কূপের পানির হুকুম । কীভাবে পাক করতে হবে? বিস্তারিত আলোচনা

পোস্টটি শেয়ার করুন

কূপের পানির হুকুম: যদি কোনো অপবিত্র বস্তু কূপে পড়ে যায়, – তা হালকা হোক বা তীব্র অপবিত্রতা (যেমন: রক্ত বা প্রস্রাবের এক ফোঁটাও), তাহলে কূপের পানি নাপাক হয়ে যাবে। তবে যে অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণরূপে বাঁচা সম্ভব নয়, যেমন: পশুর গোবর, বা মল যদি পরিমাণে অল্প হয়, তাহলে মাফযোগ্য (ক্ষমাযোগ্য)। কিন্তু যদি পরিমাণে বেশি হয়, তাহলে কূপের পানি নিশ্চিতভাবে নাপাক হয়ে যাবে।

কূপের পানির হুকুম

‘পরিমাণে বেশি’ হওয়ার মানদণ্ড হলো:

  • যেটিকে দেখলে সাধারণ মানুষ অপবিত্রতার পরিমাণকে বেশি মনে করে,
  • অথবা দুই বালতির একটাও যদি তা থেকে মুক্ত না থাকে—তাহলে সেটি বেশি ধরা হয়।

আর যদি কূপে মানুষ বা পশু পড়ে যায়, তাহলে

যদি সে নাপাক না হয়, এবং তার শরীরে কোনো অপবিত্র বস্তু না থাকে, এবং তাকে জীবিত অবস্থায় উঠিয়ে আনা হয়, তাহলে কূপের পানি নাপাক হবে না।

কিন্তু যদি সে পানিতে মুখ ডুবিয়ে থাকে, তাহলে এই পানি হবে তার মুখের অবশিষ্ট পানি (سؤر), যার হুকুম আগে আলোচনা করা হয়েছে।

🧼 কূপ পরিশোধনের পদ্ধতি

প্রথমত: কূপ পুরোপুরি পরিশোধন হয় এইভাবে:

নাপাক বস্তু বের করে পুরো পানি উঠিয়ে ফেলা হয়। তবে যদি কিছু পানি উঠানো হয়, এবং ততক্ষণে আবার কূপে পানি বেড়ে যায়, তাহলে যতটুকু বাকি ছিল তখন, সেই সমপরিমাণ পানি আবার উঠাতে হবে।

আর যদি কূপটি গভীর ও প্রচুর পানি বিশিষ্ট হয়, তাহলে মাঝারি আকারের ২০০–৩০০ ডোলো পানি উঠিয়ে দিতে হবে। (একটি ডোল = আনুমানিক একটি সা‘ (صاع) পরিমাণ পানি)।

এভাবে পানি উঠাতে হবে নিম্নোক্ত অবস্থায়ঃ

  • যদি শূকর কূপে পড়ে, এমনকি জীবিত অবস্থায় তোলা হলেও, এবং তার মুখ পানিতে না লাগলেও, কারণ শূকর নিজেই নাপাক।
  • যদি কুকুর বা হিংস্র জন্তু কূপে পড়ে এবং তার মুখ পানিতে ডুবে, তাহলেও এই পরিমাণ পানি উঠাতে হবে।
  • যদি ভেড়া, কুকুর বা মানুষ কূপে পড়ে এবং মরে যায়, তখনো এমন পরিমাণ পানি উঠাতে হবে।

✅ এর দলিল:

ইবন সিরীন বলেন, “একজন হাবশি (আফ্রিকান) জমজম কূপে পড়ে মারা যায়। ইবনে আব্বাস (রাঃ) নির্দেশ দেন তাকে বের করতে এবং পুরো কূপের পানি উঠিয়ে দিতে।” (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা)

যদি কোনো প্রাণী কূপে পড়ে মরে গিয়ে ফুলে ওঠে, বা পচে যায়, কিংবা লোম ঝরতে শুরু করে, তখনও পুরো বা বড় অংশ পানি উঠাতে হয়—যত ছোট প্রাণীই হোক না কেন।

দ্বিতীয়ত: মাঝারি পরিমাণ (৪০–৬০ ডোল) পানি উঠাতে হয়

এক্ষেত্রে নাপাক বস্তু বের করার পর এই পরিমাণ পানি উঠানো লাগবে—

  • যদি মুরগি, বিড়াল বা একই আকারের প্রাণী কূপে পড়ে মরে, তবে শরীর না ফুললে, না পচলে এই পরিমাণ পানিই যথেষ্ট।
  • যদি এমন কোনো প্রাণী পড়ে মরে, যার আকৃতি মুরগি ও ভেড়ার মাঝামাঝি, তবে, শরীর না ফুললে বা না পচলে এই পরিমাণ পানি উঠাতে হবে।

তৃতীয়ত: হালকা পরিমাণ (২০–৩০ ডোল) পানি উঠাতে হয়:

যদি ইঁদুর বা পাখি জাতীয় ছোট প্রাণী কূপে পড়ে মরে, এবং সাথে সাথে বের করা হয়, এবং ফুলে না ওঠে, পচে না, তাহলে ২০–৩০ ডোল উঠালেই কূপ পরিশুদ্ধ হবে।

✅ দলিল:

আনাস (রাঃ) এর বর্ণনায় এসেছে:

“একটি ইঁদুর কূপে পড়ে মারা যায়, সঙ্গে সঙ্গে তা বের করা হয়, তিনি বলেন: ‘২০ ডোল পানি উঠাতে হবে।’”

যদি প্রাণীটি ফারসা ও কবুতরের মাঝামাঝি আকারের হয়, এবং পচে না, লোম না ঝরে, তাহলে এ পরিমাণ পানি উঠানোই যথেষ্ট।

আর কী কী পরিষ্কার করতে হবে?

  • যখন শেষ ফোঁটাটিও ডোল থেকে পড়ে যায়, তখন কূপের চারপাশের সবকিছু— যেমন: দড়ি, বালতি, চাকা ইত্যাদি— এগুলোও পরিষ্কার করে নিতে হবে।

🏞️ ট্যাংক ও পানির রিজার্ভারের হুকুম

❌ এগুলোর হুকুম কূপের মতো নয়

পানির ট্যাংক বা রিজার্ভারগুলোর হুকুম কূপের উপর কিয়াস (অনুরূপ সিদ্ধান্ত) করা যাবে না, যদি না সেগুলোর বেশিরভাগ অংশ মাটির নিচে থাকে অথবা যদি সেটি কোনো বড় কাঁচামাটির পাত্র (যেমন: বড় “জির”) হয়।

📌 কারণ: কূপ সম্পর্কে শরীয়তের সরাসরি দলিল আছে, তাই অন্যান্য জিনিসে তা প্রয়োগ করা যাবে না।

🧴 যদি কোনো নাপাক জিনিস পানির ট্যাংকে পড়ে যায়:

➤ যদি ট্যাংকের পানির পরিমাণ হয়—

১০ হাত × ১০ হাতের চেয়ে কম (অর্থাৎ ৪৯ বর্গমিটার), এবং পানির গভীরতা মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার,
→ তাহলে পুরো পানি ফেলে দেওয়া ফরজ।

➤ আর যদি পানির উপরিভাগ হয়—

১০ হাত × ১০ হাত বা তার বেশি, তাহলে দেখা হবে: নাপাকির কোনো রং, গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তন ঘটেছে কি না। যদি নিশানা পাওয়া যায়, তাহলে নাপাক ধরা হবে।

⏱️ আর যদি কূপ বা ট্যাংকে কোনো প্রাণী পড়ে

(এবং সে অবস্থায় ট্যাংক থেকে অজু বা গোসল করা হয়)

✅ তখন প্রশ্ন: কতদিন আগের পানি ‘নাপাক’ হিসেবে ধরা হবে?

উত্তর: ➤ যদি প্রাণী মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, কিন্তু পচে যায়নি, তাহলে:

🧍‍♂️ যে ব্যক্তি এই পানি দিয়ে অজু বা গোসল করেছে, তাকে একদিন ও একরাতের (২৪ ঘণ্টা)
সকল সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে।

➤ আর যদি প্রাণীটি পচে গিয়ে যায় (تفسخ), তাহলে তিন দিন ও তিন রাতের সব সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে।

👕 কিন্তু যদি কেউ শুধু কাপড় ধুয়েছে এই পানিতে?

এবং কাপড় ধোয়ার উদ্দেশ্য ছিল নাপাকি দূর করা, তাহলে তাকে শুধু কাপড়টি পুনরায় ধুতে হবে,
কিন্তু সালাত পুনরায় পড়তে হবে না।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest


0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x