যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে? এটি একটি কঠিন প্রশ্ন কেননা। যেনাকারী ব্যক্তির শেষ পরিণতি কি হবে, এটা আমরা কেউ জানি না। হতে পারে যদি সে মৃত্যুর আগে তাওবা করে নেয় আর তার সে তাওবা আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা কবুল করে নেন। তাহলে সে জান্নাতে যাবে। আর যদি তার ভাগ্যে তওবা জুটে না। তাহলে তার পরিণতি কি হবে সেটা আমরা কেউ বলতে পারি না।
যদি আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা তার বিশেষগুণে তাকে ক্ষমা করে দেন তাহলে এটাও সম্ভবনা রয়েছে। আর যদি সে ক্ষমাপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে সে জান্নাতে যাবে না, এটা আমরা বলতে পারি। সর্বোপরি তার শেষ পরিণতি কি হবে, সেটা যেহেতু আমরা জানি না তাই তার ব্যাপারে আমরা ফয়সালা দিতে পারি না।
কুরআন এবং হাদিসে যেনাকারী সম্পর্কে খুবই শাস্তির কথা এসেছে। সেটা ইহকালে বিচারিক আদালতে যখন তার যেনা প্রমাণ হবে তখন তার এই শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। যেনা করলে কেউ জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না এরকম কোন কথা আমরা জানি না।
হাদিসের মধ্যে আমরা কিছু ব্যক্তিদের উদাহরণ পাই, যারা যিনা করেছেন তাদের জীবনে, তারপর তারা এমনভাবে তওবা করেছেন, যে তওবার পর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছেন। এমনকি তাদেরকে নিয়ে যারা সমালোচনা করত তাদের প্রতি খুবই কঠোর বাণী এসেছে। তাদের কাজ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে যেনাকারী ব্যক্তি যেনা করার পরে সে জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যায় না। বরং আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ তার জন্য রয়েছে।
যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে?
যেনাকারী কি জান্নাতে যাবে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হচ্ছে এটা আমরা সঠিকভাবে বলতে পারব না। এটা হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা এবং যেনাকারী ব্যক্তির মধ্যকার একটি বিষয়। যদি যেনাকারী ব্যক্তি আন্তরিকভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার কাছে ক্ষমা করে, তাহলে তার জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আবার তার তাওবা যদি কবুল না হয় তাহলে সে জাহান্নামে যাওয়ার উপযুক্ত হবে। কাজেই আমরা এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।
যেনাকারীর ইহকালীন শাস্তি
যদি কোন ব্যক্তি যেনা করেছে বলে প্রমাণ হয় তাহলে তার জন্য ইহকালে কিছু শাস্তি রয়েছে। যেটা একমাত্র ইসলামিক আদালত তার উপর প্রয়োগ করতে পারবে। তবে এই শাস্তি প্রয়োগ করার শর্ত হচ্ছে যেনা প্রমাণ পাওয়া। সেটা তার মৌখিক স্বীকারোক্তির মাধ্যমে হোক অথবা চারজন সাক্ষী এই কাজ সে করেছে এবং তারা সেটা দেখেছে বলে সাক্ষ্য দিতে হবে।
যদি সে মৌখিকভাবে স্বীকারোক্তি তাহলে ভিন্ন ভিন্ন চারটি জায়গায় তাকে একই কথা একই ব্যক্তির কাছে স্বীকার করতে হবে। আর যদি স্বাক্ষর মাধ্যমে যেনা প্রমাণ হয় তাহলে চারজন সাক্ষী তারা স্বচক্ষে এই কাজ করতে দেখেছি মর্মে সাক্ষ্য দিতে হবে। যদি কোনো একজন সাক্ষী তার কথায় গরমিল করে, তাহলে তার উপর যিনার শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না।
এখান থেকে একটি কথা আমাদেরকে খুবই স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, যদিও ইসলামের যিনার শাস্তি হচ্ছে যদি অবিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে তাহলে জনসম্মুখে তাকে একশটি বেত্রাঘাত করা হবে আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি হয় তাহলে তাকে রজম বা পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। কিন্তু এই শাস্তিটি প্রয়োগ করার শর্ত যেটা আমরা উপরে বললাম এই শর্তটি খুবই কঠিন। কেননা একজন ব্যক্তি যখন যেনা করছে তখন চারজন ব্যক্তি তার এই কাজ দেখছে এমনকি কিভাবে তার গোপনাঙ্গ অপরের গোপনাঙ্গের ভিতর প্রবেশ করছে সেটা স্পষ্টভাবে দেখেছে এটা বাস্তবে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এরকম কি কোন ঘটনা ঘটবে সেখানে চারজন ব্যক্তি অপর কারো যেনা একই সাথে গিয়ে দেখবে। তাই এটি প্রায় অসম্ভব।
এই ব্যাপারটি নিয়ে আমাদের দেশের মিডিয়া এবং কিছু নাস্তিকপাড়া খুবই সরগরম থাকে। ইসলাম খুবই কঠোরভাবে মানুষের উপর যেনার শান্তি আরোপ করেছে। অথচ তারা বুঝতে চায় না এটা কেবল একটি দমক। যাতে মানুষ এরকম গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। শাস্তি প্রয়োগ করা ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। এটা আমরা বুঝতে পারি এই কঠিন শর্ত আরোপ করা থেকে। কাজেই যেনার শাস্তির চেয়েও আরো কঠিন হচ্ছে যেনা প্রমাণ করা।
যেনাকারী পরকালে কী ধরণের শাস্তি পাবে?
যে যেনাকারী তাওবা করেননি তার জন্য পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি।
ইমাম ইবনুল কাইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ “রাওদাতুল মুহিব্বীন”-এ উল্লেখ করেছেন:
“যিনার কর্ম হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট কর্ম। আর যারা এই পথ অবলম্বন করে তাদের পরকালের বিশ্রামস্থল হবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান। বারযাখে তাদের আত্মার অবস্থান হবে একটি অগ্নিময় তন্দুরে, যেখান থেকে আগুনের শিখা তাদের নিচ থেকে উপরে উঠবে। যখন আগুন তাদের কাছে পৌঁছাবে, তখন তারা চিৎকার করে উপরে উঠবে, এরপর আবার তাদের আগের স্থানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারা এই অবস্থায় কিয়ামতের দিন পর্যন্ত থাকবে। এই দৃশ্য নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্বপ্নে দেখেছিলেন। নবীদের স্বপ্ন হলো ওহি, এতে কোনো সন্দেহ নেই।”
যিনার অপমানজনক শাস্তি হিসাবে এটাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা, অসীম দয়ালু হওয়া সত্তেও, তিনি এই কাজের জন্য সবচেয়ে কঠোর এবং অপমানজনক শাস্তি নির্ধারণ করেছেন। (শেষ)
তবে আল্লাহর অসীম দয়া এবং করুণার দাবী হলো, যে ব্যক্তি খাঁটি তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করেন। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দার তাওবায় আনন্দিত হন, তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং তাদের পাপসমূহকে সওয়াব দিয়ে পরিবর্তন করে দেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্যকে শরীক করে না, আল্লাহ যার প্রাণ হত্যা হারাম করেছেন, তা সঙ্গত কারণ ছাড়া হত্যা করে না এবং তারা যিনা করে না। আর যে ব্যক্তি এসব কাজ করে, সে শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সে সেখানে অপমানিত অবস্থায় চিরকাল থাকবে। তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাদের পাপসমূহকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
(সূরা আল-ফুরকান: ৬৮-৭০)
এখানে আল্লাহ তাআলা তাওবার গুরুত্ব এবং তার দয়ার মহিমা তুলে ধরেছেন। সুতরাং, যারা সত্যিকারের তাওবা করে, তারা আল্লাহর ক্ষমা ও দয়া লাভ করবে।