১০ টি অসমাপ্ত প্রেমের গল্প । আবেগ । অনুতাপ ও না পাওয়ার হাহাকার

Share this post

মানুষের জীবনে প্রেম এক অনন্য অনুভূতি। কখনো তা পূর্ণতা পায়, আবার কখনো থেকে যায় অপূর্ণতার বেদনাময় স্মৃতি হয়ে। যে প্রেম শেষ পর্যন্ত মিলনের পথে হাঁটে, তা যেমন আনন্দের; তেমনি যে প্রেম মাঝপথে থেমে যায়, তা রেখে যায় গভীর হাহাকার। অসমাপ্ত প্রেমের গল্প তাই আমাদের সাহিত্য, সিনেমা কিংবা বাস্তব জীবনে সবচেয়ে হৃদয়ছোঁয়া বিষয়গুলোর একটি।

এমন গল্পগুলোতে থাকে না বলা কথার চাপা কষ্ট, চোখের জলে ভিজে যাওয়া স্মৃতি, আর হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস। ঠিক এ কারণেই অসমাপ্ত প্রেমের কাহিনি মানুষকে ভাবায়, কাঁদায় এবং গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়।

এই ব্লগপোস্টে আমরা দেখব কিছু আবেগঘন অসমাপ্ত প্রেমের গল্প, যা হয়তো আপনাকে নিজের জীবনের কোনো না বলা অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেবে।

অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ১ । বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা

শীতের সকালের কুয়াশা যখন পুরো ক্যাম্পাস ঢেকে রাখে, তখনো ঢাকার পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার লাইব্রেরির সিঁড়িতে বসে রাহাত বই পড়ছিল। বইয়ের পৃষ্ঠায় চোখ ছিল, কিন্তু মন কোথাও হারিয়ে যেত বারবার। তার চারপাশে ছিল কোলাহল, ছাত্রছাত্রীদের হাসি-আড্ডা, হেঁটে যাওয়া মানুষের ভিড়। তবুও এক অদ্ভুত নিঃসঙ্গতা তাকে জড়িয়ে রেখেছিল।

ঠিক তখনই হঠাৎ বাতাসের ঝাপটায় একটি নীল খাতা তার পায়ের কাছে এসে পড়ল। রাহাত চমকে খাতা হাতে তুলল। উপরে তাকাতেই দেখল—একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কুয়াশার আড়ালে তার মুখে এক অদ্ভুত কোমলতা। কালো চুল, সাদা শাড়ি আর চোখে একরাশ বিস্ময়।

“আপনার খাতা,” রাহাত বলল ভেবে, কিন্তু মেয়ে হেসে বলল,
“না, এটা আমার খাতা।”

রাহাত একটু লজ্জা পেল। খাতা হাতে দিয়ে যখন তার চোখে তাকাল, তখনই বুঝল—এই মেয়েটির মধ্যে কিছু ভিন্নতা আছে।

মেয়েটির নাম সাবিহা

প্রথম দেখা থেকে শুরু

তারপর থেকে প্রতিদিনই রাহাত লাইব্রেরিতে সাবিহাকে দেখত। প্রথমে দূর থেকে, পরে ধীরে ধীরে কাছাকাছি। তারা দু’জন একই টেবিলে বসে বই পড়ত। সাবিহা ছিল সাহিত্যপ্রেমী—নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ—এসবই তার পছন্দ। আর রাহাত পড়ত ইতিহাস, দর্শন আর ধর্ম বিষয়ক বই। তাদের বইয়ের ধরণ ভিন্ন হলেও কথার ভেতর মিল খুঁজে পেত।

ধীরে ধীরে তাদের কথোপকথন বেড়ে গেল। প্রথমে বইয়ের আলোচনা, তারপর সিনেমা, গান, জীবনের গল্প।

একদিন সাবিহা বলল,
“তুমি কি বিশ্বাস করো, কিছু মানুষ পৃথিবীতে শুধু একে অপরের সাথে দেখা করার জন্যই আসে?”

রাহাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“হয়তো। কিন্তু সবার গল্প পূর্ণ হয় না।”

কথাগুলো বলেই কেন জানি বুকের ভেতর অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করল।

নীরব প্রেম

রাহাত কখনোই সরাসরি সাবিহাকে কিছু বলেনি। শুধু তার হাসি, তার চোখের দৃষ্টি, তার কণ্ঠস্বর—এসবই রাহাতের ভেতরে এক অদ্ভুত আবেগ সৃষ্টি করত।

রাত জেগে পড়ার সময়েও সাবিহার কথাই মনে হতো। বইয়ের পাতার অক্ষরগুলো মিশে যেত সাবিহার মুখের ছবির সাথে। অথচ একবারও সাহস করে বলেনি, “আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

সাবিহাও বুঝত রাহাতের মনের অবস্থা। কিন্তু সমাজ, পরিবার, দায়িত্ব—এসব বাঁধা তাকে সবসময় চুপ থাকতে বাধ্য করত।

তাদের এই নীরব প্রেম একসময় পুরো লাইব্রেরির লোকের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দু’জনেই যেন এক অদৃশ্য দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকত।

হঠাৎ বিয়ের প্রস্তাব

এক বিকেলে সাবিহা হঠাৎ করে বিষণ্ণ হয়ে লাইব্রেরিতে এল। রাহাত জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে? তুমি এত চুপ কেন?”

সাবিহা চোখ নামিয়ে বলল,
“বাসায় আমার বিয়ের কথা উঠেছে। পরিবার চাচ্ছে আমি এক আত্মীয়ের ছেলেকে বিয়ে করি। আগামী মাসেই হয়তো…”

কথাটা শেষ করতে পারল না। চোখ ভিজে উঠল।

রাহাতের বুকের ভেতর কেঁপে উঠল। কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। সে শুধু দেখল সাবিহার চোখের জল। মনে মনে ভাবল—এখনই হয়তো সময়, এখনই বলতে হবে।

কিন্তু রাহাত সেই রাতেও কিছু বলতে পারল না। শুধু এক চিঠি লিখল—
“সাবিহা, তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়। তুমি যদি আমার হও, তবে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হবো। আর যদি না হও, তবে তুমি হবে আমার অসমাপ্ত গল্প।”

চিঠিটি বারবার পকেটে রাখল, আবার বের করল, আবার লুকাল।

শেষ সাক্ষাৎ

সেই দিনও ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল। রাহাত লাইব্রেরির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিল হাতে চিঠি নিয়ে। সাবিহা এলো, কিন্তু আজ তার চোখে ছিল অদ্ভুত শান্তি।

সে আস্তে বলল,
“রাহাত, আজ হয়তো শেষবারের মতো এখানে দেখা হলো। কাল আমার বিয়ে।”

শব্দগুলো রাহাতের বুক ভেদ করে গেল। চিঠি দেওয়ার সাহস পেল না। শুধু তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর সাবিহা চলে গেল।

চিঠিটা তখনো রাহাতের হাতের মুঠোয় রয়ে গেল—অপঠিত, অজানা, অসমাপ্ত।

বছরের পর বছর পরে

বছর কেটে গেছে। রাহাত এখন একজন সফল মানুষ—ভালো চাকরি, সম্মান, চারপাশে ভিড়। কিন্তু অন্তরে এক অদ্ভুত শূন্যতা। সে কখনো বিয়ে করেনি। কারণ তার কাছে ভালোবাসা মানেই সাবিহা।

অনেক সময় রাতে একা বসে থাকে, সেই চিঠিটা এখনো বুকের ভাঁজে লুকানো। অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে গেছে, কিন্তু অনুভূতিটা এখনো অমলিন।

একদিন এক পুরোনো বন্ধুর কাছ থেকে শুনল—সাবিহা এখনো বেঁচে আছে, দূরে কোথাও সংসার করছে, দুই সন্তানের মা। সুখী কি না—কেউ জানে না।

রাহাত শুধু চুপ করে শুনল। কিছু কথা জানা ভালো, কিছু কথা না জানাই ভালো।

অসমাপ্ত ভালোবাসা

প্রতিবার রাহাত যখন লাইব্রেরির সিঁড়ি দিয়ে যায়, মনে হয় এখনই হয়তো সাবিহা আসবে, নীল খাতাটা হাতে নিয়ে হাসবে। কিন্তু সে জানে, সেটা আর কোনোদিন হবে না।

চিঠিটা আজও অপ্রেরিত। হয়তো কোনোদিন সাবিহার হাতে যাবে না। কিন্তু তাতে কি আসে যায়? ভালোবাসা সবসময় পাওয়ার নাম নয়। ভালোবাসা অনেক সময় মনে লুকিয়ে রাখা অসমাপ্ত গল্প।

রাহাত এখনো প্রতিদিন মনে মনে সেই চিঠির প্রথম লাইনটি পড়ে—

“তুমি আমার অসমাপ্ত গল্প, সাবিহা।”

অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছবি ১
অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছবি ১

অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ২ –। চিঠির আড়ালে

১. প্রথম পরিচয়

গ্রামের এক মফস্বল শহরে বড় হয়েছিল ইফতি। শান্ত, লাজুক, সবসময় বইয়ের ভেতর ডুবে থাকা এক ছেলেকে সবাই চিনত। কিন্তু তার জীবন বদলে গেল যখন কলেজে ভর্তি হলো। নতুন ক্লাসে প্রবেশ করতেই তার চোখ আটকে গেল এক মেয়ের দিকে—মেহজাবিন

লম্বা চুল, কপালে টিপ, চোখে অদ্ভুত এক নিষ্পাপ দৃষ্টি। ক্লাসে যতই শব্দ হতো, ইফতির চোখ যেন শুধু তার দিকেই যেত। প্রথমে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাত, তারপর ধীরে ধীরে পরিচয় হলো।

তাদের পরিচয়ের সূত্রপাত হয়েছিল খুব সাধারণ এক কারণে। একদিন গণিত ক্লাসে শিক্ষক একটি জটিল প্রশ্ন দিলেন। মেহজাবিন উত্তর লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেলল। ইফতি তার খাতার কোণে ছোট্ট করে ঠিক সমাধানটা লিখে দিল। মেহজাবিন তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল—
“তুমি তো বেশ ভালোই জানো। আমাকে শেখাবে?”

সেই হাসিই হয়ে গেল ইফতির জীবনের প্রথম আলো।

২. বন্ধুত্বের আবরণে ভালোবাসা

দিন কেটে যেতে লাগল। লাইব্রেরি, ক্যান্টিন, রাস্তায় হাঁটা—সব জায়গাতেই একসাথে সময় কাটাত তারা। বন্ধু হিসেবেই সবাই জানত, কিন্তু ইফতির অন্তরে জন্ম নিচ্ছিল এক গভীর অনুভূতি।

সে মেহজাবিনকে বলতে চাইত, “আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
কিন্তু সাহস হতো না। কারণ ইফতি জানত—মেহজাবিনের পরিবার রক্ষণশীল। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবে তাদের পছন্দের ছেলের সাথে।

তাই ইফতি চুপ করেই থাকল। শুধু প্রতিদিন একটি ডায়েরির পাতায় লিখতে লাগল মেহজাবিনের নাম, তাদের গল্প, না বলা কথাগুলো।

৩. না বলা স্বপ্ন

একদিন বৃষ্টিভেজা বিকেলে তারা কলেজের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল। চারদিকে ঝরঝর করে বৃষ্টি পড়ছে, মেহজাবিন হঠাৎ বলল—
“ইফতি, তুমি কি কখনো ভেবেছো ভবিষ্যতে আমরা কোথায় থাকব? আমি চাই একদিন ঢাকায় গিয়ে পড়াশোনা করব, স্বপ্ন আছে বড় কিছু করার।”

ইফতি চুপ করে শুনছিল। তার মনে হচ্ছিল, এ মুহূর্তেই বলে দেয়, “তুমি যেখানে থাকবে, আমি সেখানে থাকতে চাই।” কিন্তু সে মুখ খুলল না। শুধু বলল—
“ইনশাআল্লাহ, তোমার স্বপ্ন পূরণ হবে।”

কথার ভেতরে লুকানো ভালোবাসা হয়তো মেহজাবিন বুঝেছিল, কিন্তু মুখে কিছু বলেনি।

৪. ভাঙনের শুরু

কলেজ শেষ হওয়ার পর তাদের পথ আলাদা হয়ে গেল। মেহজাবিন ঢাকায় চলে গেল উচ্চশিক্ষার জন্য। আর ইফতি থেকে গেল নিজের শহরে, বাবার ব্যবসা সামলাতে।

তারা মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলত, চ্যাট করত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দূরত্ব বেড়ে গেল।

একদিন হঠাৎ করেই মেহজাবিন বলল—
“ইফতি, বাসা থেকে আমার বিয়ের কথা বলছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। তুমি তো জানো, আমার পরিবার কেমন।”

শুনে ইফতির বুক হাহাকার করে উঠল। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারল না। শুধু বলল—
“তুমি যদি সুখী হও, সেটাই আমার প্রার্থনা।”

কথাগুলো বলতে গিয়ে বুক ভেঙে গিয়েছিল, কিন্তু চোখের পানি লুকিয়ে রাখল।

৫. শেষ চিঠি

বিয়ের আগের দিন রাতে ইফতি ডায়েরির শেষ পাতায় লিখল—

“মেহজাবিন,
তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়। হয়তো তোমার হাত ধরে হাঁটা আমার ভাগ্যে নেই, কিন্তু তোমার স্মৃতি আমার হৃদয়ে চিরদিন থাকবে। তুমি সুখী হও, আমি আল্লাহর কাছে শুধু এটাই চাই।
—তোমার ইফতি।”

চিঠিটা সে পোস্ট করতে চাইল, কিন্তু সাহস পেল না।
চিঠি থেকে গেল ডায়েরির ভাঁজে—অপঠিত, অজানা, অসমাপ্ত।

৬. বহু বছর পর

বছর পেরিয়ে গেছে। ইফতি এখন সফল ব্যবসায়ী, চারপাশে মানুষ, টাকা-পয়সা—সব আছে। তবুও অন্তরে এক অদ্ভুত শূন্যতা।

একদিন পুরোনো ডায়েরি খুলে দেখল সেই চিঠি। অক্ষরগুলো মলিন হয়ে গেছে, কিন্তু অনুভূতিগুলো যেন তাজা।

সে খবর পেল—মেহজাবিন এখন বিদেশে থাকে, দুই সন্তানের মা। সুখী কি না কেউ জানে না।

ইফতি শুধু চুপ করে থাকল। ভালোবাসা তো সবসময় পাওয়ার নাম নয়, অনেক সময় সেটা হয় নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া অসমাপ্ত কাহিনি।

৭. অসমাপ্ত প্রেমের পরিণতি

আজো ইফতি যখন একা বসে থাকে, মনে হয় মেহজাবিন হয়তো হঠাৎ করে সামনে এসে দাঁড়াবে, বলবে—
“তুমি আমাকে ভালোবাসতে?”

কিন্তু সেই প্রশ্ন আর কোনোদিন আসবে না।
চিঠিটা এখনো বুকের ভাঁজে রাখা আছে।

প্রতিদিন সে মনে মনে পড়ে—

“তুমি আমার না হয়েও আমার। তুমি আমার অসমাপ্ত প্রেমের গল্প।”

অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছবি ২
অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছবি ২

অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ৩ । রঙহীন ক্যানভাস

১. প্রথম দেখা : রঙের ছোঁয়া

ঢাকার ব্যস্ত গুলশান এলাকার এক আর্ট এক্সিবিশনে প্রথম দেখা হলো আরমান আর নাজিফার।
আরমান ছিলেন এক উঠতি চিত্রশিল্পী। তার ছবি শহরের দেয়ালজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। নাজিফা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী, সাহিত্য ভালোবাসেন, আর্ট গ্যালারিতে ঘুরে বেড়াতেন।

একটি চিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে নাজিফা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। ছবিটিতে আঁকা ছিল—এক অচেনা মেয়ের মুখ, অর্ধেক আলোয় ঢাকা, অর্ধেক অন্ধকারে।

নাজিফা বললেন,
“এই ছবিতে কেন মেয়েটির মুখ অসম্পূর্ণ?”

আরমান কিছুটা থমকে বললেন,
“কারণ সব গল্প সম্পূর্ণ হয় না। কিছু মুখ, কিছু ভালোবাসা—শুধুই অসমাপ্ত।”

সেই প্রথম আলাপ, আর সেখান থেকেই তাদের গল্প শুরু।

২. রঙের ভেতর বন্ধুত্ব

দিন কেটে যেতে লাগল। আরমান আর নাজিফা একসাথে সময় কাটাতে শুরু করলেন। কখনো কফিশপে বসে সাহিত্য আলোচনা, কখনো আর্ট স্টুডিওতে বসে রঙের সাথে খেলা।

আরমান ক্যানভাসে রঙ ঢালতেন, নাজিফা কবিতা পড়তেন।
একদিন নাজিফা হাসতে হাসতে বললেন,
“তুমি তো শুধু রঙ দিয়ে সবকিছু বোঝাও। শব্দের প্রয়োজন হয় না?”

আরমান চোখ নামিয়ে বললেন,
“কিছু অনুভূতি শুধু রঙেই আঁকা যায়, শব্দে নয়।”

নাজিফা হয়তো বুঝেছিলেন, এই কথার ভেতরে লুকিয়ে আছে এক না বলা ভালোবাসা।

৩. স্বপ্নের সীমানা

নাজিফার স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। তিনি চেয়েছিলেন লন্ডনে সাহিত্য পড়তে। আরমান চেয়েছিলেন ঢাকাতেই থেকে নিজের আর্টকে ছড়িয়ে দিতে।

তাদের স্বপ্ন আলাদা হলেও একে অপরের প্রতি টান কমেনি।
কিন্তু ভালোবাসা কখনো শুধু টানে টিকে থাকে না—প্রয়োজন হয় মিলনেরও।

এক রাতে আরমান ডায়েরিতে লিখলেন—
“নাজিফা, তুমি যদি আমার ক্যানভাস হতে, আমি তোমার ভেতর রঙ দিয়ে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারতাম।”

কিন্তু এই কথাগুলো কখনো মুখে বলতে পারলেন না।

৪. দূরত্বের শুরু

সময় এলো নাজিফার বিদেশ যাওয়ার। এয়ারপোর্টে বিদায়ের মুহূর্তে আরমান বুকের ভেতর হাহাকার নিয়েও চুপ করে রইলেন। শুধু বললেন,
“নিজের স্বপ্ন পূরণ করো।”

নাজিফা চোখ ভেজা কণ্ঠে বললেন,
“তুমি আঁকতে থেকো, তোমার ছবিতে হয়তো একদিন আমি আবার ফিরে আসব।”

এরপর দূরত্ব শুরু হলো। প্রথমদিকে চ্যাট, ফোন, মেইল—সব চলত। কিন্তু ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমতে লাগল।

একদিন হঠাৎ খবর এলো—নাজিফা সেখানে বিয়ে করেছেন, নতুন জীবন শুরু করেছেন।

৫. রঙহীন ক্যানভাস

আরমান খবরটা শুনে ভেঙে পড়লেন না, কিন্তু ভেতরে এক অদ্ভুত শূন্যতা জন্ম নিল। তিনি ছবি আঁকতে শুরু করলেন আরও বেশি, কিন্তু ক্যানভাসে সব রঙই হয়ে উঠল ধূসর।

বন্ধুরা বলত,
“তোমার ছবিতে এখন শুধু বেদনা। আগের মতো উজ্জ্বলতা নেই কেন?”

আরমান চুপ করে থাকতেন। সত্যি বলতে, তার জীবনের উজ্জ্বল রঙ যে বিদেশের আকাশে হারিয়ে গেছে।

৬. অসমাপ্ত প্রেমের প্রতিচ্ছবি

বছরের পর বছর পর এক আর্ট গ্যালারিতে আরমানের একটি ছবি সবাইকে অবাক করল। ছবিটিতে আঁকা ছিল এক নারীর মুখ—অর্ধেক আলোয় ঢাকা, অর্ধেক অন্ধকারে। পাশে বড় করে লেখা ছিল—

“অসমাপ্ত”

লোকজন জিজ্ঞেস করল,
“এই মুখের আসল মানুষটি কে?”

আরমান শুধু মুচকি হেসে বললেন,
“তিনি আমার জীবনের রঙ ছিলেন, কিন্তু আমার ক্যানভাসে চিরকাল অসম্পূর্ণ রয়ে গেলেন।”

৭. শেষ অনুভূতি

আজো আরমান যখন ক্যানভাসে তুলি চালান, মনে হয় নাজিফা পাশে বসে কবিতা পড়ছেন। কিন্তু জানেন, সেটা আর কখনো সম্ভব নয়।

ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে—না, শেষ হয়নি। ভালোবাসা বেঁচে আছে অসমাপ্ত থেকে।

প্রতিদিন রাতে তিনি নিজের ভেতরে একটাই কথা শুনতে পান—

“তুমি ছিলে আমার রঙ, কিন্তু আমার ক্যানভাস রয়ে গেল রঙহীন।”

অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছবি ৩
অসমাপ্ত প্রেমের গল্প ছবি ৩

আরো পড়ুন:


Share this post
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x