ঈদের দোয়া । আরবি । বাংলা ও ফজিলত : কৃতজ্ঞতার নিবেদন

পোস্টটি শেয়ার করুন

ঈদ শুধু আনন্দ আর উৎসবের দিন নয়, এটি কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনারও বিশেষ সময়। এই দিনে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে শান্তি, ক্ষমা ও কল্যাণের জন্য দোয়া করে। ঈদের নামাজের পর এবং সারাদিন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও অভাবীদের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্যেও দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। ঈদের দোয়া মানে শুধু নিজের জন্য চাওয়া নয়, বরং পুরো উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা। এই ব্লগপোস্টে আমরা জানব ঈদের দোয়া গুলো, সেগুলোর তাৎপর্য এবং কীভাবে আমরা ঈদের দিনে আমাদের প্রার্থনাকে আরও গভীর ও অর্থবহ করতে পারি।

ঈদের দোয়া । আরবি । বাংলা ও ফজিলত

১. ঈদের নামাজের পর

আরবি:

اللَّهُمَّ أَهْلَ الْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ، وَأَهْلَ الْجُودِ وَالْجَبَرُوتِ، وَأَهْلَ الْعَفْوِ وَالرَّحْمَةِ، وَأَهْلَ التَّقْوَى وَالْمَغْفِرَةِ، أَسْأَلُك بِحَقِّ هَذَا الْيَوْمِ الَّذِي جَعَلْتَهُ لِلْمُسْلِمِينَ عِيدًا، وَلِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذُخْرًا وَشَرَفًا وَكَرَامَةً وَمَزِيدًا، أَنْ تُصَلِّيَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، وَأَنْ تُدْخِلَنِي فِي كُلِّ خَيْرٍ أَدْخَلْتَ فِيهِ مُحَمَّدًا وَآلَ مُحَمَّدٍ، وَأَنْ تُخْرِجَنِي مِنْ كُلِّ سُوءٍ أَخْرَجْتَ مِنْهُ مُحَمَّدًا وَآلَ مُحَمَّدٍ، صَلَوَاتُكَ عَلَيْهِ وَعَلَيْهِمْ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْخَيْرَ كُلَّهُ، عَاجِلَهُ وَآجِلَهُ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ الشَّرِّ كُلِّهِ، عَاجِلِهِ وَآجِلِهِ، مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ.

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা আহলাল-কিবরিয়াই ওয়াল-আযমাহ, ওয়া আহলাল-জুদি ওয়াল-জাবারুত, ওয়া আহলাল-আফওয়ি ওয়ার-রহমাহ, ওয়া আহলাত-তাকওয়া ওয়াল-মাগফিরাহ। আসআলুকা বিহাক্কি হাযাল ইয়াওমিল্লাযি জা’আলতাহু লিল-মুসলিমীনা ঈদা, ওয়া লি-মুহাম্মাদিন সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা যুবরান ওয়া শারাফান ওয়া করামাতান ওয়া মাযীদা। আন তুসাল্লিয়া আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ। ওয়া আন tudkhilani fi kulli khairin adkhalta fihi Muhammadan wa aala Muhammadin, wa an tukhrijani min kulli sharrin akhrajta minhu Muhammadan wa aala Muhammadin, salawatuka alaihi wa alaihim. Allahumma inni as’alukal-khaira kullahu, ‘ajilahu wa ajilahu, ma ‘alimtu minhu wa ma lam a’lam. Wa a’udhu bika minash-sharri kullihi, ‘ajilihi wa ajilihi, ma ‘alimtu minhu wa ma lam a’lam.”

অর্থ: হে মহিমা ও গৌরবের অধিকারী, হে দানশীলতা ও শক্তির মালিক, হে ক্ষমা ও দয়ার উৎস, হে তাকওয়া ও ক্ষমার অধিপতি! আমি তোমার কাছে এই দিনের বরকতের উসিলায় প্রার্থনা করি, যেদিন তুমি মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন নির্ধারণ করেছো এবং যা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্য সম্মান, মর্যাদা ও মহিমার দিন। আমি তোমার কাছে অনুরোধ করি, তুমি মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারকে রহমত দান করো এবং আমাকে সেই সমস্ত কল্যাণের অন্তর্ভুক্ত করো, যা তুমি মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারকে দিয়েছো।

ফজিলত:

  • এই দোয়াটি পড়লে ঈদের বরকত ও রহমত পাওয়া যায়।
  • আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য ক্ষমার দ্বার উন্মুক্ত করেন।
  • এটি নবীজি (সা.)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী দোয়া, যা ঈদের আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম।
  • দোয়ার মাধ্যমে নিজের কল্যাণ কামনা ছাড়াও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রার্থনা করা হয়, যা ঈদের মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি।

এছাড়াও, ঈদের দিনে বেশি বেশি তাকবির ও অন্যান্য দোয়া পড়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ।”

ঈদের দিনে শুভেচ্ছা জানানোর দোয়া

১. পরস্পর শুভেচ্ছা জানানোর সুন্নতি দোয়া:

আরবি:

تَقَبَّلَ اللَّهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ

বাংলা উচ্চারণ:তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম

অর্থ: “আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের পক্ষ থেকে (আমলের) গ্রহণযোগ্যতা দান করুন।”

ফজিলত:

  • এটি সাহাবায়ে কেরামদের পরস্পরের মাঝে প্রচলিত দোয়া ছিল (ফাজায়েলে আমাল)।
  • এই দোয়ার মাধ্যমে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা করা হয়।
  • এটি ঈদের দিন উত্তম শুভেচ্ছা, যা ইসলামি সংস্কৃতির অংশ।
ঈদের দোয়া
ঈদের দোয়া

অতিরিক্ত দোয়া

“ঈদ মোবারক, আল্লাহ আপনার ঈদকে বরকতময় করুন এবং আপনাকে ও আপনার পরিবারকে সুখ ও সমৃদ্ধি দান করুন।”

ঈদের দোয়ার গুরুত্ব: আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ

ঈদের দিন শুধু আনন্দ-উৎসবের জন্য নয়, এটি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম সুযোগ। ঈদের দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তাঁর রহমত প্রার্থনা করি এবং নিজেদের জন্য কল্যাণ কামনা করি। এই দিনটি রমজান বা কোরবানির পর আসে, যেখানে মুসলিমরা আত্মসংযম, ত্যাগ ও ইবাদতের মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করে। দোয়া আমাদের আত্মিক উন্নতি ঘটায় এবং আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও বরকত পাওয়ার পথ খুলে দেয়।

এই দোয়ার গুরুত্ব কয়েকটি দিক থেকে বিবেচনা করা যায়—

  • এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম।
  • ঈদের দোয়া বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে।
  • এটি রোজা বা কোরবানির মাধ্যমে পাওয়া নেক আমল ও সওয়াবের স্বীকৃতি।
  • দোয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের ও উম্মাহর কল্যাণ কামনা করতে পারে।

ঈদের দোয়ার সামাজিক প্রভাব: সম্প্রীতি, ঐক্য ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির মাধ্যম

ঈদের দিনে শুধু ব্যক্তি নয়, সমগ্র সমাজ একত্রিত হয় দোয়ার মাধ্যমে। মুসলিম সমাজের ঐক্য ও সৌহার্দ্য গড়ে তোলার অন্যতম মাধ্যম হলো ঈদের দোয়াগুলো ও শুভেচ্ছা বিনিময়।

সামাজিকভাবে ঈদের দোয়ার কয়েকটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে—

  • ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি: ঈদের দিনে পরস্পরের জন্য দোয়া করা আত্মীয়তা ও বন্ধুত্বকে দৃঢ় করে।
  • মানসিক শান্তি ও আনন্দ: দোয়া মনকে প্রশান্ত করে এবং মানুষকে ইতিবাচক চিন্তার দিকে ধাবিত করে।
  • সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা: ঈদের দিন গরিব-দুঃখীদের জন্য দোয়া করা এবং তাদের পাশে দাঁড়ানো সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে।
  • একতা ও সৌহার্দ্য: ঈদের দোয়া ও শুভেচ্ছা সমাজে সৌহার্দ্যের পরিবেশ তৈরি করে, যা পারস্পরিক সম্পর্ককে মজবুত করে।

ঈদের দোয়া শুধুমাত্র ইবাদতের অংশ নয়, বরং এটি ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

ঈদের দোয়া সম্পর্কিত ৫টি প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: ঈদ এর দিনে দোয়া করার গুরুত্ব কী?

উত্তর: ঈদের দিন দোয়া করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। এটি আত্মশুদ্ধির সুযোগ তৈরি করে এবং আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের উপায়। এছাড়া, দোয়ার মাধ্যমে আমরা ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ কামনা করতে পারি।

প্রশ্ন ২: ঈদের নামাজের পর পড়ার জন্য বিশেষ কোনো দোয়া আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, ঈদের নামাজের পর পড়ার জন্য বিশেষ দোয়া রয়েছে। যেমন:

اللَّهُمَّ أَهْلَ الْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ…

(উচ্চারণ ও অর্থ আগের অংশে দেওয়া হয়েছে) এটি নবীজির (সা.) সুন্নাহ অনুসারে ঈদের বরকতের জন্য পড়া যায়।

প্রশ্ন ৩: ঈদের দিনে পরস্পর শুভেচ্ছা জানানোর জন্য কোন দোয়া বলা উত্তম?

উত্তর: সাহাবায়ে কেরামরা একে অপরকে “تَقَبَّلَ اللَّهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ” (তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিঙ্কুম) বলতেন, যার অর্থ হলো—

“আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের পক্ষ থেকে (আমল) গ্রহণ করুন।” এটি ঈদের সুন্নাহ সম্মত শুভেচ্ছা।

প্রশ্ন ৪: ঈদের দোয়া ব্যক্তিগত জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে?

উত্তর: ঈদের দোয়া ব্যক্তি জীবনে মানসিক প্রশান্তি, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ তৈরি করে। এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, হতাশা দূর করে এবং কল্যাণ কামনার মানসিকতা গড়ে তোলে।

প্রশ্ন ৫: ঈদের দোয়ার সামাজিক প্রভাব কী?

উত্তর: ঈদের দোয়াগুলো সমাজে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে। এটি ধনী-গরিবের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে তোলে, পারস্পরিক দোয়া ও শুভেচ্ছার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং সহমর্মিতার সংস্কৃতি বিকাশ লাভ করে।


পোস্টটি শেয়ার করুন