ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ । আরবি । অর্থ, ব্যাখ্যা, ফজিলত ও বিস্তারিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

কুরআনের প্রতিটি শব্দ এবং বাক্য গভীর তাৎপর্য বহন করে। কেননা পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আয়াত এবং মহানবী (সা.) এর বাণী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেয়।‘ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ…” একটি এমনই মূল্যবান আয়াত। এটি ঈমানদারদের অন্তরে আশা এবং শান্তি সৃষ্টি করে। এই ব্লগপোস্টে আমরা এই আয়াতের অর্থ, ব্যাখ্যা, গুরুত্ব এবং দোয়া হিসেবে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ মাঁয়্যাশা : আরবি লেখা এবং অর্থ

আরবি লেখা:

إنَّ اللهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ

অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শুনাতে পারেন।” (সূরা ফাতির, ২২)

এই বাক্যটি বোঝায় যে, আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছায় যাকে কল্যাণ প্রদান করতে চান, তাকে সত্য ও সঠিক পথ শুনতে এবং বুঝতে সক্ষম করেন। এটি আল্লাহর ক্ষমতা এবং ইচ্ছার উপর আমাদের বিশ্বাসকে আরও গভীর করে।

আয়াতের প্রসঙ্গ ও শিক্ষা

“إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَنْ يَشَاءُ وَمَا أَنْتَ بِمُسْمِعٍ مَنْ فِي الْقُبُورِ”

অর্থ: “নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা শুনাতে পারেন, কিন্তু যে ব্যক্তি কবরে আছে তাকে তুমি শুনাতে পারবে না।” (সূরা ফাতির, ২২)

শানে নুযুল: এই আয়াতটি সেই সময়ে নাযিল হয় যখন কুরাইশের অবিশ্বাসীরা নবী করিম (সা.)-এর বার্তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা অহংকার ও গোঁড়ামির কারণে সত্য গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল না। আল্লাহ তাআলা এই আয়াতের মাধ্যমে নবী (সা.)-কে সান্ত্বনা দিয়েছেন যে, আপনার দায়িত্ব কেবল বার্তা পৌঁছে দেওয়া। মানুষের অন্তর খোলার এবং তাদের হিদায়াত দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।

ব্যাখ্যা: এই আয়াতে পূর্ব আলোচনায় আল্লাহ তাআলা অন্ধ এবং দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তির তুলনা করেছেন, যেমন আলো এবং অন্ধকার এক নয়। বিশ্বাসী ব্যক্তিরা জীবিত, যারা আল্লাহর পথের আলোতে পথ চলেন, আর অবিশ্বাসীরা মৃত, যারা অন্ধকারে বিভ্রান্ত হয়ে থাকে। নবী (সা.)-কে বোঝানো হয়েছে, আপনি মৃতদের মতো কাফেরদের শুনাতে পারবেন না। তাদের হিদায়াত আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

শিক্ষা:

  • আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রাখা।
  • দাওয়াহ দেয়ার সময় ধৈর্য ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীল থাকা।
  • মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করা।

ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ পড়ার নিয়ম

ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ পাঠ করার সময় নিচের বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • বিশুদ্ধ উচ্চারণ: আরবি শব্দগুলি শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাজবিদের নিয়ম মেনে পড়া উচিত।
  • নিয়তের গুরুত্ব: এটি পাঠ করার আগে সৎ নিয়তে আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত, যাতে তিনি আপনার হৃদয়ে শান্তি ও বিশ্বাস আনয়ন করেন।
  • পরিস্কার পরিবেশ: কোনো পবিত্র এবং শান্ত পরিবেশে বসে এই বাক্যটি পাঠ করলে বেশি মনোযোগ তৈরি হয়।

আরো পড়ুন:

ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ মাঁয়্যাশা পড়লে কি হয়? ফজিলত

“ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ মাঁয়্যাশা” পড়ার মাধ্যমে একজন মুমিন ব্যক্তি যে উপকারিতা পেতে পারেন তা হলো:

  • আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: এই বাক্যটি পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর উপর বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয় এবং অন্তরে শান্তি আসে।
  • আল্লাহর রহমতের আশা: এটি পাঠ করার ফলে আল্লাহর রহমত লাভের আশা বৃদ্ধি পায়।
  • সঠিক পথের দিকনির্দেশনা: আল্লাহর সাহায্য এবং ইচ্ছায় ব্যক্তির অন্তর আলোকিত হয় এবং তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।

ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ কিসের দোয়া?

এই “ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ মাঁয়্যাশা” আয়াতটি মূলত দোয়ার অংশ হিসেবে আল্লাহর দয়া এবং ক্ষমার আশায় পড়া হয়। এটি বিশেষভাবে উপযোগী যখন কেউ:

  • সত্য উপলব্ধি করতে চান: যারা সত্যের সন্ধান করছেন, তাদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণাদায়ক বাক্য।
  • কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য রাখতে চান: এই বাক্যটি পড়লে আল্লাহর প্রতি ভরসা বাড়ে এবং জীবনের কঠিন মুহূর্তে সাহস যোগায়।
  • আল্লাহর কাছে হিদায়াত চান: যারা আল্লাহর নিকট পথপ্রদর্শনের দোয়া করেন, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া।

ফিকহি মাসআলা

  • আয়াতের প্রয়োগ: এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, হিদায়াত একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তাই কাউকে জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা জায়েয নয়। বা কোনো পীর মাশায়েখ কাউকে হেদায়াত দিতে সক্ষম নন।
  • দাওয়াহর পদ্ধতি: দাওয়াহ দিতে গিয়ে শক্তি প্রয়োগ নয়, বরং মধুর ভাষা ও ধৈর্য ধরতে হবে।
  • মৃতদের শ্রবণক্ষমতা: ইসলামি আকিদা অনুসারে, মৃতরা জীবিতদের কথাবার্তা সরাসরি শুনতে পায় না। তবে কোনো কোনো হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর অনুমতি দ্বারা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে মৃতরা কিছু বিষয় উপলব্ধি করতে পারে। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে এই আয়াতটি প্রমাণ করে যে, মৃতদের কথা শোনানোর ক্ষমতা নবী (সা.) বা অন্য কারো নেই।

প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন

প্রশ্ন ১: “ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ” কোথায় উল্লেখ আছে?

উত্তর: এটি আছে পবিত্র কুরআনের সুরা ফাতিরের ২২ নাম্বার আয়াতে। তছাড়া বিভিন্ন ইসলামী দোয়া এবং বাণীতে উল্লেখ রয়েছে, যা আল্লাহর ইচ্ছার উপর আমাদের নির্ভরতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

প্রশ্ন ২: এটি কি কোনো নির্দিষ্ট দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়?

উত্তর: না এটি কোনো নিদিষ্ট দোয়া নয়। তবে এই আয়াতটি শিক্ষনীয়। আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা প্রকাশ এবং সঠিক পথ প্রদর্শনের দোয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ৩: এটি কি দৈনন্দিন জীবনে পড়া যায়?

উত্তর: অবশ্যই, এটি প্রতিদিন আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং দয়া কামনার জন্য পড়া যেতে পারে।

প্রশ্ন ৪: এটি পড়ার মাধ্যমে কীভাবে শান্তি লাভ করা যায়?

উত্তর: এটি পাঠ করার সময় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং নির্ভরতা হৃদয়ে ধারণ করলে মানসিক শান্তি লাভ করা যায়।

উপসংহার

“ইন্নাল্লাহা ইউসমিউ ….” আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আল্লাহই সর্বশক্তিমান এবং তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। এটি আমাদের জীবনে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও ধৈর্যের গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করে। দোয়া এবং আল্লাহর স্মরণে আমরা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারি এবং জীবনকে সফলতার দিকে পরিচালিত করতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমিন।


পোস্টটি শেয়ার করুন