জাতীয় পতাকা উত্তোলন অনেক দেশের একটি সাধারণ প্রথা এবং এটি বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মিছিল বা অন্যান্য কার্যক্রমের সময় সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসলামে পতাকা উত্তোলন এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা এখানে আলোচনা করছি, বিশেষভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন কী জায়েজ? এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করে।
ইসলামে পতাকার ব্যবহার
ইসলামের ইতিহাসে যুদ্ধের সময় পতাকা ব্যবহারের একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল। বিভিন্ন হাদিসে এটি উল্লেখিত হয়েছে, যেখানে দেখা যায় যে, পতাকা বা রওজা উত্তোলন শুধুমাত্র সামরিক কৌশল নয়, বরং এটি একটি প্রতীকী এবং ধর্মীয় চিহ্ন হিসেবেও ব্যবহৃত হতো।
পতাকা স্থাপনের নির্দেশনা
প্রথমত, এক হাদিসে আমরা পাই:
عن هشام بن عروة عن أبيه عن نافع بن جبير قال سمعت العباس يقول للزبير – رضي الله عنهما- :ها هنا أمرك النبي صلى الله عليه و سلم أن تركز الراية. (اخرجه البخاري،رفم2813)
বাংলা অনুবাদ: হিশাম বিন উরওয়া তার পিতার মাধ্যমে নাফি’ বিন জুবাইর থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আব্বাস (রাযি.) কে যুবাইর (রাযি.) কে বলতে শুনেছেন: “এখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) আপনাকে পতাকা স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন।” (বুখারি, হাদিস নং ২৮১৩)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, পতাকা স্থাপন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য, যা নবী করিম (সা.) এর সরাসরি নির্দেশনার অংশ ছিল।
পতাকা বহনকারী সাহাবীদের মর্যাদা
দ্বিতীয়ত, আরেকটি হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে:
عن ابن شهاب قال أخبرني ثعلبة بن أبي مالك القرظي:أن قيس بن سعد الأنصاري -رضي الله عنه- وكان صاحب لواء رسول الله صلى الله عليه و سلم أراد الحج فرجل. (اخرجه البخاري،رقم2811)
বাংলা অনুবাদ: ইবনে শিহাব বলেন, থালাবা বিন আবি মালিক কুরাযী আমাকে জানিয়েছেন: “কায়েস বিন সাদ আল-আনসারি (রাযি.) যিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পতাকা বহন করতেন, তিনি হজের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এবং মাথা মুণ্ডন করিয়েছিলেন।” (বুখারি, হাদিস নং ২৮১১)
এই হাদিস থেকে দেখা যায় যে, পতাকা বহনকারীরা ছিলেন নবী করিম (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সাহাবী, যারা এই দায়িত্ব পালন করতেন।
যুদ্ধে পতাকার গুরুত্ব
তৃতীয়ত, আরেকটি হাদিসে যুদ্ধের সময় পতাকা বহনকারীদের মৃত্যু এবং যুদ্ধের ফলাফল উল্লেখ করা হয়েছে:
عن أنس -رضي الله عنه-:أن النبي صلى الله عليه و سلم نعى زيدا وجعفرا وابن رواحة للناس قبل أن يأتيهم خبرهم فقال (أخذ الراية زيد فأصيب ثم أخذها جعفر فأصيب ثم أخذ بن رواحة فأصيب). وعيناه تذرفان (حتى أخذها سيف من سيوف الله حتى فتح الله عليهم. (اخرجه البخاري،3547)
বাংলা অনুবাদ: আনাস (রাযি.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) জনগণকে জয়দ, জাফর এবং ইবনে রাওয়াহা (রাযি.) এর মৃত্যু সংবাদ জানান, তাদের মৃত্যুর খবর আসার আগেই। তিনি বলেন, “পতাকা প্রথমে জয়দ (রাযি.) ধরেছিলেন এবং তিনি শহীদ হন, এরপর জাফর (রাযি.) ধরেন এবং তিনিও শহীদ হন, তারপর ইবনে রাওয়াহা (রাযি.) ধরেন এবং তিনিও শহীদ হন।” নবী (সা.) এর চোখে অশ্রু ঝরছিল, “অবশেষে আল্লাহর তরবারি (খালিদ বিন ওয়ালিদ) পতাকা ধরে নেন এবং আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেন।” (বুখারি, হাদিস নং ৩৫৪৭)
এই হাদিসগুলি থেকে বোঝা যায় যে, পতাকা শুধুমাত্র একটি সামরিক প্রতীক নয়, বরং এটি মুসলিম বাহিনীর জন্য সাহস, ঐক্য এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি প্রতীক ছিল।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন কী জায়েজ ?
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট যে, ইসলামে পতাকা উত্তোলনের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন জায়েজ, কারণ এটি সম্মান প্রদর্শনের একটি প্রতীক এবং জনগণের ঐক্য ও মর্যাদার প্রতিফলন। তবে, এক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে, যেমন:
- ধর্মীয় নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া: পতাকা উত্তোলনের সময় ধর্মীয় আদর্শ এবং মূল্যবোধগুলিকে সমুন্নত রাখতে হবে।
- পাপে জড়িত না হওয়া: জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নাচ গান ইত্যাদি করা যাবে না।
সুতরাং, যেকোনো অনুষ্ঠান বা মিছিলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ইসলামিকভাবে জায়েজ, যদি এটি ধর্মীয় নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক না হয় এবং ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা করা হয়।
আরো পড়ুন: