আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি: অর্থ, গুরুত্ব ও আমল

পোস্টটি শেয়ার করুন

দু’আ হল মুসলিম জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিশেষত, কিছু বিশেষ দু’আ রয়েছে যা বিভিন্ন বিপদাপদ ও রোগব্যাধি থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ দু’আ হলো “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি”। এটি নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর শেখানো দোয়াগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার জন্য পড়া হয়।

দোয়ার আরবি উচ্চারণ ও অর্থ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ

উচ্চারণ: Allahumma inni a’udhu bika minal barasi, wal jununi, wal judhami, wa min sayyi’il asqam.

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কুষ্ঠরোগ (বারস), উন্মাদনা (জুনুন), কুষ্ঠরোগের এক বিশেষ রূপ (জুযাম) এবং সব ধরনের কঠিন রোগ থেকে। ( আবু দাউদ ও নাসাঈ)

আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি দোয়া আরবি বাংলা
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি দোয়া আরবি ও বাংলা

আরো পড়ুন:

দোয়ার ব্যাখ্যা

১. বারস (কুষ্ঠরোগ):

বারস একটি চর্মরোগ যা ধীরে ধীরে ত্বককে বিবর্ণ করে ফেলে এবং চামড়ার স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। এই রোগ অনেক সময় সামাজিকভাবে নিঃসঙ্গতা ও কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নবী (ﷺ) আমাদের শিখিয়েছেন, আল্লাহর কাছে এই রোগ থেকে আশ্রয় চাওয়া উচিত।

২. জুনুন (উন্মাদনা):

মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা পাগলামী এমন এক অবস্থা যা ব্যক্তির জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ ও বুদ্ধিবৃত্তিকে ধ্বংস করে দেয়। এই দোয়ায় আল্লাহর কাছে মানসিক সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।

৩. জুযাম (কুষ্ঠরোগের এক বিশেষ রূপ):

এটি এমন এক রোগ যা ধীরে ধীরে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকৃতি ঘটাতে পারে। ইসলাম আমাদের দেহ ও স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে, তাই নবী (ﷺ) এই রোগ থেকে রক্ষার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন।

৪. সাইয়্যি’ আল-আসক্বাম (সমস্ত কঠিন রোগ):

এই দোয়ায় আমরা সকল প্রকার কঠিন ও মারাত্মক রোগ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। এতে সংক্রামক ও জটিল রোগ থেকে সুরক্ষার আবেদন রয়েছে।

এই দোয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

১. রোগমুক্তির মাধ্যম: এটি নিয়মিত পড়লে আল্লাহর রহমতে মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা লাভ করা সম্ভব।
২. মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস: এ দোয়া মানসিক সুস্থতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়ক।
3. সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত কার্যকর: শুধু চিকিৎসা নয়, দোয়ার মাধ্যমেও শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত।

কবে পড়া উচিত?

  • প্রতিদিন সকাল-বিকাল
  • রোগে আক্রান্ত হলে
  • চিকিৎসার জন্য গেলে
  • যখন শারীরিক অসুস্থতার আশঙ্কা হয়
  • অন্যের রোগ দেখে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া করতে

প্রশ্নোত্তর

১. দোয়াটি কুরআনে আছে কি?

না, এটি কুরআনের অংশ নয়; তবে এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত একটি দোয়া। নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) নিজে এই দোয়া পড়েছেন এবং উম্মতকে এটি শেখানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

২. এই দোয়া কি শুধু চর্মরোগের জন্য?

না, এটি কুষ্ঠরোগসহ সব ধরনের মারাত্মক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে রক্ষার জন্য প্রার্থনা।

৩. এই দোয়া কখন পড়তে হবে?

নিয়মিত সকাল-বিকাল দোয়া হিসেবে পড়া যেতে পারে, পাশাপাশি যখন কোনো রোগ বা অসুস্থতার আশঙ্কা হয় তখনও এটি পড়া উত্তম।

৪. এটি কি চিকিৎসার বিকল্প?

না, চিকিৎসা ও দোয়া একসঙ্গে করা উচিত। ইসলামে চিকিৎসা গ্রহণ করা সুন্নাহ, আর দোয়া হলো আত্মিক প্রতিরক্ষা।

৫. কেউ যদি এই দোয়া ভুলে যায়, তাহলে কী করবে?

আবার শিখে নিতে হবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ইসলামে দোয়া ভুলে গেলে সমস্যা নেই, বরং নিয়মিত চর্চা করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়।

উপসংহার

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, যা নবী (ﷺ) আমাদের শিখিয়েছেন। এটি কুষ্ঠরোগ, মানসিক রোগ ও অন্যান্য কঠিন অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি মাধ্যম। প্রতিদিন এই দোয়া পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ইনশাআল্লাহ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা লাভ করা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন, আমীন।


পোস্টটি শেয়ার করুন