“রাব্বিগ ফিরলি জুনুবি” (আরবি: رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي) একটি গুরুত্বপূর্ণ ছোট দোয়া, যার অর্থ “হে আমার রব, আমার গুনাহ মাফ করে দাও”mybdhelp.com। নবীজী (সা.) মসজিদে প্রবেশের সময় এই দোয়া করতেন islamicity.org ও mybdhelp.com। এটিতে একদিকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হচ্ছে, অন্যদিকে তাঁর রহমতের দরজা খোলার দোয়া করা হচ্ছে। আধুনিক বাংলা উচ্চারণে এটি হবে “রাব্বিগ ফিরলি জুনুবি”। প্রত্যেক শব্দের অর্থ ও উচ্চারণ নিম্নরূপ:
- রাব্বি (ربِّ) – “আমার রব”। ‘রব্ব’ শব্দটি মালিক বা পালনকর্তা নির্দেশ করে, এখানে অন্তরের আহ্বানে ‘–ই’ যোগ হয়ে রূপ নেওয়ায় বিপরীতার্থক অপরাধী হিসেবে প্রভুর প্রতি বিনীতভাবে সম্বোধন প্রকাশ পায়।
- ইগফির (اغْفِرْ) – “ক্ষমা কর” (Imperative)। ‘গফর’ (غ-ف-ر) শিকড়ের ক্রিয়া, যা ভুল বা গুনাহ ঢেকে ফেলা, ক্ষমা করা বা ঝেড়ে ফেলার বোধ বহন করে surahquran.com। এখানে আল্লাহকে বিনীতভাবে বলে অনুরোধ করা হচ্ছে, যাতে তিনি দণ্ড না দিয়ে ক্ষমা করে দেন।
- লী (لِي) – “আমার জন্য”। এই অব্যয়টি পূর্বের ক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অর্থ প্রাপ্তিকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ, “আমার পাপসমূহ আমার জন্য ক্ষমা করুন”।
- জুনুবী (ذُنُوبِي) – “আমার সমস্ত গুনাহ”। ‘ধুনুব’ (ذُنوُب) হলো ‘গুনাহ’ বা ‘পাপ’ শব্দের বহুবচন; এর শেষে ‘–ই’ যোগ হয়ে মালিকানার নির্দেশ (my sins) হয়েছে surahquran.com।
সুতরাং পুরো বাক্যের সরল বাংলা অর্থ দাঁড়ায়: “হে আমার প্রভু, আমার সকল গুনাহ (অপরাধ) আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং রহমতের দরজাগুলো আমার জন্য খুলে দাও।” মিশকাত শরিফ-এ বর্ণিত অনুসারে নবীজী (সা.) এই দোয়াটি বলার পর আল্লাহর রহমতের দরজা খোলার দোয়া করতেন mybdhelp.com।
ভাষাগত বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রয়োগ
শব্দভিত্তিক অর্থ:
- رَبِّ (রাব্বি) – আমার পালনকর্তা, আমার রব।
- اغفر (ইঘফির) – ক্ষমা করো, আচ্ছাদন দাও।
- لِي (লী) – আমার জন্য।
- ذنوبي (ধুনুবি) – আমার গুনাহসমূহ।
➡️ এই চারটি শব্দে বিনয়ের গভীর আবেদন আছে। একজন পাপী বান্দা তার প্রভুকে ডেকে বলছে—আমার ভুলগুলো ঢেকে দাও।
আধুনিক প্রয়োগ:
- 🕌 মসজিদে প্রবেশে — সুন্নাহ হিসেবে পড়া।
- 🕋 নামাজের আগে/পরে — অন্তরের প্রস্তুতি হিসেবে পড়া।
- 🏫 শিশুদের শিক্ষা — ছোট ভুল করলে শেখানো: “বল, হে আল্লাহ, আমার ভুল মাফ করো।”
- 👤 ব্যক্তিগত জীবন — চাকরির ইন্টারভিউ, নতুন কাজ বা সিদ্ধান্তের আগে পড়লে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
- 💻 ডিজিটাল জীবনে — অনলাইনে গুনাহে লিপ্ত হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে এই দোয়া বললে তাওবার অনুভূতি জাগে।
ইসলামিক প্রেক্ষাপট (হাদীস ও সূরা/সুরাহ)
এই দোয়ার উৎস প্রধানত হাদীসের মধ্যে পাওয়া যায়। তরগিব-তরহিবের মতো হাদীসের সংগ্রহে ফাতিমা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে: “নবীজী (সা.) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি বি’সমিল্লাহ ও সালাম পড়ার পর বলেন, ‘রাব্বিগ ফিরলি জুনুবি , ওয়াফতাহ লী আবওবা রহমাতিকা’ islamicity.org ও surahquran.com। এর অর্থ: “হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও এবং তোমার রহমতের দরজাগুলো আমার জন্য খুলে দাও।” (প্রস্থানকালে তিনি বলতেন, ‘রাব্বিগ ফিরলি জুনুবি , ওয়াফতাহ লী আবওবা ফজ্লিকা’ – “ও আমার রব! আমার গুনাহ ক্ষমা করে দাও এবং তোমার فضل (বরকত)-এর দরজা খুলে দাও।”)। এই হাদীসটি সুনান ইবনে মাজায় (৭৭১ নং) এবং সহিহ তিরমিজিতে (হাদিস ৩১৪) পাওয়া গেছে islamicity.org ও surahquran.com। আল্লাহপাকের নবী (সা.) নিজেও সকল গুনাহদের মাফের জন্য প্রভুর নিকট দোয়া করতেন এবং মুসলমানদেরও এ দোয়া নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন islamicity.org ও surahquran.com।
একই অর্থ পৃথিবীতে প্রবেশের আগেও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার নির্দেশ তোওরাতে (বাইবেল) উল্লেখ আছে এবং কোরআনেও নবীগণ আল্লাহর ক্ষমা চেয়ে মোনাজাত করেছেন (যেমন, সূরা নূহ ৭১:২৮, সূরা ইউনুস ১০:৯৭ ইত্যাদি)। তবে বিশেষ করে “رَبِّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي” এই বাক্যটি আমরা হাদীসে নবীর দোয়া হিসেবে খুঁজি। মিসকাত শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী, নবীজী (সা.) মসজিদে ঢোকার সময় এই দোয়াটি বাগুবাহী দোয়াগুলোর সঙ্গে পাঠ করতেন mybdhelp.com।
এই দোয়া অত্যন্ত সহজ এবং হৃদয়স্পর্শী। এতে শিক্ষা মেলে যে সৎ মানুষেরও সর্বদা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল – কোরআনে বলা হয়েছে: “বল, ‘অহংকার ছেড়ে দাও আল্লাহর রহমতের আশায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপীকে ভালোবাসেন না।” (সূরা আজ-যুমার ৩৯:৫৩) – অর্থাৎ পাপপূর্ণ ব্যক্তি নিজ ভুল বুঝে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তাঁর জন্য মাফের পথ খোলেন। এই দোয়া করলে আরো বেশি বিনয় ও নিজের অপরগতা প্রকাশ পায়। আল্লাহর দয়াশীলতা আকর্ষণ করে। islamicity.org mybdhelp.com।
তাফসিরে প্রেক্ষাপট
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন জায়গায় বান্দাদেরকে ক্ষমা চাইতে উৎসাহিত করেছেন। যেমন—
- সূরা নূহ (৭১:১০–১২): “তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি পাঠাবেন এবং সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করবেন, বাগানসমূহ ও নদীসমূহ দান করবেন।”
➝ এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, ইস্তিগফার কেবল গুনাহ মোচনের উপায় নয়, বরং দুনিয়ার রিজিক ও কল্যাণ লাভের পথও। - সূরা আজ-যুমার (৩৯:৫৩): “হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি সীমালঙ্ঘন করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।”
➝ আল্লাহ বান্দাদের আশা জাগিয়ে দেন যে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইলে কোনো গুনাহই বড় নয়।
তাফসির ইবনে কাসির ও তাবারীতে উল্লেখ আছে—নবীগণও (আ.) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। যেমন—
- হযরত আদম (আ.) (সূরা আরাফ ৭:২৩)
- হযরত নূহ (আ.) (সূরা নূহ ৭১:২৮)
- হযরত ইবরাহিম (আ.) (সূরা শুআরা ২৬:৮২)
অতএব, “রাব্বিগ ফিরলি জুনুবি” দোয়া কুরআনের ঐ ধারাবাহিক ক্ষমা প্রার্থনারই অংশ।
আরবি শব্দের বিশ্লেষণ
উপরোক্ত বাক্যটি কিভাবে গঠিত তার একটি তালিকা:
- رَبِّ (রাব্বি) – ‘রব্ব’ (لَهُ رَبٌّ মানে যার পালনকর্তা) শব্দের বিভক্তি। এখানে ‘রব্ব’-এর পরে যোগ-প্রত্যয় ‘–ি’ (ইয়া’ মালিকান) এসেছে, যার কারণে অর্থ হয় “আমার রব”। অচ্চারণে “রাব্বি” শব্দটির দ্বিগুণা ব, kasrah দ্বারা উচ্চারিত হয়।
- اَغْفِرْ (ইঘফির্) – فعل الأمر (imperative) “ক্ষমা করো”। ‘غ-ف-ر’ ধাতুর প্রথম ব্যক্তি (ইচ্ছে করেছে) রাজি ক্রিয়া “অঘফিরু” (আমি ক্ষমা করি) হতে Imperative গঠনের সঙ্গে আলিফু করা হয়েছে। উচ্চারণে ‘আ’ স্বরে শুরু হলেও স্তবনী স্বরে ‘ঘ’ (কণ্ঠ্য ঘায়েন) উচ্চারিত হয়।
- لِي (লী) – جار ও مجرور “আমার জন্য” অর্থে ব্যবহৃত। ঊর্ধ্বজাত অক্ষর ‘লি’ সেদিনা বোঝায় যে ক্ষমা “আমার জন্য” (অর্থাৎ আমার গুনাহগুলো) চাওয়া হচ্ছে।
- ذُنُوبِي (ধুনুবি) – ‘ধুনুব’ (ذُنُوب) শব্দে মালিকানা সূচক ‘-ই’ যুক্ত। ‘ধুনুব’ শব্দের মূল অর্থ ‘গুনাহ’, ‘পাপ’। একবচনে ‘ধুনবুন’, বহুবচনে ‘ধুনুব’ হয়। অতএব ‘ধুনুবি’ মানে ‘আমার গুনাহসমূহ’। উচ্চারণে ‘ধু’ দীর্ঘ এবং শেষে ‘বি’ অকৃতকারিণী।
এই শব্দগুলোর ব্যুৎপত্তি ও অর্থ এমনভাবে মিলেছে যে সমগ্র বাক্যটি সম্মানভরে আল্লাহর নিকট মার্জনা প্রার্থনা করে। প্রতিটি শব্দে রয়েছে আল্লাহর দয়াশীলতা এবং ক্ষমাশীলতার ওপর ভরসা mybdhelp.com ও surahquran.com।

ব্যবহারের গুরুত্ব ও প্রভাব
প্রখ্যাত ইসলামি ঐতিহ্য অনুযায়ী, যখন কেউ পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করে, তখন এই দোয়া পাঠ করাই সুন্নাত। এতে মসজিদকে অশুদ্ধ আত্মার আশ্রয় হিসেবে না দেখে, পবিত্রতা ও নম্রতা নিয়ে প্রবেশের নির্দেশ রয়েছে islamicity.org ও mybdhelp.com। এছাড়া যেকোনো সময় পাপ থেকে মুক্তির জন্য বা সেবা সফল হলে প্রথম শ্রদ্ধায় এই দোয়াটি বলা যেতে পারে।
দোয়া উচ্চারণের ফলেও আল্লাহর কাছে গুণাহ মাফের আশা জাগে। মিসকাত শরীফে বলা হয়েছে, মসজিদে প্রবেশকালে এই দোয়ায় আল্লাহর রহমতের দরজা খুলে দেয়ার দোয়াও করা হয় mybdhelp.com। আল্লাহ্ রব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন, “ও যারা নিজেদের ওপর অত্যাচার করেছেন, আল্লাহর রহমতের আশা হারাও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আজ-যুমার ৩৯:৫৩) অর্থাৎ সার্বক্ষণিক আল্লাহর রহমত আশা করা ইসলামী আচরণ surahquran.com ও mybdhelp.com।
প্রস্তাবিতভাবে, নবীজীর (সা.) হাদিস অনুযায়ী নামাজের প্রথম ও শেষ দিকেও অন্তরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এই দোয়াটি পাঠ করা যেতে পারে। শিশুদের সহজ উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যায়, “যখনই তুমি ভুল করবে বা নিজেকে গুনাহী মনে করবে, তোমার স্বামী ‘তোমার রব’ তাকে শান্ত মনে করে ক্ষমা চাইবে। এই বাক্যটিতে সেটা বলা হয়”। এতে শিশু এবং তরুণ উভয়ের কাছেই সহজভাবে ফোকাস হয় আল্লাহর দরবারে বিনয় করে ক্ষমা চাওয়ার ওপর।
উপসংহার: “রাব্বিগ ফিরলি জুনুবি” হচ্ছে আল্লাহর কাছে সরল ও গভীর নিষ্পাপ ক্ষমা প্রার্থনা। এটা কেবল মসজিদ প্রবেশের সুন্নাহ নয়, বরঞ্চ প্রতিটি পাপী হৃদয়কে আল্লাহর দয়ায় ভরিয়ে আশার আলো দেখানোর একটি মাধ্যম। নিয়মিত এর উচ্চারণে মানুষ তার অভ্যাসগত পাপের বন্ধন ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর রহমত ও করুণার আশায় অবিচল থাকতে শেখে islamicity.org ও mybdhelp.com।
উৎস: বর্ণিত তথ্যসমূহ ইসলামি গ্রন্থ ও হাদীস থেকে সংগৃহীত islamicity.org ও mybdhelp.com
আরো পড়ুন:
🌿 ফজিলত ও উপকারিতা
হাদিস ও ইসলামি ঐতিহ্য থেকে এ দোয়া পড়ার কিছু বিশেষ ফজিলত পাওয়া যায়:
- ✅ মসজিদে প্রবেশকালে সুন্নাহ পালিত হয়।
- ✅ আল্লাহর রহমত ও বরকতের দরজা খুলে যায়।
- ✅ গুনাহ ক্ষমা হওয়ার আশা জাগে।
- ✅ অন্তরে বিনয় ও আত্মশুদ্ধি বৃদ্ধি পায়।
- ✅ রিজিক, সন্তান ও দুনিয়াবী কল্যাণ লাভের দরজা খুলে যায় (সূরা নূহ ৭১:১০–১২ অনুযায়ী)।
✨ উপকারিতা (আত্মিক ও মানসিক)
- 🌸 মনের অপরাধবোধ কমায়, নতুনভাবে শুরু করার শক্তি দেয়।
- 🌸 আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে।
- 🌸 নামাজ ও ইবাদতের মনোযোগ বাড়ায়।
- 🌸 শিশুরা ছোট থেকেই ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা পায়।