দরুদ শরীফ । আরবি । উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত । কল্যাণের চাবিকাঠি

পোস্টটি শেয়ার করুন

ইসলামে দরুদ শরীফ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম। কুরআন ও হাদিসে বারবার রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর ওপর দরূদ পাঠ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এটি একটি ফজিলতপূর্ণ আমল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দরূদ শরীফ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তা অসংখ্য কল্যাণ ও বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়।

এই ব্লগপোস্টে আমরা দরূদ শরীফের গুরুত্ব, ফজিলত, বিভিন্ন সহিহ দরূদ শরীফ এবং এর বিধান নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে পাঠকরা দরূদ পাঠের প্রতি আরও উৎসাহী হন এবং এটি নিয়মিত আমলের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

বিভিন্ন প্রকার দরুদ শরীফ, আরবি । উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলত

১. দরূদে ইবরাহিম (সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ও প্রসিদ্ধ)

আরবি:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ।

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আালি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আালি ইব্রাহিমা, ইন্নাকা হামীদুম মজীদ।

আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আালি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আালি ইব্রাহিমা, ইন্নাকা হামীদুম মজীদ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর দরূদ বর্ষণ করুন, যেমন আপনি ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর দরূদ বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও গৌরবময়।
হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করুন, যেমন আপনি ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারবর্গের ওপর বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও গৌরবময়।

দরুদ শরীফ । আরবি
দরুদ শরীফ আরবি

ফজিলত:

  • হাদিসে এসেছে, যখন সাহাবিরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা কিভাবে আপনার ওপর দরূদ পাঠ করব?” তখন তিনি তাদের দরূদে ইবরাহিম শিখিয়েছেন (বুখারি: ৩৩৭০, মুসলিম: ৪০৬)।
  • এটি নামাজের মধ্যে দরূদ পাঠের সর্বোত্তম পদ্ধতি।
  • এ দরূদ পাঠ করলে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ হয়।

২. দরূদে শরীফ সংক্ষিপ্ত (ছোট কিন্তু ফজিলতপূর্ণ)

আরবি:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَسَلِّمْ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন ওয়া সাল্লিম।

অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ﷺ-এর ওপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

ফজিলত:

🔹 এটি সংক্ষিপ্ত দরূদ হলেও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
🔹 সহজে স্মরণযোগ্য, তাই বারবার পাঠ করা যায়।

৩. দরূদে তাঞ্জীনা (দুর্দশা ও বিপদ থেকে মুক্তির জন্য প্রসিদ্ধ)

আরবি:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ صَلَاةً تُنْجِينَا بِهَا مِنْ جَمِيعِ الْأَهْوَالِ وَالْآفَاتِ، وَتَقْضِي لَنَا بِهَا جَمِيعَ الْحَاجَاتِ، وَتُطَهِّرُنَا بِهَا مِنْ جَمِيعِ السَّيِّئَاتِ، وَتَرْفَعُنَا بِهَا عِنْدَكَ أَعْلَىٰ الدَّرَجَاتِ، وَتُبَلِّغُنَا بِهَا أَقْصَىٰ الْغَايَاتِ، مِنْ جَمِيعِ الْخَيْرَاتِ فِي الْحَيَاةِ وَبَعْدَ الْمَمَاتِ، إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ مُجِيبُ الدَّعَوَاتِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন সালাতান তুনজিনা বিহা মিন জামিইল আহওয়ালি ওয়াল আাফাতি, ওয়াতাকদ্বি লানা বিহা জামিআল হাজাতি, ওয়াতুতাহ্হিরুনা বিহা মিন জামিস সাইয়িয়াতি, ওয়াতারফাউনা বিহা ইন্দাকা আ’লা আদ্দারাজাতি, ওয়াতুবাল্লিগুনা বিহা আকসাল গায়াতি, মিন জামিআল খাইরাতি ফিল হায়াতি ওয়া বাদাল মামাত, ইন্নাকা সামীউন কারীবুন মুজীবুদ দা’ওয়াত।

অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ﷺ-এর ওপর দরূদ বর্ষণ করুন, এমন দরূদ যা আমাদের সব বিপদ ও কষ্ট থেকে মুক্ত করবে, আমাদের সব প্রয়োজন পূরণ করবে, আমাদের সব গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করবে, আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে এবং আমাদের সমস্ত কল্যাণের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে, দুনিয়া ও আখিরাতে। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শোনেন, কাছাকাছি আছেন ও দোয়া কবুলকারী।

ফজিলত

🔹 বলা হয়, এই দরূদ বিপদ-আপদ থেকে মুক্তির জন্য খুবই কার্যকর।
🔹 জীবনের সংকট ও বিপদের মুহূর্তে পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা সহায়তা করেন।

৪. দরূদে নূর (নূরের দরূদ)

আরবি:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ نُورِ الْأَنْوَارِ وَسِرِّ الْأَسْرَارِ وَدَوَاءِ الْأَسْقَامِ وَمِفْتَاحِ بَابِ الرَّحْمَةِ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন নূরিল আনওয়ারি ওয়া সিররিল আসরার, ওয়া দাওয়াইল আসকাম, ওয়া মিফতাহি বাবির রাহমাহ।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের নেতা মুহাম্মাদ ﷺ-এর ওপর দরূদ বর্ষণ করুন, যিনি নূরের উৎস, রহস্যের আধার, রোগের প্রতিকার এবং রহমতের দরজার চাবিকাঠি।

ফজিলত:

🔹 বলা হয়, এ দরূদ পাঠ করলে অন্তর আলোকিত হয় ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়।
🔹 কল্যাণ লাভের জন্য এটি পাঠ করা উপকারী।

দরূদ শরীফ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের বর্ণনা

🔹 কুরআনে দরূদ শরীফের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা সরাসরি কুরআনে দরূদ পাঠের আদেশ দিয়েছেন এবং নবী ﷺ-এর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

১. সূরা আহযাব (৩৩:৫৬)

📖 আল্লাহ বলেন:

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

🔹 বাংলা অনুবাদ: “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি দরূদ পাঠ করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দরূদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।” (সূরা আল-আহযাব: ৫৬)

🔹 ব্যাখ্যা:

  • এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নবী ﷺ-এর প্রতি দরূদ পাঠ করেন, ফেরেশতারাও দরূদ পাঠ করেন।
  • মুমিনদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক আদেশ যে, তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি দরূদ পাঠ করবে।
  • এটি প্রমাণ করে যে দরূদ পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

🔹 হাদিসে দরুদ শরীফ এর গুরুত্ব ও ফজিলত

১. একবার দরূদ পাঠে ১০টি রহমত

🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।” (মুসলিম: ৪০৮, তিরমিজি: ৪৮৫, আবু দাউদ: ১৫৩০)

🔹 ফজিলত:

  • একবার দরূদ পাঠ করলে ১০ গুণ বেশি রহমত পাওয়া যায়।
  • এটি মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের বড়ো মাধ্যম।

২. জুমার দিনে দরূদ বেশি পাঠ করার নির্দেশ

🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ কর। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (আবু দাউদ: ১৫৩১, নাসাঈ: ১৩৭৪, ইবনে মাজাহ: ১৬৩৬)

🔹 ফজিলত:

  • জুমার দিন দরূদ পাঠ করলে তা সরাসরি নবী ﷺ-এর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
  • এটি জুমার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল।

৩. দরুদ শরীফ পাঠ করলে ফেরেশতারা দোয়া করেন

🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে, ফেরেশতারাও তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন।” (মুসনাদ আহমদ: ১০৫৮৫, ইবনে হিব্বান: ৯০৮)

🔹 ফজিলত:

  • দরূদ পাঠ করলে ফেরেশতারা মাগফিরাতের দোয়া করেন।
  • এটি গুনাহ মোচনের অন্যতম উপায়।

৪. দরূদ পাঠ না করলে কৃপণতা

🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “কৃপণ সেই ব্যক্তি, যে আমার নাম শুনেও আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে না।” (তিরমিজি: ৩৫৪৬, আহমদ: ১৭৩৬)

🔹 ফজিলত:

  • নবী ﷺ-এর নাম শুনলে দরূদ পাঠ করা উচিত।
  • দরূদ পাঠ না করা মানে নবী ﷺ-এর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

৫. দরুদ পাঠ করলে দোয়া কবুল হয়

🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “দোয়া তখনই আল্লাহর কাছে পৌঁছায়, যখন কেউ আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে।” (তিরমিজি: ৪৮৬, আবু দাউদ: ১৪৮১)

🔹 ফজিলত:

  • দরূদ পাঠ না করলে দোয়া আটকে যায়।
  • দরূদ পাঠ দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত।

দরূদ শরীফ পাঠের উপযুক্ত সময়

দরূদ শরীফ এমন একটি আমল, যা যে কোনো সময় পাঠ করা যায় এবং প্রতিবার পাঠ করলেই সওয়াব পাওয়া যায়। তবে কুরআন ও হাদিসে কিছু বিশেষ সময় ও পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে, যখন দরূদ পাঠের ফজিলত আরও বেশি। নিচে দরূদ পাঠের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সময় উল্লেখ করা হলো:

🔹 ১. নামাজের মধ্যে দরূদ পাঠ করা

📌 তাশাহহুদ শেষে (দরূদে ইবরাহিম পাঠ করা ওয়াজিব/সুন্নাত)
🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবিদের শেখান যে, তাশাহহুদ পড়ার পর দরূদে ইবরাহিম পড়তে হবে।
🔹 এটি নামাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং নামাজ পূর্ণ করার জন্য এটি পড়া সুন্নাত।

📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “নামাজে তাশাহহুদের পর দরূদ পাঠ করো, তারপর যা চাও দোয়া করো।” (মুসলিম: ৪০৫, আবু দাউদ: ৯৭৬)

🔹 ২. দোয়া করার আগে ও পরে

📌 দোয়ার কবুল হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো দরূদ পাঠ করা।
🔹 হাদিসে এসেছে, যদি কেউ দোয়ার শুরুতে ও শেষে দরূদ পাঠ করে, তাহলে সে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যখন তোমাদের কেউ দোয়া করবে, তখন সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে এবং আমার প্রতি দরূদ পাঠ করে, তারপর সে যা চায়, তা প্রার্থনা করুক।” (তিরমিজি: ৩৪৭৭, আবু দাউদ: ১৪৮১)

🔹 উপায়:

  • প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করা (যেমন: ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বা ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা)।
  • এরপর দরূদ পাঠ করা।
  • তারপর নিজের প্রয়োজনীয় দোয়া করা।
  • শেষে আবার দরূদ পাঠ করা।

🔹 ৩. জুমার দিনে বেশি দরূদ পাঠ করা

📌 জুমার দিনে বেশি দরূদ পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
🔹 হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে জুমার দিনে অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠের আদেশ দিয়েছেন।

📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি করে দরূদ পাঠ কর। কেননা এই দিনে তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (আবু দাউদ: ১৫৩১, নাসাঈ: ১৩৭৪, ইবনে মাজাহ: ১৬৩৬)

🔹 উপায়:

  • জুমার দিনে বিশেষভাবে দরূদ পাঠের জন্য সময় নির্ধারণ করা উচিত।
  • সম্ভব হলে ১০০ বার বা তার বেশি দরূদ পাঠ করা ভালো।

🔹 ৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নাম শুনলে দরূদ পাঠ করা

📌 যখন নবী ﷺ-এর নাম শুনবেন, তখন দরূদ পাঠ করা সুন্নাত।
🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি তাঁর নাম শুনেও দরূদ পাঠ করে না, সে কৃপণ।

📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “কৃপণ সেই ব্যক্তি, যে আমার নাম শুনেও আমার ওপর দরূদ পাঠ করে না।” (তিরমিজি: ৩৫৪৬, আহমদ: ১৭৩৬)

🔹 উপায়:

  • যখনই নবী ﷺ-এর নাম শুনবেন বা উচ্চারণ করবেন, সাথে সাথে দরূদ পাঠ করবেন।

🔹 ৫. বিপদ-আপদ ও দুশ্চিন্তার সময়

📌 দরূদ শরীফ দুশ্চিন্তা ও বিপদ থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম।
🔹 দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার কষ্ট দূর করেন এবং তার জন্য সহজতার দ্বার খুলে দেন।

📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি কষ্ট ও বিপদে আমার ওপর দরূদ পাঠ করবে, তার কষ্ট ও সংকট দূর করে দেওয়া হবে।” (মুসনাদ আহমদ: ১৭৪৪৪)

দরূদ শরীফ পাঠের উপর কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১: দরূদ শরীফ কী?

উত্তর: দরূদ শরীফ হল আল্লাহ তাআলার কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর জন্য শান্তি, বরকত ও রহমত প্রার্থনা করা। এটি একটি ইবাদত এবং মুসলমানদের উপর রাসূল ﷺ-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার উপায়।

প্রশ্ন ২: দরুদ শরীফ পাঠের ফজিলত কী?

উত্তর: দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করেন। একবার দরূদ পাঠ করলে ১০টি রহমত বর্ষিত হয়, গুনাহ মাফ হয়, দোয়া কবুল হয় এবং ফেরেশতারা তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন।

প্রশ্ন ৩: দরুদ শরীফ কখন পাঠ করা উচিত?

উত্তর: দরূদ শরীফ কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এবং যেকোনো সময় পাঠ করা যেতে পারে। তবে কিছু বিশেষ সময় রয়েছে, যেমন:

  • নামাজের মধ্যে – তাশাহহুদ পরবর্তী দরূদে ইবরাহিম।
  • দোয়া করার আগে ও পরে – দরূদ পাঠ করলে দোয়া কবুল হয়।
  • জুমার দিন – জুমার দিনে বিশেষভাবে বেশি দরূদ পাঠ করা উচিত।
  • রাসূল ﷺ-এর নাম শোনার সময় – নবী ﷺ-এর নাম শোনার পর দরূদ পাঠ করা সুন্নাত।

প্রশ্ন ৪: দরূদ পাঠ করলে কী উপকারিতা পাওয়া যায়?

উত্তর: দরূদ পাঠ করলে বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে, যেমন:

  • রহমত ও বরকত – একবার দরূদ পাঠে ১০ গুণ রহমত লাভ হয়।
  • গুনাহ মাফ – দরূদ পাঠ করলে গুনাহ মাফ হয়।
  • দোয়া কবুল – দরূদ পাঠ করলে দোয়া দ্রুত কবুল হয়।
  • ফেরেশতাদের দোয়া – ফেরেশতারা দরূদ পাঠকারীর জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেন।

প্রশ্ন ৫: জুমার দিনে দরুদ পাঠের ফজিলত কী?

উত্তর: জুমার দিনে দরূদ পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি করে দরূদ পাঠ কর। কেননা এই দিনে তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (আবু দাউদ: ১৫৩১, নাসাঈ: ১৩৭৪, ইবনে মাজাহ: ১৬৩৬)

এতে প্রতিদিনের তুলনায় জুমার দিনে দরূদ পাঠে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় এবং এটি নবী ﷺ-এর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন ৬: দরূদ শরীফ কি কেবল জুমার দিনেই পাঠ করা উচিত?

উত্তর: না, দরুদ শরীফ পাঠ করা কেবল জুমার দিনেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি যে কোনো সময় পাঠ করা যায় এবং প্রতি বার দরূদ পাঠ করলে সওয়াব পাওয়া যায়। তবে জুমার দিন দরূদ পাঠের বিশেষ ফজিলত রয়েছে, তাই এ দিনটি দরূদ পাঠের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।


পোস্টটি শেয়ার করুন