পবিত্রতা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। নামাজ, কুরআন স্পর্শ করা, হজ্ব ইত্যাদি ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্য পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অপরিহার্য। নারীদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ফরজ গোসল করা আবশ্যক।
ফরজ গোসলের কারণ
- ঋতুস্থল ও প্রসব: ঋতু ও প্রসবের পর নারীর জন্য ফরজ গোসল করা আবশ্যক। (সূরা আল-বাক্বরাহ:222)
- সহবাস’: স্বামীর সাথে সহবাসের পর নারীর জন্য ফরজ গোসল করা আবশ্যক। (সহীহ মুসলিম: 290)
- ইসলাম গ্রহণ: যদি একজন নারী ইসলাম গ্রহণ করেন, তাহলে তার জন্য ফরজ গোসল করা আবশ্যক। لؤ (সহীহ বুখারী: 672)
গোসলের পূর্ববর্তী প্রস্তুতি
- নিয়্যত: গোসলের পূর্বে নিয়্যত করতে হবে।
- পানি ও স্থান: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পবিত্র স্থান নির্বাচন করতে হবে।
- সতর ঢাকা: গোসলের সময় শরীরের সতর ঢাকা থাকা উচিত।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: গোসলের পূর্বে যাবতীয় অপবিত্রতা দূর করতে হবে।
গোসলের নিয়ম
- বিসমিল্লাহ: গোসলের শুরুতে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম” বলতে হবে।
- মুখ ধোয়া: প্রথমে মুখ ধুয়ে নাকের ভেতরপানি দিতে হবে।
- কুলি ও মুখমুখ ধোয়া: এরপর কুলি করতে হবে এবং মুখমুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- সারা শরীরে পানি ঢালা: এরপর মাথায় পানি ঢেলে সারা শরীরে পানি ঢালতে হবে।
- চুল ভিজানো: চুল ভালো করে ভিজিয়ে নিতে হবে।
- নাক ও কান ভেতর ধোয়া: কাঁধ ও কানের ভেতর পানি দিতে হবে।
- পায়ের পাতা ধোয়া: শেষে পায়ের পাতা পর্যন্ত পানি ঢেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
গোসলের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
১. সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধুয়ে ফেলতে হবে:
- গোসলের সময় পুরো শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- কোনো অংশ শুষ্ক রেখে যাওয়া যাবে না।
- বিশেষ করে কানের ভেতর, নাভির ভেতর, পায়ের আঙুলের ফাঁক ইত্যাদি স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
২. নাখের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে:
- গোসলের সময় নাখের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।
- এর জন্য একটি নখ পরিষ্কারক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. নারীদের চুল ভালো করে ভিজিয়ে পানি ঢালা:
- পুরুষদের চেয়ে নারীদের চুল লম্বা থাকে।
- তাই গোসলের সময় তাদের চুল ভালো করে ভিজিয়ে পানি ঢালা উচিত।
- চুলের গোড়া থেকে শুরু করে ডগা পর্যন্ত পানি ঢেলে দিতে হবে।
- চুলের ফাঁকে যেন পানি না ঢোকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
৪. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- গোসলের সময় মুখ, মুখ, কান, কানের ভেতর, ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, বুক, পেট, নাভি, হাত, পা, পায়ের আঙুল, এবং নাখের ভেতর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- গোসলের সময় পানি অপচয় না করার চেষ্টা করতে হবে।
- গোসলের পর পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।
- ঘরের ভেতরে স্বামীর সামনে থাকলে সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত।
মনে রাখতে হবে:
- গোসলের সময় শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলাই মূল উদ্দেশ্য।
- তাই কোনো বিষয়বাদ দিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
- গোসলের নিয়ম মেনে চললে শরীর ও মন পবিত্র থাকে এবং ধর্মীয় কর্তব্য পালনে সহায়তা হয়।
গোসলের পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- গোসলের পর পরিষ্কার কাপড় পরতে হবে।
- নারীরা বাহিরে বের হলে সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত নয়।
- নামাজ আদায় করা উচিত।
হাদিসের উল্লেখ:
إذا قعد بين شعبها الأربع , ثم مس الختان الختان ; فقد وجب الغسل
অনুবাদ: যদি সে (পুরুষ) তার ( স্ত্রীর ) চারটি অংশে ( প্রজন্মস্থানের চার পাশে) বসে এবং তারপর একজনের খতনার স্থান অপরজনের খতনার স্থান স্পর্শ করে, তাহলে গোসল ফরজ হয়ে যায়।” (সহিহ মুসলিম)
মাসিক চক্রের সময় নারীদের জন্য কিছু বিশেষ বিধান:
- মাসিক চক্রের সময় নারীরা নামাজ আদায় করতে পারবেন না।
- রোজা রাখতে পারবেন না।
- মসজিদে প্রবেশ করতে পারবেন না।
- কুরআন স্পর্শ করতে পারবেন না।
- হজ্ব ও ওমরাহ করতে পারবেন না।
মাসিক চক্রের সময় নারীদের জন্য কিছু সুন্নত:
- প্রচুর দোয়া পড়া।
- জিকির করা।
- কুরআন শোনা।
- ধর্মীয় বই পড়া।
- ভালো কাজ করা।
উপসংহার:
নারীদের জন্য ফরজ গোসলের নিয়ম জানা ও মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের ধর্মীয় কর্তব্য পালনে সহায়তা করে এবং তাদের শরীর ও মনকে পবিত্র রাখে।