১০৪ খানা আসমানী কিতাবের নাম । সত্যের সন্ধান

পোস্টটি শেয়ার করুন

ইসলামে আসমানী কিতাবগুলি গুরুত্বপূর্ণ, যা আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নবী এবং রাসূলদের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য পাঠিয়েছেন। সাধারণত চারটি আসমানী কিতাবের নাম সম্পর্কে আমরা অবগত, তবে মুসলিম ঐতিহ্যে ১০৪ খানা আসমানী কিতাবের নাম ও ধারণা কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। এই ব্লগে আমরা এ বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করবো।

১০৪ খানা আসমানী কিতাব । ঐতিহ্য ও বিশ্বাস

মুসলিমদের মধ্যে অনেকের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য ১০৪ খানা আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন। এই ধারণাটি কিছু বিশেষ আলেমদের রচনা ও কথার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তবে কুরআনে বা সহীহ হাদিসে এই সংখ্যার কোনো সরাসরি উল্লেখ নেই।

আসমানী কিতাবের সঠিক সংখ্যা । কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিকোণ

কুরআন মাজিদে চারটি আসমানী কিতাবের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে:

  1. তাওরাত – মুসা (আ.) এর প্রতি নাজিল হয়েছিল।
  2. যবুর – দাউদ (আ.) এর প্রতি নাজিল হয়েছিল।
  3. ইঞ্জিল – ঈসা (আ.) এর প্রতি নাজিল হয়েছিল।
  4. কুরআন – মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি নাজিল হয়েছিল।

অন্যান্য সম্ভাব্য আসমানী কিতাব

আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নবীর প্রতি অন্যান্য আসমানী গ্রন্থও নাজিল করেছেন। তবে এই গ্রন্থগুলোর সংখ্যা সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা বা তালিকা নেই। কিছু মুসলিম স্কলারদের মতে, এসব গ্রন্থ সংখ্যা ১০০-এর বেশি হতে পারে, তবে এর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।

কুরআনে আসমানী কিতাব বিষয়ে যা বলা হয়েছে

কুরআনে আসমানী কিতাব বা ঐশ্বরিক গ্রন্থ সম্পর্কিত বিভিন্ন আয়াত রয়েছে যা তাদের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে কীভাবে নাজিল হয়েছে তা বর্ণনা করে। কুরআনে উল্লেখিত প্রধান আসমানী কিতাবগুলো এবং তাদের বিবরণ নিম্নরূপ:

১. তাওরাত

তাওরাত হলো মূসা (আ.) এর প্রতি নাজিলকৃত কিতাব। এটি ইহুদীদের জন্য আসমানী কিতাব হিসেবে স্বীকৃত।

  • আয়াত: “এবং আমরা মূসার প্রতি তাওরাত প্রদান করেছি, যাতে লোকেরা সঠিক পথ অনুসরণ করে।” (সূরা আল-জুমূআ, ৫৯:১০)

২. যবুর

যবুর হলো দাউদ (আ.) এর প্রতি নাজিলকৃত কিতাব। এটি মূলত দাওদী কাব্যগ্রন্থ যা ইসলামী ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

  • আয়াত: “আর দাউদের জন্য আমরা একটি কিতাব পাঠিয়েছি যবুর।” (সূরা সাদ, ৩৮:৪৩)

৩. ইঞ্জিল

ইঞ্জিল হলো ঈসা (আ.) এর প্রতি নাজিলকৃত কিতাব। এটি খ্রিস্টানদের জন্য আসমানী কিতাব হিসেবে পরিচিত।

  • আয়াত: “এবং আমি ঈসার সন্তান মারিয়মের প্রতি সুসংবাদ দিতে পাঠিয়েছি ইনজিল।” (সূরা আল-ইমরান, ৩:৪৭)

৪. কুরআন

কুরআন হলো মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি নাজিলকৃত আসমানী কিতাব এবং এটি ইসলামের সর্বশেষ কিতাব হিসেবে পরিচিত।

  • আয়াত: “এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত কুরআন, যা সঠিক পথ নির্দেশ করে এবং মুসলিমদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা।” (সূরা আল-বাকারা, ২:১৮۷)

কুরআনে আসমানী কিতাবের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য আয়াত

১. তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল এবং কুরআনের বৈশিষ্ট্য

  • “আল্লাহ তাওরাত, ইঞ্জিল এবং কুরআন পাঠিয়েছেন।” (সূরা আল-মায়িদা, ৫:৪৪)

২. পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর প্রতি ঈমান আনা

  • “মুহাম্মদ (সা.) বিশ্বাস করেন যে, তার ওপর কুরআন নাজিল হয়েছে এবং ঈমান আনেন পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর প্রতি।” (সূরা আল-বাকারা, ২:২৮৭)

১০৪ খানা আসমানী কিতাবের ধারণা কীভাবে জন্ম নেয়?

এই ধারণা কিছু ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গ্রন্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রচলিত হয়। কিছু ইসলামিক গ্রন্থে এই সংখ্যার উল্লেখ থাকলেও, এগুলোর উৎস খুব কমই নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

আরো পড়ুন :

বাস্তবতা ও সত্যতা

১০৪ খানা আসমানী কিতাবের ধারণা ইসলামের মূল উৎস থেকে সঠিকভাবে প্রমাণিত নয়। এটি প্রধানত ঐতিহ্যগত এবং লোকজ বিশ্বাসের অংশ, যা সঠিক ইসলামী শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ইসলামী স্কলারদের মতামত

বেশিরভাগ ইসলামী স্কলাররা ১০৪ খানা আসমানী কিতাবের ধারণাকে সমর্থন করেন না এবং এটিকে একটি ভুল ধারণা হিসেবে বিবেচনা করেন। তারা কেবলমাত্র কুরআনে বর্ণিত কিতাবগুলোকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন।

উপসংহার

১০৪ খানা আসমানী কিতাবের ধারণা সম্পর্কে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা থাকতে পারে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে, শুধুমাত্র কুরআনে বর্ণিত চারটি আসমানী কিতাবই নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। অতএব, মুসলমানদের উচিত সঠিক ইসলামী জ্ঞান অনুসন্ধান করা এবং ভুল ধারণা থেকে দূরে থাকা।

প্রশ্নোত্তর

১. ১০৪ খানা আসমানী কিতাবের ধারণা কোথা থেকে এসেছে?

এই ধারণাটি কিছু ঐতিহাসিক গ্রন্থ এবং কিছু বিশেষ সম্প্রদায়ের বিশ্বাস থেকে এসেছে, কিন্তু এর নির্ভরযোগ্য প্রমাণ কুরআন বা সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় না।

২. ইসলামে কয়টি আসমানী কিতাব নাজিল হয়েছে?

ইসলামে মোট চারটি আসমানী কিতাবের উল্লেখ রয়েছে: তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, এবং কুরআন।

৩. ১০৪ খানা আসমানী কিতাবের সংখ্যা কি বিশ্বাসযোগ্য?

কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে এই সংখ্যার কোনো ভিত্তি নেই। এটি একটি ঐতিহ্যগত ধারণা যা ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

৪. ইমাম ইবনে কাসির (রহ.) এবং ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এই সংখ্যা সমর্থন করেছেন কি?

না, তারা এই সংখ্যা সমর্থন করেননি। বরং তারা কুরআনে বর্ণিত আসমানী কিতাবগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এই ধরনের অতিরিক্ত সংখ্যার ধারণাকে সমর্থন করেননি।

৫. আমরা কেন ১০৪ খানা আসমানী কিতাব সম্পর্কে জানি না?

কারণ এই সংখ্যাটি কুরআন বা সহীহ হাদিসে উল্লেখিত নয়। এটি মূলত ঐতিহ্য এবং কল্পনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি ধারণা, যা ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।


পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Comment