“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু” একটি গুরুত্বপূর্ণ যিকরি। যা মূলত তাওহীদ (আল্লাহর একত্ব) এর প্রতিষ্ঠা এবং শিরকের (আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করা) নিষেধ করে। এর মাধ্যমে আল্লাহর একত্ব, সৃষ্টির মালিকানা এবং পরিচালনার ক্ষমতা আল্লাহর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কথা প্রকাশিত হয়।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু এর আরবি ও অর্থ
আরবি:
لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই; তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা, এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
শব্দ বিশ্লেষণ
- لا (লা): নেই। এই শব্দটি দ্বারা কোনো কিছু অস্বীকার করা হয়, এখানে অন্য কোনো উপাস্য নেই বলে বোঝানো হচ্ছে।
- إله (ইলাহা): উপাস্য, প্রভু। এটি দ্বারা বোঝানো হয় যে, উপাসনা করার মতো কোনো সত্তা নেই।
- إلا (ইল্লা): ছাড়া, ব্যতীত। এই শব্দটি দ্বারা আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু অস্বীকার করা হয়।
- الله (আল্লাহ): আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা। এটি আল্লাহর নাম, যা সমস্ত গুণাবলির সমষ্টি।
- وحده (ওয়াহদাহু): একক, একমাত্র। এটি আল্লাহর একত্ব এবং অদ্বিতীয়তা নির্দেশ করে।
- لا شريك له (লা শারিকালাহু): তাঁর কোনো অংশীদার নেই। এটি আল্লাহর শিরক থেকে মুক্ত থাকার কথা বোঝায়।
- له (লাহু): তাঁর, তাঁর জন্য। আল্লাহর অধিকার বোঝানো হয়েছে।
- الملك (আল মুলকু): রাজত্ব, রাজা হওয়া। এটি আল্লাহর সৃষ্টির উপর তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বোঝায়।
- وله (ওয়ালাহু): এবং তাঁর জন্য। এটি আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা বোঝায়।
- الحمد (আল হামদু): সমস্ত প্রশংসা। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
- وهو (ওয়া হুয়া): এবং তিনি। এটি আল্লাহর মহত্ব বোঝায়।
- على كل شيء قدير (আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির): সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর সর্বশক্তিমত্তা নির্দেশ করে।
অর্থ: এই বাক্যাংশটির অর্থ হলো: “আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই; তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা, এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
এই যিকরটি তাওহীদের মূলমন্ত্র হিসেবে পরিচিত এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস ও তাঁর সাথে শিরক না করার অঙ্গীকার প্রকাশ করি।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু এর উপকার
এই যিকরটি পাঠ করার ফলে মুমিনের হৃদয়ে তাওহীদের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস আরও মজবুত হয় এবং শিরক থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। এটি ইবাদতের এক বিশুদ্ধ রূপ, যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এটি পাঠ করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং আখিরাতে নাজাত পাওয়া সম্ভব।
কুরআন ও হাদিসের রেফারেন্স
কুরআন মাজিদে তাওহীদ এর বাণী বহুবার এসেছে। যেমন:
- সুরা আল ইখলাস (১১২:১-৪): “বল, তিনি আল্লাহ্, একক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকে জন্ম দেয়া হয়নি। এবং কেউই তার সমকক্ষ নয়।”
এই যিকর এর উপকার সম্পর্কিত হাদিস
হাদিস ১
আরবি:
وعَنْ أَبي أيوبَ الأنصَاريِّ عَن النَّبيّ ﷺ قَالَ: مَنْ قالَ لا إلهَ إلاَّ اللَّه وحْدهُ لاَ شَرِيكَ لهُ، لَهُ المُلْكُ، ولَهُ الحمْدُ، وَهُو عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَدِيرٌ، عشْر مرَّاتٍ، كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ أرْبعةَ أَنفُسٍ مِن وَلدِ إسْماعِيلَ
বাংলা:
আবু আইউব আল-আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি দশবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির’ বলবে, সে ইসমাঈলের বংশের চারটি দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব পাবে।”
(মুত্তাফাকুন আলাইহ)
হাদিস ২
আরবি:
مَن قالَ في يومٍ مائةَ مرَّةٍ لا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وحدَهُ لا شريكَ لَهُ ، لَهُ الملكُ ولَهُ الحمدُ وَهوَ على كلِّ شيءٍ قديرٌ ، كانَ لَهُ عدلُ عشرِ رقابٍ ، وَكُتِبَت لَهُ مائةُ حَسنةٍ ، ومُحيَ عنهُ مائةُ سيِّئةٍ ، وَكُنَّ لَهُ حِرزًا منَ الشَّيطانِ ، سائرَ يومِهِ إلى اللَّيلِ ، ولم يأتِ أحدٌ بأفضَلَ ممَّا أتى بِهِ ، إلَّا من قالَ أَكْثرَ
বাংলা:
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির’ বলবে, তার জন্য দশটি দাস মুক্তির সমান সওয়াব হবে, তার জন্য একশটি নেকি লেখা হবে, একশটি গুনাহ মুছে ফেলা হবে, এবং সে সারাদিন শয়তানের থেকে সুরক্ষিত থাকবে। কেউ তার চেয়ে উত্তম কাজ নিয়ে আসতে পারবে না, তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে আরো বেশি পড়বে।”
(সহিহ ইবন মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৩০৭৯)
এই হাদিসটি বুখারি (৩২৯৩), মুসলিম (২৬৯১), তিরমিজি (৩৪৬৮), নাসায়ি (৯৮৫৩), ইবন মাজাহ (৩৭৯৮), এবং আহমাদ (৮০০৮) দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।
স্কলারদের অভিমত
প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলাররা এই দোয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইমাম নববী এবং ইবনে তাইমিয়া উল্লেখ করেছেন যে এই দোয়া পাঠ করলে তাওহীদের মর্ম সহজে উপলব্ধি হয় এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও গভীর হয়।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু পড়ার সেরা সময়
এই দোয়া পাঠের বেশ উত্তম সময় হল সকাল এবং সন্ধ্যা। এর মাধ্যমে দিন শুরু এবং শেষ করার আগে আল্লাহর একত্বে দৃঢ় বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত হয়।
সারসংক্ষেপ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু” একটি মৌলিক বাক্যাংশ, যা তাওহীদের গুরুত্ব বুঝায় এবং শিরকে নিষেধ করে। এটি আল্লাহর একত্বে মুমিনদের দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে এবং আখিরাতে নাজাত পাওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
এফএকিউএস
প্রশ্ন: এই দোয়া কতবার পড়তে হয়? উত্তর: সকাল এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার পড়া উত্তম।
প্রশ্ন: কোন সময়ে এই দোয়া পড়া উত্তম? উত্তর: সকালে ফজর নামাজের পর এবং সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর।
প্রশ্ন: এই দোয়া পাঠের মাধ্যমে কি কি উপকার পাওয়া যায়? উত্তর: তাওহীদে দৃঢ়তা, শিরক থেকে মুক্তি, আখিরাতে নাজাত এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ।
প্রশ্ন: কোন কুরআনিক আয়াত এই দোয়ার সাথে সম্পর্কিত? উত্তর: সুরা আল ইখলাস (১১২:১-৪) তাওহীদের মর্ম বোঝায়।
অনুরূপ আরো কিছু পোস্ট
- ১. বিয়ের আমল ও দোয়া।
- ২. হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল এর আরবি ।
- ৩. আল্লাহুম্মাগফিরলি: একটি দোয়ার বিশ্লেষণ ও তাৎপর্য।