সবচেয়ে দামি দোয়া বলতে আসলে কোন দোয়া কুরআন এবং হাদিসে নেই। আপনাকে বুঝতে হবে যখন আপনার যে জিনিসটা দরকার, আপনি যে জিনিসের জন্য সবচেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী, সেই জিনিসের জন্য দোয়া করাটাই হচ্ছে আপনার জন্য সবচেয়ে দামি।
যে ব্যক্তি অসুস্থ রয়েছেন তার কাছে পুরো পৃথিবীটা মূল্যহীন। তার কাছে একমাত্র দামি জিনিস হচ্ছে সুস্থতা। সেই ব্যক্তি যখন সুস্থতার দোয়া করবে তখন তার কাছে এই দোয়াটাই সবচেয়ে দামি মনে হবে।
এভাবে যেই ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত রয়েছে, তার কাছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে এই ঋণের সমস্যাটি সমাধান করা। তার কাছে দোয়া মানে হবে ঋণের বোঝা হালকা করার জন্য দোয়া করা। এটিই তার কাছে সবচেয়ে দামি দোয়া হিসেবে গণ্য হবে।
এভাবে যে ব্যক্তি হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে, চারিদিকে শুধু অন্ধকার দেখছেন, তার কাছে হতাশা থেকে মুক্তির জন্য দোয়াই হচ্ছে সবচেয়ে দামি দোয়া। একেক ব্যক্তি হিসেবে দোয়ার মূল্যায়ন হবে। যার কাছে যে জিনিসটা বেশি প্রয়োজনীয় তার কাছে সেই জিনিসের জন্য দোয়া করাটাই সবচেয়ে দামি হিসাবে গণ্য হবে।
তবে হাদিসের মধ্যে কিছু দোয়া রয়েছে যেগুলো সর্বক্ষেত্রে মানুষের জন্য সমানভাবে কার্যকরী। এ রকম অত্যন্ত ফজিলতময় কিছু দোয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
দোয়ার গুরুত্ব
দোয়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
الدُعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ
অর্থ: “দোয়া হলো ইবাদাত।” (তিরমিজি)
দোয়া আল্লাহর প্রতি আমাদের নির্ভরতা প্রকাশ করে এবং তাঁর অসীম ক্ষমতার প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করে। আল্লাহ নিজেই কুরআনে আমাদের দোয়া করার জন্য আহ্বান করেছেন:
وَقَالَ رَبُّكُمْ اُدْعُونِيِ اَسْتَجِبْ لَكُمْ
অর্থ: “তোমাদের প্রভু বললেন, আমায় ডাকো, আমি তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করব।” (সূরা গাফির: ৬০)
সবচেয়ে দামি দোয়া কোনটি?
যে দোয়া আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে সেটাই হল সবচেয়ে দামি দোয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। এটি আমাদের জন্য অনুকরণীয়।
رَبَّنَا اَتِنَا فِي الدُنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَارِ
অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দাও, আখিরাতে কল্যাণ দাও এবং আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।” (সূরা বাকারা: ২০১)
এই দোয়াটি দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ কল্যাণের প্রার্থনা।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
১. ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া
رَبِّنَا ظَلَمْنَا اَنْفُسَنَا وَإِنْ لَمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الخَاسِرِينَ
অর্থ: “হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদের প্রতি দয়া না করো, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।” (সূরা আরাফ: ২৩)
২. দুঃখ ও কষ্ট থেকে মুক্তির দোয়া
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَالِمِينَ
অর্থ: “তোমার সত্তা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র, নিঃসন্দেহে আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আম্বিয়া: ৮৭)
৩. হেদায়েতের জন্য দোয়া
اَهْدِنَا الصِرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ
অর্থ: “আমাদের সরল পথ দেখাও।” (সূরা ফাতিহা: ৬)
আরো পড়ুন:
দোয়ার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা
১. পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করুন: আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দোয়া করতে হবে।
২. ইখলাস বজায় রাখুন: দোয়ার সময় শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে।
৩. দোয়ার আগে প্রয়োজনমতো ইবাদাত করুন: ওজু, সালাত বা অন্য নেক আমলের মাধ্যমে দোয়ার গুরুত্ব বাড়ানো যায়।
৪. দোয়া শেষে দরুদ পড়ুন: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ প্রেরণ দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত।
দোয়া করার উপযুক্ত সময়
দোয়া করার জন্য সবচেয়ে সঠিক সময় হচ্ছে শেষ রাত্রি। শেষ রাত্রিতে ঘুম থেকে উঠে আপনি দুই রাকাত বা চার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে দোয়া করেন তাহলে এ দোয়া কবুল হওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত এছাড়াও:
- ফরজ নামাজের পরবর্তী সময়ে
- শুক্রবারে ইমাম সাহেব যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছেন তখন দোয়া করা
- বৃষ্টির সময় দোয়া করা
- আজানের সময় দোয়া করা
- অজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দোয়া করা
ইত্যাদি সময়গুলোতে দোয়া কবুল হওয়ার বেশ ভালো সম্ভাবনা থাকে। এ সময়গুলোতে আপনি দোয়া করতে পারেন। দোয়া কবুল হয় না বলে অনেকে অভিযোগ করে থাকেন, যে এত এত দোয়া করি কিন্তু আল্লাহ কেন আমার দোয়া কবুল করেন না।
এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, যখনই আপনি দোয়া করছেন আপনার সেই দোয়া অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা শুনবেন এবং এর প্রতিদান আপনি পাবেন। দোয়ার প্রতিদান আল্লাহ তিনভাবে দিয়ে থাকেন। প্রথম হচ্ছে হয়তো আপনি যেটা চাচ্ছেন সেই জিনিসটাই পাবেন।
অথবা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলা এর বিনিময়ে আপনার থেকে কোনো বিপদ দূর করে দেবেন। অথবা দোয়ার বিনিময়ে আপনার জন্য বিশেষ করে নিয়ামত আল্লাহ পরকালের জন্য তৈরি করে রাখবেন। এ তিনটি থেকে কোনো একটি অবশ্যই আপনি পাবেন। এটি একটি হাদিসের মধ্যে রয়েছে।
তবে আপনি হারাম থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। যদি হারামের মধ্যে কোন ব্যক্তি জড়িত থাকেন তাহলে তিনি যতই দোয়া করুক না কেন তার দোয়া কবুল হবে না। হারাম কাজের উদাহরণ হচ্ছে, প্রেম করা, জুয়া খেলা, অন্যায় ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করে খাওয়া ইত্যাদি।
সবচেয়ে দামি দোয়া ও দুটি প্রশ্ন উত্তর
দোয়া করার জন্য কোন ভাষা ব্যবহার করতে হবে?
না, দোয়া করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ভাষার প্রয়োজন নেই। তবে আরবি ভাষায় দোয়া করলে এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পাশাপাশি, নিজের মাতৃভাষায় দোয়া করলে তা আরও আন্তরিক হয়।
দোয়া কীভাবে আরও বেশি কার্যকর হবে?
দোয়া কার্যকর করার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
- দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও শেষে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর প্রতি দরুদ পাঠ করা।
- নিজের ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনগুলো আন্তরিকভাবে তুলে ধরা।
উপসংহার
দোয়া একজন মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতা এবং কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। সবচেয়ে দামি দোয়া হলো এমন দোয়া, যা আমাদের দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। প্রতিদিন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন এবং তাঁর কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করুন, কারণ আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।