দোয়া হচ্ছে একটি পবিত্রতম ইবাদাত। কিন্তু অনেক মানুষ বুঝে অথবা না বুঝে- দোয়ার বিষয়ে হাস্যকর প্রশ্ন ও উপাদানের জন্ম দেন। এরকমই একটি প্রশ্ন হচ্ছে – কাউকে বশ করার দোয়া। আমি দেখেছি অনেক মানুষ গুগলে এই দোয়াটি সার্চ করেন।
তাদের ধারণা এ রকম কোনো দোয়া হয়তো থাকতে পারে। আসলে এটি একটি অহেতুক ও শয়তানি চিন্তা। কাউকে বশ করার কোনো দোয়া ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়নি। তবে অন্য কারো মন পরিবর্তন করা বা তার দ্বারা আপনার কাজ আরো সহজে আদায় করা বা তার চোখে আপনার গুরুত্ব আরো বৃদ্ধি করার জন্য দোয়া করতে পারেন। এমন কিছু দোয়া আমরা আলোচনা করছি।
কাউকে বশ করার দোয়া। কেন এটি অবান্তর চিন্তা?
কাউকে বশ করার জন্য দোয়া করা একটি অবান্ত চিন্তা এ জন্য বলছি যে, এই বশ করা শব্দ ব্যবহার হয় কালো যাদুর ক্ষেত্রে। অনেক কালো জাদুকর আছে যারা শয়তানের সাহায্য নিয়ে মানুষকে বশ করে বা বিভিন্ন কাজে তাদের বাধ্য করে। সেখান থেকে কেউ কেউ হয়তো মনে করেছেন যে, কোরো দোয়া কতে পারে যার দ্বারা অন্য কেউ তার বশ করতে পারবে। কিন্তু এই চিন্তাটি ভুল।
কেননা যাদু আর দোয়া একটি অন্যটির বিপরীত। দোয়ার মাধ্যমে আপনার চাওয়াকে পূরণ করার পেছনে থাকে আল্লাহর শক্তি। আর যাদুর মাধ্যমে সংঘঠিত কাজের পেছনে থাকে শয়তানের শক্তি। তাই আপনি আপনার প্রয়োজনে, আপনার বিপদে, আপনার সামগ্রিক জীবনে সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে দোয়া করবেন এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।
কিন্তু কোন মানুষকে বশ করে আপনার মর্জি মতো থাকে পরিচালনা করা বা তার থেকে আপনার কোন ইচ্ছা পূরণ করে নেওয়া, এটা নৈতিকতার দিক থেকে একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সর্বপ্রকার অপরাধ থেকে মানুষকে বিরত থাকা নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কোনো অপরাধ সংগঠিত করার জন্য আপনি দোয়া করবেন, আর সে দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন এটি একটি মসকরা ছাড়া কিছুই নয়। কাজেই আপনি এ ধরনের চিন্তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
কাউকে বশ করার বিকল্প দোয়া
কারো অন্তরে ভালোবাসা তৈরির দোয়া
اللهم أَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِنَا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আললিফ বাইনা কুলুবিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরগুলোকে একত্রিত করুন।
বিয়ের জন্য দোয়া
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ: রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়াতিনা কুররাতা আ’ইউনিন ওয়া-জ’আলনা লিল মুত্তাকীনা ইমামা।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের দ্বারা চোখের সান্ত্বনা দান করুন এবং আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা আনযালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকীর।
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আপনি যা কিছু ভালো দিয়েছেন, তার জন্য আমি প্রয়োজনীয় মনে করি।
মানুষের ভালোবাসা লাভের দোয়া
اللهم إني أسألك محبتك ومحبة من يحبك
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইননী আসআলুকা মহাব্বাতাকা ওয়া মহাব্বাতা মান ইউহিব্বুক।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার ভালোবাসা এবং যারা আপনাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসা চাই।
ক্রোধ থেকে দূরে থাকার দোয়া
اللهم أصلح جمْلة قلوبنا واصرفْ عَنا مِنَ الغَيْظِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলিহ্ জুমলা কুলুবিনা ওয়াসরিফ্ আ’যিনা মিনাল গয়যে।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের অন্তরকে সংশোধন করুন এবং আমাদের ক্রোধ থেকে দূরে রাখুন।
Tiktok হুজুররা বশ করার দোয়া শিখান কেন?
আমি দেখেছি tiktok এ কিছু হুজুর টাইপের লোক রয়েছেন যারা কাউকে বশ করার দোয়া নামে সূরা কাওসারের একটি আমল শিখাচ্ছেন। আবার অন্য আরেকজন হুজুরকে দেখেছি তিনি কোরআন থেকে একটি আয়াত পাঠ করে বলছেন কাউকে বশ করার কাজে ব্যবহার করা যাবে। আসতাগফিরুল্লাহ।
তারা এই যে দোয়া শিক্ষা দিচ্ছেন এটি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড। ইসলাম এ ধরনের কোন শিক্ষা আমাদেরকে দেয়নি। রাসুলুল্লাহ সা. কোনো হাদিসে এরকম কোন দোয়া আমাদেরকে শিক্ষা দেননি যেটা দ্বারা অন্য কাউকে বশ করা যাবে।
আপনি স্বাভাবিকভাবে একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন এই কাজটি যে হাস্যকর অবান্তর। কেননা মানুষকে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা স্বাধীন চিন্তা শক্তি দিয়ে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। সে তার চিন্তা ব্যবহার করে তার প্রতিদিনে কাজ করবে। এখন অন্য কেউ যদি তাকে বশ করে নেয় অর্থাৎ তাকে অলৌকিকভাবে বাধ্য করে বিভিন্ন কাজ করিয়ে নেয় তাহলে এটি তার স্বাধীন চিন্তা শক্তির বিপরীত।
আর সেটি যদি হয় কোনো হারাম কাজে কাউকে বাধ্য করার জন্য যেমন প্রেম বা তার খারাপ ইচ্ছা পূরণের জন্য বাধ্য করা তাহলে এটি তো অবশ্যই ইসলামি শিক্ষার বিপরীত। এটি তো খুবই জঘন্য একটি কাজ। যারা এ ধরনের কাউকে বশ করার দোয়া শিখেছেন তারা প্রথমত নিজেরাই পাপ করছেন এবং তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়।
সত্যিই কি দোয়া করে কাউকে বশ করা যায়?
না আসলে দোয়া করার মাধ্যমে কাউকে আপনি বশ করতে পারেন না বরং আপনি যদি কাউকে আপনার কোনো কথা শোনাতে চান বা তার দ্বারা আপনার কোন কাজ করিয়ে নিতে চান বা কাউকে আপনি আপনার করে পেতে চান, তাহলে আপনি দোয়া করতে পারেন। বিভিন্ন রকমের দোয়া রয়েছে, যেমন বিয়ের জন্য কোন মেয়েকে পছন্দ করলে আপনি এক ধরনের দোয়া করতে পারেন। অথবা আপনার গুরুত্ব অন্যের কাছে বাড়াতে আপনি এক রকম দোয়া করতে পারেন। অথবা অন্য কারো মন আপনার প্রতি নরম করে আপনার কোনো কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য এক ধরনের দোয়া করতে পারেন।
কিন্তু কাউকে আপনি বশ করতে পারবেন না। এটি হচ্ছে কালো জাদুকরদের একটি ভাষ্য। তারা শয়তানদের সাহায্যে নিয়ে এটি করে থাকেন। শয়তানরা মানুষের মন এবং মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করে, যার জন্য বশ করা হয় তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে সেই মানুষকে বাধ্য করে থাকেন। এই কাজটি কুফরি। স্পষ্ট হারাম।