আত্তাহিয়াতু । আরিব ও বাংলা উচ্চারণ । পড়ার সময় ও ফজিলত

পোস্টটি শেয়ার করুন

নামাজ মুসলিম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতগুলোর একটি। এই ইবাদতের প্রতিটি অংশে রয়েছে গভীর অর্থ, আত্মিক সম্পর্ক এবং আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্যের প্রকাশ। সেই নামাজের মধ্যেই রয়েছে এক বিশেষ অংশ— আত্তাহিয়াতু— যা শুধু একটি দোয়া নয়, বরং তা ইসলামের ইতিহাস, নবীজির সম্মান এবং বান্দার মনের অবস্থা একসাথে ধারণ করে। আমরা প্রতিদিন দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে এই দোয়া পড়ি, কিন্তু অনেকেই জানি না এর গভীর তাৎপর্য, উৎস এবং অন্তর্নিহিত বার্তা।

এই ব্লগপোস্টে আমরা জানার চেষ্টা করব, আত্তাহিয়াতু দোয়ার অর্থ কী, কেন এটি নামাজে আবশ্যক, এর ইতিহাস কী এবং এটি পড়ার মাধ্যমে একজন মুসলিম কীভাবে আল্লাহর নিকট নিজেকে আরও নিবেদন করতে পারে।

🕋 আত্তাহিয়াতু । আরিব ও বাংলা উচ্চারণ

ٱلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَٱلصَّلَوَاتُ وَٱلطَّيِّبَاتُ، ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ وَرَحْمَةُ ٱللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، ٱلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ ٱللَّهِ ٱلصَّـٰلِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًۭا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

🔠 বাংলা উচ্চারণ

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াছ্ সালাওয়াতু ওয়াত্ তাইয়িবাত। আস্ সালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্ সালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসূলুহ।

📖 বাংলা অনুবাদ

সব রকমের সালাম (সম্মান), নামাজ ও পবিত্র কাজসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। হে নবী, আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের উপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

আত্তাহিয়াতু । আরিব ও বাংলা উচ্চারণ
আত্তাহিয়াতু । আরিব ও বাংলা উচ্চারণ

📜 আত্তাহিয়াতুর প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য

১. আত্মসমর্পণ ও সম্মান

“আত্তাহিয়াতু লিল্লাহ”— এই শব্দে শুরু হচ্ছে সেই দোয়া যা সরাসরি আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্মান নিবেদন। ‘আত্তাহিয়াত’ অর্থ: সব ধরণের সম্মাননা, অভিবাদন, যা কেবল আল্লাহর জন্য সংরক্ষিত।

২. নবীজিকে সালাম

এরপর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সরাসরি সালাম পাঠানো হয়, যা বোঝায় তাঁর প্রতি মুসলমানদের চিরস্থায়ী ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। এটি এমন এক মুহূর্ত, যেখানে সময় ও স্থান অতিক্রম করে এক জীবন্ত সংলাপ সৃষ্টি হয়।

৩. সমষ্টিগত প্রার্থনা

“আসসালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবাদিল্লাহিস সালিহীন” — এখানে আমরা আমাদের জন্য ও সকল নেক বান্দার জন্য শান্তি কামনা করি, যা উম্মাহর জন্য এক বিরাট ঐক্যের বার্তা।

৪. আকীদা প্রকাশ

শেষে আসছে মুসলমানের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা— তাওহিদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য। নামাজে দাঁড়িয়ে নিজ মুখে ঘোষণা করা, “আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল”— এই ঘোষণাই মুসলিম পরিচয়ের মূল।

🌿 আত্তাহিয়াতু এর ফজিলত ও গুরুত্ব

  • এই দোয়াটি সরাসরি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে মেরাজের রাতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল।
  • সাহাবিরা একে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শিখতেন এবং নামাজে পড়ার সময় গভীর মনোযোগে পাঠ করতেন।
  • এটি মুসলিমের আকীদা, শিষ্টাচার, সৌজন্য ও আধ্যাত্মিক পরিচয়ের প্রতিচ্ছবি।

📜 আত্তাহিয়াতুর উৎস: মেরাজের ঐশী সংলাপ

✨ আত্তাহিয়াতু কোথা থেকে এসেছে?

“আত্তাহিয়াতু” মূলত নবী মুহাম্মদ ﷺ-এর মেরাজের রাতের সংলাপ থেকে আগত একটি দোয়া। বিভিন্ন হাদীস ও প্রাচীন আলেমদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, যখন রাসূলুল্লাহ ﷺ সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান এবং আল্লাহর বিশেষ সান্নিধ্যে পৌঁছান, তখন এই সংলাপ সংঘটিত হয়। এটি কোনো সাধারণ দোয়া নয়—এটি এক আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সরাসরি কথা

🗣️ ঐতিহাসিক সংলাপ (তাফসির ও হাদীসবিদদের বর্ণনায়)

✅ রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন:

ٱلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَٱلصَّلَوَاتُ وَٱلطَّيِّبَاتُ

“সমস্ত সম্মাননা, দোয়া ও পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর জন্য।”

✅ আল্লাহ تعالى উত্তর দিলেন:

ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ وَرَحْمَةُ ٱللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

“হে নবী, আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।”

✅ রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন:

ٱلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ ٱللَّهِ ٱلصَّـٰلِحِينَ

“আমাদের উপর ও আল্লাহর সৎ বান্দাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”

✅ এরপর রাসূলুল্লাহ ﷺ কালেমা তায়্যিবা উচ্চারণ করলেন:

أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًۭا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।”

🧾 হাদীসের প্রমাণ

এই সংলাপের বিস্তারিত বিবরণ বিভিন্ন হাদীসে এসেছে, তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য:

📚 সহীহ মুসলিম:

عَنْ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: كُنَّا نَقُولُ فِي الصَّلاَةِ، وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: السَّلاَمُ عَلَى اللَّهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ: «إِنَّ اللَّهَ هُوَ السَّلاَمُ، وَلَكِنْ قُولُوا: التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ…»

অর্থ: ইবনু মাসউদ (রাযি.) বলেন: আমরা নামাজে বলতাম ‘আল্লাহর উপর শান্তি’, তখন রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তো নিজেই সালাম (শান্তি), তাই বলো: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ…’

— সহীহ মুসলিম: হাদীস 402

📌 গুরুত্বপূর্ণ দিক

  • এই দোয়া সরাসরি আল্লাহর শিক্ষা ও নবীর (ﷺ) উত্তর—এরূপ পবিত্র কথোপকথনের ভিত্তিতে গঠিত।
  • এটি শুধুই দোয়া নয়; বরং এটি আকীদা, শিষ্টাচার ও উম্মাহর ঐক্য-এর প্রকাশ।
  • সাহাবীরা এত গুরুত্ব সহকারে একে শিখতেন, যেন এটি নামাজের প্রাণ।

🧠 আত্তাহিয়াতু: তাফসির ও শব্দ বিশ্লেষণ

১. ٱلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ

অর্থ: সব সম্মান, শ্রদ্ধা ও শ্রেষ্ঠ অভিবাদন একমাত্র আল্লাহর জন্য।

🔍 শব্দ বিশ্লেষণ:

  • ٱلتَّحِيَّاتُ শব্দটি এসেছে “تحية” থেকে, যার অর্থ হলো: সম্মানজনক ও হৃদয়গ্রাহী অভিবাদন বা শ্রদ্ধা।
  • এ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় সালাম, দোয়া, ভালোবাসার প্রকাশ।
  • নামাজে এ শব্দ ব্যবহারে বোঝানো হয়: যত সম্মানজনক কথা মানুষের মুখে হতে পারে—সবই কেবল আল্লাহর জন্যই উপযুক্ত।

📝 তাফসির ভাবনা: আমরা মানুষের মাঝে অভিবাদন দিই, শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু নামাজে এসে বলছি—সব ধরনের অভিবাদন, প্রশংসা শুধু আল্লাহর প্রাপ্য।

২. وَٱلصَّلَوَاتُ

অর্থ: সব দোয়া, সালাত ও ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য।

🔍 শব্দ বিশ্লেষণ:

  • “صَلَوَات” শব্দের বহুবচন। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়:
    • সালাত (নামাজ),
    • দোয়া (আল্লাহর কাছে প্রার্থনা),
    • কুরআন তেলাওয়াত, সিজদা ইত্যাদি।

📝 তাফসির ভাবনা: এটি একটি একচেটিয়া ঘোষণা: ইবাদতের প্রতিটি রূপ—শুধু আল্লাহর জন্য।

৩. وَٱلطَّيِّبَاتُ

অর্থ: সব পবিত্র, ভালো ও উত্তম কথা ও কাজ কেবল আল্লাহর জন্য।

🔍 শব্দ বিশ্লেষণ:

  • “طيب” অর্থ পবিত্র, সুন্দর, বিশুদ্ধ।
  • “الطيبات” বোঝায়: উত্তম বাক্য, ভালো কাজ, নিষ্পাপ ব্যয়, হালাল রিজিক, পবিত্র চিন্তা—সব কিছুই।

📝 তাফসির ভাবনা: যে কোনো কিছু যা পবিত্র, মঙ্গলজনক ও শুভ—তার প্রকৃত উপযুক্ত ও মালিক কেবল আল্লাহ।

৪. ٱلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ

অর্থ: হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

🔍 শব্দ বিশ্লেষণ:

  • “السلام” অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, কল্যাণ।
  • “عليك” = আপনার উপর।
  • “أيها النبي” = হে নবী!

📝 তাফসির ভাবনা: এটি এক প্রগাঢ় ভালোবাসার ইশারা—নামাজের মাঝে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের নবীকে সালাম জানাচ্ছি, যিনি আমাদের নামাজ শেখালেন।

৫. وَرَحْمَةُ ٱللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

অর্থ: আল্লাহর রহমত ও বরকত আপনার উপর বর্ষিত হোক।

🔍 রহমত: আল্লাহর দয়া, যা বান্দার পাপ ক্ষমা করে দেয়, বিপদ থেকে রক্ষা করে।
🔍 বরকত: কল্যাণ, বৃদ্ধি, শান্তি ও স্থায়ীত্ব।

📝 তাফসির ভাবনা:
এই দোয়ায় নবীর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ হয়। তাঁর ওপর শুধু সালাম নয়—রহমত ও অফুরন্ত বরকত চাওয়া হয়।

৬. ٱلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ ٱللَّهِ ٱلصَّـٰلِحِينَ

অর্থ: আমাদের ওপর ও আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

🔍 عَلَيْنَا = আমাদের উপর
🔍 عِبَادِ ٱللَّهِ = আল্লাহর বান্দাগণ
🔍 ٱلصَّـٰلِحِينَ = যারা নেক, সৎকর্মপরায়ণ

📝 তাফসির ভাবনা: আমরা দোয়া করছি যেন শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সব নেককার মুসলিমদের জন্য শান্তি ও কল্যাণ বর্ষিত হয়—যাঁরা আমাদের পূর্বসূরি, বর্তমান ও ভবিষ্যতের উম্মত।

৭. أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا ٱللَّهُ

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।

🔍 أشهد = আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি
🔍 لا إله إلا الله = আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই

📝 তাফসির ভাবনা: নামাজের মাঝে আমরা আমাদের ঈমানের ঘোষণা পুনরায় করছি—তাওহীদের দৃঢ় স্বীকৃতি।

৮. وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًۭا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

🔍 عبد = বান্দা, ইবাদতকারী
🔍 رسول = বার্তাবাহক, প্রেরিত পুরুষ

📝 তাফসির ভাবনা: রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আল্লাহর রাসূল এবং একজন বান্দা হিসেবে মান্য করা—আহলে সুন্নাহর আকীদার মূলভিত্তি।

📌 সারসংক্ষেপে

অংশঅর্থমূল শিক্ষা
التحيات للهসমস্ত সম্মান ও অভিবাদন আল্লাহরএকমাত্র আল্লাহই সর্বোচ্চ সম্মানের যোগ্য
والصلواتসব নামাজ ও দোয়াইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য
والطيباتসব পবিত্র ও উত্তম জিনিসপবিত্রতা আল্লাহর প্রাপ্য
السلام عليك أيها النبيনবীর প্রতি সালামরাসূলের প্রতি ভালোবাসা
ورحمة الله وبركاتهরহমত ও বরকতের দোয়ানবীর মর্যাদা ও কল্যাণ
السلام عليناনিজের জন্য শান্তিনিজেকেও কল্যাণে ডাকা
وعلى عباد الله الصالحينসব নেক বান্দাদের জন্য শান্তিউম্মাহর প্রতি দয়া ও ঐক্য
أشهد أن لا إله إلا اللهআল্লাহ ছাড়া উপাস্য নেইতাওহীদ
وأشهد أن محمدًا عبده ورسولهমুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রাসূলরিসালাত

আরো পড়ুন:

🖐️ আত্তাহিয়াতুতে আঙুল ইশারা: বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ

🕌 ১. এই ইশারা কেন করা হয়?

আঙুল দ্বারা ইশারা করা হয় তাওহীদের সাক্ষ্য ও আল্লাহর একত্ব প্রকাশ করার জন্য। এটি একপ্রকার দৃশ্যমান ‘তাওহীদের ঘোষণা’ যা ঈমানের গভীরতা ও একনিষ্ঠতা ফুটিয়ে তোলে।

📜 ২. হাদীস প্রমাণ

✅ সাহীহ মুসলিম

كان رسول الله ﷺ إذا جلس في الصلاة، وضع يده اليمنى على فخذه اليمنى، وأشار بأصبعه التي تلي الإبهام، ودعا بها.

“রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন নামাজে বসতেন, তখন ডান হাতটি ডান হাঁটুতে রাখতেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের আঙুল (শাহাদাত আঙুল) দিয়ে ইশারা করতেন এবং তা দিয়ে দোয়া করতেন।”

— [সহীহ মুসলিম 580]

সুনান আবু দাউদ:

… ثم قبض أصابعه كلها، وأشار بالتي تلي الإبهام إلى القبلة، ورأيته يحركها يدعو بها

“তিনি (নবী ﷺ) তাঁর সমস্ত আঙুল মোচড়ালেন এবং শুধু শাহাদাত আঙুলটি দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করলেন। আমি তাঁকে ওই আঙুল নড়াতে এবং দোয়া করতে দেখেছি।”

[সুনান আবু দাউদ 989, সহীহ]

মুসনাদ আহমদ:

لهي أشد على الشيطان من الحديد

“এটি (শাহাদাত আঙুল ইশারা) শয়তানের উপর লোহার চেয়েও কঠিন।”

— [মুসনাদ আহমদ, হাসান]

⚙️ ৩. আঙুল ইশারা করার পদ্ধতি

আলেমদের মধ্যে দুটি মত রয়েছে:

মত ১: স্থির রেখে ইশারা

  • আত্তাহিয়াতুতে যখন “أشهد أن لا إله إلا الله” বলা হয়, তখন আঙুল উঠিয়ে রাখা হয় এবং নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থির রাখা হয়।

মত ২: নড়াচড়া সহ ইশারা

  • শাহাদাতের সময় আঙুল উঠিয়ে রাখা হয় এবং তাওহীদের অংশ বা দোয়ার সময় হালকা নাড়ানো হয়।
  • হাদীসে এসেছে: “তিনি আঙুল নাড়াতেন এবং তাতে দোয়া করতেন।”

বর্তমান অনেক আলেম (যেমন: শাইখ ইবনে উসাইমিন, আলবানী রহ.) মত দেন—ইশারা করে হালকা নাড়ানো উত্তম।

🧠 ৪. কেন এই আমল গুরুত্বপূর্ণ?

  • এটি তাওহীদের বিশ্বাসের চূড়ান্ত প্রকাশ।
  • নামাজে সর্বোচ্চ একাগ্রতা ও আল্লাহর প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশ পায়।
  • রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে ইশারা করেছেন, তাই এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।

⚠️ ৫. কিছু ভুল ধারণা ও সংশোধন

ভুল প্রচলনসহীহ পদ্ধতি
আঙুল ইশারা শুধু “আশহাদু” বলার সময় একবার করে উঠিয়ে আবার নামানো হয়হাদীস অনুযায়ী তাওহীদের অংশে আঙুল উঠিয়ে স্থির রাখা বা নাড়ানো
আঙুল নাড়িয়ে হেলানো হয় বা গোল করে ঘোরানো হয়হালকা ইশারা বা দোয়ার সময় নাড়ানো প্রমাণিত, কিন্তু চক্রাকারে ঘোরানো নয়
দুই আঙুল উঠানো হয় (কোনো জায়গায়)একমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুলির পাশের আঙুল (শাহাদাত) দিয়েই ইশারা করতে হয়

📌 ৬. সারসংক্ষেপে মূল পয়েন্ট

  • আঙ্গুল ইশারা রাসূল ﷺ এর সুন্নাত
  • ইশারার সময়: “أشهد أن لا إله إلا الله”
  • একমাত্র ডান হাতের শাহাদাত আঙুল
  • স্থির রাখা বা হালকা নাড়ানো—দুই পদ্ধতিই হাদীসে প্রমাণিত
  • তাওহীদের প্রতি আনুগত্য ও শয়তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক

📌 উপসংহার

“আত্তাহিয়াতু” কেবল একটি নামাজের দোয়া নয়— এটি একটি জীবন্ত সাক্ষ্য, একটি আত্মিক সংলাপ, এবং একজন বান্দার তাঁর প্রভুর প্রতি প্রেম, আনুগত্য ও বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। নামাজে যখন আমরা এই দোয়াটি পড়ি, তখন যেন শুধুই ঠোঁট নড়ে না— বরং হৃদয়ও কাঁপে, আত্মাও সঁপে দেয় নিজেকে মহান রবের দরবারে।


পোস্টটি শেয়ার করুন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x