চোখের যিনা থেকে বাঁচার দোয়া । পবিত্রতার পথে এক দৃঢ় প্রতিজ্ঞা

পোস্টটি শেয়ার করুন

ইসলামে চোখের সংযম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের চোখ যা দেখে, তার দ্বারা অন্তর প্রভাবিত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন:

“মুমিন পুরুষদের বলে দাও যে, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এতে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্রতা। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।” (সূরা আন-নূর: ৩০)

এই আয়াত আমাদের চোখের সংযমের গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়। কারণ চোখের যিনা (ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যাওয়া দৃষ্টি) হলো সেই প্রথম ধাপ যা মানুষকে বড় গুনাহের দিকে ধাবিত করতে পারে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো চোখের সংযম করা এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করা।

চোখের যিনা বলতে কী বোঝায়?

চোখের যিনা হল নিষিদ্ধ বা হারাম জিনিসের দিকে তাকানো, যা মানুষের প্রবৃত্তিকে উত্তেজিত করে এবং গুনাহের দিকে ধাবিত করে। হাদিসে এসেছে:

অনুবাদ: “চোখের যিনা হলো (হারাম কিছু) দেখা। কানের যিনা হলো (হারাম কিছু) শোনা। জিহ্বার যিনা হলো (হারাম কিছু) বলা। হাতের যিনা হলো (হারাম কিছু) স্পর্শ করা। পায়ের যিনা হলো (হারাম স্থানে) চলা। আর অন্তর কামনা করে এবং লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়ন করে অথবা তা থেকে বিরত থাকে।” (সহিহ মুসলিম: ২৬৫৭)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, চোখের যিনা শয়তানের ধোঁকা। একবার হারাম কিছু দেখলে তা মনে গেঁথে যায় এবং গুনাহের প্রতি আকৃষ্ট করে।

চোখের যিনা থেকে বাঁচার দোয়া

চোখের যিনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা ও দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমল উল্লেখ করা হলো:

১. কুরআনের দোয়া:

رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ

“হে আমার রব! আমি তোমার নিকট শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় চাই এবং আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই যেন তারা আমার কাছে না আসে।” (সূরা আল-মুমিনুন: ৯৭-৯৮)

২. চোখ নামিয়ে রাখার দোয়া:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَاهْدِ قَلْبِي، وَطَهِّرْ فَرْجِي

“হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার অন্তরকে হেদায়েত দান কর এবং আমার লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখ।”

৩. রাসূল (সা.) এর শিখানো দোয়া:

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى

“হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট হেদায়েত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা চাই।” (সহিহ মুসলিম: ২৭২১)

চোখের যিনা থেকে বাঁচার দোয়া
চোখের যিনা থেকে বাঁচার দোয়া

চোখের যিনার ক্ষতি

চোখের যিনার অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে, যা ব্যক্তিগত, সামাজিক ও আধ্যাত্মিকভাবে নেতিবাচক ফল বয়ে আনে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কথা বলা হলো:

১. হৃদয়ের কঠোরতা সৃষ্টি হওয়া

চোখের যিনা করলে অন্তর কঠিন হয়ে যায়, ফলে নেক কাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায় এবং গুনাহের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।

২. আত্মিক দুর্বলতা

চোখের যিনা করলে আত্মা দুর্বল হয়ে যায় এবং ইবাদতের মধ্যে একাগ্রতা হারিয়ে যায়।

৩. বিবাহিত জীবনে অশান্তি

চোখের যিনা বিবাহিত জীবনে অসন্তুষ্টি সৃষ্টি করতে পারে, কারণ হারাম দৃশ্য দেখে মানুষ নিজের বৈধ সঙ্গীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে।

৪. চরিত্রের অবক্ষয়

চোখের যিনা মানুষকে বড় গুনাহের দিকে ধাবিত করে, যেমন অবৈধ সম্পর্ক এবং ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়া।

৫. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়া

যারা চোখের যিনা করে, তারা আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে পারে, কারণ এটি একটি গুনাহের সূচনা।

চোখের যিনা থেকে বাঁচার উপায়

১. তওবা করা

চোখের যিনার অভ্যাস থাকলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে তওবা করা উচিত। কারণ আল্লাহ বলেছেন:

“যে ব্যক্তি তওবা করে এবং ভালো কাজ করে, আল্লাহ তার তওবাকে কবুল করেন।” (সূরা আল-ফুরকান: ৭০)

২. দৃষ্টি সংযত রাখা

নিজেকে কড়া শৃঙ্খলায় আনতে হবে যাতে হারাম দৃশ্য দেখা থেকে বিরত থাকা যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন:

“প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য (ক্ষমার যোগ্য), কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টির দায় তোমার উপর।” (আবু দাউদ: ২১৪৯)

৩. পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল কনটেন্ট এড়ানো

বর্তমান যুগে টিভি, মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে হারাম দৃশ্য দেখা খুব সহজ হয়ে গেছে। এজন্য আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

৪. তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় হৃদয়ে রাখা

যদি অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকে, তবে চোখের যিনা থেকে নিজেকে দূরে রাখা সহজ হবে। রাসূল (সা.) বলেছেন:

“তাকওয়া হলো হৃদয়ের ব্যাপার।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৪)

৫. উত্তম সঙ্গ বাছাই করা

যেসব বন্ধু হারাম কাজে লিপ্ত, তাদের থেকে দূরে থাকা উত্তম। নেককার বন্ধুদের সঙ্গে চললে ঈমান শক্তিশালী হবে।

৬. বিবাহ করা

যারা বিবাহের উপযুক্ত, তাদের দ্রুত বিয়ে করা উচিত। নবী (সা.) বলেছেন:

“হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা এটি দৃষ্টি সংযত রাখে ও লজ্জাস্থান হেফাজত করে।” (বুখারি: ৫০৬৬, মুসলিম: ১৪০০)

আরো পড়ুন:

চোখের যিনা নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: চোখের যিনা কি বড় গুনাহ?

উত্তর: হ্যাঁ, এটি বড় গুনাহের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে সঙ্গে সঙ্গে তওবা করলে আল্লাহ মাফ করে দেন।

প্রশ্ন ২: যদি অজান্তে হারাম কিছু দেখে ফেলি, তাহলে কি গুনাহ হবে?

উত্তর: না, যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে তাকাননি তবে গুনাহ হবে না। তবে দ্বিতীয়বার দেখা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

প্রশ্ন ৩: পর্দার বাইরে থাকা নারী বা পুরুষ দেখলে কী করা উচিত?

উত্তর: দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করা উচিত।

প্রশ্ন ৪: চোখের যিনা কি হারাম সম্পর্কের দিকে ধাবিত করে?

উত্তর: হ্যাঁ, চোখের যিনা প্রথম ধাপ, যা পরবর্তীতে হারাম সম্পর্কের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন ৫: চোখের যিনা থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী?

উত্তর: আল্লাহর ভয় অন্তরে রাখা, নিয়মিত দোয়া করা, প্রযুক্তির ব্যবহারে সচেতনতা এবং বিবাহ করা।

উপসংহার

চোখের যিনা থেকে বাঁচা একজন মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আত্মশুদ্ধির অংশ এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। আমাদের উচিত আল্লাহর সাহায্য কামনা করা, নিয়মিত দোয়া করা এবং তাকওয়া অবলম্বন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে চোখের যিনা থেকে হিফাযত করুন, আমিন।


পোস্টটি শেয়ার করুন