ঘুম মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত। দিনের ক্লান্তি দূর করে নতুন সকালের জন্য শক্তি সংগ্রহের অন্যতম উপায় হলো ঘুম। তবে ইসলাম শুধু ঘুমকে বিশ্রামের মাধ্যম হিসেবে দেখেনি; বরং এটিকে ইবাদতের অংশ বানিয়ে দিয়েছে। যদি আমরা নবী ﷺ শেখানো দোয়া ও সুন্নতগুলো মেনে ঘুমাই, তাহলে এটি সাধারণ বিশ্রাম না থেকে ইবাদতে পরিণত হবে। রাসুল ﷺ আমাদের ঘুমানোর আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও দোয়া শিখিয়েছেন। যা পড়লে রাতভর আল্লাহর হেফাজতে থাকা যায়, শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং মৃত্যুর সময় ঈমান লাভ হয়। তাই আসুন, আমরা শিখে নিই ঘুমানোর দোয়া, এর অর্থ ও ফজিলত।
ঘুমানোর দোয়া । আরবি । বাংলা ও অর্থ
দোয়া ১:
اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।
অর্থ: হে আল্লাহ, তোমার নামে মৃত্যুলাভ (নিদ্রা) করছি এবং তোমার নামেই জীবিত (জাগ্রত) হব।

মূল হাদিস
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ قَالَ: «اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا» وَإِذَا اسْتَيْقَظَ قَالَ: «الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ»
বাংলা অনুবাদ: হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, তখন বলতেন: “হে আল্লাহ, তোমার নামে মৃত্যুলাভ (নিদ্রা) করছি এবং তোমার নামেই জীবিত (জাগ্রত) হব।” এবং যখন জাগ্রত হতেন, তখন বলতেন: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান করেছেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের ফিরে যেতে হবে।”
হাদিস নাম্বার:
- সহিহ বুখারি: (সংখ্যা: ৬৩১২)
- সহিহ মুসলিম: (সংখ্যা: ২৭১১)
দোয়া ২:
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইকা, ওয়া ফাওওয়াদ্তু আমরী ইলাইকা, ওয়া ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহী ইলাইকা, ওয়া আলজাআতু যাহরী ইলাইকা, রাগবাতাওঁ ওয়া রাহবাতাওঁ ইলাইকা, লা মালজা ওয়ালা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইকা, আমানতু বিকিতাবিকাল্লাযী আনযালতা, ওয়া বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার প্রাণ তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আমার সব কাজ তোমার উপর ছেড়ে দিলাম, আমার মুখ তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার পিঠ তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, তোমার প্রতি আশা ও ভয় নিয়ে। তোমার (শাস্তি) থেকে বাঁচার কোনো জায়গা নেই এবং তোমার (আযাব) থেকে রক্ষার কোনো স্থান নেই, কেবল তোমার কাছেই। আমি তোমার সেই কিতাবে (কুরআন) বিশ্বাস স্থাপন করলাম, যা তুমি অবতীর্ণ করেছ এবং তোমার সেই নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম, যাকে তুমি পাঠিয়েছ।
হাদিস
আল-বারা ইবনু ‘আজিব (রাযি.) বলেন,
قَالَ لِي النَّبِيُّ ﷺ: إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلَاةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الْأَيْمَنِ، وَقُلْ: اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ، لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجَا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ، فَإِنْ مُتَّ مِنْ لَيْلَتِكَ فَأَنْتَ عَلَى الْفِطْرَةِ، وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَتَكَلَّمُ بِهِ.
বাংলা অনুবাদ: নবী ﷺ আমাকে বললেন, “যখন তুমি তোমার শয্যায় যাবে, তখন নামাজের জন্য যেরকম ওজু করো, সেভাবে ওজু করো। তারপর তোমার ডান কাতে শোও এবং এই দোয়াটি বলো:
اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ… (উপরের দোয়া)
এরপর তিনি বললেন, “যদি তুমি এই রাতে মারা যাও, তবে তুমি ফিতরাত (বিশুদ্ধ ঈমান) অবস্থায় মারা যাবে। এবং এটিকে তোমার শেষ কথার মধ্যে রাখো (অর্থাৎ, এই দোয়া পড়ে তারপর ঘুমাও)।”
📖 (সহিহ বুখারি: ৬৩১১, সহিহ মুসলিম: ২৭১০)
ঘুমানোর দোয়া সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
১. ঘুমানোর দোয়া কখন পড়তে হবে?
📌 ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোবার পর এই দোয়া পড়তে হবে। বিশেষ করে ওজু করা অবস্থায় এবং ডান দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়া উত্তম।
২. ঘুমানোর সময় কি শুধু এক দোয়াই পড়তে হবে, নাকি একাধিক দোয়া পড়া যায়?
📌 একাধিক দোয়া পড়া যায়। নবী ﷺ বিভিন্ন দোয়া পড়তেন, তাই আমরা চাইলে কয়েকটি দোয়া একসাথে পড়তে পারি।
✅ উদাহরণ:
- اللَّهُمَّ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ… (সহিহ বুখারি: ২৪৭)
- اللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا (সহিহ বুখারি: ৬৩২৪)
- آيَةُ الْكُرْسِي (সহিহ বুখারি: ২৩১১)
- سُورَةُ الْمُلْك (সুনান তিরমিজি: ২৮৯২)
৩. ঘুমানোর দোয়া না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে কি সমস্যা হবে?
📌 এটি ফরজ নয়, তবে সুন্নত পালনে বঞ্চিত হওয়া যাবে। আর এই দোয়া না পড়লে আল্লাহর বিশেষ হেফাজত পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারি।
📖 হাদিস: নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি এ দোয়া পড়ে ঘুমাবে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকবে এবং যদি রাতে মারা যায়, তবে সে ফিতরার (খাঁটি ঈমানের) ওপর মারা যাবে।” (সহিহ বুখারি: ২৪৭, সহিহ মুসলিম: ২৭১০)
৪. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়ার ফজিলত কী?
📌 আয়াতুল কুরসি পড়লে সারারাত আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযুক্ত থাকেন এবং শয়তান কাছে আসে না।
📖 হাদিস: নবী ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়বে, সে সারারাত আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পাবে এবং কোনো শয়তান তার নিকট আসতে পারবে না।” (সহিহ বুখারি: ২৩১১)
৫. যদি কেউ অজান্তে বা ভুলে দোয়া ছাড়া ঘুমিয়ে পড়ে, তবে কি সে দোয়া পড়ে নিতে পারবে?
📌 হ্যাঁ, যদি ঘুমানোর পর হঠাৎ জেগে যায়, তবে তখন দোয়া পড়ে নিতে পারে। তবে সুন্নত হলো, ঘুমানোর আগেই দোয়া পড়ে নেওয়া।