ওযু আমাদের পবিত্র রাখতে সাহায্য করে। সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা একজন মুমিনের জন্য বারাকাহ ও আত্মাতিক উন্নতি লাভের পথ সুগম করে দেয়। কিন্তু আমাদের মানবীয় দুর্বলাতার কারণে সব সময় আমরা ওযু অবস্থায় থাকতে পারি না। নানান কারণে ওযু বেগে যায়। ওযু ভঙের বিশেষ একটি কারণ হল বায়ু নির্গত হওয়া। অনেকে এই প্রশ্নটি এভাবে করেন যে, পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়?
এই প্রশ্নের উত্তরটি যদিও সহজভাবে দেওয়া যায় কিন্তু আমরা চাই আমাদের পাঠকরা এই বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করুন। তাই আমরা এখানে হাদিস ও গ্রহনযোগ্য রেফারেন্সস এই উত্তরটি বিস্তারিত আলোচনা করছি।
পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়?
হ্যা, পাদ দিলে ওযু ভেঙে যায়। যে ভাবেই বায়ু নির্গত হোক না কেন সকল অবস্থায় ওযু ভেঙে যাবে। শব্দ হোক বা না হোক। গন্ধ থাকুক বা না থাকুক। কাজেই যখনই কেউ নিশ্চিত হবে যে তার থেকে বায়ু নির্গত হয়ে গেছে তার ওযু ভেঙে যাবে। সেই ব্যক্তি নতুনভাবে ওযু করতে হবে। তবে তাকে ইস্তিনযা বা বায়ু নির্গত হওয়ার স্থান ধৌত করতে হবে না। সে কেবল ওযু করবে। অর্থাৎ মুখমণ্ডল ধৌত করবে, উভয় হাত কুনইসহ ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে।
উত্তরটি প্রমাণকারী হাদিস
বায়ু নির্গত হলে বা পাদ দিলে ওযু ভেঙে যায়। এটি সর্বসম্মত অভিমত। এই বিধানের মূলে রয়েছে কয়েকটি সহিহ হাদিস। যেমন ইমাম বুখারি ও মুসলিম একটি হাদিস বর্ণনা করেন:
عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ تُقْبَلُ صَلاَةُ مَنْ أَحْدَثَ حَتَّى يَتَوَضَّأَ قَالَ رَجُلٌ مِنْ حَضْرَمَوْتَ مَا الْحَدَثُ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ فُسَاءٌ أَوْ ضُرَاطٌ.
অনুবাদ: হাম্মাম ইবনে মুনাব্বিহ থেকে বর্ণিত তিনি আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহুকে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ’যে ব্যক্তির হাদাস হয় তার সালাত কবুল হবে না, যতক্ষণ না সে ওযু করে। হাযরা-মাওতের একজন ব্যক্তি বলল, ’হে আবু হুরাইরাহ, হাদাস কী?’ তিনি বললেন (হাদাস হল) ’নিঃশব্দে বা সশব্দে বায়ু বের হওয়া।’ (মুসলিম – ৬৯৫৪, সহিহ বুখারি – ১৩৫)
কয়েকটি প্রশ্ন উত্তর
যে ব্যক্তি বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করে সে কী ওযু করতে হবে?
না, যে ব্যক্তি বায়ু নির্গত হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে তাকে ওযু করতে হবে না। ا পাদ দিলে ওযু ভেঙে যাওয়ার শর্ত হল, এটা কেবল সন্দেহ বা কুমন্ত্রণা হবে না। নিশ্চিত হতে হবে তার থেকে বায়ু নির্গত হয়েছে। যদিও সেটা খুবই অল্প হোক না কেন। আর যে সন্দেহ করবে কিন্তু বাস্তবে সে কিছু পায়নি, তার ব্যাপারে সঠিক অভিমত হল তার পবিত্রা বাকি থাকবে। তার ওযু ভাঙবে না।
নিঃশব্দে পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়?
হ্যা, নিঃশব্দে পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়। একটি হাদিসে সশব্দে বায়ু বের হলে ওযু ভাঙার কথা এসেছে। এখান থেকে অনেকে ভুল ধারণা করেন যে, যদি বায়ু নির্গত হওয়ার সময় শব্দ না হয় তাহলে ওযু ভাঙবে না। কিন্তু আমরা এখানে এই ভুল ধারণাটা দূর করছি। প্রথমে হাদিসটি দেখে নেওয়া যাক।
شكي إلى النبي صلى الله عليه وسلم: الرجل يخيل إليه أن يجد الشيء في الصلاة؟ قال: «لا ينصرف حتى سمع صوتا، أو يجد ريحا». البخاري (137)، ومسلم (361)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট অভিযোগ এলো যে, কোনো ব্যক্তি যদি সালাতে এ ধারণা করে যে তাঁর কিছু হয়ে গেছে (তখন তার কী করা উচিত?), রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে শব্দ বা গন্ধ না পাওয়া পর্যন্ত সালাত পরিত্যাগ করবে না। ( সহিহ মুসলিম : ৩৬১, সহিহ বুখারি : ১৩৭)
এই হাদিসে শব্দকে উল্লেখ করা হয়েছে। যার ফলে অনেকে মনে করেন, সশব্দে বায়ু বের হলে ওযু ভাঙে না। কিন্তু এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি বলেন,
معناه: يعلم وجود أحدهما، ولا يشترط السماع والشم باجماع المسلمين
এই হাদিসের অর্থ হল নিশ্চিতভাবে বায়ু নির্গত হওয়ার – শব্দ বা গন্ধ সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া। মুসলিমদের ঐক্যমতে শ্রবণ বা গন্ধ শর্ত নয়।