত।
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“আদম সন্তানের জন্য নির্ধারিত যিনার অংশ তাকে অবশ্যই পেতে হবে।
- চোখের যিনা হল হারাম বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া।
- কানের যিনা হল হারাম কথা শোনা।
- জিহ্বার যিনা হল হারাম কথোপকথন।
- হাতের যিনা হল স্পর্শ করা।
- পায়ের যিনা হল হারাম উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া।
- অন্তরের যিনা হল ইচ্ছা এবং আকাঙ্ক্ষা। আর যৌনাঙ্গ এটিকে সত্য প্রমাণ করে বা মিথ্যা করে।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
যিনার বিভিন্ন প্রকারের ব্যাখ্যা
- চোখের যিনা: হারাম বিষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করা। একজন পুরুষ অন্য নারীর দিকে বা একজন নারী অন্য পুরুষের দিকে কামনার চোখে তাকালে এটি চোখের জিনা।
- কানের যিনা: হারাম বার্তা শোনা, যা তাকে যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণ বা অবৈধ সম্পর্কের দিকে ধাবিত করে।
- মুখের যিনা: অশ্লীল এবং যৌন উত্তেজনাপূর্ণ শব্দ বলা। এটি মানুষকে হারাম যৌন সম্পর্কের দিকে আহ্বান করে।
- হাতের জিনা: অন্য নারীর দেহ স্পর্শ করা বা তার সংবেদনশীল অংশ স্পর্শ করা।
- পায়ের যিনা: কোনো হারাম উদ্দেশ্যে হাঁটা। যেমন: বান্ধবীর সাথে দেখা করতে পার্কে যাওয়া।
যিনার আরও কিছু প্রকার
মনের যিনা
একজন নারী বা পুরুষের যৌনাঙ্গের প্রতিচ্ছবি কল্পনায় এনে পাপমিশ্রিত চিন্তা করা। এটি মনের জিনা।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
অনুবাদ: “আল্লাহ তাআলা আদম সন্তানের জন্য জিনার অংশ নির্ধারণ করেছেন। সে তা পাবে, কারণ চোখের জিনা হল দেখা। জিহ্বার জিনা হল কথা বলা। অন্তরের জিনা হল আকাঙ্ক্ষা পোষণ। তারপর যৌনাঙ্গ এটিকে সত্য বা মিথ্যা প্রমাণ করে।”
ইলেকট্রিক যিনা
বর্তমানে জিনার একটি নতুন ধরণ প্রকাশিত হয়েছে, যাকে ইলেকট্রিক জিনা বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
- মোবাইল ফোনে খারাপ ভিডিও দেখা।
- ছেলেমেয়েরা হারাম বার্তা চালাচালি করা।
- গেম খেলা।
- গান বা গল্প শোনা—সবই ইলেকট্রিক জিনা।
গোপন ও প্রকাশ্য যিনা
যিনার ৪ প্রকারের বাইরে আরও দুটি বিশেষ ধরণ রয়েছে, যথা গোপন জিনা ও প্রকাশ্য জিনা।
- গোপন জিনা: আরবিতে এটি “সিররিয়াহ” নামে পরিচিত। এটি এমন একটি অবৈধ সম্পর্ক, যা জনসমক্ষে আনা হয় না। ইসলাম এই ধরনের সম্পর্ককে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছে। কারণ এটি বিয়ে এবং পারিবারিক জীবনের পবিত্রতাকে ক্ষুণ্ন করে।
- প্রকাশ্য জিনা: জনসমক্ষে অবৈধ সম্পর্ক করা। এই ধরণের জিনা ইসলামে গুরুতর পাপ। এর জন্য ইসলামী আইন কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করেছে।
যিনা কত প্রকার বিষয়ক প্রায়শ্নোত্তর
প্রশ্ন: যিনার ৪ প্রকার কী কী?
উত্তর: ইসলামে জিনা ৪ প্রকারে বিভক্ত:
- চোখের যিনা (Qazf al-Ayn): কামনাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকানো।
- মুখের যিনা (Qazf al-Lisan): অশালীন ও ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা।
- মনের যিনা (Qazf al-Khawal): পাপমিশ্রিত চিন্তা করা।
- শারীরিক যিনা (Zina Bil Jasad): অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন।
প্রশ্ন: কীভাবে যিনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব?
উত্তর: ইসলামে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জিনা থেকে বাঁচতে সাহায্য করে—
- দৃষ্টি নত রাখা।
- শালীনতা বজায় রাখা।
- আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
প্রশ্ন: যিনার শাস্তির উদ্দেম্য কী ?
উত্তর: ইসলামে যিনার জন্য শাস্তি নির্ধারিত থাকলেও এর মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সতর্ক করা এবং সমাজের নৈতিকতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
প্রশ্ন: তাওবা কি সম্ভব?
উত্তর: তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা সম্ভব। ঠিকমত নামাজ আদায় করা, আন্তরিক অনুশোচনা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার প্রতিজ্ঞা করতে হবে।