ভূতের গল্প । অদ্ভুত ও রহস্যঘেরা ৬ টি গল্প । অজানা দীপপুঞ্জ

Share this post

ভূতের গল্প শুনলেই আমাদের মনে ভয়ের এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে। অন্ধকার, অদৃশ্য শক্তি, এবং অজানা রহস্যের মিশ্রণে তৈরি এসব গল্প আমাদের শৈশব থেকে বড় হওয়ার পথে নানা রকম অভিজ্ঞতা এনে দেয়। কিন্তু ভূতের গল্প শুধু ভয়েরই উপকরণ নয়, এদের ভেতরে লুকিয়ে থাকে গভীর শিক্ষা ও মর্ম। ভয়ের আড়ালে যে সত্য, তা জানার কৌতূহল, সাহসিকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার গল্প এবং মানুষের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ভয়কে জয় করার নানা কৌশল ফুটে ওঠে ভূতের গল্পে। ভূতের গল্প আমাদের শিখিয়ে যায়, ভয়ের মুখোমুখি হয়ে তা জয় করার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে জীবনের প্রকৃত সাফল্য। এই পোস্টে আমরা এমন কিছু মজার ও মর্মস্পর্শী ভূতের গল্প শেয়ার করব, যা ভয়ের পাশাপাশি আমাদের জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাও দেবে।

ভূতের গল্প ১ । মিশু ও একটি রহস্য

গল্পের শুরু

একদিন শহর থেকে মিশু নামে এক ছোট্ট মেয়ে তার দাদুর কাছে আসে গ্রামে। মিশু ছিল সাহসী এবং কৌতূহলী। সে অন্যদের মতো এসব ভূতের গল্প বিশ্বাস করত না। বরং সে জানতে চাইত, কে এই ভূত এবং কেন সে অন্যদের ভয় দেখায়।

মিশু একদিন তার দাদুর কাছে গিয়ে জানতে চায়, “দাদু, তুমি কি কখনও সেই ভূতটাকে দেখেছো?”

দাদু হেসে বললেন, “না, আমি কখনও দেখিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই এই গল্প শুনে আসছি। তবে জানিস মিশু, আমাদের এই ভয়গুলো শুধু মনে তৈরি হয়।”

মিশু দাদুর কথায় সাহস পেল। সে সিদ্ধান্ত নিল, নিজেই গিয়ে ভূতকে দেখবে।

গোপন রহস্যের খোঁজে

রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, মিশু চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে বটগাছের দিকে যায়। গাছের কাছে গিয়ে সে দেখল, চারপাশে নীরবতা। পাখির ডাকও শোনা যাচ্ছে না। বাতাসও যেন থেমে গেছে। মিশু একটু ভয় পেলেও, তার মনোবল হারায় না। সে বটগাছের নিচে বসে রইলো, অপেক্ষা করলো ভূতের আগমনের।

কিছুক্ষণ পর মিশু শুনতে পেল, কেউ যেন আসছে। সে সাহস করে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎই একটা ছায়া তার সামনে এসে দাঁড়ালো। ছায়াটি দেখতে খুবই ভয়ংকর, তবে তার চোখে অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা ছিল।

অচেনা বন্ধু

মিশু ভয় না পেয়ে প্রশ্ন করল, “তুমি কে? কেন সবাইকে ভয় দেখাও?”

ছায়াটি বললো, “আমি এই গাছের প্রহরী। আমার কাজ ছিল এই গাছটাকে রক্ষা করা। অনেক বছর ধরে আমি এখানে আছি, কিন্তু কেউ আমার কথা শোনে না, আমাকে দেখে সবাই পালিয়ে যায়। আমি আসলে কারো ক্ষতি করতে চাই না, আমি শুধু একটু বন্ধুত্ব চাই।”

মিশু তখন হেসে বললো, “তুমি তো আসলে একাকী। তুমি কি আমার বন্ধু হতে চাও?”

ভূত অবাক হলো, তারপর মৃদু হাসলো। “তুমি কি সত্যিই আমার বন্ধু হবে? তুমি কি আমাকে ভয় পাবে না?”

মিশু উত্তর দিলো, “না, আমি তোমাকে ভয় পাব না। তুমি তো কাউকে আঘাত করো না। বরং আমরা যদি বন্ধু হই, তাহলে সবাই বুঝবে তুমি কতটা ভালো।”

বন্ধুত্বের শক্তি

এরপর থেকে মিশু প্রায়ই রাতে বটগাছের কাছে যেত এবং ভূতের সাথে গল্প করতো। ভূত তার জীবনের বিভিন্ন গল্প শোনাতো, আর মিশু শুনে মুগ্ধ হতো। ধীরে ধীরে গ্রামে গুজব ছড়াতে শুরু করলো যে, বটগাছের ভূত নাকি আসলে অনেক ভালো। কেউই তাকে আর ভয় পেত না।

একদিন মিশু তার সব বন্ধুদের নিয়ে বটগাছের নীচে গেল এবং সবাইকে ভূতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সবাই অবাক হলো, কারণ তারা দেখল ভূত আসলে কতটা নম্র এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।

নতুন সকাল

সকালের আলো ফুটতেই সবাই বুঝলো, যে ভূতের ভয় তারা এতদিন পেয়েছে, সেটা আসলে তাদের ভুল ছিল। তারা বুঝলো যে, ভয় আসলে অজানা থেকেই জন্মায়। মিশুর সাহসিকতার কারণে গ্রামের সবাই ভূতের বন্ধু হয়ে গেল, আর ভূতও তার একাকীত্ব কাটিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করল।

শিক্ষা

এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, অনেক সময় আমরা ভয় পাই কারণ আমরা অজানাকে জানি না। সাহসিকতার সাথে সেই অজানা বিষয়ের মুখোমুখি হলে, আমরা দেখতে পাই যে সেখানে ভয়ের কিছুই নেই। তাছাড়া, আমাদের চারপাশের মানুষদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে, যে কোনো সমস্যা বা ভয়ের সমাধান হয়ে যায়। বন্ধুত্ব ও সাহসিকতা এমনই এক শক্তি, যা আমাদের জীবনের সব বাধা পেরিয়ে যেতে সাহায্য করে।

ভূতের গল্প ২ । অন্ধকারে আলো

একটা ছোট্ট গ্রাম ছিল যেখানে রাতে কেউই ঘর থেকে বের হতো না। কারণ, গ্রামের পাশের জঙ্গলে নাকি এক ভূত ঘুরে বেড়ায়। সবাই বলে ভূতটি রাত হলে জঙ্গলের গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, আর যারা তাকে দেখে তারা আর বাঁচে না।

গ্রামের একটি ছেলে, নাম তার রিফাত। সে ছিল খুবই কৌতূহলী এবং সাহসী। একদিন সে সিদ্ধান্ত নেয় ভূতের রহস্য জানার। তাই সে রাতের বেলা একটি লণ্ঠন নিয়ে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। কিছু দূর হেঁটে যাওয়ার পর হঠাৎ সে দেখতে পায় একটি আলো তার দিকে আসছে। রিফাত ভীত না হয়ে লণ্ঠনটি উঁচু করে সামনে এগিয়ে যায়।

যখন আলো তার কাছাকাছি এলো, তখন সে দেখতে পেলো এক বৃদ্ধ লোক একটি লণ্ঠন নিয়ে হাঁটছে। লোকটি রিফাতকে দেখে হাসলো এবং বললো, “আমি এই জঙ্গলের দেখাশোনা করি, কিন্তু মানুষ আমাকে ভূত ভেবে ভয় পায়। আমি আসলে কারও ক্ষতি করি না।”

রিফাত লোকটির সাথে কথা বলে সব কিছু জানলো এবং পরের দিন গ্রামে গিয়ে সবাইকে জানালো। এরপর থেকে গ্রামের মানুষ সেই বৃদ্ধ লোকের সাথে বন্ধুত্ব করলো এবং তাকে আর ভূত ভেবে ভয় পেলো না।

শিক্ষা: সত্যিটা জানা না থাকলে ভয়ের কারণ সৃষ্টি হয়, কিন্তু সাহসিকতার সাথে সত্যের মুখোমুখি হলে, ভয়ের কোন কারণ থাকে না।

ভূতের গল্প ৩ । ছোট্ট ভূতের গল্প

একটি পুরনো বাড়িতে এক ছোট্ট ভূত থাকতো। সে খুবই দুঃখী ছিল কারণ সে কারও সাথে খেলতে পারতো না। মানুষ তাকে ভয় পেয়ে পালিয়ে যেত। সে শুধু খেলতে চেয়েছিল, কিন্তু কেউ তাকে বুঝতো না।

একদিন একটি ছোট্ট মেয়ে সেই বাড়িতে এল। মেয়েটি ছিল সাহসী এবং কৌতূহলী। সে বাড়িতে ঢুকে ভূতটিকে দেখতে পেল। প্রথমে মেয়েটি একটু ভয় পেল, কিন্তু ভূতটি কাঁদতে শুরু করল। মেয়েটি জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কেন কাঁদছো?”

ভূতটি বলল, “আমি শুধু তোমার সাথে খেলতে চাই। কিন্তু সবাই আমাকে দেখে পালিয়ে যায়।”

মেয়েটি ভূতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, “তুমি যদি আমার বন্ধু হও, তাহলে আমরা একসাথে খেলতে পারি।”

এরপর থেকে তারা দুজন বন্ধু হলো। ভূতটি আর দুঃখী হলো না এবং সে আর কাউকে ভয় দেখালো না।

শিক্ষা: যে কোনো সমস্যা বা বিচ্ছিন্নতা বন্ধুত্বের মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

গল্প ৪ । ভূতের অভিশাপ

একটি গ্রামে রটনা ছিল যে, গ্রামের বাইরে একটি পুরনো মন্দির আছে যা ভূতগ্রস্ত। কেউ মন্দিরে গেলে নাকি ভূতের অভিশাপে আক্রান্ত হয়। অনেকেই সেখানে যেতে সাহস করত না।

একদিন এক সাহসী যুবক, নাম তার সোহেল, সেই মন্দিরের রহস্য জানার সিদ্ধান্ত নিল। সে মন্দিরে গেল এবং দেখতে পেলো, মন্দিরের দেয়ালে অদ্ভুত কিছু লেখা রয়েছে। সে ভালোভাবে দেখে বুঝলো, এগুলো আসলে পুরনো দিনের প্রার্থনার কিছু স্তবক। সোহেল জানতে পারল যে, এখানে কোনো ভূত নেই, বরং মানুষের ভুল বুঝতে গিয়ে এই মিথ্যা কাহিনী ছড়িয়েছে।

সোহেল গ্রামে ফিরে এসে সবাইকে সত্য জানাল এবং বলল, “আমরা যা বুঝি না, তার পেছনে ভয় লুকিয়ে থাকে। কিন্তু যখন আমরা সত্যের মুখোমুখি হই, সেই ভয় অদৃশ্য হয়ে যায়।”

শিক্ষা: অজ্ঞতা এবং ভুল ধারণা থেকে ভয় জন্মায়। সত্য জানলে সেই ভয় দূর হয়।

ভূতের গল্প ৫ : ভূতের শিক্ষা

একটি স্কুলে কিছু ছাত্রছাত্রী প্রায়ই গুজব ছড়াতো যে, তাদের স্কুলে একটি ভূত আছে। তারা স্কুলের নতুন ছাত্রছাত্রীদের ভয় দেখাতো। একদিন তাদের শিক্ষক সবকিছু শুনলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন সত্যটি জানার।

শিক্ষক সেই ভূতের কাহিনী অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, আসলে ভূতের কিছুই নেই, বরং কিছু দুষ্টু ছেলে নিজেদের বিনোদনের জন্য এই গুজব ছড়িয়েছে। শিক্ষক সেই ছাত্রদের ডেকে বললেন, “গুজব এবং মিথ্যার মাধ্যমে কাউকে ভয় দেখানো মোটেও ভালো নয়। এটা অন্যদের কষ্ট দেয় এবং বন্ধুত্বের সম্পর্ক নষ্ট করে।”

এরপর থেকে ছাত্ররা এই গুজব ছড়ানো বন্ধ করল এবং সবাই মিলে একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে পড়াশোনা করতে লাগল।

শিক্ষা: মিথ্যা এবং গুজব সবসময়ই অন্যদের ক্ষতি করে এবং সম্পর্ক নষ্ট করে।

গল্প ৬ । অন্ধকারের বন্ধু

একটি গ্রামে এক ছোট্ট ছেলে ছিল, নাম তার রাজু। সে ছিল খুবই সাহসী, কিন্তু রাতে অন্ধকারে যেতে ভয় পেত। কারণ গ্রামের সবাই বলত যে, রাতে অন্ধকারে একটা ভূত ঘুরে বেড়ায়।

একদিন রাজু সাহস করে রাতে অন্ধকারে বের হলো। সে দেখলো, চারপাশে কেউ নেই, শুধু অন্ধকার। হঠাৎ সে একটি ছোট্ট আলো দেখতে পেল। রাজু তার পিছনে হাঁটতে লাগলো। আলোটা কাছে আসতেই সে দেখতে পেলো, একটি ছোট্ট মেয়ে একটি লণ্ঠন নিয়ে তার দিকে আসছে।

মেয়েটি রাজুকে বললো, “তুমি কেন ভয় পাচ্ছো? আমি তো তোমার মতোই একজন। শুধু একটু সাহস করলেই তুমি দেখবে, এই অন্ধকারে আর কিছুই নেই।”

রাজু মেয়েটির কথা শুনে সাহস পেলো এবং তার সাথে বন্ধুত্ব করলো। এরপর থেকে রাজু আর অন্ধকারকে ভয় পেত না।

শিক্ষা: ভয়ের পিছনে সবসময় অজানা কিছু লুকিয়ে থাকে। যখন আমরা সেই অজানাকে জানি, তখন ভয় কেটে যায়।

আরো পড়ুন।


Share this post
2 1 vote
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x