ইয়া মুজিবু অর্থ কি? বাংলা আরিব । ফজিলত ও বিশ্লেষণ

পোস্টটি শেয়ার করুন

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে “ইয়া মুজিবু” অন্যতম। “মুজিব” শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো “সাড়া প্রদানকারী” বা “ডাকের উত্তরদাতা”। অর্থাৎ, আল্লাহ সেই সত্তা যিনি তাঁর বান্দাদের আহ্বানে সাড়া দেন, তাদের দোয়া কবুল করেন এবং প্রয়োজন পূরণ করেন।

মানুষ যখন দুঃখ-কষ্টে পড়ে, যখন বিপদ-আপদ এসে হাজির হয়, তখন সে আশ্রয় খোঁজে তার রবের কাছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন:

وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْ

“আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দেব।”
(সূরা গাফির: ৬০)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ বান্দার ডাকে সাড়া দেন, তার দোয়া কবুল করেন এবং তার প্রয়োজন পূরণ করেন। তাই আমরা যখন “ইয়া মুজিবু” বলে আল্লাহকে ডাকবো, তখন আমাদের অন্তরে এই বিশ্বাস থাকতে হবে যে, তিনি আমাদের দোয়া কবুল করবেন এবং সর্বোত্তম উপায়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করে দেবেন।

আল্লাহ তাআলার এই গুণবাচক নামের মাধ্যমে দোয়া করলে দোয়ার গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পায়। এজন্য আমাদের উচিত, আমাদের প্রয়োজনের মুহূর্তে ও প্রতিদিনের জীবনে “ইয়া মুজিবু” নামের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।

ইয়া মুজিবু অর্থ কি?

ইসলামে আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নামের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এই নামগুলোর প্রতিটিই আল্লাহর কোনো না কোনো মহান গুণের পরিচায়ক। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হলো “ইয়া মুজিবু” (يَا مُجِيبُ)।

ইয়া মুজিবু অর্থ

“ইয়া মুজিবু” অর্থ হলো “হে সাড়া প্রদানকারী” বা “হে দোয়া কবুলকারী”। আরবি ভাষায় “মুজিব” (مُجِيب) শব্দের অর্থ উত্তরদাতা, প্রতিক্রিয়া প্রদানকারী বা আহ্বানে সাড়া দানকারী। সুতরাং, যখন আমরা “ইয়া মুজিবু” বলে আল্লাহকে আহ্বান করি, তখন আমরা মূলত সেই মহান সত্তাকে ডাকছি, যিনি তাঁর বান্দাদের দোয়া কবুল করেন এবং তাঁদের প্রয়োজন মেটান।

শব্দগত বিশ্লেষণ

يَا مُجِيبُ দুটি অংশে বিভক্ত

  • يَا → এটি নিদানের জন্য ব্যবহৃত হারফ (حرف النداء), যা “হে” বা “হে সাড়া প্রদানকারী” অর্থ প্রকাশ করে।
  • مُجِيبُ → এটি মূল শব্দ أَجَابَ (أجَبَ – يُجِيبُ – إجَابَةً) থেকে উৎপন্ন, যার অর্থ “উত্তর দেওয়া”, “প্রত্যুত্তর করা”, “সাড়া দেওয়া” বা “ডাকে সাড়া দেওয়া”।

২. অর্থ ও ব্যাখ্যা

يَا مُجِيبُ অর্থ:

  • “হে দোয়া কবুলকারী”
  • “হে যিনি আহ্বানের জবাব দেন”
  • “হে যিনি বান্দার ডাক শুনে তাতে সাড়া দেন”

এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার একটি গুণবাচক নাম, যা বোঝায় যে, আল্লাহ তাঁর বান্দার দোয়া ও আবেদন শুনে যথাযথ জবাব প্রদান করেন এবং তাদের প্রয়োজন পূরণ করেন।

আল-মুজিব নামে আল্লাহর গুণ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে বলেন—

وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدْعُونِىٓ أَسْتَجِبْ لَكُمْ

“আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দেব।”
(সূরা গাফির: ৬০)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দোয়া শোনেন এবং তাদের আহ্বানে সাড়া দেন। এজন্য তিনি আল-মুজিব (الْمُجِيبُ) নামে পরিচিত।

ইয়া মুজিবু পাঠ করার ফজিলত

“ইয়া মুজিবু” নামে আল্লাহকে ডাকলে অনেক ফজিলত পাওয়া যায়, যেমন:

  • দোয়া কবুল হয় – যারা আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকে ডাকেন, আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন।
  • মানসিক প্রশান্তি লাভ হয় – বিপদে-আপদে “ইয়া মুজিবু” বলে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হলে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
  • কষ্ট ও দুশ্চিন্তা দূর হয় – আল্লাহ তাআলা বান্দার দুঃখ-দুর্দশা দূর করেন।

يَا مُجِيبُ দ্বারা দোয়া করার পদ্ধতি

يَا مُجِيبُ (হে দোয়া কবুলকারী) দ্বারা দোয়া করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ, কারণ আল্লাহ নিজেই বলেছেন যে তিনি দোয়া কবুল করেন। এই নামে আল্লাহকে ডাকলে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ লাভের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। নিচে কিছু সুন্নাতসম্মত পদ্ধতি এবং দোয়ার উদাহরণ দেওয়া হলো।

১. দোয়া করার আদর্শ পদ্ধতি

(ক) পবিত্রতা রক্ষা করা

  • অজু করে দোয়া করলে তা আরও গ্রহণযোগ্য হয়।
  • শুদ্ধ মন নিয়ে খাঁটি নিয়তে দোয়া করা উচিত।

(খ) আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পাঠ করা

দোয়ার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ-এর উপর দরুদ পাঠ করা দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত।
👉 উদাহরণ:

اللهم لك الحمد أنت المجيب، وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.

“হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনার জন্য, আপনি মুজীব (প্রত্যুত্তরকারী)। আর আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবিদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।”

(গ) يَا مُجِيبُ দ্বারা দোয়া শুরু করা

👉 “يَا مُجِيبُ” বলে আল্লাহকে ডাকলে তা হৃদয়গ্রাহী ও শক্তিশালী হয়।

২. বিভিন্ন পরিস্থিতিতে يَا مُجِيبُ দ্বারা দোয়া

(ক) বিপদের সময় দোয়া

يَا مُجِيبُ أَجِبْ دُعَائِي وَاكْشِفْ عَنِّي الضُّرَّ، إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

“হে দোয়া কবুলকারী! আমার দোয়া কবুল করুন এবং আমার বিপদ দূর করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”

(খ) অভাব বা সংকটে দোয়া

يَا مُجِيبُ، يَا رَزَّاقُ، ارزقني مِن حيثُ لا أحتسبُ، وَبارِك لي فيما أعطيتَ

“হে দোয়া কবুলকারী, হে রিযিকদাতা! আমাকে এমনভাবে রিযিক দান করুন যা আমি কল্পনাও করিনি এবং আপনি যা দিয়েছেন তাতে বরকত দান করুন।”

(গ) অসুস্থতার সময় দোয়া

يَا مُجِيبُ، اشْفِنِي وَعَافِنِي، وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ

“হে দোয়া কবুলকারী! আমাকে সুস্থ করুন ও আরোগ্য দিন। আপনিই তো শেফাদাতা, আপনার শেফা ছাড়া কোনো শেফা নেই।”

(ঘ) পাপের ক্ষমার জন্য দোয়া

يَا مُجِيبُ، اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

“হে দোয়া কবুলকারী! আমার পাপ ক্ষমা করুন এবং আমাকে তওবার তৌফিক দিন। নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

৩. বিশেষ সময়ে يَا مُجِيبُ দ্বারা দোয়া করা উত্তম

(১) শেষ তৃতীয়াংশ রাত: তাহাজ্জুদের সময় দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
(২) জুমার দিনে: বিশেষ করে আসরের পর থেকে মাগরিবের আগে।
(৩) আজানের সময় ও আজানের পরে।
(৪) রোজা ইফতারের সময়।
(৫) বৃষ্টি নামার সময়।
(৬) কাবার সামনে দোয়া করলে

আরো পড়ুন:

ইয়া মুজিবু কুরআনে কোনো কোন জায়গায় রয়েছে?

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার একটি গুণবাচক নাম হলো “يَا مُجِيبُ” (ইয়া মুজীবু), যার অর্থ হলো “হে প্রত্ত্যুত্তর দানকারী” বা “যিনি দোয়া কবুল করেন”।

কুরআনে “المُجِيب” (আল-মুজীব) শব্দটি সরাসরি আল্লাহর নাম হিসেবে উল্লেখ না থাকলেও, আল্লাহর দোয়া কবুল করার বিষয়টি বিভিন্ন আয়াতে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ:

১. সূরা হূদ (১১:৬১)

إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُّجِيبٌ

“নিশ্চয়ই আমার রব নিকটবর্তী, তিনি দোয়ার উত্তরদাতা।”

এখানে “مُجِيبٌ” শব্দটি এসেছে, যার অর্থ “উত্তরদাতা” বা “দোয়া কবুলকারী”।

২. সূরা বাকারা (২:১৮৬)

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ ۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ

“আর যখন আমার বান্দারা তোমার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলো) আমি তো খুব নিকটবর্তী। যখন কেউ আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই।”

এখানে “أُجِيبُ” ক্রিয়াপদ এসেছে, যার অর্থ “আমি সাড়া দেই” বা “আমি দোয়া কবুল করি”।

৩. সূরা নামল (২৭:৬۲)

أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ

“কে সেই, যিনি অসহায় ব্যক্তি যখন তাঁকে ডাকে, তখন তাঁর ডাকে সাড়া দেন এবং বিপদ দূর করে দেন?”

এখানে “يُجِيبُ” (উত্তর দেন) শব্দটি এসেছে, যা আল্লাহর দোয়া কবুল করার ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়।

উপসংহার

يَا مُجِيبُ দ্বারা দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার আহ্বানে দ্রুত সাড়া দেন। খাঁটি মন নিয়ে, ধৈর্যসহ দোয়া করলে আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন। নিয়মিত يَا مُجِيبُ বলে আল্লাহকে ডাকলে আমাদের জীবনে দোয়ার প্রভাব ও বরকত অনুভূত হবে ইনশাআল্লাহ।

اللهم يا مجيب، تقبل دعاءنا واغفر لنا ذنوبنا، إنك أنت السميع العليم

“হে দোয়া কবুলকারী আল্লাহ! আমাদের দোয়া কবুল করুন এবং আমাদের পাপ ক্ষমা করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” আমীন। 🤲


পোস্টটি শেয়ার করুন