তাওরাত কিতাব কোন ধর্মের? বিস্তারিত আলোচনা

শেয়ার করুন

তাওরাত (تَوْرَاة) একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা ইসলাম, ইহুদি ধর্ম এবং খ্রিস্টধর্মের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত চারটি প্রধান কিতাবের একটি, যা হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। ইহুদি ধর্মে তাওরাত হলো তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যেখানে তাদের ধর্মীয় শিক্ষা, আইন-কানুন, এবং ইতিহাস সংরক্ষিত রয়েছে। খ্রিস্টধর্মেও তাওরাতের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে, কারণ এটি বাইবেলের “পুরাতন নিয়ম” বা “Old Testament” এর অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ব্লগপোস্টে আমরা তাওরাত কিতাব কোন ধর্মের? এই কিতাবের উৎস, এর ধর্মীয় প্রভাব, এবং অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

তাওরাতের পরিচিতি

তাওরাত হলো একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ “বিধি” বা “আইন।” ইসলামে তাওরাতকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একটি কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়, যা হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। ইহুদি ধর্মে, তাওরাত হলো তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যেখানে তাদের ধর্মীয় আইন, নৈতিক শিক্ষা, এবং জাতির ইতিহাস বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।

তাওরাত কিতাবের ধর্মীয় ভিত্তি

ইসলামে তাওরাতকে আল্লাহর প্রেরিত কিতাবগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। মুসলিমদের বিশ্বাস, এটি হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল এবং এতে মানবজাতির জন্য নির্দেশনা ও হিদায়াত রয়েছে। ইহুদি ধর্মে তাওরাত হলো তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা তাদের ধর্মীয় জীবনযাপন, আচার-অনুষ্ঠান, এবং সামাজিক আইন-কানুনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

আরো পড়ুন:

তাওরাতের উৎস

ইসলামী দৃষ্টিকোণে তাওরাত হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রেরিত একটি কিতাব, যা হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। ইহুদি ধর্মে, তাওরাতকে মোজেসের (মূসা) দ্বারা প্রাপ্ত এবং রচিত কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি ইহুদি জাতির প্রাচীন ইতিহাস, ধর্মীয় আইন-কানুন, এবং নৈতিক শিক্ষার একটি সংকলন।

ইসলামে তাওরাতের অবস্থান

ইসলামে তাওরাতকে সম্মানিত একটি কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়, যা হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। তবে মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, তাওরাতের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে এবং আসল তাওরাতের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন:

“إِنَّآ أَنزَلۡنَا ٱلتَّوۡرَىٰةَ فِيهَا هُدٗى وَنُورٞۚ يَحۡكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسۡلَمُواْ لِلَّذِينَ هَادُواْ”

“নিশ্চয়ই আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি, যাতে রয়েছে হিদায়াত ও আলো। এই গ্রন্থের মাধ্যমেই নবীগণ, যারা মুসলিম ছিল, তারা ইহুদিদের জন্য ফয়সালা করত।” (সুরা মায়েদা: ৪৪)

ইহুদি ধর্মে তাওরাতের অবস্থান

ইহুদি ধর্মে তাওরাত হলো তাদের প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এটি ইহুদিদের ধর্মীয় আইন, নৈতিক শিক্ষা, এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মূল ভিত্তি। ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে, তাওরাত আল্লাহর বাণী এবং এটি মোজেসের মাধ্যমে তাদেরকে প্রদান করা হয়েছে। ইহুদি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক জীবনযাপনে তাওরাতের বিশাল প্রভাব রয়েছে।

তাওরাতের বিভাজন

ইহুদি ধর্মে তাওরাত পাঁচটি প্রধান বইয়ে বিভক্ত, যা “পেন্টাটিউক” নামে পরিচিত। এই বইগুলো হলো:

  1. বই অফ জেনেসিস (Genesis) – সৃষ্টির ইতিহাস এবং পিতৃপুরুষদের কাহিনী।
  2. বই অফ এক্সোডাস (Exodus) – ইস্রায়েলিদের মিশর থেকে বের হওয়ার কাহিনী।
  3. বই অফ লেভিটিকাস (Leviticus) – ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং পবিত্রতার আইন।
  4. বই অফ নাম্বারস (Numbers) – ইস্রায়েলিদের মরুভূমিতে যাত্রার বিবরণ।
  5. বই অফ ডিউটেরনোমি (Deuteronomy) – মূসার শেষ বক্তৃতা এবং আইনি নির্দেশনা।

তাওরাতের প্রভাব

তাওরাত কিতাব শুধু ইহুদি ধর্ম নয়, এটি খ্রিস্টধর্মেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তাওরাতের শিক্ষা খ্রিস্টানদের “পুরাতন নিয়ম” হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং তাদের নৈতিক, ধর্মীয়, এবং সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাওরাতের শিক্ষা ইহুদি ও খ্রিস্টান সমাজের আইনি এবং নৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

ইসলামের দৃষ্টিকোণে তাওরাতের বিকৃতি

মুসলিমরা বিশ্বাস করে, তাওরাতের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে এবং আসল তাওরাতের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে বা পরিবর্তিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এই ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন:

“وَمِنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ سَمَّـٰعُونَ لِلۡكَذِبِ سَمَّـٰعُونَ لِقَوۡمٍ ءَاخَرِينَ لَمۡ يَأۡتُوكَۖ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ مِنۢ بَعۡدِ مَوَاضِعِهِۦ”

“এবং কিছু ইহুদিরা মিথ্যা বলার জন্য কান দেয়, তারা শব্দগুলিকে তাদের মূল অবস্থান থেকে পরিবর্তিত করে।” (সুরা মায়েদা: ৪১)

তাওরাত এবং কুরআনের সম্পর্ক

ইসলামে তাওরাতকে একটি সম্মানিত কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে কুরআন হলো আল্লাহর চূড়ান্ত বাণী, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত হিসেবে প্রেরিত হয়েছে। কুরআন তাওরাতের সত্যতা নিশ্চিত করে, তবে একই সাথে এটি জানায় যে, কুরআনের আগমনের পর তাওরাতের নির্দেশনার প্রয়োজন নেই।

তাওরাতের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে তাওরাতকে ইহুদি সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইহুদিরা প্রতিদিনের প্রার্থনা, উপাসনা, এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে তাওরাতের শিক্ষার উপর নির্ভর করে। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণে তাওরাতের আসল শিক্ষা এবং বর্তমান রূপের মধ্যে একটি বিশাল পার্থক্য রয়েছে।

কয়েকটি প্রশ্ন উত্তর

তাওরাত কোন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ?

তাওরাত হলো ইহুদি ধর্মের প্রধান পবিত্র গ্রন্থ, তবে ইসলামে এটি হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ একটি কিতাব হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইসলামে তাওরাতের ভূমিকা কী?

ইসলামে তাওরাতকে আল্লাহর প্রেরিত কিতাবগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে এর বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে।

তাওরাতের মূল উৎস কী?

তাওরাতের মূল উৎস হলো হযরত মূসা (আ.)-এর উপর অবতীর্ণ আল্লাহর বাণী, যা ইহুদি ধর্মে মোজেসের মাধ্যমে সংকলিত হয়েছে।

কতটি প্রধান তাওরাত বই আছে?

ইহুদি ধর্মে তাওরাত পাঁচটি প্রধান বইয়ে বিভক্ত: জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বারস, এবং ডিউটেরনোমি।

ইসলাম তাওরাতের বিকৃতি সম্পর্কে কী বলে?

ইসলাম বিশ্বাস করে যে তাওরাতের বর্তমান রূপ বিকৃত হয়েছে এবং আসল তাওরাতের অনেক অংশ হারিয়ে গেছে।


শেয়ার করুন

Leave a Comment