ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করার নিয়ম । ইসলামের নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয়তা

শেয়ার করুন

ইসলামে পবিত্রতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইস্তিঞ্জা বা পবিত্রতা রক্ষা করার সময় ঢিলা এবং কুলুখ ব্যবহারের বিশেষ নিয়ম ও বিধান রয়েছে। অনেকেই জানতে চান ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম, এটি না মানলে নামাজ হবে কি না, এবং মহিলাদের জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম আছে কি না। আজকের পোস্টে আমরা এসব বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইস্তিঞ্জার সময় ঢিলা ও কুলুখের ভূমিকা

ইস্তিঞ্জার সময় ঢিলা বা টিসু ও পানি উভয়ই ব্যবহৃত হতে পারে। তবে ইসলামিক বিধানে পানি ব্যবহারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি পবিত্রতা নিশ্চিত করতে বেশি কার্যকর।

হাদিস:

عن أبي هريرة : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال نزلت هذه الآية في أهل قباء { فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المطهرين } قال كانوا يستنجون بالماء فنزلت هذه الآية فيهم. (رواه الترمذي، رقم ۳۱۰۰)

বাংলা অনুবাদ: আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ এই আয়াতটি কুবা বাসীদের জন্য নাযিল করেছেন {তাতে কিছু লোক আছে যারা পবিত্রতা পছন্দ করে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন}। তারা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন, তাই এই আয়াতটি তাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস নং ৩১০০)

ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করার নিয়ম

ঢিলা ব্যবহার করা কি বাধ্যতামূলক?

ঢিলা ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি ঐতিহ্যগতভাবে অনুসরণ করা হয়েছে। এটি একটি সহজ মাধ্যম, বিশেষ করে যখন পানি সহজলভ্য না হয়।

কুলুখ (পানি) ব্যবহারের গুরুত্ব

ইসলামে পানি ব্যবহারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ এটি পবিত্রতা নিশ্চিত করতে কার্যকর।

হাদিস:

عن عطاء بن أبي ميمونة:سمع أنس بن مالك يقول كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يدخل الخلاء فأحمل أنا وغلام إداوة من ماء وعنزة يستنجي بالماء. (أخرجه البخاري،رقم ۱۵۱)

বাংলা অনুবাদ: আতা’ বিন আবি মাইমুনা থেকে বর্ণিত, আনাস বিন মালিক (রাযি.) বলেন, নবী (সা.) যখন টয়লেটে যেতেন, আমি এবং একজন দাস একটি পানির পাত্র এবং একটি বর্শা নিয়ে যেতাম, তিনি পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। (বুখারি, হাদিস নং ১৫১)

মহিলাদের ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করার নিয়ম

মহিলাদের জন্য ঢিলা বা কুলুখ ব্যবহারের নিয়ম পুরুষদের মতোই। তবে বিশেষভাবে মহিলাদের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা আরও জরুরি।

পানি এবং ঢিলার মধ্যে তুলনা

পানি এবং ঢিলা উভয়ই ইস্তিঞ্জার জন্য বৈধ। তবে পানি ব্যবহার করা উত্তম এবং সর্বাধিক পবিত্রতা নিশ্চিত করে।

নামাজের পূর্বে ইস্তিঞ্জা: শুদ্ধতার শর্ত

নামাজের আগে ইস্তিঞ্জা করা অত্যন্ত জরুরি। পানির ব্যবহার না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না, কারণ এটি পবিত্রতার শর্ত।

হাদিস:

عن عائشة قالت : مرن أزواجكن أن يستطيبوا بالماء فإني أستحيهم فإن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يفعله.(أخرجه الترمذي، رقم۱۹)

বাংলা অনুবাদ: আয়েশা (রাযি.) বলেন, “তোমাদের স্বামীদেরকে বল যে তারা পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করুক, কারণ আমি তাদের প্রতি লজ্জা অনুভব করি। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সা.) এটি করতেন।” (তিরমিজি, হাদিস নং ১৯)

ইস্তিঞ্জার সময় ঢিলা না নিলে নামাজ হবে না কি?

ইস্তিঞ্জার সময় ঢিলা না নিলেও, যদি পানি ব্যবহার করা হয়, তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে। তবে উভয়ের ব্যবহার একসাথে করার কোনো প্রয়োজন নেই।

আরো পড়ুন: ছেলেদের ইসলামিক নাম

ঢিলা দিয়ে হাঁটাহাঁটি করা কি ইসলামের আদর্শ?

ঢিলা ধরে হাঁটাহাঁটি করা ইসলামের আদর্শ পরিপন্থি। এটি একটি অনৈতিক কাজ এবং ইসলাম এতে সমর্থন করে না।

উত্তরের পক্ষে হাদিস:


عن محمد بن عبد الله بن سلام قال لما قدم رسول الله صلى الله عليه و سلم علينا يعني قباء قال إن الله–عز وجل- قد أثنى عليكم في الطهور خيرا أفلا تخبروني قال يعني قوله فيه رجال يحبون أن يتطهروا والله يحب المطهرين قال فقالوا يا رسول الله إنا نجده مكتوبا علينا في التوراة الاستنجاء بالماء. (أخرجه احمد،رقم ۲۳۸۳۳)

বাংলা অনুবাদ: মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ বিন সালাম বলেন, “যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের কাছে কুবায় এসেছিলেন, তিনি বলেন, আল্লাহ তোমাদের পবিত্রতা সম্পর্কে ভালো বলেছেন, আর তা কি তোমরা আমাকে বলবে না?” তারা বলল, “হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা তাওরাতে পেয়েছি যে, আমাদের পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতে বলা হয়েছে।” (আহমাদ, হাদিস নং ২৩৮৩৩)

ঢিলা এবং পানির যৌথ ব্যবহার: ইসলামে কি এর অনুমোদন আছে?

রাসূলুল্লাহ (সা.) বা সাহাবীরা একসাথে ঢিলা এবং পানি ব্যবহার করেছেন বলে কোনো বর্ণনা নেই। তাই পানি ব্যবহারের আগে ঢিলা নেওয়া অর্থহীন।

ইস্তিঞ্জার পদ্ধতি: ঢিলা ও কুলুখের সংমিশ্রণ

ইসলামে পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য পানি ব্যবহারের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যেকোনো কার্যক্রমে পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য পানি ব্যবহারের অনুশীলনকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: ঢিলা কুলুখ ব্যবহার না করলে কি নামাজ হবে না?

উত্তর: ইস্তিঞ্জার সময় পানি ব্যবহার করা হলে নামাজ শুদ্ধ হবে। তবে ঢিলা এবং পানির একসাথে ব্যবহার বাধ্যতামূলক নয়।

প্রশ্ন ২: মহিলাদের জন্য বিশেষ কোনো ইস্তিঞ্জার নিয়ম আছে কি?

উত্তর: মহিলাদের জন্য বিশেষ কোনো আলাদা নিয়ম নেই। তারা পুরুষদের মতোই ইস্তিঞ্জা করতে পারেন।

প্রশ্ন ৩: ইস্তিঞ্জার সময় ঢিলা না নিলে কি পানির ব্যবহার বাধ্যতামূলক?

উত্তর: যদি পানি ব্যবহার করা হয়, তাহলে ঢিলা নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন ৪: ঢিলা এবং পানি একসাথে ব্যবহার করলে কি কোনো অতিরিক্ত সওয়াব পাওয়া যাবে?

উত্তর: হাদিসে এমন কোনো নির্দেশনা নেই যে, ঢিলা এবং পানি একসাথে ব্যবহার করলে অতিরিক্ত সওয়াব পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন ৫: নামাজের আগে পবিত্রতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পদ্ধতি কী?

উত্তর: পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করা নামাজের আগে পবিত্রতা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম পদ্ধতি।

আরো পড়ুন: ইসলামে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধান

ইউটিউবে আমার সাথে যুক্ত হোন


শেয়ার করুন

Leave a Comment