বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি – এই দোয়াটি আরবি লেখা । বাংলা অর্থ । বারাকাহ আসলে কী? আমাদের জীবনে কেন বারাকাহ দরকার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি । আরবি লেখা ও বাংলা অর্থ
আরবি :
بارك الله في حياتي
বাংলা অর্থ : আল্লাহ আমার জীবনে বারাকাহ দান করুন।
এই বাক্যটি জন্য অন্যভাবে বলা যায় –
اللهم، اجعل في حياتي البركة
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার জীবন বরকতময় করুন।
আর যদি অন্য কারো জন্য বিশেষ করে আপনার সামনে উপস্থিত কারো জন্য এই দোয়া করতে চান তবে বলতে হবে –
بارك الله في حياتك
বাংলা অর্থ : আল্লাহ আপনার জীবনে বারাকাহ দান করুন।
বারাকহ শব্দের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ
বারাকাহ একটি আরবি শব্দ। পরিভাষায় বারাকাহ অর্থ হল –
ثبوت الخير في الشيء
অর্থ: কোনো বস্তুর মধ্যে কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হওয়া।
আমরা যখন বারাকাহ শব্দটি আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্কিত করব তখন এর অর্থ হবে আমাদের জীবনকে কল্যাণময় হওয়া। আল্লাহর কাছে দোয়ার সময় এর অর্থ হবে – আল্লাহ যেন আমাদের জীবনকে কল্যাণকর করে দেন।
আরো উত্তম ভাবে বোঝার জন্য আরেকটি উদাহরণ দেই – বারাকা শব্দটি যখন খাদ্যের সাথে যুক্ত হলে তার অর্থ হবে খাদ্যটি কল্যাণকর হযওয়া। আবার বারাকাহ শব্দটি মাল বা সম্পদের সাথে যুক্ত হলে এর অর্থ হবে সম্পদ কল্যাণকর হওয়া। আপনি শব্দের সাথেই এই বারাকাহ শব্দটি যুক্ত করবেন তার অর্থ সেই বস্তু থেকে কল্যাণ লাভ হওয়া।
কোন কোন সময় বারাকা শব্দটি থেকে বৃদ্ধি পাওয়া বা সমৃদ্ধ হওয়ার অর্থও পাওয়া যায়।
কেন এই দোয়াটি আমাদের জীবনে দরকার?
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সময়ের নাম হচ্ছে জীবন। জীবনের পরতে পরতে আমাদের অসংখ্য অগণিত শত্রু রয়েছে। সেই শত্রু অনেক রয়েছে মানুষের মধ্য থেকে এবং অনেক রয়েছে জিনদের মধ্য থেকে।
আমরা জিন জাতিকে চোখে দেখি না কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত আমাদের ক্ষতি করার জন্য তৎপর থাকে। এই মানুষ এবং জিনেরা আমাদের জীবনের – সময়,সম্পদ, চিন্তা, খাদ্য, ইবাদাত ইত্যাদি মূল্যবান জিনিসগুলো অকল্যাণকর ও অকেজো করার জন্য সদা-সর্বদা তৎপর থাকে।
তাই আমাদের জীবনে সকল কিছুর জন্য বারাকা বা কল্যাণের দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা এই দোয়া না করি। যদি শয়তান ও মানুষ আমাদের অক্যাণকর কাজে ব্যস্ত রাখে তবে আমাদের জীবন ব্যর্থ হিসাবে গণ্য হবে।
তাই এই দোয়াটি করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য প্রতি গুরুত্বপূর্ণ। যাতে শয়তান অথবা মানুষ আমাদের জীবনে বারাকা থেকে বঞ্চিত করে আমাদের সময়গুলোকে অকল্যাণকর কোন কাজে নিয়োজিত রেখে ব্যর্থ করতে না পারে।
কখন এই দোয়াটি করতে হবে?
এ দোয়াটি আপনি যেকোনো সময়, যেকোনোভাবে করতে পারেন। এমন নয় যে এই দোয়া করতে অজু থাকা দরকার। আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে বা যে কোনোভাবে এটি করতে পারেন। তবে দোয়া করার বিশেষ কিছু আদব রয়েছে এবং দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু সময় রয়েছে। আপনি যদি দোয়া কবুলের আদব মেনে এবং সময় বা স্থানের প্রতি লক্ষ্য রেখে দোয়া করেন তাহলে আপনার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেশি থাকে।
দোয়ার আদব হচ্ছে পাক-পবিত্র অবস্থায় বসে কিবলামুখী হয়ে বিনয় প্রকাশ করে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার কাছে আপনার মনের বাসনা উপস্থাপন করা। আর দোয়া কবুলের সময় হচ্ছে –
- ফরজ নামাজের পরবর্তীতে।
- শেষ রাত্রিতে।
- আজানে একামতের মধ্যবর্তী সময়ে।
- বৃষ্টির সময়।
- শুক্রবারে আসরের পরে।
- জমজমের পানি যখন পান করা হয় তখন।
এরকম প্রায় ১২ টি সময় রয়েছে যে সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আপনি বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি এই দোয়াটি নামাজের পরে যদি করেন তাহলে এটি উত্তম। তার চেয়েও উত্তম হয় যদি আপনি শেষ রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে, দুই রাকাত বা চার রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে এই দোয়াটি করেন।
কঠিন পরিস্থিতিতে বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি দোয়া
যখন আপনার কাছে আপনার পৃথিবী অন্ধকার মনে হবে। আপনার পাশের মানুষজন যেন দূরে চলে যাবে। কারো কাছে আপনি ভরসা পাবেন না মনে হবে আপনার সময় গুলো অযথা নষ্ট হচ্ছে। আপনি কোন কাজেই তৃপ্তি পাচ্ছেন না। গোছানোভাবে জীবনটাকে পরিচালনা করতে পারছেন না। তখন আপনাকে বুঝতে হবে আপনার জীবনে বারাকাহ এর অভাব রয়েছে।
তখনই আপনাকে মন খুলে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার কাছে বলতে হবে, বারাকাল্লাহু ফি হায়াতি বা আল্লাহুম্মা বারিক ফি হায়াতি – হে আল্লাহ আপনি আমার জীবনে বারাকাহ দান করুন। আপনি যদি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে এ দোয়াটি করেন অবশ্যই আল্লাহ আপনার এই দোয়ায় সাড়া দিবেন। তিনি আপনার জীবনের সকল অসুবিধা ও অন্ধকার দূর করে দেবেন।
তবে আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে দোয়া কবুলের প্রধান শর্ত হচ্ছে – হারাম থেকে নিজেকে বিরত রাখা। আমরা অনেকে অভিযোগ করে থাকি যে, আমার দোয়া কেন আল্লাহ শুনেন না। এর উত্তর হচ্ছে আপনি আপনার জীবনের প্রতিটি কাজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে নিরীক্ষা করুন। দেখুন আপনি কোন হারামের মধ্যে জড়িত কি না।
বিশেষ করে সুদি কার বা ঘুষের লেনদেন বা হারাম রিলেশনশিপ ইত্যাদি। আমি অনেক মানুষকে পেয়েছি যারা ব্যাংকিং সুদে জড়িত রয়েছে। কিন্তু এটা যে একটি মহাপাপ সেই কথাটি মানতে রাজি না। আবার তাই অভিযোগ করে যে, তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করছেন না। আপনি একটু নিরিবিলি চিন্তা করুন -সুদ এমন একটি মহাপাপ যার বিরুদ্ধে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন যে ব্যক্তি সুদের মধ্যে লিপ্ত রয়েছে, সুদ খাচ্ছে সে ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?
আরো পড়ুন: