ইফরিত জ্বীন । কুরআন হাদিস ও বিভিন্ন সভ্যতায় এই শয়তানের বিবরণ

শেয়ার করুন

ইফরিত হল একটি শ্রেণিগত নাম যা বিশেষ চরিত্রধারী এক প্রকার জ্বীন এর পরিচয় বহন করে। তারা অত্যন্ত শক্তি এবং ক্ষমতা সম্পন্ন, সহজেই কঠিন কাজ করতে সক্ষম। তারা মানুষের বা অন্যান্য প্রাণীর রূপ নিতে পারে এবং বিশাল দেহের আকৃতি ধারণ করতে পারে।

বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে ইফরিত জ্বীন

কিছু সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে এই প্রকার জ্বীনকে দানব নামে অভিহিত করা হয়েছে। পৌরাণিক কল্পকাহিনী ও প্যারানরমাল গল্পে এদের নাম ও কর্মকাণ্ড বহুল প্রচলিত। সমাজে নানান রঙের অতি রোমাঞ্চকর গল্পে কখনো বাস্তব আবার কখনো কাল্পনিক রূপে ইফরিতের কথা প্রচলিত হয়েছে।

এই সব গল্পে কখনো তারা ভাল ও হিতৈষী, কখনো মন্দ ও সর্বনাশী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের কেউ সুদর্শন, মার্জিত ও সুন্দর, আবার কেউ কুৎসিত। তবে ইসলামে ইফরিত নামক জ্বীনকে মানুষের জন্য কেবল ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা চতুর শয়তান।

কুরআনে ইফরিত জ্বীন

পবিত্র কুরআনে ইফরিত শয়তানের কথা নিম্নলিখিত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে:

“এক ইফরিত জ্বীন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার আগেই আমি তা নিয়ে আসব, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চয়ই শক্তিমান, বিশ্বস্ত।” (সুরা নামাল, আয়াত – ৩৯)

এই আয়াতের তাফসিরে মুফাস্সিরিন বলেন, সে একটি শক্তিশালী জ্বীন। ওয়াহব বলেছেন, তার নাম কুযি, ইবনে আব্বাস বলেন, চতুর একটি জ্বীন। যাহ্হাক বলেন, সে খবিস।

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে ইফরিত অতি শক্তিশালী একটি জ্বীন ছিল, যাকে মহান আল্লাহ মানুষের তুলনায় অসাধারণ শক্তি দান করেছেন। কোনো মানুষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তার পক্ষে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইয়ামানের সাবা থেকে বায়তুল মাকদিসে একটি সিংহাসন তুলে আনা সম্ভব নয়। কেননা সিংহাসনটি ছিলো বিশাল এবং আসা-যাওয়ার পথ ছিলো হাজার মাইল। কোনো মাধ্যম ব্যবহার করেও এত অল্প সময়ে এত দূর পথ অতিক্রম করে এই কর্ম সম্পাদন করা কোনো ক্রমেই সম্ভব নয়।

হাদিসের ইফরিত জ্বীন

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একটি হাদিসে ইফরিত জিনের বিবরণ দিয়েছেন:

আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “একটি ইফরিত জিন গত রাতে আমার সালাতে বাধা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার নিকট আসল। আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাকে ধরে মসজিদের একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখার ইচ্ছে করলাম, যাতে তোমরা সবাই স্বচক্ষে তাকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলায়মানের দোয়া, ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন রাজ্য দান করুন, যা আমি ছাড়া আর কারও ভাগ্যে যেন না জোটে।’ আমার মনে পড়ল। অতপর আমি তাকে ব্যর্থ এবং লাঞ্ছিত করে ছেড়ে দিলাম।” (সহিহ বুখারি)

বিভিন্ন ভাষায় ইফরিতের বিভিন্ন নাম

বিভিন্ন ভাষায় ইফরিতকে বিভিন্ন নামে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন:

  • ইংরেজি: Goblin, Dwarfs, Pixie, Folleto, Duende, Tengu, Meninkainen, Kallikantzaroi, Erlking, Billy Blind, Skrat, Ogre, Troll।

উপন্যাস, কিংবদন্তি, এবং গল্পে ইফরিতের উল্লেখ বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়। সাধারণত প্রবাদে ইফরিতের শক্তি বা অসুবিধার উল্লেখ করা হয়। জনপ্রিয় প্রবাদগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • “যে কেউ গবলিনকে ভয় করে সে এটি খুঁজে পাবে।”
  • “প্রথমবার একটি উজ্জ্বল চাঁদ, দ্বিতীয়বার একটি বৃত্তাকার রুটি, এবং তৃতীয়বার একটি চিত্রিত গবলিন।”
  • “গবলিনের মতো তারা একটি গবলিন তেলের তালুতে শান্ত হয় না।”

এই ধরণের প্রবাদগুলিতে ইফরিত বা গবলিনের উল্লেখ করা হয় তাদের শক্তি বা অসুবিধা নির্দেশ করতে।

ইফরিত জ্বীন থেকে বাঁচার উপায়

ইসলামে ইফরিত জ্বীন থেকে বাঁচার জন্য কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে:

  • আল্লাহর কাছে দোয়া করা: নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাঁর শরণাপন্ন হওয়া
  • কুরআন তিলাওয়াত করা: বিশেষ করে সুরা আল-ফালাক এবং সুরা আন-নাস, আয়াতুল কুরসি, সুরা ফাতিহা পড়া।
  • আযান দেয়া: শয়তান ও জ্বীনদের থেকে বাঁচতে ঘরে আযান দেয়া।
  • বিশেষ দোয়া পড়া: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশিত দোয়া পড়া, যেমন: “আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।”
  • সব সময় পবিত্র থাকা। গোসল ফরজ হলে সময় ক্ষেপন না করে দ্রুত গোসল করে ফেলা।

সারসংক্ষেপ

ইফরিত জ্বীন হল এক প্রকার শক্তিশালী জ্বীন যা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সভ্যতায় দানব বা দৈত্য হিসেবে পরিচিত। ইসলামে এদেরকে ক্ষতিকারক ও চতুর শয়তান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ইফরিত জ্বীন থেকে বাঁচার জন্য ইসলামে বিশেষ দোয়া ও কুরআনের সুরা পাঠ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এফএকিউ (FAQs)

প্রশ্ন ১: ইফরিত জ্বীন কী?

উত্তর: ইফরিত জ্বীন হল এক প্রকার শক্তিশালী জ্বীন, যা বিশেষ ক্ষমতা ও অতি শক্তির অধিকারী। এরা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সভ্যতায় দানব বা দৈত্য হিসেবে পরিচিত।

প্রশ্ন ২: কুরআনে ইফরিত জ্বীনের উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর: পবিত্র কুরআনে সুরা নামাল, আয়াত ৩৯-এ ইফরিত জ্বীনের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে একটি ইফরিত জ্বীন বলেছে, “আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার আগেই আমি তা নিয়ে আসব, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চয়ই শক্তিমান, বিশ্বস্ত।”

প্রশ্ন ৩: ইসলামে ইফরিত জ্বীনকে কীভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে?

উত্তর: ইসলামে ইফরিত জ্বীনকে সাধারণত ক্ষতিকারক ও চতুর শয়তান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রশ্ন ৪: ইফরিত জ্বীন থেকে বাঁচার উপায় কী?

উত্তর: ইফরিত জ্বীন থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, বিশেষ করে সুরা আল-ফালাক এবং সুরা আন-নাস পড়া, ঘরে আযান দেয়া, এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দেশিত দোয়া পড়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ৫: হাদিসে ইফরিত জ্বীনের উল্লেখ কোথায় পাওয়া যায়?

উত্তর: সহিহ বুখারিতে উল্লেখ আছে যে, একটি ইফরিত জিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সালাতে বাধা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এসেছিল, কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর সাহায্যে তাকে বাধা দেন।

প্রশ্ন ৬: ইফরিত জ্বীনকে অন্য ভাষায় কী নামে ডাকা হয়?

উত্তর: ইংরেজি ভাষায় ইফরিত জ্বীনকে Goblin, Dwarfs, Pixie, Folleto, Duende, Tengu, Meninkainen, Kallikantzaroi, Erlking, Billy Blind, Skrat, Ogre, Troll ইত্যাদি নামে ডাকা হয়।


শেয়ার করুন

Leave a Comment