“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” (الصلاة خير من النوم) – অর্থাৎ “নিদ্রার চেয়ে নামাজ উত্তম”—এটি ফজরের আজানের একটি বিশেষ ঘোষণা, যা আমাদেরকে ঘুমের নেশা কাটিয়ে আল্লাহর দরবারে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান করে। মানুষ যখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন থাকে, তখন এই ডাক আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের প্রকৃত সাফল্য আরাম-আয়েশে নয়; বরং আল্লাহর ইবাদতে।
এই বাক্যাংশ শুধু একটি আহ্বান নয়, বরং এটি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের অগ্রাধিকার নির্ধারণের শিক্ষা দেয়। এখানে ঘুম ও নামাজের তুলনা করা হয়েছে—যেখানে ঘুম মানুষের শারীরিক প্রয়োজন মেটায়, আর নামাজ মানুষের রুহানী প্রয়োজন পূর্ণ করে। তাই এই ঘোষণা মুসলমানকে মনে করিয়ে দেয় যে, ইমানদারের জীবনে নামাজের স্থান ঘুমের চেয়ে অনেক উঁচু।
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” – এর অর্থ ও তাৎপর্য
আরবি শব্দগুচ্ছ:
ٱلصَّلَاةُ خَيْرٌ مِّنَ ٱلنَّوْمِ
উচ্চারণ: আস-সালাতু খাইরুম মিনান-নাওম
অর্থ: “নিদ্রার চেয়ে নামাজ উত্তম।”
এই বাক্যাংশের মধ্যে এক গভীর শিক্ষা নিহিত আছে। এটি শুধু একটি ঘোষণা নয়; বরং একজন মুসলমানকে তার প্রকৃত দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
- অর্থের দিক থেকে: এখানে ঘুম ও নামাজের তুলনা করা হয়েছে। ঘুম দেহের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও নামাজ আত্মা ও ইমানের জন্য অপরিহার্য। তাই ঘুমের আরাম ত্যাগ করে নামাজে দাঁড়ানো একজন মুমিনের জন্য বড় মর্যাদা ও পুরস্কারের কাজ।
- আধ্যাত্মিক তাৎপর্য: ফজরের সময় মানুষ সবচেয়ে বেশি ঘুমের প্রলোভনে থাকে। তখন এই ঘোষণা আত্মাকে জাগিয়ে তোলে এবং মনে করিয়ে দেয়—“তোমার প্রকৃত সফলতা আল্লাহর ইবাদতে।” এর মাধ্যমে দুনিয়ার সাময়িক স্বস্তির তুলনায় আখিরাতের চিরস্থায়ী মুক্তির অগ্রাধিকার শেখানো হয়।
- ব্যক্তিগত জীবনে শিক্ষা: এ বাক্য একজন মুসলমানকে অভ্যাস করিয়ে দেয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে—
- আরামের চেয়ে দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিতে,
- ইচ্ছার চেয়ে ইমানকে বেছে নিতে,
- এবং দুনিয়ার স্বল্পকালীন চাহিদার চেয়ে আখিরাতের স্থায়ী কল্যাণকে গুরুত্ব দিতে।
অতএব, “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” কেবল ফজরের আজানের অংশ নয়, বরং এটি মুসলমানের জীবনের একটি জীবনদর্শন—যা মনে করিয়ে দেয় যে আল্লাহর ইবাদতই জীবনের সর্বোচ্চ কল্যাণ।
ফজরের আজানে কেন “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” বলা হয়?
ফজরের আজানে বিশেষভাবে এই বাক্যাংশ যুক্ত করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে নববী শিক্ষা ও গভীর হিকমত।
১. নবী ﷺ এর নির্দেশনা
হযরত আবু মহযূরা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে আজান শেখানোর সময় ফজরের আজানে “الصلاة خير من النوم” (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) বলতে শিখিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৩৭৮)
👉 অর্থাৎ, এটি সরাসরি নবী ﷺ এর শিক্ষা অনুযায়ী প্রবর্তিত সুন্নাহ।
২. ফজরের সময় মানুষের অবস্থা
ফজরের সময় মানুষ গভীর ঘুমে নিমগ্ন থাকে। অন্য আজানগুলোতে মানুষ সাধারণত জাগ্রত থাকে, কিন্তু ফজরের সময় শয়তান মানুষকে বিশেষভাবে ঘুমে আবদ্ধ রাখে। তাই এ সময় এই ঘোষণা দিয়ে ঘুমের উপর নামাজকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য জোরালোভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।
৩. ইমানী শক্তি জাগিয়ে তোলা
এই বাক্যাংশ মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে নামাজ কেবল একটি ইবাদত নয়, বরং তা জীবনের প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি। নিদ্রা যদিও আরামদায়ক, তবুও নামাজ আত্মার শান্তি ও আখিরাতের মুক্তির কারণ।
৪. দুনিয়া বনাম আখিরাতের তুলনা
ফজরের আজানে এই ঘোষণা আমাদের সামনে এক বাস্তব শিক্ষা হাজির করে—
- দুনিয়ার ঘুম = সাময়িক আরাম
- নামাজ = স্থায়ী মুক্তি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি
সুতরাং, ফজরের আজানে এ বাক্যাংশ রাখা হয়েছে যেন মুসলমানরা প্রতিদিন দিনের শুরুতেই নিজেদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে নেয়।
হাদিসে “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম”-এর প্রমাণ
“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” ফজরের আজানের অংশ হওয়া কেবল প্রচলিত রেওয়াজ নয়; বরং এর ভিত্তি রয়েছে সহীহ হাদিসে।
📖 ১. সহীহ মুসলিম
হযরত আবু মহযূরা (রাঃ) বর্ণনা করেন:
قال لي رسول الله ﷺ : إذا أذنت لصلاة الفجر فقل: الصلاة خير من النوم، الصلاة خير من النوم.
অর্থ: রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বললেন, “যখন তুমি ফজরের নামাজের জন্য আজান দেবে, তখন বলবে: আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম, আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৩৭৮)

📖 ২. সুন্নান আন-নাসায়ী
হযরত বিলাল (রাঃ) ফজরের আজানে এই বাক্য বলতেন এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ এটি অনুমোদন দিয়েছিলেন।
(সুনান আন-নাসায়ী, কিতাবুল আজান, হাদিস: ৬৬৫)
📖 ৩. ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম মালিকের মত
ফকীহগণ বলেছেন, “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” শুধুমাত্র ফজরের আজানে বলা হবে, অন্য কোনো আজানে নয়। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত এবং সাহাবারা এভাবে আমল করেছেন।
ঘুম বনাম নামাজ: ইসলামী দৃষ্টিতে অগ্রাধিকার
ইসলামে ঘুম এবং নামাজ—দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আল্লাহর রাসূল ﷺ আমাদের শিখিয়েছেন, যখন এ দুটির মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন নামাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
🛌 ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
- ঘুম আল্লাহর এক মহান নিয়ামত। কুরআনে বলা হয়েছে: وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا
“আমি তোমাদের নিদ্রাকে বিশ্রামের মাধ্যম করেছি।” (সুরা আন-নাবা: ৯) - ঘুম শরীরকে বিশ্রাম দেয়, চিন্তা-শক্তি সতেজ করে এবং দৈহিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
🙏 নামাজের অগ্রাধিকার
- নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভ। আল্লাহ বলেন: إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ।” (সুরা আন-নিসা: ১০৩) - অর্থাৎ, নামাজের সময় হলে তা অন্য কিছুর চেয়ে অগ্রাধিকার পাবে—even যদি সেটা গভীর ঘুমও হয়।
⚖️ তুলনামূলক শিক্ষা
- ঘুম → দেহের সাময়িক আরাম।
- নামাজ → আত্মার স্থায়ী প্রশান্তি ও আখিরাতের মুক্তি।
- ঘুম ত্যাগ করলে হয়তো দেহ কিছুটা কষ্ট পায়, কিন্তু নামাজ ত্যাগ করলে আত্মা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ঝুঁকি তৈরি হয়।
🌅 ফজরের সময় বিশেষ পরীক্ষা
ফজরের নামাজের সময় মানুষ গভীর ঘুমে থাকে, তখন শয়তান তাকে ঘুমের দিকে টেনে নেয়। হাদিসে এসেছে—
“শয়তান তোমাদের ঘুমের সময় ঘাড়ের পেছনে তিনটি গিঁট দেয়। যখন মানুষ জেগে আল্লাহর নাম স্মরণ করে, একটি গিঁট খুলে যায়। অজু করলে দ্বিতীয়টি, আর নামাজ আদায় করলে তৃতীয়টিও খুলে যায়। ফলে সে প্রফুল্ল ও সতেজ হয়ে সকাল শুরু করে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
আধ্যাত্মিক শিক্ষা: আত্মার জাগরণ বনাম দুনিয়ার আরাম
“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” কেবল একটি ঘোষণা নয়, বরং এটি মানুষের আত্মাকে জাগিয়ে তোলার জন্য এক আধ্যাত্মিক দাওয়াত। এর মধ্যে গভীর শিক্ষা লুকিয়ে আছে—
🌙 ১. দুনিয়ার আরাম সাময়িক
ঘুম দেহকে আরাম দেয়, কিন্তু এটি সীমিত ও অস্থায়ী। মানুষ ঘুমিয়ে কিছু সময়ের জন্য প্রশান্তি পায়, কিন্তু ঘুম কখনও স্থায়ী সুখ দিতে পারে না।
🕋 ২. আত্মার জাগরণ স্থায়ী প্রশান্তি আনে
নামাজ আত্মাকে জাগ্রত করে। এটি মানুষের ভেতরের অন্ধকার দূর করে আল্লাহর নূর ও রহমতের দিকে নিয়ে যায়। তাই নামাজের মাধ্যমে অর্জিত প্রশান্তি ঘুমের আরামের তুলনায় অনেক গভীর ও স্থায়ী।
💡 ৩. অগ্রাধিকার শেখানো
এই বাক্যাংশ আমাদের শেখায়—
- আত্মার চাহিদা > দেহের চাহিদা
- আখিরাতের কল্যাণ > দুনিয়ার স্বস্তি
- আল্লাহর ইবাদত > ব্যক্তিগত আরাম
🔑 ৪. আত্মিক শক্তি অর্জনের উপায়
যখন একজন মুসলমান ঘুমের মিষ্টতা ত্যাগ করে নামাজে দাঁড়ায়, তখন তার রুহ আল্লাহর সাথে সংযুক্ত হয়। এর ফলে তার ঈমান দৃঢ় হয়, অন্তরে তৃপ্তি আসে, এবং দিনের শুরু হয় বরকতময়ভাবে।
📖 কুরআনের শিক্ষা
আল্লাহ তাআলা বলেছেন—
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“স্মরণে তো আল্লাহরই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে।” (সুরা রা‘দ: ২৮)
নামাজ হলো সেই স্মরণ যা অন্তরকে স্থায়ী প্রশান্তি দেয়।
ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
ফজরের নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরজ নামাজ। কুরআন ও হাদিসে এর অনেক বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যা একজন মুসলমানকে এই নামাজের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে উদ্বুদ্ধ করে।
🌅 ১. কুরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
“আর ফজরের কুরআন (তিলাওয়াত/নামাজ) নিশ্চয়ই উপস্থিতদের দ্বারা সাক্ষ্যপ্রাপ্ত হয়।” (সুরা ইসরা: ৭৮)
👉 অর্থাৎ, ফজরের নামাজ ফেরেশতারা বিশেষভাবে উপস্থিত হয়ে সাক্ষী থাকে।
🕌 ২. মুনাফিকদের থেকে পার্থক্য
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে কঠিন নামাজ হলো এশা ও ফজরের নামাজ। তারা যদি জানত এ দুই নামাজের কী ফজিলত রয়েছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতো।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
🌟 ৩. ফজরের নামাজ রক্ষাকারীকে আল্লাহর হেফাজত
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকে।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৬৫৭)
🕊 ৪. ফজর ও আসর – জান্নাতের চাবিকাঠি
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ রক্ষা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৭৪; সহীহ মুসলিম)
💡 ৫. দিনের শুরুতে বরকত
ফজরের নামাজ সময়মতো আদায় করলে দিন শুরু হয় প্রশান্তি, শক্তি ও বরকতের সাথে। দুনিয়ার কাজে যেমন সফলতা আসে, তেমনি আখিরাতের জন্যও তা সঞ্চয় হয়ে যায়।
আধুনিক জীবনে এ শিক্ষার প্রয়োগ
“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” শুধু ফজরের আজানের ঘোষণা নয়; বরং এটি আধুনিক জীবনের জন্যও এক অনন্য শিক্ষা। আজকের ব্যস্ত ও ভোগবাদী সমাজে মানুষ প্রায়শই দেহের আরাম, ঘুম এবং বিনোদনকে জীবনের মূল লক্ষ্য মনে করে। অথচ এ বাক্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আত্মার চাহিদা দেহের চাহিদার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
🕰 ১. সময় ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা
ফজরের জন্য ঘুম ত্যাগ করা মানে হলো নিজের জীবনকে একটি শৃঙ্খলায় আনা। আধুনিক জীবনে যারা উৎপাদনশীল (productive) হতে চান, তাদের জন্য ভোরে জাগা এবং দিন শুরু করা অনেক বড় উপকার বয়ে আনে।
📵 ২. প্রযুক্তি ও বিভ্রান্তি থেকে বাঁচা
আজকের যুগে মানুষ রাত জেগে মোবাইল, টিভি বা ইন্টারনেটে সময় নষ্ট করে। এর ফলে ফজরের নামাজ মিস হয়ে যায়। “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” আমাদের মনে করিয়ে দেয়—নিদ্রা নয়, নামাজই দিনের প্রকৃত সূচনা।
🧘 ৩. মানসিক প্রশান্তি
ঘুম সাময়িক আরাম দিলেও, নামাজ আত্মাকে স্থায়ী প্রশান্তি দেয়। যারা আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তারা ফজরের নামাজ নিয়মিত আদায় করলে অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করেন।
🌍 ৪. অগ্রাধিকার নির্ধারণ
এই শিক্ষা আমাদের শেখায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—
- দুনিয়ার আরাম নাকি আখিরাতের মুক্তি?
- ক্ষণস্থায়ী স্বস্তি নাকি স্থায়ী সাফল্য?
আধুনিক জীবনে এটি একজন মুসলমানকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়।
🤲 ৫. ঈমান শক্তিশালী করার উপায়
যখন একজন মুসলমান প্রতিদিন ভোরে ঘুম ত্যাগ করে নামাজে দাঁড়ায়, তখন সে আল্লাহর প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রমাণ করে। এর মাধ্যমে তার ঈমান দৃঢ় হয় এবং সে দিনভর গুনাহ থেকে বাঁচার শক্তি লাভ করে।
আমাদের করণীয় । ঘুমের উপর নামাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া
“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” আমাদের শুধু ফজরের সময় জাগিয়ে তোলে না, বরং জীবনব্যাপী একটি শিক্ষাও দিয়ে যায়—আল্লাহর ইবাদতকে সবকিছুর উপরে স্থান দেওয়া। এজন্য মুসলমানের কিছু করণীয় রয়েছে:
রাতের রুটিন নিয়ন্ত্রণ
- অপ্রয়োজনীয় রাত জাগা (সোশ্যাল মিডিয়া, টিভি, আড্ডা) এড়াতে হবে।
- আগে ঘুমাতে গেলে ফজরে জাগা সহজ হয়।
ঘুম থেকে ওঠার প্রস্তুতি
- ঘুমানোর আগে ওযু করে শোয়া এবং ফজরের নিয়ত করা।
- অ্যালার্ম সেট করা বা পরিবারের কাউকে জাগানোর জন্য বলা।
আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা
ঘুমের উপর বিজয় লাভ করা সহজ নয়। এজন্য দোয়া করতে হবে—
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا
হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দান করুন।” (সহীহ মুসলিম)
নামাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া
- দেহ বলুক “ঘুমাও”, কিন্তু অন্তর বলুক “আল্লাহর দরবারে দাঁড়াও।”
- জীবনের অন্যান্য কাজে যেমন সময়মতো উপস্থিত হই, তেমনি নামাজের ক্ষেত্রেও দৃঢ় থাকতে হবে।
ধারাবাহিকতা বজায় রাখা
- প্রথমে কিছুটা কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে এটি অভ্যাসে পরিণত হয়।
- যারা নিয়মিত ফজরের নামাজে জাগে, তারা দিনের শুরুতেই আল্লাহর বিশেষ বরকত লাভ করে।
উপসংহার
“আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” আমাদের জীবনের একটি গভীর শিক্ষা দেয়—নিদ্রার আরাম যতই মধুর হোক না কেন, আল্লাহর ইবাদত এবং আখিরাতের কল্যাণ তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। ফজরের নামাজে ঘুম ত্যাগ করা কেবল একটি ফরজ ইবাদত পূর্ণ করার মাধ্যম নয়; এটি আত্মার জাগরণ, ঈমানের দৃঢ়তা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।
আজকের ব্যস্ত ও আধুনিক জীবনে, যেখানে ঘুম ও আরামের প্রলোভন অনেক বেশি, এই ঘোষণা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃত সফলতা দুনিয়ার স্বল্পসুখে নয়, বরং আল্লাহর নিকট তৎপর থাকা ও নামাজ আদায়ে নিহিত। ঘুমের উপরে নামাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া মানে নিজের জীবনের মূল উদ্দেশ্য ঠিক রাখা, আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী স্বস্তিকে সাময়িক রাখা।
সর্বশেষে বলা যায়, ফজরের নামাজ শুধু একটি ইবাদত নয়, এটি একটি জীবনের দিকনির্দেশনা। যারা নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে, তারা আল্লাহর দয়ায় পূর্ণ জীবন লাভ করে এবং আত্মার স্থায়ী শান্তি অর্জন করে।