মহরে ফাতেমি কী? কত টাকা? সুন্নত না কি জায়েজ? বিস্তারিত

শেয়ার করুন

ইসলামের বিবাহ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র। এই ব্যবস্থায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, তার মধ্যে মাহর একটি অন্যতম। মহর হল সেই সম্পদ বা উপহার যা একজন মুসলিম পুরুষ তার স্ত্রীকে বিবাহের সময় প্রদান করে। এটি বিবাহের শর্ত হিসেবে ইসলামী আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। এই ব্লগ পোস্টে আমরা মহরে ফাতেমি নিয়ে আলোচনা করব, যা ইসলামের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং অনেকের মধ্যে কৌতূহলের সৃষ্টি করে।

মহরে ফাতেমি কী?

মহরে ফাতেমি: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মেয়ে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর বিয়ের সময় আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যে মহর দিয়েছিলেন সেই মহরকে মহরে ফাতেমি বলা হয়। এটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাহর, যা ইসলামী বিবাহ প্রথায় অনেকটা আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিবাহ ইসলামিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।

মাহরে ফাতেমী কি সুন্নত?

মাহরে ফাতিমি সুন্নত নয়। সুন্নত বলা হয় এমন কাজকে যা সংঘটিত হওয়া শরিয়তের কাছে কাঙ্খিত এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা বা কর্ম বা সমর্থন ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহাবার কর্ম সুন্নত হবে না বরং তা কেবল জায়েযের দলিল হবে। তবে মহরে ফাতেমি একটি প্রশংসনীয় উদাহরণ হতে পারে, যা পরবর্তীতে বিবাহে সহজ ও সাশ্রয়ী মহরের ধারণা প্রচলিত রাখতে সাহায্য করে।

মহরে ফাতেমি কত টাকা?

মহরে ফাতেমির পরিমাণ ছিলো একটি বর্মের মূল্য, যা ছিলো চারশত আশি দিরহাম পরিমাণ। এক দিরহাম সমান ২.৯৭৫ গ্রাম রৌপ্য। এই হিসাবে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর মাহর ছিল : ৪৮০ গুণ ২.৯৭৫ = ১৪২৮ গ্রাম রৌপ্য। বর্তমান বাজার দরে ১ গ্রাম রৌপ্যের মূল্য ১০০ টাকা ধরা হলে, মহরে ফাতেমির টাকার পরিমাণ হবে: ১৪২৮ গুণ ১০০ = ১,৪২,৮০০ টাকা।

( বি.দ্র. এখানে আমার ১ গ্রাম রৌপ্য মূল্য ১০০ টাকা ধরে হিসাব করেছি। আপনি যে দিন হিসাব করবেন সে দিনের রূপার বাজার দামে প্রতি গ্রাম রূপার দাম যা হবে তা দিয়ে হিসাব করবেন। তখন মহরে ফাতেমির টাকার পরিমাণ একটু কমবেশি হবে।)

হাদিসের রেফারেন্স

আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,

لما تزوج على فاطمة قال له رسول الله -صلى الله عليه وسلم أعطها شيئا قال ما عندى شىء. قال أين درعك الحطمية

‘আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “ফাতিমাকে কিছু (মহর) দাও। আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন আমার কাছে কিছুই নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমার হুতামিয়্যা বর্ম কোথায়? (সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নম্বর: ১৮৫৪)

ইলবা ইবনে আহমার বর্ণনা করেন,

قال علي بن أبي طالب : خطبت إلى النبي صلى الله عليه و سلم ابنته فاطمة قال : فباع علي درعا له وبعض ما باع من متاعه فبلغ أربع مئة وثمانين درهما

‘আলি ইবনে আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিলাম। অতপর আলি তাঁর বর্ম ও কিছু জিনিস বিক্রয় করেন। যার মূল্য চারশত আশি দিরহামে গিয়ে পৌঁছলো।” (মুসনাদ আহমদ, হাদিস নম্বর: ১৩১৫)

ইবনু আবি রাওয়াদ বলেন,

“قال أبي فقومت الدرع أربعمائة وثمانين درهما”

‘আমার পিতা বলেছেন, অতপর বর্মটির মূল্য চারশত আশি দিরহাম নির্ধারণ করা হলো।’ (আল বায়হাকী, আস-সুনান আল-কুবরা, হাদিস নম্বর: ১৪১৯৪)

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

“ألا لا تغالوا بصدق النساء فإنها لو كانت مكرمة فى الدنيا أو تقوى عند الله لكان أولاكم بها النبى -صلى الله عليه وسلم- ما أصدق رسول الله -صلى الله عليه وسلم- امرأة من نسائه ولا أصدقت امرأة من بناته أكثر من ثنتى عشرة أوقية”

‘সাবধান! তোমরা মহিলাদের মহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা তা যদি দুনিয়ায় সম্মান বা আল্লাহর কাছে তাকওয়ার পরিচায়ক হতো তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা গ্রহণ করতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বারো উকিয়ার বেশি মাহর তাঁর কোনো স্ত্রীকে দেননি এবং তাঁর কোনো মেয়েকেও দেওয়া হয়নি।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১৪২৬)

স্কলারদের অভিমত

অনেক স্কলার মনে করেন যে, মাহরে ফাতিমি সুন্নত নয়, বরং তা জায়েযের দলিল হিসেবে বিবেচিত। এটি সাহাবাদের একটি ঐতিহাসিক কর্ম, যা ইসলামী বিবাহ প্রথায় সাধারণভাবে গৃহীত। তারা মনে করেন যে মাহরে ফাতিমি একটি উদাহরণ, যা আমাদের বিবাহের ক্ষেত্রে সাদাসিধা ও সাশ্রয়ী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝায়।

শাইখ উসমানী বলেন, “মহরে ফাতিমি একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ হলেও এটি আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে এটি একটি ভালো উদাহরণ, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বিবাহের মাহর সাধ্যের মধ্যে হওয়া উচিত।”

সারসংক্ষেপ

মাহরে ফাতিমি একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি সুন্নত নয়, বরং জায়েযের দলিল। এর পরিমাণ ছিল ৪৮০ দিরহাম বা ১৪২৮ গ্রাম রৌপ্য। এই মাহর ইসলামের বিবাহ প্রথায় একটি প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি মুসলিম বিবাহ প্রথায় সহজ ও সাশ্রয়ী মাহরের ধারণা প্রচলিত রাখতে সহায়ক।

এফএকিউএস

প্রশ্ন: মহরে ফাতিমি কী?

উত্তর: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মেয়ে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু যে মাহর দিয়েছিলেন।

প্রশ্ন: মহরে ফাতিমি সুন্নত কিনা?

উত্তর: না, এটি সুন্নত নয়। এটি সাহাবাদের একটি জায়েয কর্ম।

প্রশ্ন: মাহরে ফাতিমির পরিমাণ কত?

উত্তর: ৪৮০ দিরহাম বা ১৪২৮ গ্রাম রৌপ্য, যা বর্তমান বাজার দরে ১,৪২,৮০০ টাকা।

প্রশ্ন: মাহরে ফাতিমির হাদিসের রেফারেন্স কী?

উত্তর: আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণিত হাদিসে এর উল্লেখ রয়েছে।

প্রশ্ন: কেন মাহরে ফাতিমি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ?

উত্তর: এটি একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ যা মুসলিম বিবাহ প্রথায় সহজ ও সাশ্রয়ী মাহরের ধারণা প্রচলিত রাখতে সহায়ক।


শেয়ার করুন

Leave a Comment