ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম: অর্থ, শব্দ বিশ্লেষণ, উপকার ও বিস্তারিত

শেয়ার করুন

ইসলামে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর উচ্চারণের দ্বারা তাসবিহ পাঠ ও দোয়া করা মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ একটি বিশেষ ব্যাক্যাংশ, যা আল্লাহর মহিমা ও সম্মানকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কোন দোয়ার সাথে আল্লাহর গুণবাচক এই নামটি যুক্ত করলে সেই দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। অত্যন্ত ফজিলতময় ও গুরুত্বপূর্ণ এই ব্যাক্যাংশটির অর্থ, শব্দ বিশ্লেষণ, উপকার, ফজিলত এবং কোন সময় এটি পড়া উত্তম তা এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম : অর্থ এবং শব্দ বিশ্লেষণ

ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর আরবি রূপটি হচ্ছে নিন্মরুপ:

“يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ”

উচ্চারণ: ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।

অর্থ: হে মহিমা এবং সম্মানের অধিকারী।

শব্দ বিশ্লেষণ

يَا (ইয়া): “হে, ” (সম্বোধনসূচক হরফ বা বর্ণ)

ذَا (যা): “অধিকারী” বা “মালিক।”

الْجَلَالِ (আল-জালাল): “মহিমা” বা “মহানতা।”

وَ (ওয়া): “এবং।”

الْإِكْرَامِ (আল-ইকরাম): “সম্মান” বা “মর্যাদা”

ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ (যাল-জালালি ওয়াল ইকরাম) হলো আল্লাহ তাআলার আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে থেকে একটি গুণবাচক নাম। কুরআনের কয়েকটি ও বেশ কিছু হাদিস এই ব্যাক্যাংশটি রয়েছে।

ইয়া-যাল-জালালি-ওয়াল-ইকরাম-দোয়া
ইয়া-যাল-জালালি-ওয়াল-ইকরাম-দোয়া

কুরআন ও হাদিসে ব্যাক্যাংশটির ব্যবহার

কুরআন

১. আয়াত:

“وَيَبْقَى وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ”

অনুবাদ: “এবং আপনার প্রভুর মহিমা ও সম্মানের মুখচ্ছবি অমর।” (সূরা রহমান, ৫৫:২৭)

২. আয়াত:

“تَبَارَكَ اسْمُ رَبِّكَ ذِي الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ”

অনুবাদ: “তোমার প্রতিপালকের নাম, যিনি মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, বরকতময়।” (সূরা রহমান, ৫৫:৭৮)

হাদিস

১. হাদিসের আরবি:

“ألظوا بياذا الجلال والإكرام”

অনুবাদ: “তোমরা দোয়ার মধ্যে ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ বলকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫২৫)

২. হাদিসের আরবি:

“اللهمَّ أنتَ السلامُ ومنكَ السلامُ تباركتَ يا ذا الجلالِ والإكرامِ”

অনুবাদ: “হে আল্লাহ, আপনি শান্তি প্রদানকারী, আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়, হে মহিমময় মহানুভব।” (মুসলিম, হাদিস: ৫৯১-৫৯২)

৩. হাদিসের আরবি:

“اللهمَّ إنِّي أسألُك بأنَّ لك الحمدُ، لا إله إلا أنتَ المنَّانُ، بديعُ السَّماواتِ والأرضِ، يا ذا الجلالِ والإكرامِ، يا حيُّ يا قيومُ”

অনুবাদ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি, আপনারই প্রশংসা, আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আপনি মহান দাতা, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, হে মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, হে চিরঞ্জীব, হে প্রতিষ্ঠাতা।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪৪; আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৯৫; নাসাঈ, হাদিস: ১৩০)

ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম দোয়ার মধ্যে যুক্ত করার কিছু উদাহরণ

“ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” (يا ذا الجلال والإكرام) একটি শক্তিশালী ও গুণবাচক বাক্যাংশ, যা বিভিন্ন দোয়ার মধ্যে যুক্ত করে আল্লাহর মহিমা ও সম্মানকে স্মরণ করা যায়। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:

সাধারণ দোয়ায়

اللهمَّ إني أسألك يا ذا الجلال والإكرام، أن تغفر لي ذنوبي وترحمني

অনুবাদ: “হে আল্লাহ, মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আপনি আমার গুনাহগুলো মাফ করুন এবং আমাকে রহম করুন।”

বিপদে এবং সংকটে

يا ذا الجلال والإكرام، أنقذني من هذا الكرب وامنحني الصبر والقوة

অনুবাদ: “হে মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, আমাকে এই সংকট থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে ধৈর্য ও শক্তি প্রদান করুন।”

রিজিক ও বরকতের জন্য

اللهمَّ ارزقني من فضلك الواسع يا ذا الجلال والإكرام

অনুবাদ: “হে আল্লাহ, মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, আপনার অফুরন্ত অনুগ্রহ থেকে আমাকে রিজিক দান করুন।”

সন্তানের জন্য দোয়ার সময়

اللهمَّ بارك لي في أولادي واحفظهم يا ذا الجلال والإكرام

অনুবাদ:“হে আল্লাহ, মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, আমার সন্তানদের জন্য বরকত প্রদান করুন এবং তাদের হেফাজত করুন।”

রোগ মুক্তির জন্য দোয়ার সময়

يا ذا الجلال والإكرام، اشفني واشف مرضى المسلمين

অনুবাদ: “হে মহিমা ও সম্মানের অধিকারী, আমাকে আরোগ্য দিন এবং মুসলমানদের রোগমুক্ত করুন।”

অনুবাদ: হে আল্লাহ, আপনি শান্তি প্রদানকারী, আপনার পক্ষ থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়, হে মহিমময় মহানুভব।”

ইফতারের সময়

اللهمَّ لكَ صمتُ وعلى رزقكَ أفطرتُ فتقبل مني يا ذا الجلال والإكرام

অনুবাদ:“হে আল্লাহ, আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার প্রদত্ত রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করেছি, তাই আমার রোজা কবুল করুন, হে মহিমা ও সম্মানের অধিকারী।”

ইস্তিখারার সময়

اللهمَّ إنِّي استخيرك بعلمك واستقدرك بقدرتك وأسألك من فضلك العظيم، يا ذا الجلال والإكرام

অনুবাদ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার জ্ঞান অনুসারে ইস্তিখারা করছি এবং আপনার শক্তির দ্বারা আপনার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং আপনার মহান অনুগ্রহ থেকে প্রার্থনা করছি, হে মহিমা ও সম্মানের অধিকারী।”

ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম এর উপকার ও ফজিলত

আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা

দোয়ার সাথে এই ব্যাক্যাংশটি যোগ করার দ্বারা আল্লাহর মহিমা এবং সম্মানকে স্মরণ করলে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর মহিমা এবং মর্যাদার স্মরণ আমাদেরকে জীবনের কঠিন সময়ে সাহস এবং ধৈর্য ধারণে সাহায্য করে।

আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া

“ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম” পাঠের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারি। আল্লাহর গুণাবলীর স্মরণ আমাদের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং আমাদের প্রার্থনা অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তোলে।

দোয়া কবুল হওয়ার মাধ্যম

এই ব্যাক্যাংশটি যুক্ত করে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে, তিনি আমাদের দোয়া কবুল করার সম্ভাবনা অধিক বেড়ে যায়। নবীজি (সা.) একজন সাহাবিকে ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম যুক্ত করে দোয়া করতে দেখে বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহর দরবারে ইসমে আজমের মাধ্যমে দোয়া করেছ, যে নামে ডাকলে মহান আল্লাহ সাড়া দেন এবং কিছু চাইলে তা দান করেন।’ (তিরমিজি: ৩৫৪৪, আবু দাউদ: ১৪৯৫, নাসাঈ: ১৩০)

রিজিক ও বরাকাহ

আল্লাহর গুণাবলীর স্মরণ রিজিক ও বরকাহ লাভের মাধ্যম। আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি করুণাময় এবং মহিমাময়। যারা দোয়ার এই ব্যাক্যটি ব্যবহার করে, তাদের জীবনে আল্লাহর রহমত ও বরকাহ হয়।

কোন সময় পড়া উত্তম?

  • প্রতিদিনের দোয়া: এই দোয়াটি প্রতিদিনের সাধারণ দোয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
  • বিশেষ সময়: এটি ফজর এবং মাগরিব নামাজের পর পড়া বিশেষভাবে উপকারী। সেই সাথে রমজান মাসে ইফতার এবং সেহরির সময়ও এটি পাঠ করা যেতে পারে।
  • জরুরী মুহূর্তে: যখন আপনি কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে পড়েন, তখন এই দোয়া আল্লাহর সাহায্য এবং রহমতের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।

উপসংহার

ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম দোয়া মুসলমানদের জীবনে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি পাঠ করলে আল্লাহর মহিমা এবং সম্মানের স্মরণ হয় এবং মুসলমানদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়। প্রতিদিনের ইবাদতে এটি অন্তর্ভুক্ত করলে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত লাভ করা যায়। কুরআন ও হাদিসে এর ফজিলত উল্লেখিত আছে এবং এটি প্রতিদিন ফজর এবং মাগরিব নামাজের পর এবং বিশেষ সময়ে পড়া উত্তম।

এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের সম্মান এবং মহিমার স্মরণ করিয়ে দিতে পারি, যা আমাদের জীবনে শান্তি এবং সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

আপনি যদি আরও ইসলামিক দোয়া এবং তাদের ফজিলত সম্পর্কে জানতে চান, আমাদের ব্লগের অন্যান্য পোস্টগুলি পড়তে পারেন।

এ সম্পর্কিত আরো কিছু পোস্ট

দোয়া কুনুত: অর্থ, উপকার এবং ফজিলত
ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুব দোয়া: অর্থ, গুরুত্ব এবং আমল
আগিসনি ইয়া রাহমান অর্থ কি? হাদিস । উপকারীতা ও বিশ্লেষণ


শেয়ার করুন

Leave a Comment