কুলহু আল্লাহু আহাদ । আরবি । উচ্চারণ । অর্থ । ফজিলত ও বিস্তারিত

পোস্টটি শেয়ার করুন

কুরআন মাজীদের একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুরা হল সুরা আল-ইখলাস। শুরু হয়েছে “কুলহু আল্লাহু আহাদ” আয়াতটি দ্বারা। এই সূরা তাওহীদের (একত্ববাদের) মৌলিক শিক্ষা। এটি একমাত্র যার দ্বারা আল্লাহর পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।

এই সুরাটি আল্লাহকে জানতে, তাঁর প্রতি আমাদের বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা অটুট রাখতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাই সুরাটির উচ্চারণ, অর্থ ও ব্যাখ্যা জানা আমাদের জন্য আবশ্যক। এই লেখায় আমরা সূরা “কুলহু আল্লাহু আহাদ”-এর আরবি লেখা, উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত, পড়ার নিয়ম, এবং এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

কুলহু আল্লাহু আহাদ আরবি লেখা

সুরা ইখলাস আরবি

সুরা ইখলাসের উচ্চারণ

  • বিসমিল্লা-হির রহমানির রাহিম।
  • কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ।
  • আল্লাহুস-সামাদ।
  • লম ইয়ালিদ ওয়ালম ইয়ুলাদ।
  • ওয়ালম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

সুরা ইখলাসের অর্থ

১. বলুন, তিনি আল্লাহ— এক ও অদ্বিতীয়।
২. আল্লাহ সমস্ত কিছুর নির্ভরস্থল।
৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি।
৪. এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।

কুলহু আল্লাহু আহাদ infographic
কুলহু আল্লাহু আহাদ infographic

কুলহু আল্লাহু আহাদ । ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

সূরা ইখলাস মক্কায় নাজিল হয়েছিল এবং এটি তাওহীদের বার্তা বহনকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা। মুশরিকরা যখন নবী করিম (সা.)-কে আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিল, তখন এই সূরা নাজিল হয়। এটি আল্লাহর একত্ব এবং তাঁর সকল সৃষ্টির উপর প্রভাবশালী সত্তা হওয়ার প্রমাণ।

ফজিলত

২. কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ সমতুল্য: হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, এই সূরাটি তিলাওয়াত করলে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

“আবূ সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কি এক রাতের মধ্যে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে অক্ষম? ’ সাহাবীগণ বললেন, ‘কেমন করে তা সম্ভব? ’ তখন তিনি বললেন, সুরা ইখলাস ( কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ) পড়া কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পড়ার সমতুল্য।” (সহীহ বুখারী)

৩. জান্নাত লাভের গ্যারান্টি: যে ব্যক্তি নিয়মিত এই সূরা পাঠ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত করেন।

৪. প্রতিদিনের ইবাদতে গুরুত্বপূর্ণ: এটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর পাঠ করা অত্যন্ত পুণ্যময়। বিশেষ করে ফজরের পর এবং ঘুমানোর আগে তিনবার করে পড়া সুন্নত।

৫. রোগ নিরাময়ে সহায়ক: রোগ-ব্যাধি এবং মানসিক চাপ দূর করতে সূরা ইখলাসের আমল করা অত্যন্ত উপকারী।

সূরা ইখলাসের তাৎপর্য

সূরা ইখলাসের গুরুত্ব শুধু তাওহীদের বার্তায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি মুসলিম জীবনের প্রতিটি দিককে স্পর্শ করে। এটি আল্লাহর সত্তার একত্ব, নির্ভরশীলতা, এবং অতুলনীয়তাকে তুলে ধরে। এই সূরার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি:

১. আল্লাহর সত্তার পরিচয়: তিনি একক, অদ্বিতীয়, এবং সর্বশক্তিমান।
২. আল্লাহর প্রয়োজনহীনতা: তিনি সকল সৃষ্টির উপর নির্ভর করেন না, বরং সকল সৃষ্টি তাঁর উপর নির্ভরশীল।
৩. সৃষ্টিকর্তার শাশ্বতত্ব: তিনি কোনো শুরু বা শেষ ছাড়াই চিরন্তন।
৪. মানবজীবনের দিকনির্দেশনা: তাওহীদের আদর্শে জীবন পরিচালনার জন্য এটি এক অনন্য বার্তা প্রদান করে।

আরো পড়ুন।

কুলহু আল্লাহু আহাদ পড়ার নিয়ম

১. পবিত্রতা বজায় রাখা: যেকোনো সূরা তিলাওয়াতের আগে ওজু থাকা উত্তম। তবে ওজু ছাড়াও পড়া যায়।

২. তাজবীদের নিয়ম মানা: সঠিক উচ্চারণ ও তাজবীদের নিয়ম মেনে পড়া আবশ্যক।

৩. নিয়মিত পাঠ করা: সূরা ইখলাস প্রতিদিন সকালে এবং রাতে অন্তত তিনবার করে পড়া সুন্নত।

৪. বিশেষ পরিস্থিতিতে পাঠ: বিপদে-আপদে, রোগ-ব্যাধিতে, এবং দুশ্চিন্তা দূর করতে এই সূরা পড়া খুবই কার্যকর।

সুরা ইখলাস পড়লে কী হয়?

১. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন: এই সূরা পাঠ করলে আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়।

২. গুনাহ মাফ: নিয়মিত এই সূরা পাঠ গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম।

৩. রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি: হাদিসে বলা হয়েছে, এটি রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে রাতে পড়লে মন ও দেহ প্রশান্তি লাভ করে।

৪. জান্নাত লাভের সুসংবাদ: এটি পাঠকারী ব্যক্তি আল্লাহর নিকট বিশেষ মর্যাদা লাভ করেন।

৫. শয়তানের প্রভাব দূর: শয়তানের কুমন্ত্রণাকে দূর করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।

কুলহু আল্লাহু আহাদ ও অন্যান্য সূরার সঙ্গে তুলনা

  • সূরা ফাতিহা: সূরা ফাতিহা ইবাদতের জন্য মৌলিক দিক নির্দেশনা দেয়, যেখানে সূরা ইখলাস আল্লাহর একত্বের বার্তা বহন করে।
  • সূরা বাকারাহ: এটি দীর্ঘ এবং বিধিবিধান সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেয়, যেখানে সূরা ইখলাস সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর তাওহীদের বার্তা প্রদান করে।

প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: সূরা ইখলাস কুরআনের কোন পারায় অবস্থিত?

উত্তর: সূরা ইখলাস কুরআনের ৩০ নম্বর পারায় অবস্থিত। এটি ১১২ নম্বর সূরা।

প্রশ্ন: এটি কতবার পড়া উত্তম?

উত্তর: ফজরের পর, রাতে ঘুমানোর আগে এবং যেকোনো ইবাদতের সময় এটি তিনবার পড়া সুন্নত। তবে ইচ্ছামতো বেশি পড়া যেতে পারে।

প্রশ্ন: সূরা ইখলাস কেন কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ সমতুল্য?

উত্তর: সূরা ইখলাসে তাওহীদের মৌলিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত, যা পুরো কুরআনের বার্তার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

প্রশ্ন: এই সূরা কি শুধু মুসলমানদের জন্য?

উত্তর: না, এই সূরা আল্লাহর একত্বের বার্তা বহন করে, যা মানবজাতির জন্য একটি সার্বজনীন সত্য।

প্রশ্ন: এটি কি রোগমুক্তির জন্য আমল করা যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, রোগমুক্তি এবং বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সূরা ইখলাস পড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।

প্রশ্ন: ছোটরা কীভাবে এটি দ্রুত শিখতে পারে?

উত্তর: প্রতিদিন নামাজের সময় এবং ঘুমানোর আগে পড়ানোর মাধ্যমে শিশুদের দ্রুত এটি শেখানো সম্ভব।

উপসংহার

সূরা ইখলাস মুসলিম জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সূরা। এটি আল্লাহর একত্ব ও নিরঙ্কুশতার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘোষণাগুলোর একটি। দৈনন্দিন ইবাদতে এই সূরার নিয়মিত পাঠ আত্মার শান্তি, আল্লাহর নৈকট্য এবং দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বয়ে আনে। এ

ই সূরা কেবল একটি সংক্ষিপ্ত আয়াতমালাই নয়, বরং একটি গভীর জীবনদর্শন যা আমাদের তাওহীদের মর্ম উপলব্ধি করতে শেখায়। নিয়মিত এই সূরার তিলাওয়াত আমাদের ঈমানকে আরও দৃঢ় করবে এবং আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই সূরার গুরুত্ব অনুধাবন করার তৌফিক দিন। আমিন।


পোস্টটি শেয়ার করুন