সহবাস করার পর যে সকল কাজ কখনোই করবেন না । যা জানতে হবে

পোস্টটি শেয়ার করুন

স্বামী-স্ত্রীর সহবাস একটি স্বাভাবিক ও পবিত্র সম্পর্ক, যা ভালোবাসা ও মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। তবে সহবাসের পর কিছু কাজ এড়িয়ে চলা জরুরি, কারণ এগুলো শরীর, মন ও আত্মার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ইসলামিক নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ থেকে সহবাস করার পর যে সকল কাজ কখনোই করবেন না, তা নিচে আলোচনা করা হলো।

সহবাস করার পর যে সকল কাজ কখনোই করবেন না

১. গোসল বা ওজু ছাড়া নামাজ পড়া বা কোরআন তিলাওয়াত করা

সহবাসের পর শরীর অপবিত্র (জানাবাত) অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত করা বা মসজিদে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ।

📖 আল্লাহ বলেন:

“আর যদি তোমরা অপবিত্র (জানাবাত) অবস্থায় থাকো, তবে ভালোভাবে গোসল করো।” (সূরা আল-মায়েদা: ৬)

করণীয়: নামাজ পড়ার আগে অবশ্যই গোসল (গোসল জানাবাত) করা ফরজ।

২. সহবাসের পর সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া

অনেকেই সহবাসের পর ক্লান্ত হয়ে যান এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে শরীর অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানো ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি সহবাসের পর গোসল না করে ঘুমিয়ে যায়, সে যেন অসুস্থ অবস্থায় সকাল আশা করে।” (আবু দাউদ: ২২৮)

করণীয়:

  • যদি গোসল করা সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত ওজু করে ঘুমানো সুন্নত।

৩. সহবাসের পর শারীরিক পরিষ্কার না করা

শরীরের সাথে নাপাক বস্তু লেগে থাকলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। এটি স্বাস্থ্য ও হাইজিনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

করণীয়:

  • নাপাক অংশ ধুয়ে ফেলা।
  • সহবাসের পর টয়লেট ব্যবহার করা, কারণ এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

৪. সহবাসের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করা

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক গোপন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে এবং পরে তা প্রকাশ করে।” (সহিহ মুসলিম: ১৪৩৭)

করণীয়:

  • দাম্পত্য সম্পর্কের বিষয়ে কাউকে বলা উচিত নয়, এটি গুনাহ।

৫. একাধিকবার মিলনের আগে ওজু বা পরিষ্কার না হওয়া

একবার সহবাস করার পর পুনরায় মিলন করতে চাইলে সরাসরি না করে প্রথমে ওজু করে নেওয়া সুন্নত।

📖 হাদিসে এসেছে:

“যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে, তারপর আবার করতে চায়, তবে সে যেন ওজু করে।” (সহিহ মুসলিম: ৪৬৬)

করণীয়:

  • পুনরায় মিলনের আগে ওজু করা উত্তম।

❌ ৬. অতিরিক্ত বার মিলন করে শরীরের ক্ষতি করা

এক রাতে একাধিকবার মিলন করা সম্ভব হলেও অতিরিক্ত করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

করণীয়:

  • শরীরের শক্তি ও স্ত্রীর স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে সংযত থাকা উচিত।
  • বেশি ক্লান্তি এলে বিশ্রাম নেওয়া ভালো।

❌ ৭. সহবাসের পর নোংরা বা দুর্গন্ধযুক্ত বিছানায় শুয়ে থাকা

যদি সহবাসের পর বিছানায় দুর্গন্ধ বা নোংরা কিছু থেকে যায়, তবে তা অপবিত্রতার সৃষ্টি করতে পারে এবং আরামের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

করণীয়:

  • বিছানা বা কাপড় পরিবর্তন করা বা পরিষ্কার করা উচিত।

❌ ৮. সকালে গোসল না করে কাজ বা নামাজে যাওয়া

অনেকে ফজরের আগে গোসল না করে অফিস বা কাজে চলে যান, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

করণীয়:

  • ফজরের নামাজের আগে অবশ্যই গোসল করা জরুরি।

🔴 সারসংক্ষেপ: সহবাসের পর যে কাজগুলো কখনোই করবেন না

❌ গোসল বা ওজু ছাড়া নামাজ পড়া ও কোরআন তিলাওয়াত করা।
❌ সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া (গোসল বা ওজু ছাড়া)।
❌ শরীর পরিষ্কার না করা।
❌ সহবাসের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করা।
❌ পুনরায় মিলনের আগে ওজু না করা।
❌ অতিরিক্ত মিলন করে শরীর দুর্বল করা।
❌ নোংরা বিছানায় শুয়ে থাকা।
❌ সকালে গোসল না করে কাজে যাওয়া।

সহবাসের পর যেসব কাজ এড়িয়ে চলা উচিত

প্রশ্ন ১: সহবাসের পর গোসল ছাড়া নামাজ পড়া যাবে কি?

উত্তর: না, সহবাসের পর শরীর অপবিত্র থাকে, তাই গোসল (গোসল জানাবাত) ছাড়া নামাজ পড়া সম্পূর্ণ হারাম।

📖 আল্লাহ বলেন:

“আর যদি তোমরা অপবিত্র (জানাবাত) অবস্থায় থাকো, তবে ভালোভাবে গোসল করো।” (সূরা মায়েদা: ৬)

➡️ গোসল ছাড়া কোরআন তিলাওয়াত, মসজিদে প্রবেশ, ও নামাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন ২: সহবাসের পর কি সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো যাবে?

উত্তর: না, সম্পূর্ণ অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানো সুন্নতবিরোধী। তবে যদি ক্লান্ত থাকেন, তাহলে অন্তত ওজু করে ঘুমানো সুন্নত

📖 রাসুল (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি সহবাসের পর গোসল না করে ঘুমিয়ে যায়, সে যেন অসুস্থ অবস্থায় সকাল আশা করে।”(আবু দাউদ: ২২৮)

➡️ ওজু করলে পবিত্রতা বজায় থাকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ৩: সহবাসের পর কি টয়লেটে যাওয়া উচিত?

উত্তর: হ্যাঁ, বিশেষ করে নারীদের জন্য টয়লেটে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ

➡️ কারণ:
✔️ এটি ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) প্রতিরোধ করে।
✔️ শরীরের অবাঞ্ছিত তরল পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৪: সহবাসের পর কি খাওয়া-দাওয়া করা যাবে?

উত্তর: হ্যাঁ, তবে শরীর পবিত্র করার পর খাওয়া উত্তম। অন্তত ওজু করে খাওয়া উচিত।

📌 হাদিস: রাসুল (সা.) পবিত্রতা রক্ষা করে খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রশ্ন ৫: সহবাসের কথা অন্যের সাথে শেয়ার করা যাবে কি?

উত্তর: না, এটি ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম এবং গুনাহর কাজ।

📖 রাসুল (সা.) বলেছেন:

“কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সেই, যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের কথা অন্যদের বলে।” (সহিহ মুসলিম: ১৪৩৭)

➡️ গোপনীয়তা রক্ষা করা স্বামী-স্ত্রীর জন্য বাধ্যতামূলক।

প্রশ্ন ৬: সহবাসের পর পুনরায় মিলনের আগে কি কিছু করা উচিত?

উত্তর: হ্যাঁ, পুনরায় সহবাসের আগে অন্তত ওজু করা সুন্নত

📖 হাদিস:

“যদি তোমাদের কেউ সহবাস করে, তারপর আবার করতে চায়, তাহলে সে যেন ওজু করে।” (সহিহ মুসলিম: ৪৬৬)

➡️ ওজু করলে শরীর সতেজ থাকে এবং ক্লান্তি কমে যায়।

প্রশ্ন ৭: সহবাসের পর কি ফজরের আগে গোসল করা জরুরি?

উত্তর: হ্যাঁ, কারণ ফজরের নামাজের জন্য গোসল করা ফরজ।

📖 রাসুল (সা.) বলেন:

“যে ব্যক্তি জানাবাত অবস্থায় সকাল করে, সে যেন গোসল করে।” (বুখারি: ২৮১)

➡️ নামাজ পড়তে চাইলে অবশ্যই গোসল করতে হবে।

প্রশ্ন ৮: সহবাসের পর কি নোংরা বা দুর্গন্ধযুক্ত বিছানায় শোয়া ঠিক?

উত্তর: না, এটি পরিচ্ছন্নতার জন্য ভালো নয়।

➡️ বিছানায় গন্ধ থাকলে তা পরিবর্তন করা বা পরিষ্কার করা উত্তম।

📖 ইসলাম পরিচ্ছন্নতাকে গুরুত্ব দিয়েছে:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।” (সূরা বাকারা: ২২২)

প্রশ্ন ৯: সহবাসের পর কি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করা ঠিক?

উত্তর: শরীরের আরামের জন্য উষ্ণ বা সহনীয় গরম পানি ব্যবহার করা ভালো।

➡️ অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে ঠান্ডা লেগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

প্রশ্ন ১০: সহবাসের পর কি কাপড় পরিবর্তন করা জরুরি?

উত্তর: যদি কাপড় নাপাক হয়ে যায়, তবে অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।

📌 যদি কাপড়ে বীর্য বা নাপাক কিছু লেগে না থাকে, তবে পরিবর্তন করা বাধ্যতামূলক নয়।


পোস্টটি শেয়ার করুন