দুরুদে নারিয়া । কী? আরবি । খতম । নিয়ম । জায়েজ ও বিশ্লেষণ

শেয়ার করুন

দুরুদে নারিয়া হলো একটি পরিচিত দোয়া, যা বিভিন্ন মুসলিম দেশে জনপ্রিয়। এটি নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে এবং একে কেন্দ্র করে মুসলিমদের মধ্যে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা প্রচলিত। এই ব্লগপোস্টে আমরা দুরুদে নারিয়া কী, এর ইতিহাস, পড়ার নিয়ম, পরিমাণ, বৈধতা, এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে এর বিশ্লেষণ নিয়ে আলোচনা করব।

দুরুদে নারিয়া কী: পরিচিতি ও ইতিহাস

‘খতমে নারি’ বা ‘দুরুদে নারিয়া’ হল নির্দিষ্ট কিছু বাক্য, যেগুলো ৪৪৪৪ বার পড়লে এই খতম সম্পূর্ণ হয়। কথিত আছে যে, এই খতম পড়লে যেকোনো বিপদ ও আপদ দূর হয়ে যায়। এই দোয়ার নাম ‘নারি’ এসেছে আরবি শব্দ ‘‘نار’’ থেকে, যার অর্থ আগুন। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে যেমন আগুন জ্বালিয়ে দেয়, তেমনি বিপদও নাশ হয়।

এর মূল আরবি বাক্যগুলো হলো:

“اللهم صَلِّ صَلاةً كامِلَةً وسَلِّمْ سَلامًا تامًّا على سَيِّدنا محمدٍ الذي تَنْحَلُّ به العُقَدُ، وتَنْفَرِجُ به الكُرَبُ وتُقضى به الحوائجُ وتُنالُ به الرغائبُ وحُسْنُ الخواتِمِ ويُسْتسقى الغمامُ بوجهه الكريم، وعلى آله وصحبه في كل لمحة ونفس بعددِ كل معلوم لك”.

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, পরিপূর্ণ রহমত ও পূর্ণ শান্তি বর্ষিত কর আমাদের সরদার মুহাম্মদের উপর, যার মাধ্যমে সমস্যাসমূহ সমাধান হয়, দুঃখ দুর্দশা তিরোহিত হয়, প্রয়োজনাদি মিটিয়ে দেওয়া হয়, পূণ্যাবলী ও সুন্দর শেষ পরিণাম অর্জিত হয়, তার পবিত্র চেহারা/সত্তার মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করা হয়। আর রহমত বর্ষণ কর তার পরিবার ও সাহাবিদের উপর তোমার জানা সংখ্যানুযায়ী, প্রতিটি মুহূর্তে ও নিঃশ্বাসে।”

তবে এই দোয়ার উৎপত্তি কোথা থেকে? এর প্রথম আবিষ্কারক কে? এই প্রশ্নগুলো নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। দুরুদে নারিয়া একটি মানুষের বানানো দোয়া, যা প্রাথমিকভাবে কোনো নির্দিষ্ট ইসলামী উৎস থেকে আসে না।

দুরুদে নারিয়া পড়ার নিয়ম

খতমে নারি বা দুরুদে নারিয়া পড়ার নিয়ম হলো প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ও নির্দিষ্ট পরিমাণে পড়া। এটি সাধারণত ৪৪৪৪ বার পড়া হয়। এই দোয়ার মাধ্যমে সমস্যাসমূহ সমাধান হয়, দুঃখ দুর্দশা তিরোহিত হয়, প্রয়োজনাদি মিটিয়ে দেওয়া হয়, পূণ্যাবলী ও সুন্দর শেষ পরিণাম অর্জিত হয়, এবং বৃষ্টি কামনা করা হয়।

দুরুদে নারিয়া: আরবি দোয়া ও বাংলা

দুরদে নারিয়া এর আরবি দোয়া হলো: “

اللهم صَلِّ صَلاةً كامِلَةً وسَلِّمْ سَلامًا تامًّا على سَيِّدنا محمدٍ الذي تَنْحَلُّ به العُقَدُ، وتَنْفَرِجُ به الكُرَبُ وتُقضى به الحوائجُ وتُنالُ به الرغائبُ وحُسْنُ الخواتِمِ ويُسْتسقى الغمامُ بوجهه الكريم، وعلى آله وصحبه في كل لمحة ونفس بعددِ كل معلوم لك”.

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাদের সরদার মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর পরিপূর্ণ রহমত ও পূর্ণ শান্তি বর্ষিত কর যার মাধ্যমে সমস্যাসমূহ সমাধান হয়, দুঃখ দুর্দশা তিরোহিত হয়, প্রয়োজনাদি মিটিয়ে দেওয়া হয়, পূণ্যাবলী ও সুন্দর শেষ পরিণাম অর্জিত হয়, তার পবিত্র চেহারা/সত্তার মাধ্যমে বৃষ্টি কামনা করা হয়। আর রহমত বর্ষণ কর তার পরিবার ও তার সাহাবায়ে কেরামের উপর তোমার জানা সংখ্যানূযায়ী, প্রতিটি মুহুর্তে ও নিঃশ্বাসে।”

দুরুদে নারিয়া পড়া কি জায়েজ?

না, দুরুদে নারিয়া পড়া জায়েজ নয়। এটি একটি বিদআত। গ্রহণযোগ্য আলেমগণ মনে করেন যে, দুরদে নারিয়া পড়া বৈধ নয়, কারণ এটি কুরআন ও হাদীসে নেই এবং এটি একটি মানুষের বানানো দোয়া। অন্যদিকে, যারা এটি এটি করেন তারা কেবল টাকা রুজির জন্য মানুষের সাথে ধর্মের নামে ধোকাবাজি করেন।

দুরুদে নারিয়া বিদআতের দলিল

দুরুদে নারিয়া পড়া বিদআত কেননা বিদআত অর্থ হলো ধর্মে নতুন কিছু সংযোজন, যা মূল ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়। রাসূল (সাঃ) সাহাবিদের দুরুদ পড়ার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু দুরদে নারিয়া যেভোবে পড়া হয় সেভাবে কোনো নিয়ম শিক্ষা দেননি। কোনো সাহাবি এভাবে দুরুদ পড়েননি।

রাসূল (সাঃ) বলেন, “প্রত্যেক বিদআত পথভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক পথভ্রষ্টতার স্থান জাহান্নাম।” (মুসলিম)

কুরআনে দুরুদ পাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে:

“إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا”

“নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ কর।” (সূরা আহযাব: ৫৬)

হাদীসে নবীর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে:

“مَنْ صَلَّى عَلَيَّ وَاحِدَةً، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا”

“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠায়, আল্লাহ তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন।” (মুসলিম)

এই আয়াত ও হাদিসের উপর পুরো জীবনভর সাহাবায়ে কেরাম আমল করে গেছেন কিন্তু কোনো দিন তারা দুরুদে নারিয়া এর নিয়মে কোনো দুরুদ পড়েননি। তাই এটা ধর্মে নতুন কিছু সংযোজন বা বিদআত।

সারাংশ

দুরুদে নারিয়া হলো একটি বিশেষ দোয়া, যা বিভিন্ন মুসলিম সমাজে জনপ্রিয়। যদিও এর বৈধতা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে, কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি যে, নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ধর্মে নতুন কিছু সংযোজন করা বিদআত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাই আমাদের উচিত, কুরআন ও হাদীসের প্রামাণ্য দলিল অনুসরণ করা এবং আমাদের আমলগুলোকে শুদ্ধ রাখা।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

১. দুরুদে নারিয়া কী?

দুরুদে নারিয়া হলো একটি বিশেষ দোয়া, যা বিপদ ও দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পড়া হয়।

২. খতমে নারিয়া পড়ার নিয়ম কী?

দুরদে নারিয়া পড়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই, তবে অনেকেই মনে করেন এটি ৪৪৪৪ বার পড়লে বিশেষ ফলাফল পাওয়া যায়।

৩. দুরুদে নারিয়া কি ইসলামিক শরীয়তে বৈধ?

এটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু আলেম এটিকে বৈধ মনে করেন, তবে অন্যরা এটিকে বিদআত বলে বিবেচনা করেন।

৪. কুরআন ও হাদীসে দুরুদ পাঠের গুরুত্ব কী?

কুরআন ও হাদীসে নবীর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, যা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।

৫. দুরুদে নারিয়া বিদআত কেন বিবেচিত হতে পারে?

দুরুদে নারিয়া বিদআত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে কারণ এটি ধর্মে নতুন কিছু সংযোজন, যা মূল ধর্মের সাথে সম্পর্কিত নয়।

আশা করি এই ব্লগপোস্টটি আপনার জন্য উপকারী হবে এবং খতমে নারিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করবে। আমাদের আমলগুলোকে শুদ্ধ রাখতে এবং কুরআন ও হাদীসের আলোকে পরিচালিত হতে চেষ্টা করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।

আরো পড়ুন:


শেয়ার করুন

Leave a Comment