ইসলাম ধর্মে, আল্লাহ্র ৯৯টি নামের প্রতিটিই বিশেষ অর্থ ও তাৎপর্য বহন করে। এই নামগুলো আল্লাহ্র বিভিন্ন গুণাবলীর পরিচয় দেয়। ‘ইয়া বাসিতু’ এমনই একটি নাম, যা মুসলমানদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই ব্লগপোস্টে, আমরা আল্লাহর গুনবাচক এই নামটির অর্থ, তাৎপর্য এবং এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ইয়া বাসিতু: আরবি লেখা
এই ইয়া বাসিত শব্দটি আরবিতে লিখতে হয় “يا باسط”.
ইয়া বাসিতু অর্থ কি?
‘يا باسط’ ইয়া বাসিতু নামের অর্থ হল ‘ প্রসারিতকারী’ বা ‘ বিস্তৃতকারী’। এটি আল্লাহ্র এক বিশেষ গুণাবলী যা তাঁর ক্ষমতার সীমাহীনতাকে নির্দেশ করে। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর প্রজ্ঞা এবং করুণার মাধ্যমে মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি বিস্তৃত করেন এবং তাদের রিজিক প্রদান করেন।
- ইয়াজুজ মাজুজ কারা?
- খতমে খাজেগান: ইসলামের দৃষ্টিতে একটি বিশদ বিশ্লেষণ
ইয়া বাসিতু অর্থ এর শব্দ বিশ্লেষণ
আল্লাহর গুনবাচক এই নামটি দুইটি আরবি শব্দ থেকে গঠিত:
- ইয়া (يا): এই শব্দটি একটি আরবি সঙ্কেত, যা কাউকে আহ্বান করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ইসলামের প্রেক্ষাপটে, এটি আল্লাহ্র প্রতি প্রার্থনা বা আহ্বান জানাতে ব্যবহৃত হয়।
- বাসিতু (باسط): এই শব্দটি ‘বিস্তারকারী’ বা ‘প্রসারিতকারী’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ্র একটি গুণ যা তাঁর সীমাহীন ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার প্রতিফলন ঘটায়।
কুরআন ও হাদীসের রেফারেন্স
কুরআন
কুরআনে বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ্র ‘বাসিত’ গুণাবলীর উল্লেখ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
সূরা আল-বাকারা (২:২৪৫):
“مَّن ذَا ٱلَّذِى يُقْرِضُ ٱللَّهَ قَرْضًۭا حَسَنًۭا فَيُضَـٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضْعَافًۭا كَثِيرَةًۭۚ وَٱللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُۥۖ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ”
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করবে, তিনি তা বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেবেন। আল্লাহ্ (প্রসারিত করেন) এবং (সংকুচিত করেন)। তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।”
হাদীস
হাদীসে আল্লাহ্র ‘বাসিত’ গুণাবলী সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়:
সাহিহ মুসলিম:
“عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: جَعَلَ اللَّهُ الرَّحْمَةَ مِائَةَ جُزْءٍ فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا وَأَنْزَلَ فِي الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ تَتَرَاحَمُ الْخَلَائِقُ حَتَّى تَرْفَعَ الدَّابَّةُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَهُ”
“আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ্র করুণা শত ভাগের এক ভাগ দুনিয়ায় দিয়েছেন, যার মাধ্যমে সৃষ্টি জীব পরস্পরের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে।’”
ইয়া বাসিতু অর্থ এর উপকারিতা
‘يا باسط ‘ ইয়া বাসিতু’ নামটি উচ্চারণের মাধ্যমে মুমিনেরা বিভিন্ন উপকার লাভ করতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল:
- রিজিকের বিস্তার: আল্লাহর গুনবাচক এই নামটি উচ্চারণ করে আল্লাহ্র কাছে রিজিকের জন্য প্রার্থনা করা হলে আল্লাহ্ তা বিস্তৃত করেন।
- মনোবল বৃদ্ধি: এই নামটি উচ্চারণের মাধ্যমে মনোবল ও সাহস বৃদ্ধি পায়।
- শান্তি ও স্থিতিশীলতা: নিয়মিতভাবে আল্লাহর গুনবাচক এই নামটি নামটি জপ করলে মানসিক শান্তি ও জীবনের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
Ya basitu ইয়া বাসিতু কখন পড়ব?
‘ইয়া বাসিতু’ নামটি উচ্চারণের বিশেষ কোনও সময় নেই। তবে, প্রয়োজনীয় মুহূর্তে, যেমন রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করার সময়, কষ্টের মুহূর্তে বা মনোবল বৃদ্ধির জন্য এটি উচ্চারণ করা যেতে পারে।
সারাংশ
আল্লাহ্র ৯৯টি নামের মধ্যে এই নামটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এটি আল্লাহ্র প্রসারিত করার ক্ষমতা ও তাঁর করুণার প্রতীক। এই নামটি উচ্চারণের মাধ্যমে মুসলমানরা বিভিন্ন উপকার লাভ করতে পারেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন: ‘ইয়া বাসিতু’ নামটির অর্থ কি?
উত্তর: আল্লাহর গুনবাচক এই নামটির ‘ অর্থ হল ‘যিনি প্রসারিত করেন’ বা ‘যিনি বিস্তৃত করেন’।
প্রশ্ন: ‘আল্লাহর গুনবাচক এই নামটি কখন উচ্চারণ করা উচিত?
উত্তর: প্রয়োজনীয় মুহূর্তে, যেমন রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করার সময়, কষ্টের মুহূর্তে বা মনোবল বৃদ্ধির জন্য এটি উচ্চারণ করা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ‘ইয়া বাসিতু’ নামটি কুরআনে কোথায় উল্লেখ আছে?
উত্তর: আল্লাহর গুনবাচক এই নামটি সরাসরি কুরআনে উল্লেখ নেই, তবে আল্লাহ্র প্রসারিত করার ক্ষমতার উল্লেখ সূরা আল-বাকারা (২:২৪৫) আয়াতে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: ‘ইয়া বাসিতু’ নামটি উচ্চারণের উপকারিতা কি?
উত্তর: এই নামটি উচ্চারণের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি, মনোবল বৃদ্ধি, এবং মানসিক শান্তি লাভ করা যায়।
আরো পড়ুন :